মানুষ নিধন করে ওরা শান্তির পায়রা উড়ায়।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:১২:৪৭ বিকাল
যুদ্ধ ও সংঘাত চলছে বহু দেশে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, পাকিস্তান, সুদান, নাইজেরিয়া, লিবিয়া, মালি, প্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, বুরুন্ডি প্রভৃতি। মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা নিজ দেশে টিকতে পারছে না। সমুদ্রপথে পালাতে গিয়ে তারাও জীবন দিচ্ছে। সংঘাত, যুদ্ধ না থাকলে পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে আগামী বছরগুলোতে অভিবাসী ও শরণার্থী হিসেবে পাড়ি জমাবে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ। তারা সেখানে গিয়ে বসে থাকবে না ঠিকই, অবদান রাখবে অর্থনীতিতে। কিন্তু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যার জন্ম দেবে। সে আশঙ্কা করছেন ইউরোপের খ্রিষ্টান মৌলবাদীরা।ইতিমধ্যেই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে উগ্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলো আন্দোলনে নেমেছে। জার্মানির নব-নাৎসিবাদীরা আশ্রয়শিবির পুড়িয়ে দিয়েছে। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, ইতালিতে অভিবাসীবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে।শতাব্দীর পর শতাব্দী পশ্চিমা উপনিবেশবাদীরা পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিকে শোষণ-শাসন করেছে। এখন অস্ত্র বিক্রি করে সংঘাত বাধিয়ে তাদের করছে গৃহহারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় শরণার্থী-সংকটে পড়েছে ইউরোপ। সিরিয়া, ইরাক এবং ওই অঞ্চলের দেশগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় এখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উপস্থিত হয়েছে, বিপৎসংকুল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে অনেকে, আরও অনেকেই সেই পথে পা বাড়িয়েছে অথবা পা বাড়াতে চলেছে। কিন্তু এ সংকট কেবল ইউরোপের নয়, এ সংকট সারা পৃথিবীর; উপরন্তু এ কথা বলা মোটেই অতিরঞ্জন নয় যে এক অর্থে এ সংকট শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে, তার আঁচ ইউরোপে না লাগা পর্যন্ত বিশ্বের টনক নড়েনি। অন্য অর্থে সংকটের মাত্র সূচনা হয়েছে—এ যাবৎ আমরা যা দেখেছি, তা কেবল হিমশৈলের উপরিভাগ। অনুমান করা হচ্ছে যে বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে এ বছর সব মিলে আট লাখ মানুষ ইউরোপের দেশগুলোতে আশ্রয়প্রার্থী হবে, আরও আট লাখ মানুষ হাজির হবে আগামী বছর। ফলে এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে গ্রহণ করার পরিকল্পনা করেছে, তা সমুদ্রে শিশিরবিন্দু ছাড়া আর কিছুই হবে না।কেন একে ‘সমুদ্রে শিশিরবিন্দু’ বলে মনে করি, তা বোঝার জন্য শরণার্থীদের সংখ্যা বিষয়ে ধারণা নেওয়া দরকার। এই সংকটের প্রধান উৎসমুখ সিরিয়া ও ইরাক। তবে এ দুটি দেশের অসহায় নাগরিকেরাই যে কেবল ইউরোপমুখী শরণার্থী তৈরি করেছে তা নয়, আফগানিস্তান, সোমালিয়া থেকেও পলায়নপর মানুষ অনেক দিন ধরেই ইউরোপমুখী। সিরিয়ায় ২০১১ সালে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ যাবৎ ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে; তার এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ৪০ লাখ এখন দেশের বাইরে শরণার্থী।ইরাকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। সিরিয়া ও ইরাকে বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের এক অংশের দেশত্যাগের কারণ আইসিসের অব্যাহত প্রসার এবং সংগঠনটির নির্বিচার নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ। সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীরা এত দিন আশ্রয় পেয়েছে তুরস্কে, জর্ডানে, লেবাননে, মিসরে, এমনকি ইরাকের কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায়। এ বছর জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন এক লাখ চার হাজার শরণার্থীকে পশ্চিমা দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। যেসব দেশ এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চায়, তার মধ্যে আছে জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, ব্রাজিল, হাঙ্গেরি ও আয়ারল্যান্ড। কিন্তু এ ছিল এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত জাতিসংঘের মাধ্যমে শরণার্থীদের অভিবাসন পরিকল্পনা। এখন পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। এসব হিসাবের বাইরে হাজার হাজার মানুষ সরাসরি ইউরোপে এসে আশ্রয়প্রার্থী হয়েছে এবং তাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।এ তালিকায় কোন কোন দেশ আছে, তার চেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে কারা অনুপস্থিত। ইরাক ও সিরিয়ার নিকটবর্তী উপসাগরীয় দেশ কাতার, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, এমনকি সৌদি আরবের নাম নেই এ তালিকায়। এ ধরনের আচরণের জন্য এই দেশগুলোর বিরুদ্ধে যে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে, তার কারণ চারটি। প্রথমত, এসব দেশের সম্পদের (এবং ক্ষেত্রবিশেষে জায়গার) অভাব নেই; দ্বিতীয়ত, এসব দেশে শরণার্থীদের পক্ষে পৌঁছানো সহজ, পথ কম বিপৎসংকুল; তৃতীয়ত, এর মধ্যে রয়েছে সেই সব দেশ, যারা সিরিয়ায় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের সমর্থনে গঠিত ‘ফ্রেন্ডস অব সিরিয়া’ নামের আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনের সদস্য; চতুর্থত, এসব দেশ প্রায়ই মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের কথা বলে থাকে।কেন তারা সিরিয়ার নাগরিকদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না, তার উত্তরে এ দেশগুলোর যুক্তি এই যে তারা কয়েক বছর ধরেই আর্থিক সাহায্য দিয়ে আসছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এ যাবৎ তারা ৫৪০ মিলিয়ন ডলার মানবিক সাহায্য দিয়েছে, উত্তর ইরাক ও জর্ডানে তারা শরণার্থীশিবির তৈরি করে সাহায্য করছে। কুয়েত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে সিরিয়ার জন্য আরব দেশগুলোর মধ্যে তারাই সবচেয়ে বেশি অনুদান দিয়েছে; যে ১০টি দেশ সবচেয়ে বেশি অর্থের সংস্থান করেছে, কুয়েত তার মধ্যে চতুর্থ।জাতিসংঘ শরণার্থী-সংক্রান্ত হাইকমিশনের উপসাগরীয় প্রতিনিধি বলেছেন, সৌদি আরবে পাঁচ লাখ সিরীয়কে জায়গা দেওয়া হয়েছে; তাদের ‘শরণার্থী’ না বলে বলা হচ্ছে ‘বিপদাপন্ন আরব ভাইবোনেরা’ (আরব ব্রাদার্স অ্যান্ড সিস্টার্স ইন ডিসট্রেস)। এসব কথা কাগজে কলমে কতটা সত্য, বাস্তবে কতটা সত্য, সেসব অনুসন্ধানের বিষয়। কিন্তু যেটা স্পষ্ট, তা হলো সিরিয়ায় শরণার্থীদের ব্যাপারে এ দেশগুলোর দৃশ্যমান নিস্পৃহতা। এই নিস্পৃহতার পেছনে আছে এ অঞ্চলের এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। প্রথমেই মনে রাখা দরকার যে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা এসব দেশের নেই। কেননা, এ দেশগুলো জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। সৌদি আরব যে সিরীয়দের শরণার্থী বলছে না, সেটাও একটি কারণ।
যেসব রাজনৈতিক কারণ সিরীয়দের গ্রহণ করার পথে উপসাগরীয় দেশগুলো বিবেচনায় নিচ্ছে, তা হলো এই জনগোষ্ঠীর সম্প্রদায়গত পরিচিতি—শিয়া-সুন্নি বিভাজনের হিসাব এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা মানুষের অধিকাংশ সুন্নি সম্প্রদায়ের, সেই বিবেচনায় তাদের প্রতি সৌদি আরবের সমর্থন থাকার কথা, বিশেষ করে যেখানে আইসিসের বিরুদ্ধে সৌদিদের অভিযান এই শরণার্থীর মিছিল তৈরির একটি কারণ। কিন্তু সৌদিদের আশঙ্কা, এই শরণার্থীদের সঙ্গে আইসিসের যোদ্ধারাও ঢুকে পড়ে কি না বা এই অজুহাতে আইসিস সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়ে কি না। সৌদিরা ইতিমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিগোষ্ঠীর মোকাবিলা করছে।লেবাননে এই ব্যাপকসংখ্যক সুন্নি শরণার্থীর উপস্থিতি শিয়াপ্রধান সংগঠন হিজবুল্লাহকে ক্ষুব্ধ করবে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন। কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমানে জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি বিদেশি নাগরিক। সেখানকার ক্ষমতাসীনেরা মনে করেন যে আরও বিদেশি নাগরিকদের উপস্থিতি কেবল তাঁদের ক্রমহ্রাসমান তেল সম্পদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে তা নয়, সেখানকার ‘রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা’র জন্য তা হুমকি হতে পারে। বাহরাইনে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া সম্প্রদায়, কিন্তু শাসকেরা সুন্নি। ২০১১ সালে সেখানে গণবিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল, যা অত্যন্ত নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে। মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের কথা যা-ই বলা হোক না কেন, মানবিকতার বিষয়ে যতই বাক্য বিস্তার করা হোক না কেন, উপসাগরীয় শাসকদের বিবেচনায় রাজনীতিই শেষ কথা। সংকট গভীর হলেও যে তাঁরা এর চেয়ে ভিন্ন কোনো ভূমিকা নেবেন, এমন মনে করার কারণ নেই।এ যাবৎ এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় খানিকটা চাপে পড়ে, খানিকটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশ এগিয়ে এসেছে। কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোর ভেতরে এ নিয়ে যে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে। অস্ট্রিয়া ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে সে যেই জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শরণার্থীদের জায়গা দিচ্ছিল এবং তার দেশের মধ্য দিয়ে জার্মানিতে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছিল, তা পর্যায়ক্রমে তুলে নেবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশ এখন পর্যন্ত একমত হতে পারেনি যে কোটার ভিত্তিতে কোন দেশ কতজন শরণার্থীকে জায়গা দেবে। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি এবং স্ক্যান্ডেনেভীয় দেশগুলো শরণার্থীদের জায়গা দেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা দেখালেও হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র এবং কয়েকটি বাল্টিক দেশ ইতিমধ্যে ঘোরতর আপত্তি তুলেছে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান এসব দেশের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন। তাঁদের যুক্তি, এই শরণার্থী এসব দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।ওরবানের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘মুসলিম অভিবাসীরা হাঙ্গেরির নিরাপত্তা এবং চিরায়ত খ্রিষ্টান মূল্যবোধ ও পরিচয়ের জন্য হুমকি।’ এর আগে আগস্ট মাসে স্লোভাকিয়া বলেছিল, কোটার ভিত্তিতে তারা যে ২০০ জন শরণার্থী নেবে, তাদের হতে হবে খ্রিষ্টান। এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোটার হিসাবে তাঁদের ওপরে লোক চাপিয়ে দেওয়া হলে একদিন সকালে উঠে তাঁর দেশের নাগরিকেরা দেখবে যে এক লাখ আরব তাদের প্রতিবেশী; তিনি এই ‘সমস্যা’ তৈরি করতে চান না। এগুলো যে উগ্র ইসলামবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ এবং তা উসকে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা, তা বোঝা দুষ্কর নয়। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এমনিতেই ইউরোপে ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী কথিত জাতীয়তাবাদী নেতা ও দলের উত্থান ঘটেছে। এখন এ ধরনের পরিস্থিতি এবং এ ধরনের বক্তব্য তাতে ইন্ধন জোগাবে মাত্র। এর প্রতিক্রিয়া যে নতুন অভিবাসী বা শরণার্থীর ওপরে পড়বে, তা–ও ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই পশ্চাদ্যাত্রা কীভাবে রোধ করবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে তিনি দেশটির ১০৯ মাইল সীমান্তজুড়ে ইস্পাতের তৈরি ১৩ ফুট উচ্চতার দেয়াল তুলে দেবেন। সব রকমের দেয়াল ভেঙে ফেলার অঙ্গীকার নিয়ে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যাত্রা, সেই সংগঠনে দেয়াল তোলা নিয়ে যে বিরোধ শুরু হচ্ছে, সেটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?এ যাবৎকালের যে আলোচনা, তা হচ্ছে এখনকার সমস্যার আশু সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা; কিন্তু যে কারণে এই পরিস্থিতি, যে কারণে অসহায় নিরুপায় মানুষ তাদের সহায়-সম্পত্তি, বসতভিটা, পরিবার-পরিজন ছেড়ে, শিকড় উপড়ে ফেলে দেশ ছাড়ছে, তার সমাধান না করলে এই জোড়াতালির সমাধান কোনো কাজে দেবে না। সমস্যার মূলে আছে সিরিয়ার সংকট, আছে ইরাকের সংকট। এসব সংকটের সূচনায় এবং তা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে যে দেশগুলো ভূমিকা রেখেছে, এই মানবিক বিপর্যয়ের দায় থেকে তারা মুক্তি পেতে পারে না। সেই বিবেচনায় এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের দায় অপরিসীম। সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়ার কারণে এ দায়িত্ব তার ওপর বর্তায়। একইভাবে সিরিয়ার সরকারকে অস্ত্রের জোগান দেওয়ার কারণে রাশিয়াকেও এই সংকটের দায় নিতে হবে। পরস্পরের দিকে অঙ্গুলি তুলে অভিযোগ করা যেতে পারে যে কার দায় কতটুকু; কিন্তু তাতে এই মানবিক বিপর্যয়ের শেষ হবে না। সিরিয়ায় রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছা না গেলে, আইসিসের বিরুদ্ধে সম্মিলিত চেষ্টা চালানো না হলে এই সংকটের সমাধান হবে না।বিশ্ব মোড়লরা এ যাবত যত যুদ্ধ বাঁধিয়েছে তা তাদের নিজেদের স্বার্থে।তারা যতই শান্তির কথা বলুক না এটি তাদের একটি মিথ্যাচার।আয়লান, তার মা ও ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? কেন তাদের দেশ ত্যাগ করে শরণার্থী হতে হয়? কেন তাদের জন্মভূমিতে গৃহযুদ্ধ বাধে? কে বাধায়? তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে কেন শরণার্থী হয়ে অজানা কোনো দেশের উদ্দেশে পাড়ি জমাতে সমুদ্রে গিয়ে নৌকায় উঠতে হয়? কেউ শখ করে কি শরণার্থী হয় বা হয়েছিল কোনো কালে? একাত্তরে বাঙালি কি শখ করে শরণার্থী হয়েছিল? একাত্তরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত শেখ মুজিবকে বলতেন, তুমি ঠিক আছ, চালাও। ইয়াহিয়াকে বলতেন, ওদের ছাড় দিয়ো না, শিক্ষা দাও। পরিণাম সংঘাত, হত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগ এবং পথেঘাটে বেঘোরে মৃত্যু।ওদের কাজ হলো মানুষ নিধন করে শান্তির পায়রা উড়ানো।বিশ্বের নিপিড়ীত মানুষের আহাজারিতে আজ আকাশ ভারি হয়ে উঠেছে।কবে সত্যের পতাকা উড্ডিন হবে বিধাতা ছাড়া কেউ জানে না।
বিষয়: বিবিধ
১০৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন