প্রতিটি দম্পতি সমাজ বিনির্মানের সাফল্যের শ্রেষ্ঠ সোপান।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৪:৩২:৩৪ বিকাল
প্রতিদিনের মত নাস্তা সেরে একটি খবরের কাগজ খুলতেই সে ঘটনার সাথে হাজারো ঘটনা মনে পড়ে গেল।যে দম্পতিদের নিয়ে মানুষের সৃষ্টি , সামাজিক কর্মকোলাহল তাদের জীবনের কিছু চিত্র আমাদের অনেককে হতবিহবল করে দিছ্ছে রীতিমত।আপনি যাকে ভালোবাসেন- যে আপনার সুখ-দুঃখের ভাগীদার- তাঁর একান্ত সময়ে পাশে থাকাটা আপনার কর্তব্য। একটা ঝড়ের মুহূর্তে নাবিক যেমন সমুদ্রের ঢেউ আর ঝড় থেকে রক্ষার কৌশল অবলম্বন করে জাহাজকে ধীরে ধীরে উপকূলের দিকে নিয়ে আসে, তেমনি আপনার স্ত্রীর এই সময়টা ঝড়ের সময়।সূরা বাকারার ১৮৭ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, " তোমরা তাদের পোশাক , তারা তোমাদের পোশাক"।সোবহানাল্লাহ! আমারা যারা মুসলমান তারা কি ভেবে দেখেছি এ আয়াতটির তাৎপর্য কি? কেন আপন আদরের ঘরনীকে ঝলসানো? এ কোন বিকারগ্রস্ত মানুষীকতা? আমি পর্যালোচনা করে দেখলাম আমাদের পারিবারিক বন্ধনে নিশ্চয়ই কোন ব্যবধান আছে। আসুন মনের গভীর থেকে কিছু কথা জেনে নেই:
একবার পৌর বিজ্ঞান পড়তে গিয়ে দেখলাম পরিবার হলো রাষ্টে্ৃর একক।আর সূরা নিসায় বলেছে পুরুষকে নারির এক ধাপ উপরে মর্যাদা দেয়া হয়েছে।এই এক ধাপের কারনে এত বাহাদুরি? এই যে ধর্ষন দেখছেন পৃথিবী ব্যাপী এর জন্য কারা দায়ী? কয়েক বছর পূর্বে ডিসেম্বরে দিল্লীতে দামিনি নামে যে মেয়েটির উপর পাশবিক অত্যাচার হয়েছিল তাকে জীবন দিতে হয়েছিল তার নেপথ্যে কারন কি? কারন হলো আমাদের সমাজে বিকৃত রুচি সম্পন্ন ও বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ পাক এ দু'জন পুরুষ ও মহিলার সম্পর্ক এত গভীর করে দিলেন তা আমরা কি কখনো খুঁজে দেখেছি? আজকের পৃথিবীতে আমরা মানুষেরা নিজেদের জীবনকে জটিল করে ফেলেছি।নিজের মনকে প্রশ্ন করুন দৈনন্দিন কতটুকু ভালবাসার আদান প্রদান আমরা করছি।দু'জন দু'জনার কত গভীরে যেতে পেরেছি।ইসলাম আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে।একদিন রাসূল সা: ছাঁদনী রাতে দৌড় প্রতিযোগিতা করলেন ও আয়শা (রা) এর সাথে হেরে গেলেন, রাসূল সা: আবার একদিন প্রতিযোগিতায় রাসূল সা: প্রতিশোধ নিলেন।আ্য়শা (রা) বললেন আগের দিনের তুলনায় এ দিন আমি সামন্য ভারি হয়ে গিয়েছিলাম।
আমাদের ব্যাস্ততা অনেক কিন্তু আমাদের সময় বের করে নিতে হবে। একে অন্যকে সময় দেয়ার মত সময় খুঁজে নিতে হবে।ধরুন আপনি একজন চাকুরিজীবি বা ব্যাবসায়ি বা অন্য যে কোন প্রফেশন আপনার।যে যেই পেশায়ই থাকুন না কেন,ইচ্ছে করলে পারিবারিক সমৃদ্ধি বয়ে আনতে পারেন। মাসের শেষে বেতন পেলে পুরো মাসের বাজেট করে পেলতে পারেন।এতে করে দেখা যায় প্রতি মাসেই সারপ্লাস থেকে যাবে।মনে রাখবেন আপনি আপনার গৃহিনীকে যদি সম্মান করেন তিনিও করবেন।আমরা ইছ্ছে করলে প্রতিদিনই একে অন্যকে সারপ্রাইজ দিতে পারি। এটা হলো মনের ব্যাপার।আপনার যত অভাবই থাকুক না কেন মনকে প্রফুল্ল রাখুন।আমি মানে করি স্বামীকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসলে ভাল।আপনার ঘর আপনার আ্ংগিনা।এখানে বাধা দেয়ার কেউ নেই। আমরা অনেকে বাইরে রোমান্স করতে ভালবাসি যা বারন করা হয়েছে।আপনার পছন্দের কথাগুলো বলতে শিখুন।তিনি তো আপনার পোশাক।বাইরে থেকে আসলেন, বস সুলভ আচরন না করে জড়িয়ে ধরুন।আপনার ধী্র্ঘ বিরহকে জীবনের প্রাপ্তিতে ভরে দিন। বিকালে সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসুন মুক্ত বাতাসে।না হয় খেয়ে নিন বাইরে।শোবার আগে বসুন না কিছু ক্ষণ দু'জন বারান্দায় যেখানে কোলাহল নেই,আবছা আলোতে জড়িয়ে নিন চাদরে। সকালে নাস্তাটা একসাথে করুন।দুপুরে লান্স করুন একসাথে।যদি নাও আসতে পারেন ফোনে যোগাযোগ করুন। রান্না ঘরে রান্না করছেন চুপি চুপি গিয়ে চিমটি কেটে দিন। কখনো নিয়ে আসুন না তার পছন্দের খাবার বা অন্য কোন উপহার, এতে ভালবাসা আরো গভীর হবে।
আপনার স্ত্রীর পাশে থেকে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা আপনার দায়িত্ব। যখন দেখবেন আপনার স্ত্রী সংসার নিয়ে ভীষন ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন বা মেজাজ খিটকিটে হছ্ছে বা তাঁর মাসিক ঋতুচক্র হতে যাচ্ছে তখন তাকে সংসারের কাজে সাহায্য করুন। অনেকে এ সময় চকলেট খেতে পছন্দ করে বা নিতান্ত আপনমনে চলতে থাকে তখন আপনাকে তার সামনের কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ঘুরে আসতে পারেন কোন রোমান্টিক যায়গায়।এড়িয়ে না চলে তার নিবিড় হউন। তাকে নিয়ে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে ডিনারে যেতে পারেন। যদি তাঁর প্রিয় কোনো রেস্টুরেন্ট থাকে তাহলে তো কথাই নেই। আপনার কোনো ইচ্ছা আবার তাঁর ওপর চাপিয়ে দিতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।আবার অনেক এমন করেন ঋতুচক্রের সময় স্ত্রীকে দূরবর্তি যায়গায় ফেলে রাখেন এতে করে দাম্পত্য জীবন আড়াল হয়ে যায়।এ সময়ে নারীরা ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন, বিষণ্ন হয়ে থাকেন কিংবা আকস্মিক খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠেন।মনে রাখতে হবে, এটা একটা মানসিক এবং হরমোন পরিবর্তনের সময়। এ সময়ে তিনি স্বাভাবিক অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসতে পারেন। এই সময়গুলোতে তাকে ভালো এবং নতুন প্লেটে খাবার দিন। তিনি আপনার যে শার্টটি পছন্দ করেন সেটাই পরুন। এমনকি তিনি যদি ড্রয়িং রুম থেকে অকারণেই আসবাবপত্র সরাতে চান তবে সমর্থন দিন।মাসিক ঋতুচক্রের সময় নারীরা খাদে পড়ে যাওয়া সিংহের মতো উন্মাদ আচরণ করতে পারে। এই দুঃসময়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করবেন না মাসের সেই সময়টা এসেছে কি না। প্রশ্ন করার অর্থ আপনি এই প্রশ্নের মাধ্যমে তার সাথে একটা দূরত্ব তৈরি করলেন।আপনি যদি কখনো এ ধরনের পরিস্থিতির সময়ে নিজেকে আবিষ্কার করেন, তাহলে দেখবেন- আপনার সামনের নারীটির হাতে এক টুকরো চকলেট আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাসিক ঋতুচক্র চলাকালে চকলেট খাওয়া অনেক উপকারী। চকলেটের ট্রাইজেমিনাল গ্যাংলিওন ঋতুচক্রের সময় মাথাব্যাথা ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।মাসের এই সময়টা স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। এ ব্যাপারে আপনার সতর্ক থাকা দরকার। কারণ তার মুড পরিবর্তনের জন্য আপনাকে সহানুভূতিশীল হতে হবে।এই সময়টাতে আপনাকে প্রয়োজনে কিছু ঘরের কাজও করতে হবে। এমনকি স্ত্রী যদি বলেন- আমার স্যানিটারি ন্যাপকিনটা ড্রয়ার থেকে দাও তো- সেটাও আপনাকে করতে হবে। শরীর খারাপ থাকলে রান্নার কাজও আপনাকে করতে হবে। এটা আপনার কর্তব্য।
স্ত্রীর ভুল ধরাটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এই সময়টা ভুলত্রুটির উর্ধ্বে। কেননা, এ সময়ে ডায়েট ভুলে গিয়ে খাবার তালিকা এলোমেলো হতে পারে। এটা আপনার চোখে বড় দোষ হলেও এড়িয়ে চলুন। কেননা এটা অস্থায়ী একটা ব্যাপার। আপনি যদি তাকে চোখে চোখে রাখতে চান এবং ভুল ধরেন তাহলে এটা তাঁর মানসিক অবস্থার জন্য ক্ষতিকর হবে।তর্ক এবং মারামারি এ দুটো ব্যাপার মাসিক ঋতুচক্র চলাকালে কঠিন ভাবে এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। কারণ, এটা নিমিষেই আপনার প্রিয় মানুষটিকে গভীর হতাশায় ফেলে দিতে পারে। সব সময়ই তাকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা যদি অক্ষুণ্ন থাকে, তাহলে আপনার কর্তব্য পালনে দ্বিধা হবে না। ভালোবাসা আর কর্তব্যবোধ বজায় রাখুন- তাহলেই আপনি সুখী হবেন আর এ রকম দম্পতির কারনে একটা সমাজ হয়ে উঠবে সমৃদ্ধিশালি।
অনেকে কৃপনতা করেন তার ফল ও পেয়ে থাকেন। যেমন একজন করেছিল। গল্পটা সত্য তবে শিক্ষনীয়।এক ভাবির বায়না পরিপূর্ন করেননি ভাই।দু'বচর দেই দেই করে বেচারি অপেক্ষা করছিলেন।একবার ঈদ এলো আর চার দিন বাকি।এদিকে ভাই ক'দিনের জন্য বাইরে গেলেন।ভাবির এক সহচরি ব্যাপারটা জানতো।তিনি কিছু টিপস দিলেন।যেই কথা সেই কাজ।ভাবি এবার আগের মত না থেকে ঘর সাজালেন চমৎকার করে।পছন্দের খাবার রান্না করলেন।পার্লার এ গিয়ে সাঝলেন,বেচারা এলেন যথাসময়ে। ঘরে প্রবেশ করে পরিবর্তন দেখে বললেন কি হয়েছে তোমার? আগে তো কখনো এমন দেখিনি।ভাবি বললেন স্বামির জন্য এ তো বেশি কিছু নয়।খাওয়া শেষ।এবার ঘুমানোর পালা।হাত বাড়াতেই ভাবি বলে উঠলো ওগো! কাল আমার সখের সোনার সেট টা কিনবো টাকাট দাওনা।বেচারা বললো ঠিক আছে সকালে দিব।ভাবি বললেন আমার অপেক্ষার পালা শেষ এবার তোমার।বেচারা আর কি করবে।পকেট থেকে টাকাটা বের করে বললেন, মেয়েদের চলচাতুরি বুঝা ভার।আমি বলছি না আমরা এমন হব তবে আপনার সামর্থানুসারে খুশি রাখুন একে অন্যকে।মনে রাখবেন আপনার আ্ংগিনা শুধু আপনারই জন্য।তার হেফাযত আপনাদের দু'জনকেই করতে হবে।
আমাদের ভালবাসার কমতি ও সামাজিক সমস্যাগুলোর জন্য দায়ী আমরাই।আমাদের ভালবাসা যত গভীর হবে ঝলসানো কমে যাবে।আমাদের স্কুল গুলোতে শরির চর্চার ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয়া জরুরি।বেশ আগে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরির একটা কলাম পড়ে এর গুরুত্ব অনুভব করলাম।তিনি একটি মেয়ের চমৎকার ঘটনা বর্ননা করলেন।তিনি পূর্ব লন্ডন থেকে বাসায় ফিরছিলেন।পাতাল ট্রেনে উঠে একটি টিন এজার এর সামনে বসলেন।মেয়েটি একটি বই পড়ছিল যেমন জাপানিরা ট্রাভেল এ পড়ে থাকে।পরের স্টেশন থেকে তিনটি বালক উঠে বালিকাটির সামনে বসে টিজ শুরু করলো বিভিন্ন ভাবে।হঠাৎ একটি বালক তার পাশে এসে বসলো।এবার মেয়েটি বই বন্ধ করে তাকাল যেমন চৈত্রের দুপুরের প্রখর সূর্যকিরন প্রকম্পিত করে।মেয়েটির কারাত জানা ছিল।এক মিনিটের মাথায় ছেলেটিকে ধরাসায়ি করে ফেললো।বাকি দু'জন হতবিহবল হয়ে গেল।পরের স্টেশন আসতেই নেমে পালিয়ে গেল।আমাদের মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য এরকমই সজাগ হতে হবে।আজ সমাজে শিক্ষার কারনে মেয়েরা অনেক সজাগ হয়েছে কিন্তু শালিনতা কমে যাওয়ার কারনে বখাটেদের উপদ্রব বেড়েছে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি মেয়েদের শরীর চর্চার বিষয়গুলো সঠিকভাবে রপ্ত করে দেয়া যায় তাহলে তারা আত্মরক্ষা করতে সমর্থ হবে।আমাদের প্রত্যেকটি ভাল কাজই ছদাকা। রাসুল সা: বলেছেন ,তোমাদের ভাল সব কাজই সদাকা।'আপনার সুন্দর আচরন ও কথোপোকথন ও সদাকা।আসুন না আমরা আজ থেকে আমাদের ভাল কাজগুলো করতে শুরু করি এবং সমাজকে পন্কিলতা থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করি ।আপনার পোশাক অন্যের কাছে দেখতে যত অসুন্দর ই হোক তা আপনার কাছে প্রিয়।কবি বলেছেন , কালো আর ধলো বাহিরে কেবল ভিতরে সবার সমান রা্ংগা।
বিষয়: বিবিধ
৯০৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন