পশ্চিমা দেশে মাইগ্রেটেড মুসলিমদের ইসলামি প্রেকটিস।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:৫৭:৩৭ বিকাল
একজন মুসলিম এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায় বা এক দেশ থেকে অন্য দেশে হিযরত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।মক্কার জীবন থেকে আমরা দেখতে পাই,সাহাবাদের উপর যখন নির্যাতন শুরু হলো তখন সাহাবাদের প্রথম দলটি আবিসিনিয়ায় হিযরত করেছে।এর পর মক্কা থেকে মদিনায় দলে দলে সাহাবারা হিযরত করেছেন।আল্লাহর রসূল সা: কে যখন কাফেররা হত্যা করতে উদ্দত হলো তখন আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি আবুবকর রা: কে সাথে নিয়ে মদিনায় হিযরত করলেন। আল্লাহর রসূল সা: বলেছেন,কেউ যদি সে সময় নিজের জন্মভূমি মক্কা থেকে মদিনায় চলে আসে ও হিযরত করার কারনে আগের সকল গুনাহকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন।' তাহলে একজন মুসলিমের হিযরত করার উদ্দেশ্য হলো নিজের জীবন বিপন্ন হওয়া ও ইসলামের জীবন যদি সে ভূমিতে পরিচালিত না করতে পারে তখন সে মুসলিম অন্য কোন মুসলিম দেশে বা অমুসলিম কোন দেশে সাময়িক সময়ের জন্য যেখানে ইসলাম পালন করতে কোন বাধা থাকবে না সেখানে হিযরত করতে পারে।যেমনটি মক্কার মুসলমানরা গিয়েছিল আবিসিনিয়ায় যেখানে একজন ন্যায়পরায়ন খ্রীষ্টান শাসক ছিলেন।কিন্তু প্রশ্ন হলো আজকের তথাকথিত মুসলমানদের নিয়ে।পৃথিবীর সমস্ত ভূখন্ড সম্পর্কে আজকের মুসলমানরা অবগত।কোন দেশে কি পরিবেশ আছে,কেমন শাসকরা সেখানে শাসন করছে,ইসলামের কাজ সেখানে করা যায় কিনা তা সবাই জেনে ও বুঝে যায়।আর যারা যায় তারা ইসলামের জন্য যায় না।নিজেদের পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্যই যায়।বর্তমান সিংহভাগ পিতামাতা তাদের সন্তানদের কোরানিক শিক্ষা দেন না।আধুনিক শিক্ষিত পিতামাতাদের একশটি ইসলামিক পরিবারের একটি পরিসংখ্যান রয়েছে আমার কাছে।এই পরিবারগুলো আমার দেশ বিদেশের আত্মীয় , প্রতিবেশি বা বন্ধুবান্ধবের পরিবার। এখানে ৪% রয়েছে যারা প্রতিটি সন্তানকে হাফেয করেছেন ও সাথে সাথে আধুনিক শিক্ষা দিয়েছেন।১১% রয়েছে একজনকে হাফেয করেছেন ও অন্যদের আধুনিক শিক্ষা দিয়েছেন।৩০% প্রাথমিক ও মাঝামাঝি শিক্ষা রয়েছে।৫৫% হলো আধুনিক শিক্ষিত ও যাদের ইসলামি শিক্ষা ও ইসলামের অনুকরনে নেই। এই ভাগটির বেশীর ভাগ পড়ে 'ও' এবং 'এ' লেভেলে।যাদের লক্ষ্যই হলো পশ্চিমা বা প্রাচ্যের দেশগুলোতে তাদের সামর্থনুসারে পাঠাবে।এদের একটি অংশের বাসস্হান ও রয়েছে সে সব দেশে।মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের একটি অংশ ৫-৮ লাখ টাকা খরচ করে তারা হিযরত করে তাদের আর্থিক কাঠামোকে দৃঢ় করা ও অভাব মোচনের জন্য।এরা ইসলামের কারনে যায় না।আর শিক্ষিত অংশটি হিযরত করে পড়াশুনা করে উন্নত জীবন যাপন করার জন্য।খুব কম সংখ্যক দেখা যায় পড়াশুনা করে নিজের দেশে ফিরে আসে।সুতরাং আধুনিক মুসলমানদের এই হিযরত ইসলামের কারনে নয় এটি নীরেট দুনিয়ার জৌলুস বাড়ানোর কারনে।কেউ যদি ইসলামকে ভালবাসতো তাহলে তার নিজের দেশে এই টাকা ব্যায় করে উপার্জন করার চেষ্টা করে ঈমান লালন করতো।আর দেশে তেমন ব্যাবস্হা না থাকলে কোন মুসলিম দেশে যেতো যেখানে ইসলামের মৌলিক কাজ সহ অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান করা যায়।আর নিজের দেশে স্পেশালাইজড শিক্ষাটি গ্রহন করে ফিরে আসতো।যারা পশ্চিমা দেশগুলোতে জন্মগত ইমিগ্রেন্ট তাদের অধিকার রয়েছে তাদের দেশে থেকে ইসলামি জীবন যাপন করবে।কিন্তু তারাও যদি সেখানে ইসলামের কাজ করতে না পারে তাহলে তাদের হিযরত করতে হবে কোন মুসলিম দেশে।বর্তমান মুসলমানরা সেখানে যায় ইমিগ্রেন্ট হওয়ার জন্য সে যেভাবেই হোক। সূরা নিসার ৯৭ আয়াতটি নাজিল হয়েছিল মদিনায়।যখন মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তখনো কতেক মুসলিম ইহুদিদের সাথে বসবাস করছিলো কারন তারা ঈমান আনলেও তাদের ধন সম্পদ ছেড়ে আসার মত হৃদয় তৈরি হয় নি।তাদের কারো কারো কাছে মালাকুল মওত এসে গেলে ফেরেস্তারা তাদের সাথে কথোপোকথন করে এভাবে,'নি:সন্দেহে ফেরস্তারা যাদের মৃতয়ু আনয়ন করে যারা ছিল নিজেদের প্রতি অন্যায়কারী,তারা(ফেরেস্তারা) বলবে,'তোমরা কি অবস্হায় পড়ে রয়েছিলে?' তারা(যারা হিযরত করেনি) বলবে ,'আমরা দুনিয়াতে দুর্বল ছিলাম।'তারা(ফেরেস্তারা) বলবে,'আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিল না যার ফলে তাতে তোমরা হিযরত করতে পারতে? কাজেই এরা-এদের বাসস্হান জাহান্নাম,আর মন্দ সেই আশ্রয়স্হল।' আমাদের কাছে এই আয়াতটি অত্যন্ত স্পষ্ট করে প্রতীয়মান করে যে,কোন মুসলমান যদি দ্বীন পালনে বা জীবন রক্ষায় ও আর্থিক সংকটে থাকবে তাকে খুঁজতে হবে ইসালামিক কোন দেশকে যেখানে সে তার দ্বীনকে সজিব রাখতে পারে।কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোতে যারা যায় তাদের আমরা দেখতে পাই তাদের ঈমান ধরে রাখতে পারে না।কয়েকটি ঘটনা থেকে সে সমাজের প্রতিচ্ছবি আমরা অবলোকন করতে পারি।দূরে যাওয়ার দরকার নেই।আমার নিকট আত্মীয় যারা থাকে তাদের কিছু বিবরন দিচ্ছি।আমার নিজের মামাতো ভাইগন দেশে তাদের চাকুরি ছেড়ে ,রাজধানীতে তাদের বাসস্হান ছেড়ে সন্তানদের উন্নত শিক্ষা দেয়ার জন্য হিযরত করেন এমেরিকায়।এখন স্বামি - স্ত্রী দু'জনকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।একজন কাজে যান আর একজন ঘরে এসে ঢুকেন।সপ্তাহে একদিনের কিছু অংশ পান দাম্পত্য জীবনের জন্য।সেদিনও পরিবারের প্রয়োজনে কাজ করতে হয়।ভাইটির নিজের কথায়,আমি জান্নাত রেখে জাহান্নামের জীবন যাপন করছি।আমাকে ডিউটির কারনে নামাজ কাজা করতে হয় প্রতিদিন যে নামাজ শরিয়ত মোতাবেক আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য নয়।এ ব্যাপারে আর বেশি কিছু বলার দরকার নেই।তাদের জীবনে ইসলামের কি সৌন্দর্য আছে তা অনুমেয়।আমার কতেক ভাগনে বিয়ে করে ৮/১০ লাখ টাকা খরচ করে বৃটেনে গিয়েছে যারা এখন বার গুলোতে মদ পরিবেশন করছে কাষ্টমারদের।নামাজের সময় নামাজ কায়েম করতে পারছে না।চার বছর হয়ে গেলেও দেশে আসতে পারছেনা।দাম্পত্য জীবনে কারো কারো টানাপোড়েন চলছে।কাউকে যায়গা যমিন বিক্রয় করে পাঠানো হয়েছে পড়ার জন্য তারা পড়াশুনাতো করেনি এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখছেনা।সৌদি আরবের মত একটি উর্বর ইসলামের দেশে থেকেও অনেকে চলে গেছেন এমেরিকা ,বৃটেন ও কানাডায়।তারা ভাল চাকুরি করতেন।তাদের কয়েকজনের সাথে প্রতি ঈদেই কথা হয়।তারা বলেন তোমরা ঈদ করছো এমন একটি পরিবেশে যেখানে জান্নাতি পরিবেশ রয়েছে আর আমরা জানালা দিয়ে এখন আকাশ দেখছি।দাম্মামে একটি কম্পানীর একজন অফিসার কয়েক বছর আগে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে দু'টি মেয়ের ভবিষ্যৎ কল্পনায় কানাডা গেলেন।সেখানে স্কুলে ভর্তি করালেন।মেয়ে দু'টো এডাল্ট হয়ে গেলে দু'জন খ্রীষ্টানের সাথে বেরিয়ে যায়।স্বামিটির হার্ট এটাক হয়।এটি হলো দুনিয়ার শাস্তি আর আখেরাতের শাস্তি আল্লাহর কাছে মওজুদ রয়েছে।অসংখ্য পরিবারের এ রকম কাহিনী রয়েছে কমবেশী।হাতে গোনা কিছু পরিবার থাকতে পারে যারা ইসলামের জীবন নিয়ে বেঁচে আছে।রসূল সা: বলেছেন,কেউ ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষন তোমরা আমাকে নিজের চেয়ে ,নিজের বাবার চেয়ে ,নিজের সন্তান ও স্ত্রীর চেয়ে আমাকে ভালবাসবে।' ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোতে যখন আমাদের রসূল সা:কে নিয়ে কখনো কার্টুনের আকারে,কখনো নভেল লিখে আবার কখনো চলচিত্রের মাধ্যমে ব্যাংগক্তি করা হয় তখন ওখানকার বসবাসকারি খুব কম সংখ্যকদের প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা যায়।তাদের কাউকে ঈমানের কারনে সে সমস্ত দেশ থেকে হিযরত করে চলে আসতে দেখা যায় না।কারন তাদের ভালবাসা হলো দুনিয়ার সামগ্রী।আমরা ইসলামের শক্রুদের আজ বন্ধু করে নিয়েছি।অথচ রসূল সা: এর সাহাবিরা জীবন দিয়ে শক্রুদের জবাব দিয়েছেন।কাব নামক একজন কবি রসূল সা: এর বিরুদ্ধে কবিতা রচনা করেছিল।সাহাবারা ধিক্কার জানিয়েছিল।বোখারি শরীফে বর্নীত,একজন সাহাবিকে পাঁশির কাষ্ঠে নিয়ে আসা হলো।মক্কার কাফেররা বলেছে,তোমাকে শেষবারের মত একটি সুযুগ দেয়া হলো,তুমি যদি এ কথা বলো যে,আমার পাঁশিতে আমি না ঝুলে মোহাম্মদ ঝুলবে, আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হব।এই কথাটি যদি তুমি বল তাহলে আজকে তোমার জীবনে রক্ষা পেয়ে যাবে।তুমি তোমার শিশুদের কাছে ফিরে যেতে পারবে।তোমার স্ত্রীকে বিধবা করবে না।কিন্তু ঐ সাহসি সাহাবি তখন আবেগপূর্ন কথা বলেছেন।তিনি বলেছেন তোমরা বোকা।তোমরা মনে করেছ আমার জীবন বাঁচানোর জন্য আমি এতই লোভী? আমি বেঁচে থাকতে আমার রসূল পাঁশিতে ঝুলবে এটি তো অনেক দূরের কথা।আমি বেঁচে থাকতে আমার রসূলের পায়ে একটি কাঁটা বিধুক এটিও আমি সহ্য করতে পারবো না।কাফেরদের যারা উপস্হিত ছিল তারা অশ্চর্য হয়ে বললো,আল্লাহর শপথ! মানুষ মানুষকে ভালবাসতে আমরা এরুপ আর দেখিনি,মোহাম্মদের সংগীগন যেভাবে তাকে ভালবাসে।' মুসলমানদের একটি সুন্দর চরিত্র রয়েছে তারা কখনো অন্যধর্মের প্রতি বা ধর্মগুরুদের প্রতি অপবাদ দেয়া না।আল্লাহ পাক নিজেই আমাদের শিখিয়েছেন,যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মূর্তির পূজা করে তাদের তোমরা গালমন্দ করো না।'অথচ মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে আলকুরআন সোচ্চার।মূর্তিপূজারিদের গালি দিতে নিষেধ করা হয়েছে কারন তাদের হৃদয়ে আঘাত আসবে আর সে আঘাতের কারনে তারা আল্লাহকেও গালি দিবে।আলকুরআন যুক্তির মাধ্যমে অন্যান্য ধর্মের অসারতার কথা ব্যাখ্যা করেছেন।মুসলমানদের ইসলামের কটুক্তির ব্যাপারে যেমন নীরব থাকা যাবে না তেমনি অযৌক্তিক হত্যা ও ভায়োলেন্সও করা যাবেনা।বরং প্রজ্ঞার সাথে প্রফেশনাল উপায়ে শক্রুদের কর্মের জবাব দিতে হবে।আমরা দেখতে পাই যখন ইসলামের পতাকা উড্ডিন হওয়ার সময় এলো কেন মুসলিমরা আবিসিনিয়া থেকে আবার হিযরত করে চলে এলো তা ভাবতে হবে আজকের মুসলমানদের।আমাদের নিজেদের চলার মত সামর্থ থেকেও যারা ইহুদি খ্রীষ্টানের দেশে নিজেদের সম্পদ ব্যায় করে বসবাস করতে যায় বা প্রমোদ ভ্রমনে যায় এটি নিছক তাদের অনুসরন করা ও তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করা।কোন খোঁড়া যুক্তি দিয়ে কেয়ামতের মাঠে আল্লাহর স্মরনাপন্য হওয়া যাবে না।মুসলমানদের সম্পদ দিয়ে যদি আজ মুসলমানদের দেশে উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা যেতো তাহলে আমাদের মেধাগুলো সেদিকে যেতো না।আমাদের লোভ,আমাদের দীনতা,দেশের প্রতি মমত্ববোধ না থাকা সর্বোপরি ইসলামের অনুশীলন না থাকার কারনে আমরা ছুটে চলছি লুতের সম্প্রদায়ের দেশগুলোতে যেখানে মিলিয়ন মিলিয়ন মেয়েরা পাচ্ছে না তাদের স্বামি,মিলিয়ন মিলিয়ন ড্রান্কার্ড ও মিলিয়ন মিলিয়ন সমকামি।প্রতিকূল এই পরিবেশে ইসলামের প্রেক্টিস তো নেই বরং তাদের হিযরতের মাধ্যমে তারা উম্মোচিত করছে জাহান্নামের দ্বার।
বিষয়: বিবিধ
১৪০০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন