ইসলামি দলগুলোর নৈতিক ভিত্তির উপর ইসলামের বিজয় নির্ভর করে।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৫:৪৮:৩৮ বিকাল
আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মধ্যেই মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিহিত। আল্লাহতায়ালাকে একক সত্তা, সব বিষয়ে তাঁকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী মেনে নেওয়াই আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসের মূল কথা। এটিই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিশ্বাস। আর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব আদেশ-নিষেধ মেনে চলার মধ্যে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন, তাঁর রিসালাতকে স্বীকৃতি দেওয়ার হাকিকত নিহিত। আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সিদ্ধান্ত অস্বীকার করার অধিকার কোনো মুমিন নারী-পুরুষের নেই। যদি করা হয় তাহলে তা হবে আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে উদ্যত আচরণের শামিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা সূরা আহযাবের ৩৬ আয়াতে বলেন, 'একজন মু'মিনের পক্ষে উচিত নয় বা একজন মু'মিন নারীরও নয় যে যখন আল্লাহ ও তার রাসূল কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তখন তখন তাদের সে ব্যাপারে কোন মতামত থাকে।আর যে কেউ আল্লাহকে ও তার রাসূলকে অমান্য করে সে তাহলে নিশ্চই বিপথে গেছে স্পষ্ট বিপথ গমনে।'আল্লাহকে একক উপাস্য হিসেবে বিশ্বাস করে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর রসুল হিসেবে মেনে নিয়ে আবার আইন-কানুন, বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে যদি নিজেদের মনমতো বা খেয়ালখুশি মতো কিছু করা হয় তাহলে তা হবে কিছু মানা আর কিছু না মানার অন্তর্ভুক্ত। যা ছিল ইহুদি-নাসারাদের চরিত্র। এটাও আল্লাহর সঙ্গে এক ধরনের নাফরমানি। কেননা কোনো বিষয়ে বাহ্যিকভাবে একটু কষ্টকর বা কঠিন মনে হলেও মূলত আল্লাহ ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মধ্যেই সত্যিকারের কল্যাণ নিহিত। কারণ, আমরা যেটাকে কল্যাণ মনে করি চূড়ান্তভাবে তাতে কল্যাণ নাও থাকতে পারে। চূড়ান্ত পর্যায়ে অকল্যাণ আরও বেড়ে যেতে পারে। আর আমরা বাহ্যিকভাবে যাকে অকল্যাণ মনে করছি চূড়ান্ত পর্যায়ে কল্যাণও নিহিত থাকতে পারে। কেননা, চূড়ান্ত পরিণতি মানুষের হাতে নয়; বরং আল্লাহতায়ালারই হাতে।এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা সূরা নিসার ১৯ আয়াতে বলেন : 'এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ'। অতএব আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে। এর ব্যতিক্রম করলে তাতে শুধু আমাদের অকল্যাণই বয়ে আনবে। কল্যাণের কোনো কিছু পাওয়া যাবে না।
গত কয়েক শতকে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে ইসলামের বিভক্তিকরন ইসলামের শক্তিকে বিপর্যস্ত ও দুর্বল করেছে।মানুষ বিভক্ত হয়েছে দলে ও উপদলে।সনাতন ইসলাম থেকে আধুনিক ইসলামে রুপান্তরিত হয়েছে।পশ্চিমাদের সাথে পাল্লা দিয়ে মুসলমানদের জীবন মান উন্নত করার প্রয়াসই হলো আধুনিক ইসলামের বিবর্তন যা সনাতন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।ইসলামের মুল হলো আলকুরআন ও ছহি সূন্নাহ।আলকুরআনের হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন আল্লাহপাক নিজেই।রাসূল সা: এর হাদিস নিয়ে যারা মিথ্যা রচনা করেছেন তাদের ব্যাপারে সাহাবাগন ছহি হাদিসের গ্রন্থ প্রনীত করে এবং মিথ্যা হাদিসের কিতাব সংকলন করে মুসলিম জাতিকে সতর্ক করেছেন।আর যারা শির্ক ও বিদাআত করছে আজ পর্যন্ত হক্কানী উলামাগন তাদের সংস্কার করার জন্য দীনের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছেন।মুসলিম শাসকগনের বহুলাংশে অনুসরন করছেন ইহুদি নাসারাদের থেকে আমদানিকৃত গনতন্ত্র কিন্তু তাদের চর্চিত গনতন্ত্রটিও নয়।এদের এই গনতন্ত্রকে এখন অনেকে বলছেন 'গনতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র'।আমার আলোচনা এ বিষয়টি নিয়ে নয়।আমি একজন মুসলিম হিসেবে ইসলামের আলোকে বলতে চাই ও ইসলামকে জানতে চাই ও জানাতে চাই আসলে আমরা মুসলমানরা কোন দিকে যাচ্ছি।ইসলাম ও ইসলামের কাজ কর্ম অত্যন্ত স্পষ্ট।ইসলামের মুলনীতি রোজ কেয়ামত পর্যন্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে যা বাড়াবার ও কমাবার অধিকার কেউ রাখে না।মানবজাতির কল্যানের জন্য যা যা প্রয়োজন তা পরিপূর্ন করে দেয়া হয়েছে।যদি কোন সংস্কারের দরকার থাকতো তাহলে সেটাও কুরআন বা রাসূল সা: এর হাদিসে তথ্য দেয়া থাকতো।আলকুরআনে সেজন্য গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে এটি বিশুদ্ধ একটি কিতাব আর এটিকে পরিপূর্ন করে দেয়া হয়েছে।আর ইসলামের একটি উম্মতের কথাই বলা হয়েছে কুরআন ও হাদিসে।তাহলে প্রশ্ন আসে ইসালমে বিভক্তি কেন? রাসূল সা: এর হাদিস রয়েছে কোন নতুন সৃষ্টিই হলো বিদা'আত বা নব আবিষ্কার।এই নব আবিষ্কার যারা করবে তাদের স্হান হলো জাহান্নাম।
আলকুরআনে সূরা মা'য়েদার ৬৭ আয়াতে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন,'হে প্রিয় রাসূল! তোমার প্রভুর কাছ থেকে যা তোমার কাছে অবতীর্ন হয়েছে তা তুমি প্রচার কর।আর যদি তুমি তা না কর তাহলে তুমি প্রচার করলে না।আর আল্লাহ লোকদের থেকে তোমাকে রক্ষা করবেন।নি:সন্দেহে আল্লাহ অবিশ্বাসী লোকদের পথ প্রদর্শন করেন না।' যদি কোন মুসলমান তার ধর্মকে বিশ্বাস করে তাহলে ইসলামকে বিভক্ত করে বিভিন্ন দল ও উপদলে পরিনত করতে পারে না।সূরা আন'আমের ১৫৯ ও সূরা আর্ রুমের ৩২ আয়াতে এই ইসলামের বিভক্তকারীদের আল্লাহ দেখে নেয়ার কথা বলেছেন।প্রতিষ্ঠিত ইসলামের যুগগুলোতে ইসলামের শক্রু ছিল কিন্তু ইসলামের বিভক্তি ছিল না।গত কয়েক শতাব্দিতে বিশেষ করে চারজন ঈমামের অন্তর্ধানের কয়েকশ বছর পর থেকে মাযহাবকে কেন্দ্র করে এবং এর পরের সময়গুলোতে কবর পূজারি,বিভিন্ন তরিকা ও পীর তন্ত্রের হোথাদের দ্বারা ইসলামের বিভক্তিকরন হয়েছে।একশ্রেনীর মুসলিম ইসলামে আধুনিকতার ছোঁয়া এনে, নিজেদের কায়েমি স্বার্থের জন্য ইসলামের নামে গনতান্ত্রিক বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে ইসলাম কায়েমের জন্য।এগুলো ইসলামের সহায়ক শক্তি কিন্তু চূড়ান্ত ইসলাম কায়েমের সঠিক পথ এটি নয়।তারা ইসলামের নৈতিক চেতনা ছেড়ে দিয়ে নিজেদের তৈরি করা মতবাদের সাথে ইসলামের সংমিশ্রন করে একটি খিচুরি তৈরি করেছেন যাতে রয়েছে বিদা'আত ও কোন কোন ক্ষেত্রে শির্ক জনিত কাজও।সাধারন মানুষ অনেক সময় প্রশ্ন করে আমরা তো কুরআন হাদিছ কিছুই জানিনা তাহলে কোথায় যাব? এই শ্রেনীর এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর হিসেবে অনেকে বলে থাকেন,জাতীয়তাবাদী অন্যান্য দল ও গোষ্ঠী যাদের মেনিফেষ্টোতে ইসলামের কোন কথাই নেই এবং তারা ইসলামের আইন মানে না ও ইসলামের ৫টি মুল বিষয়কেও গুরুত্ব দেয়না,সেক্ষেত্রে এদের উচিত কোন ইসলামী দলের সাথে থাকা।কারন হলো,কোন শির্কীয় সম্প্রদায়ের সাথে থাকার চেয়ে বিদা'আতিদের সাথে থাকা ভাল।কেউ শির্ক করলে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যায়।আর কেউ বিদা'আত করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে ঈমানের কারনে আল্লাহ কোন না কোন সময় জান্নাতে তার রহমতের দ্বারা স্হান করে দিবেন।একজন মুসলিমের কাজ হলো ইসলামকে জানা ও সে অনুযায়ি পালন করা।আর যদি অজ্গ হয় তাহলে ইসলামের লোকদের সাথে অবস্হান করা।হতে পারে সে মুসলিম বিদা'আতিদের সাথে থাকলেও আল্লাহ তার চেষ্টার কারনে পথ দেখিয়ে দিবেন।কিন্তু কাফের- মুশরিক বা মুসলমান নামের যারা কাফের ও মুশরিকদের অনুসরন করে চলে তাদের সাথে অবস্হান করলে ফিরে আসা অসম্ভব।সারা বিশ্ব জুড়ে দু'ধরনের ইসলামের জামাত দেখা যায়।একটি জামাত হলো-আধুনিক ইসলামের জাগরনে বিশ্বাসি।এরা সমকালীন রাষ্ট্রশক্তির সাথে তথাকথিত গনতন্ত্রের পথে ইসলাম বিজয়ের স্বপ্ন দেখে।ইসলামের বিজয়ের জন্য যে জিনিসটি প্রয়োজন সেটি হলো একটি নিখুঁত মানুষ তৈরি করা।আর এই নিখুঁত মানুষ যারা তৈরি করবে সে নেতৃত্ব হবে নিখুঁত থেকে নিখুঁততর।আমি যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপঠকে ধরে নেই তাহলে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে হলো জামাতে ইসলামি বাংলাদেশ যারা সঠিক অবস্হানে থাকলে ইসালমি শরিয়া কায়েক করতে পারতো।এই দলটি রয়েছে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে।ভারত ও পাকিস্তানে তাদের যে স্বাতন্ত্র রয়েছে তাদের দলীয় কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে তাদের তেমন পরিবেশ নেই।এর কারন হলো ১৯৭১ সালে যুদ্ধের বিরোধিতা করা।যখন ভারত থেকে পাকিস্তান বিভক্তির আন্দোলন চলছিল তখন মওদুদি সাহেব বিরোধিতা করেছিলেন এবং মুসলিম লীগকে সাপোর্ট করেননি।পাকিস্তান হলে এর পর তিনি ভারত থেকে পাকিস্তান চলে এলেন।একই কাজটি হয়েছিল ১৯৭১ সালে।প্রয়াত অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন।দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলেও তিনি ১৯৭৮ সালে দেশে ফিরেছিলেন।এখানে একটি বিষয় হলো-এই দু'জন নেতা পাকিস্তান ও বাংলাদেশ হওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধীতা করে নিজেদের কথার উপর স্হির থাকলেন না।মওদুদি সাহেবেরতো ভারতে থাকারই কথা উনার সিদ্ধান্তনুযায়ি।আবার অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবেরও উচিত ছিল পাকিস্তানে থাকা।যাই হোক, অন্যান্য সেকুলার ,বাম ও জাতীয়তাবাদি দলগুলোর সাথে এদের পার্থক্য হলো তারা ইসলামের কথা বলে ও কিছু কাজ ও করে তাদের দলগত পরিচালনাবিধিনুসারে।বাংলাদেশের ইতিহাসে লিখিত বই গুলোতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ব্যাপারে এ দলটি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ননা ও অভিযোগ করা হয়েছে যা এই দলের নেতৃবৃন্দ অস্বীকার করেছে।তাদের অভিমত যে,তারাই একমাত্র দল ছিল না,মুসলিম লীগের মত বড় দল ছিল বা সহযোগী অন্যান্য ইসলামি দল ছিল যারা হত্মাযজ্গে অংশ নিয়ে তাদের উপর দিয়ে চালিয়ে দিয়েছে।কিন্তু মাঠ পর্যায়ে গ্রামে গন্জে যুদ্ধের সময়ে অনেক মানুষ অভিযোগ করেছে এরা অনেকে ছিল যারা এই সংগঠনটি করতো।মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস থেকে একটি সংক্ষিপ্ত বর্ননা এভাবে দেয়া যায়।
জামায়াতে ইসলাম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধীতা করেছিল।এটি ছিল তাদের দলীয় ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।যেহেতু দলটির জন্ম হয়েছিল ১৯৪১ সালে এবং সেহেতু পাকিস্তানের সাথেই সম্পৃক্ত থাকার কথা।অনেকে বলে তারা ভুল করেছিল।আমি ঠিক এভাবে বলবোনা।যেহেতু এটি একটি রাজনৈতিক দল এবং তাদের জন্ম হয়েছে পাকিস্তানে সেহেতু তারা পাকিস্তানকেই সাপোর্ট করবে।এটি তাদের রাজনৈতিক একটি এজেন্ডা।আমি তাদের নেতৃত্বের ভিশনকে দায়ী করবো। কারন আমি একজন সচেতন নাগরিক হলে যা করতাম তা হলো-যেহেতু আমি পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসি এবং পূর্ব পাকিস্তান,পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের একটি ঘোষনা দিয়ে দিল তখন আমার দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় আমার মাতৃভূমিকে ভালবাসা।সেই প্রজ্গাটি সেদিন যদি তারা দেখাতে পারতো আজ এ দলটি বাংলাদেশের একটি বড় দলে পরিনত হতে পারতো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিশ্চই তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছিল কিন্তু তারা জাতির কাছে নিজেদের সে ভুলের ব্যাখ্যাটি যদি দিয়ে দিত সেটা পরিস্কার হয়ে যেত।কোন অপরাধ করার পর হয় শাস্তি না হয় ক্ষমা।শেখ মুজিব দেশের স্বার্থে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন কিন্তু আওয়ামিলীগ তা মেনে নেয় নি।কিন্তু তারা প্রথম বার তাদের সাথে কোয়ালিশন করে বিএনপিকে হঠিয়েছিল।সে সময় তাদের বিচার দাবি করেনি।এর অর্থ দাঁড়ায় আওয়ামিলীগ ভোটবাংকে বিশ্বাসী।অভিযোগ রয়েছে- দলটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী, বুদ্ধিজীবী এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যায় সহযোগিতা করেছিল বলে তথ্য চিত্রে প্রকাশিত হয়েছে। দলটির অনেক নেতা-কর্মী সেসময় গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিল, যারা গণহত্যা, বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে স্থানান্তরের মত যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত। জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা আধাসামরিক বাহিনীশান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিল।১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর, নতুন সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের উপর থেকে নিষেদ্ধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান। জামায়াতের উদ্দেশ্য হলো শরীয়া ভিত্তিক একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যা পাকিস্তান ও সৌদি আরবের দেশসমূহে লক্ষ্য করা যায়। জামায়াতের বিরুদ্ধে হিন্দু ও বৌদ্ধ এবং আহমদীয়া মুসলমানদের উপর ধারাবাহিক আক্রমনের অভিযোগ করা হয়ে থাকে যার যার দলীল পত্র অপ্রতুল।।১৯৮০-এর দশকে জামায়াত গণতন্ত্রের পুনুরুদ্ধারের জন্য বহুদলীয় জোটে যোগদান করে। এসময় দলটি আওয়ামী লীগ ও সমসাময়িক বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তীতে দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে বিএনপির সাথে মিলিত হয়ে আরো অন্য দুটি দলসহ চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট জয় লাভ করলে বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীন জামায়াতের দুজন সদস্য মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সাল থেকে দলটির জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি ৩০০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫টি আসন লাভ করে। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে; ২০১২ সালের মধ্যে দুজন বিএনপি নেতা ও জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান সদস্যসহ ৮ জন নেতার বিরোদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত জামায়াতের সাবেক সদস্যসহ মোট চার জনকে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় মৃত্যুদন্ড ঘোষণা, একজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবকে ৯০ বছর কারাদন্ড প্রদান করা হয় এবং গত নভেম্বরে তিনি পরপারে চলে যান। রায়গুলোর প্রতিবাদে জামায়াত দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস প্রতিবাদ করে যাতে অনেক লোক নিহত হয় ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়।ইসলামের বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হক্কানী অসংখ্য উলামারা বলছেন একটি মুসলিম দেশে ফাসেক মুসলিম সরকার থাকলেও তাদের ক্ষমতা থেকে টেনে হেঁছড়ে নামানো এবং সহিংসতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমালের ক্ষতি করা ইসলামের কাজ নয়।যাই হোক অদূর ভবিষ্যত বলে দিবে ইতিহাস কোন দিকে মোড় নেয় তবে ইসলামের যথার্থ পথে থেকে ইসলাম কায়েম করাই হলো ইসলামের কাজ।বাংলাদেশে সে মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম এবং সে মানুষ গড়ার জন্য যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা হয়ে উঠেনি।মানুষ দীন শিখছে ব্যাক্তিগত, পারিবারিক ও মসজিদ মাদ্রাসা ও খানকার মাধ্যমে।তবে বহু সংখ্যক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধর্মের নামে মানুষকে শির্ক ও বিদাআতের(নব আবিষ্কার) দিকে ঠেলে দিচ্ছে।বাংলাদেশ জামাতে ইসালাম তথাকথিত গনতন্ত্রের মধ্য থেকে ইসালমের বিজয় কিভাবে করবেন এ নিয়ে প্রশ্ন করছেন অনেকে।কারন গনতান্ত্রিক ব্যাবস্হায় যে সংবিধান তা হলো মানব রচিত সংবিধান।আর ইসলাম কায়েমের জন্য সংবিধান হলো কুরআন ও সুন্নাহ।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জামাতের ৩-৫% ক্ষমতায় এসে এই সংবিধান পরিবর্তন করা কঠিন।আর জামাতে ইসলাম কায়েম করার মত সেই নিষ্ঠাবান মানুষ তৈরি হয়েছে কোথায়? যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে যুদ্ধাপরাধের মত একটি অভিযোগ এবং তাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে রয়েছে সহিংসতার চরম অভিযোগ।এ ক্ষেত্রে অনেক বিশেষজ্গগন বলছেন,তারা বাংলাদেশের সুচনা থেকেই স্বাধীন দেশের বিরোধিতা করেছে এবং তাদের কুরআন ও সুন্নাহর নৈতিক ভিত্তি নেই।কারন তারা তাদের মত পরিবর্তনে বিশ্বাসী।তারা সুযুগ পেলে সেকুলারে যোগ দেয়া আবার জাতীয়তায়।আবার স্বার্থ ক্ষুন্ন হলে তাদের বিরোধিতা করে।এই চরিত্রতো ইসলামের নৈতিক শিক্ষা নয়।ফলে তারা যদি সেকুলার ও জাতীয়বাদ থেকে পৃথক না হয় সহিংসতা বেড়েই চলবে কারন বড় দুটি দল তাদের যুগ যুগ ধরে ব্যাবহার করে তাদের ফায়দা লুটবে আর জামাত উচ্ছিষ্ট কিছু লাভ করবে আর পরিনতি ভোগ করবে দেশের জনগন।সুতরাং দেশের মানুষ কামনা করে জামাত যদি ইসলামি শাসন কায়েম করতে চায় ইসলামের দিকে ফিরে আসুক ও অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর সাথে বসে দেশে মুলধারার একটি ইসলামি দলে পরিনত হওয়ার স্বপ্ন দেখুক,এটিই কল্যান এবং এটিই সুন্নাহ।
আর একটি জামাত হলো- তাবলীগ, যে জামাতের সৃষ্টি হয়েছে গত ৮০/৯০ বছর ধরে এবং তার মুল কেন্দ্র হলো দিল্লীর নিজামুদ্দিনে।এটিও ইসলামের একটি সহায়ক শক্তি তবে শির্ক ও বিদাআতে ভরপুর।তাদের ফাযায়েল নামক গ্রন্হটির অনেকগুলো ভাগ আছে যেমন-ফাযায়েলে নামাজ, যাকাত,রোজা,হ্জ্জ,ও দুরুদ।এই কিতাবগুলিতে রয়েছে শির্ক ও বিদাআত।যদিও তারা ইসলামের মৌলিক কাজটি করে ঈমান লালনের মাধ্যমে ও মানুষকে নামাজের দিকে ডাকে,অজ্গ লোকদের নামাজি বানায় সেটি একটি মহৎ কাজ।তবে দীনের প্রচারের জন্য প্রয়োজন আলকুরআন ও ছহি সূন্নাহের প্রচার।এ ক্ষেত্রে তাদের অনেক ঘাটতি রয়েছে।দীনের ক্ষেত্রে তাদের অনেক দু;শাহস ও অজ্গতা রয়েছে।এরা দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয় না,দুনিয়ায় যত ঝামেলাই হোক না কেন তারা এর মোকাবিলা করতে চায় না।সব সময় পজিটিভ চিন্তা করে ও নেগেটিভের ধার ধারে না। হক্কানি আলেমদের উচিত যখনি যার চোখে সমাজে কোন সমস্যা ধরা পড়বে,যার যতটুকু ক্ষমতা রয়েছে তা দিয়ে প্রচেষ্টা চালানো যাতে সমাজ অস্হির না হয়ে পড়ে।আমাদের কাজ হলো একজন মুসলিম হিসেবে অন্য মুসলিম ভাইদের সাহায্য করা ও শোধরিয়ে দেয়া এর বেশী কিছু নয়।
ধর্মকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা হয়। এক ভাগকে বলা হয়, উন্নত ধর্মবিশ্বাস আর এক ভাগকে বলা হয়, অনগ্রসর ধর্মবিশ্বাস। উন্নত ধর্মবিশ্বাসের লক্ষন হলো, এতে কেবল প্রার্থনা আর পরকালের কথা আলোচনা করা হয়নি। আলোচনা করা হয়েছে ইহজগতের জীবনযাপন প্রণালী কেমন হওয়া উচিত তা নিয়েও। অর্থাৎ এতে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে নীতি-চেতনা। চেষ্টা হয়েছে মানুষে মানুষে বিবাদ-বিসংবাদ কমিয়ে আনার। এতে মানুষের ইহজগতের জীবনকে অর্থহীন বলে বিবেচনা করা হয়নি। আল কুরআনে সূরা সা'আদ এর ২৬ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে দাউদ, আমরা তোমাকে পৃথিবীতে খলিফা বানিয়েছি,সেজন্য তুমি লোকজনের মধ্যে বিচার কর ন্যায়সংগতভাবে আর খেয়াল খুশির অনুসরন করো না পাছে তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করে ফেলে।নি:সন্দেহে যারা আল্লাহর পথ থেকে বিপথে যায় তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।কেননা তারা ভুলে গিয়েছিল হিসাব নিকেশের দিনের কথা'। সম্পদ নিয়ে মানুষে মানুষে বিবাদ-বিসংবাদ লেগেই থাকে। মানবজীবনে বিবাদ-বিসংবাদ কমাতে হলে সমাজজীবনে সম্পদের বিভাজন হতে হয় মোটামুটি সমতাবাদী নীতিতে। ইসলামে উত্তরাধিকার আইন এমন যে, তাকে যথাযথভাবে মেনে চললে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে সম্পদের পার্থক্য খুব বড় হয়ে উঠতে পারে না। আল কুরআনে সূরা হাশরের ৭ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ধন কেবল ধনীদের মধ্যে সঞ্চালিত হতে দেয়া যাবে না’। ইসলামে এই পৃথিবীর জীবনকে খাটো করে দেখা হয়নি। বরং তাকে প্রদান করার চেষ্টা হয়েছে শৃঙ্খলা (Integration)। অনেকে তাই বলেছেন, ইসলামকে একটি ধর্মবিশ্বাস হিসেবে বিবেচনা না করে, সমাজ-শৃঙ্খলা (Social discipline) প্রদানের আন্দোলন হিসেবে দেখতে হবে।ইসলামকে অনেকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন, একটি ব্যবহারিক (Practical) ধর্ম হিসেবে। কেননা, ইসলামে মানুষকে কেবল আল্লাহর ইবাদত করতে বলা হয়নি। বলা হয়েছে সংসারধর্ম পালন করতে। বলা হয়েছে, গৃহী হতে। আল কুরআনে সূরা ইসরার ৩১ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সন্তানদের খেতে দিতে পারবে না ভয়ে তাদের হত্যা কোরো না। সন্তান হত্যা মহাপাপ'। আল কুরআনে সূরা নূরের ৩২/৩৩ আয়াতে মানুষকে বলা হয়েছে বিবাহিত জীবন যাপন করতে। বলা হয়েছে, খাদ্যের জন্য চিন্তা না করতে। পড়ে আছে বিরাট সমুদ্র। আল কুরআনে সূরা মায়েদার ৯৬ আয়াতে বিশেষভাবে বলা হয়েছে মৎস্য শিকার করে খেতে। সূরা বালাদের ১৪ আয়াতে বলা হয়েছে, দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষকে আহার্য প্রদান করতে ।আল কুরআনে কেবল আল্লাহর ইবাদত করতে বলা হয়নি, বলা হয়েছে বৃদ্ধ পিতা-মাতার দেখভাল করতে তাদের সাথে সুন্দর আচরন করতে ( সূরা ইসরা -২৩/২৪)।
কুরআনের এসব শিক্ষার কথা তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় খবর পড়তে যেয়ে দেখতে পাওয়া যায়। তাবলিগ জামাত ব্যবহারিক ইসলাম নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের বক্তব্য হলো, মুসলমানেরা এসো তাবলিগ জামাতের কাছ থেকে খাঁটি ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করতে। কিভাবে সঠিকভাবে নামাজ (সালাত) পড়তে হবে, তার সবক নেয়ার জন্য। ইসলাম তাদের কাছে হতে চায় নামাজ পড়ার মধ্যেই বিশেষভাবেই সীমিত। ব্যবহারিক ইসলাম তাদের চিন্তা-চেতনায় স্থান পেতে চায় না। তারা বলতে চান মর্তের জীবন ক্ষনস্থায়ী পরকালের জীবন হলো অনন্ত। আর ঠিকভাবে নামাজ পড়তে না পারলে যাওয়া যাবে না বেহেশতে (জান্নাতে)। কিন্তু আল কুরআনে বলা হয়েছে, সব সুকৃতিকারী বেহেশতে যাবে। তাদের ভয় করার কোনো কারণ নেই। কুরআনে বলা হয়নি, কেবল কথিত মুসলমানেরাই বেহেশতে যাবে (সূরা বাক্কারা - ১১২)। অন্য দিকে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ দয়ালু ও ক্ষমাশীল। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কুরআনের ১১৪টি সূরার (অধ্যায়) মাত্র একটি ছাড়া আর সব ক’টির প্রারম্ভে বলা হয়েছে, আল্লাহ পরম দয়ালু এবং ক্ষমাশীল। ইসলামে কেবল মানুষকে শাস্তি দিয়ে ভালো করার কথা বলা হয়নি। কিন্তু তাবলিগ জামাতের সমর্থকদের কথা শুনে মনে হয়, তাদের ইসলামি চিন্তায় ইসলামের এসব শিক্ষা ছায়া ফেলে না। ইসলামের ইতিহাসের সাথে তাবলিগ জামাতের সদস্যদের অন্য দিক থেকেও চিন্তা-চেতনার মিল দেখা যায় না। ইসলামের ইতিহাসে আমরা দেখি যে, ইসলামের নবী সা: নিজে যুদ্ধ করেছেন। স্থাপন করেছেন একটি রাষ্ট্র। তার লক্ষ্য হয়েছে মাটির পৃথিবীতে একটি আদর্শ রাষ্ট্র স্থাপন। শাসক হিসেবে তিনি করেছেন প্রতিদিন প্রশাসনিক কাজকর্ম। তার মধ্যে ছিল না মাটির পৃথিবীর ওপর কোনো বৈরাগ্যের ভাব। তাবলিগ জামাতের লোকেরা বলেন, তাদের আন্দোলন হলো আধ্যাত্মিক চেতনার আন্দোলন। এর সাথে রাজনীতির কোনো যোগাযোগ নেই। অথচ শুরু থেকেই ইসলামের লক্ষ্য হয়েছে আদর্শ রাষ্ট্র গড়ার। যার কাঠামোর মধ্যে মানুষ পেতে পারবে শান্তিপূর্ণ জীবন। অথচ তাবলিগ জামাতের সংশ্লিষ্টরা বলেন, কেবলই পরকালের কথা। আর বলেন, তাদের বক্তব্য হলো প্রকৃত ইসলামি। যেটাকে স্বীকার করলে ইসলামের অখণ্ড ইতিহাসকেই অস্বীকার করতে হয়।
তাবলিগ জামাত আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইলিয়াস (১৮৮৫-১৯৪৪) জন্মেছিলেন দিল্লির কাছে এক মুসলিম পরিবারে। এই পরিবারের ওপর ছিল সুফি চিন্তাচেতনার বিশেষ প্রভাব। জনাব ইলিয়াস যেটাকে কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সুফি চিন্তাচেতনার মধ্যে জগৎ বৈরাগ্য বিশেষভাবেই অনুপ্রবিষ্ট হয়ে আছে। তারা আল্লাহর ধ্যান (মোরাকাবা) করেন আল্লাহর দিদার বা সাক্ষাৎ লাভের জন্য এবং মৃত্যুর পরবর্তীকালে অনন্তকাল শান্তিময় অস্তিত্বলাভের আশায়। সুফি চিন্তাচেতনা আসলে ইসলামের অংশ ছিল না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা ইসলামের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হয় মধ্য এশিয়া থেকে। মধ্য এশিয়ায় ছিল বিশেষ ধরনের বৌদ্ধ মতবাদ। অনেকের মতে এই মতবাদ থেকে উদ্ভব হতে পেরেছে সুফি চিন্তাচেতনা। তাবলিগ জামাতের ওপরে কিছুটা কাজ করে চলেছে এই প্রাচীন চেতনা।চিল্লা কথাটা ফারসি। শব্দগতভাবে চিল্লা বলতে বুঝায় চল্লিশ। তাবলিগ জামাতের লোকেরা চিল্লা করেন তাদের ভাবধারা প্রচারের জন্য। চিল্লা বলতে বুঝায়, ঘরসংসার ছেড়ে মসজিদে থাকা। সেখানে রান্না করে খাওয়া। আর সেখান থেকে মুসলমানদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে তাদের ইসলামের দাওয়াত দেয়া। ইসলামের দাওয়াত দেয়া বলতে বুঝায়, তাবলিগ জামাতের বিশেষ সভায় যোগ দিয়ে তাদের বক্তব্য অর্থাৎ ইসলামের ভাষ্য শ্রবণ করা এবং কিভাবে প্রকৃত নামাজ আদায় করা যায়, সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা। প্রতি তাবলিগ জামাতের সদস্যকে জীবনে তিনবার চল্লিশ দিন করে চিল্লা করতে হয়। এ ছাড়া প্রতি মাসে চিল্লা করতে হয় তিন দিন করে। অর্থাৎ ইসলামের দাওয়াত দিতে যেতে হয় বাড়ি বাড়ি। এই তিন দিন তাদের থাকতে হয় মসজিদে; অন্য যারা চিল্লা করছেন তাদের সাথে। তাই একেও বলা হয় চিল্লা করা। এ রকমই শুনেছি তাবলিগ জামাত যারা করেন, তাদের সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তিদের কাছে। এ বিষয়ে আমার নিজেরও কিছুদিন বসার অভিজ্গতা রয়েছে তাদের জানা ও বুঝার জন্য।তাদের কাছে কোন কুরআন ও হাদিসের গ্রন্হ থাকে না।একজন মুয়াল্লেম বয়ান দিতে থাকেন।মুসুল্লীদের বুঝার উপায় নেই হাদিসটি ছহি কিনা। আমার অনেক পরিচিত ব্যক্তির কাছে শুনেছি, তাবলিগের ভাইরা চিল্লা দিতে চলে যান সংসারের কোনো টাকাপয়সা না দিয়ে। এ সময় পরিবারে তার অন্য ভাইরা চিল্লাকারীর পরিবারের খরচ চালায়। নিজের সংসার এবং ভাইয়ের সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে তাদের পড়তে হয় আর্থিক অনটনে।তাছাড়া যুবতী মেয়ে ও অনেকে নববিবাহিত স্ত্রী রেখেও চলে যায়। এভাবে তাবলিগ জামাতের অনেকের সংসারে সৃষ্টি হয় আর্থিক অনটন অবৈধ যৌনাচার।আর এভাবে কুরআন হাদিসে কোথাও ইসলাম প্রচারের কথা বলা হয়নি এবং রাসূল সা: এভাবে শিখিয়েও যান নি। এই প্রথা তাবলিগ জামাতের নিজস্ব একটি তৈরি করা রাস্তা। ইসলামি পরিভাষায় একে বলা যেতে পারে বিদ'আত (Heresy)। বিদআত বলতে এমন নতুন কিছু করা বুঝায়, যা আসলে হলো ইসলামের জন্য নতুন সৃষ্টি ও হানিকর। ইসলামে এভাবে ধর্ম প্রচার করতে বলা হয়নি। বলা হয়েছে, মানুষকে ইসলামের পথে আনতে হবে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে (আল কুরআন, সূরা আন নাহল আয়াত- ১২৫)। তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা অনেক সময় অনেককে তাদের ধর্মসভায় যেতে অনুরোধ করেন প্রায় নাছোড়বান্দারূপে যেটা খুবই বিরক্তিকর।আর একবার বাগে না আনতে পারলে তার থেকে তারা দূরুত্ব বজায় রাখে।আপনাকে দশ হাত দূরে দেখলে মোড় দিয়ে দিবে অন্যদিকে টান। আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই এটা বলছি। তাবলিগ জামাতের সাথে কথা বললে মনে হয়, তাদের মধ্যে বিরাজ করছে বিশেষ ধরনের সেকেলে মনোভাব। তাদের ওপর নেই বর্তমান যুগের জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোনো প্রভাব অথবা তারা অনুসরনও করেনা পুরোপুরি রাসূল সা:কে। তাবলিগ কথাটা আরবি এর অর্থ শব্দগত অর্থে প্রচার। জামাত কথাটাও আরবি। এর অর্থ সমিতি বা সংঘ। তাই তাবলিগ জামাত বলতে বোঝায় প্রচার সমিতি। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে বলতে হবে ইসলাম প্রচার সমিতি। এই সমিতির উদ্ভব হয়েছে ১৯২০-এর দশকের শেষ ভাগে। সমস্ত ঊনবিংশ শতাব্দী ধরে উত্তর ভারত এবং বাংলাদেশে চলেছিল ওহাবি আন্দোলন। ওহাবি আন্দোলনও ছিল বিশুদ্ধ ইসলামের আন্দোলন। ওহাবিরা বলতেন, পীর পূজা চলবে না,কবর পূজা চলবে না। করতে হবে এক আল্লাহর ইবাদত ( লা শারিক আল্লাহ)। কিন্তু এই উপমহাদেশে ওহাবি আন্দোলন কেবল একটি ধর্মনৈতিক আন্দোলন হয়েই থাকেনি। ওহাবিরা চেয়েছিলেন নাসারা ও ব্রিটিশ শাসনেরও অবসান। জনাব ইলিয়াসের ‘বিশুদ্ধ’ ইসলামের আন্দোলন ব্রিটিশবিরোধী ছিল না। ব্রিটিশরাজ তাই তাবলিগ জামাতকে দিয়েছে বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা। এখন তাবলিগ জামাতকে নিয়ে অনেক কথাই শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, তারা নাকি পাচ্ছেন ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী একটি বিতর্কিত দেশের বিশেষ সাহায্য সহযোগিতা। সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ইসলামি দল ও সংস্থা যখন আরব মুসলমানদের ওপর সেই দেশটির অত্যাচারের নিন্দা করছেন, তখন তাবলিগ জামাত থাকছে এ ক্ষেত্রে নিন্দা থেকে রহস্যজনকভাবে বিরত। একসময় তাবলিগ জামাত ব্রিটিশরাজের বিশেষ সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছে। এখন সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছে ইসলামের শত্রুভাবাপন্নদের কাছ থেকে, এই রকমই বাজারে গুজব। শোনা যাচ্ছে, বহু ইহুদি বাংলাদেশে ঢুকেছে ছদ্মনাম নিয়ে। তারা এ দেশে ঢুকেছিল ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে। কিন্তু পরে আর যায়নি ভারতে। ইহুদিরা চাচ্ছে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে অর্থলগ্নি করতে। আর সেই সাথে চাচ্ছে বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াতে। এই অভিযোগ কতটা সত্য আমরা তা জানি না। অভিযোগ প্রমাণিত নয়। তবে অভিযোগটা উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। বাংলাদেশের একটি নামকরা দৈনিক পত্রিকা চলেছে নাকি বিশেষ দেশের গোয়েন্দাচক্রের তত্ত্বাবধানে। পত্রিকাটির প্রতি সংখ্যা ছাপাতে খরচ পড়ছে ২৩ টাকার মতো। কিন্তু পত্রিকাটি প্রতি সংখ্যা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। সারা বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দাচক্র র-এর চেয়ে সেই দেশটির গোয়েন্দাচক্র নাকি হয়ে উঠেছে অনেক বেশি তৎপর। তাদের তৎপরতা বাংলাদেশে বেড়েছে ভূরাজনৈতিক কারণেও।
আমরা এত দিন শুনতাম তাবলিগ জামাত রাজনীতি করতে চায় না। কিন্তু এবার আমরা দেখলাম, বাংলাদেশে যখন চলেছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, তখন তাবলিগ জামাত ডাক দিলো টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার। তারা ইচ্ছা করলে ফেব্র“য়ারি মাসেও বিশ্ব ইজতেমা করতে পারত। ইতঃপূর্বে বিশ্ব ইজতেমা ফেব্র“য়ারি মাসেও হয়েছে। কিন্তু এবার তা তারা করতে চাইল না। আমরা দেখলাম, আওয়ামী লীগ নেতাদের বলতে, বিএনপি একটি ইসলামবিরোধী প্রতিষ্ঠান। তাই তারা বিশ্ব ইজতেমার জন্য তাদের আন্দোলন বন্ধ না করে আরো তীব্র করতে চেয়েছে। কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো, যেমন বিশ্ব ইজতেমা হয় বাংলাদেশে। কিন্তু তাবলিগ জামাতের সদর দফতর হলো দিল্লি। প্রশ্ন উঠছে কেন তাবলিগ জামাত ঢাকায় তাদের সদর দফতর না করে দিল্লিতেই রাখছে, সেটা নিয়ে। ভাষা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। তাবলিগ জামাতের দাফতরিক ভাষা হচ্ছে উর্দু। এতে বাংলা ভাষার কোনো স্থান নেই। এমনকি টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমাতেও উর্দু পালন করছে প্রধান ভূমিকা; বাংলা ভাষা নয়। এ নিয়েও তোলা যেতে পারে প্রশ্ন।জনাব ইলিয়াস তার শিক্ষাজীবনের এক অংশ কাটান দেওবন্দ দারুল উলুমে। দেওবন্দ দারুল উলুম হলো একটি বিখ্যাত ইসলামি বিদ্যাকেন্দ্র। দেওবন্দ দারুল উলুম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৬ সালের ৩০ মে। এই শিক্ষাকেন্দ্র সারা মুসলিম বিশ্বে বিশেষভাবে খ্যাত। কিন্তু এর শিক্ষাব্যবস্থা যথেষ্ট পুরনো। যেমন, এতে চিকিৎসাবিদ্যা শেখানো হয় চার বছর ধরে, ইউনানি পদ্ধতিতে। আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতিতে নয়। ইউনানি চিকিৎসাপদ্ধতির উদ্ভব হয়েছিল প্রাচীন গ্রিকদের মধ্যে, যারা বাস করতেন আইওনিয়াতে। এর উদ্ভাবক মুসলিম আরবেরা নন। তারা এটা গ্রহণ করেছিলেন গ্রিকদের কাছ থেকে। কিন্তু এখন ইউনানিপদ্ধতিকে (হেকিমি চিকিৎসা) মনে করা হয় ইসলামি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে। কিন্তু আমরা যদি একে ইসলামি চিকিৎসাপদ্ধতি বলে আঁকড়ে থাকি, তবে সেটা ভুল করাই হবে। কারণ চিকিৎসাবিজ্ঞান এখন এগিয়ে গেছে সে সময়ের থেকে অকল্পনীয়ভাবে। জনাব ইলিয়াস ছিলেন খুবই রক্ষণশীল মুসলমান। আর তার প্রতিষ্ঠিত তাবলিগ জামাতের লোকেরা হয়ে আছেন যথেষ্ট রক্ষণশীল। তারা চিন্তা করে চলেছেন অতীতমুখী হয়ে। দেওবন্দের অনেক অধ্যাপক ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধী। তারা মনে করতেন, এই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে শিয়া মুসলমান আগা খান ও মুহম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বারা। এই আন্দোলনে সহযোগিতা করলে ঠকতে হবে সুন্নি মুসলমানদের। কিন্তু দেওবন্দের মূল ধারার বিরোধিতা সত্ত্বেও এই উপমহাদেশের মুসলমানরা শরিক হন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। ফলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সাবেক পাকিস্তান রাষ্ট্র। আজকের বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে সাবেক পাকিস্তান ভেঙে। যা ছিল একদিন পূর্ব পাকিস্তান, তা পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে। আর দেওবন্দ প্রভাবিত জনাব ইলিয়াস প্রতিষ্ঠিত তাবলিগ জামাত-এর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে পারছে ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত টঙ্গীতে। এই ইতিহাসকে অনেকের কাছে মনে হতে পারে বিচিত্র।
যাই হোক আসল কথা হলো-আমাদের দেশ একটি মুসলিম দেশ।আমরা চাই ইসলামের কাজগুলো স্বস্তির সাথে করতে।ইসলামে কোন জোর জবরদস্তির ব্যাপার নেই।আবার ইসলামে হানাহানিও নেই।আমরা যদি আখেরাতে বিশ্বাসী হয়ে থাকি তাহলে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সব সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।কিন্তু প্রচন্ড বিরোধ স্বত্তেও দেশে ইসলামের কাজ চলছে।তবে ইসলামকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার পদ্ধতি হলো রাসূল সা: এর ২৩ বছরের নবুওতি জীবন পদ্ধতি।যারা দুনিয়া জুড়ে ইসলামের আন্দোলন করার প্রয়াস চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে মুল নৈতিক চেতনা বিদ্যমান নেই।ইসলামের একজন সত্য নেতা হতে হলে চরম সত্যবাদি ,দৃড়চেতা, প্রজ্গা সম্পন্ন ও লোভলালসার উর্ধে থাকতে হবে।এ রকম নেতা খুব কমই দেখতে পাওয়া যায় সমাজে।সুতরাং মনে করার কারন নেই যে,ইসলামের একটি বড় দল হলেই যে ইসলাম কায়েম হয়ে যাবে।ইসলাম কায়েম করতে হলে ইসলামের মানুষ তৈরি করার জন্য কাজ করতে হবে।প্রজেক্ট হাতে নিতে হবে।সমকালীন শক্তির সাথে পান্জা লড়ে ইসলাম তো কায়েম হবে না বরং মানুষের জান মালের অপুরনীয় ক্ষতি সাধিত হবে।প্রতিটি বিজয়ের জন্য দরকার একটি ভিশন ও নৈতিক ভিত্তি যার অনুশীলন হতে থাকলে কয়েক যুগ পেরিয়েও লক্ষ্যে পৌঁছার সম্ভাবনা থাকে। ভারতের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এপিজে আব্দুল কালাম আজাদ একবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে সংক্ষিপ্ত একটি ভাষনে বলেছিলেন,'I am the bold citizen.every citizen is my kith & kin.where there is richestness in the heart,there is beauty in the character,when there is beauty in the character ,there is harmony in the home,when there is harmony in the home, there is order in the nation,when there is order in the nation,there is peace in the world.'
বিষয়: বিবিধ
১৩০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন