বাজারে মন্দ মুদ্রার আবির্ভাব হলে ভাল মুদ্রা আপনিই উবে যায়।
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১১ জুন, ২০১৪, ০৫:৪৫:১৩ বিকাল
অর্থনীতিতে একটি বিষয় পড়েছিলাম ছাত্রাবস্হায় Bad money drives good money out of circulation.আজ অনেক পরে টার্মটি মনে পড়লো।স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর অত্যন্ত দু;খের সাথে বলতে বা লিখতে হচ্ছে যে আমরা প্রকৃত অর্থে এখনো স্বাধীন হতে পারি নি।স্বাধীনতার যে চেতনার কথা বলে দেশ স্বাধীন হয়েছিল স্বাধীনতার পর ব্যাক্তি স্বার্থকে কাজে লাগিয়ে গনতন্ত্রের পোষ্যপুত্ররা সেই চেতনাকে খর্ব করছে।শুধু যে জাতীয়তাবাদি শক্তিই এর সাথে জড়িত তা নয়, ইসলামের শক্তিগুলোও তাদের ইসলামি চেতনার কথা বলে এ সব স্বার্থসিদ্ধির সাথে জড়িয়ে পড়েছে যার বহু প্রমান রয়েছে আমাদের সমাজে।১৬ কোটি মানুষ আজ দলে উপদলে বিভক্ত।সত্তরের দশকে নয়া সাম্রাজ্যবাদীরা নতুন স্বাধীন দেশগুলোতে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সামরিক জেনারেলদের ক্ষমতায় বসাত। একুশ শতকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। তারা কৌশল বদলিয়েছে। এখন কারচুপি অথবা ভোটবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় বসানো হয়। তাতে গণতন্ত্রের একটা গন্ধ থাকে। নামকাওয়াস্তে একটা পার্লামেন্ট থাকে। সেই সংসদের সদস্যদের দেওয়া হয় সীমাহীন সুযোগসুবিধা শুধু নয়, দুর্নীতি করার অপার সুযোগ। এই ধরনের সরকার ও সংসদের মাধ্যমে দেশের কয়লা, গ্যাস প্রভৃতি খনিজ সম্পদ, বন্দর ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বহুজাতিক কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়াই উদ্দেশ্য। কোন দেশে কে ক্ষমতায় রইলেন না রইলেন, তাঁরা জনসমর্থিত কি না তা কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। স্বার্থসিদ্ধি যাঁকে দিয়ে হবে, তাঁকেই ক্ষমতায় রাখা হবে।একাত্তর - যা একদিন ছিল আমাদের কাছে একটি চেতনার নাম, আজ তা একশ্রেণির কপটের কাছে বিশাল পুঁজি। কোনো দেশে যখন কোনো মুক্তিসংগ্রাম হয়, তা হয় সম্পূর্ণ স্বাধীন ও স্বয়ম্ভর হওয়ার জন্য। আরও বেশি আর্থসামাজিকভাবে সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য। ক্ষমতাসীন ও তাদের অনুগ্রহভাজনদের বিরামহীন ও সীমাহীন লুটপাটের জন্য নয়।
যে পাড়া গাঁ থেকে আজ অনেক বছর দূরে বহু দূরে-সেই গাঁয়ের খবর শুনে আঁতকে উঠেছি।আমাদের সময় আমরা একজন শিক্ষক বা সমাজ পতিকে দেখলে সমীহ করে কথা বলতাম। কেউ সিগারেট পান করলেও শিক্ষককে দেখলে দূর থেকে দৌড়ে চলে যেত।আজ সেখানে ছাত্র শিক্ষক বা নেতাদের সে অবস্হান নেই।উঠতি বয়সের ছাত্রদের সাথে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে বসে চা- সিগারেট পান বা অনৈতিক কথাবার্তায় এখন শিক্ষক বা নেতাদের বাধে না। যার পরিনতি হচ্ছে নীরিহ ভদ্ররা একটু ভাল করলেই শহরে ফাঁড়ি জমায়।আমি যখন কলেজে এলাম তখন থেকে লক্ষ্য করলাম কিছু সংখ্যক ছাত্র ইন্টার কম্প্লিট করার পর বাইরে চলে যাচ্ছে।সে কারনটি পরে বুঝলাম যে যারা দেশের ভাল প্রতিষ্ঠান গুলোতে টিকে না তারা উপায়ন্তর না দেখে বাইরে চলে যায়।আর যাদের সে ক্ষমতা নেই তারা সেকন্ডারি কোথাও পড়াশুনা করে।একটা স্বাধীন দেশে যেভাবে উচ্চশিক্ষিত মেধাবীরা বাইরে চলে গেছে বা যাচ্ছে তারা আর ডিগ্রি নিয়ে ফিরে আসছে না।গত পাঁচ বছরে এক হাজার ৫৮৩ জন বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরেই ত্যাগ করেছেন ২৯৯ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মেধাবী, উচ্চশিক্ষিত বিশেষ করে চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও আইটি দক্ষতাসম্পন্ন বাংলাদেশিরা দেশ ত্যাগ করছেন। নাগরিকত্ব ত্যাগের হার দিন দিন বাড়ছে। [বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৭ জুন]
একজন মানুষের কাছে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় দু-তিনটি জিনিসের একটি তাঁর জন্মভূমি। অতীতের বাঙালি মনীষীরা বলেছেন: জননী জন্ম ভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী। মা ও মাতৃভূমির মর্যাদা স্বর্গের চেয়েও বেশি। সেই জন্মভূমি যখন কেউ চিরদিনের জন্য ছেড়ে যান, তখন তিনি সুখের হাতছানিতেই যে যান তা-ই নয়—গভীরতর দুঃখ ও হতাশা থেকেই যান।কোন সরকার কি এই মেধাবিদের ধরে রাখার মত ব্যাবস্হা করেছে? যদি মেধা পাছার হয়ে যায় দেশ থেকে তাহলে পড়ে থাকে তলানি।তা দিয়ে উৎপাদন হয় না ভাল কিছু। একবার পত্রিকায় সমালোচনা দেখেছি একজন মৌলবীর ফতোয়া দেয়ার ব্যাপারে।ইসলামে সামাজিক কোন অনাচার হলে ফতোয়ার দায়িত্ব এসে পড়ে একজন মুফতির উপর।এখন সেই মুফতি যদি বিচক্ষন হয়ে গড়ে না উঠেন তাহলে তার দোষ কি? এ দায় তো সরকারের ও আমাদের জন গোষ্ঠীর।আমার ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি যে পরিবারে অমেধাবি ছেলে আছে তাকে পাঠানো হয় মাদ্রাসায়।তাহলে সে যদি মুফতি হয়ে বের হয়ে আসে তাকেই তো ফতোয়া দিতে হবে।আমরা জাতিকে সংস্কার করতে জানি না , সমালোচনা করতে জানি।
আজ কেবলই মনে পড়ছে, আমার সেই শৈশবের কথা যেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম,সেখানে ভাল মানুষগুলো উবে যাওয়ার কারনে খারাপ মানুষগুলোর বিস্তৃতি ঘটেছে আর নীরব সম্বলহীন ভাল মানুষগুলো শীকার হচ্ছে তাদের পাশবিক অত্মাচারে।অথচ আমার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত "পাঁচই" গ্রাম যা হাজিগন্জ উপজেলায় অবস্হিত যা আমাকে আজো হাতছানি দিয়ে ডাকে।চাঁদপুর থেকে হাজিগন্জের মধ্য দিয়ে কুমিল্লা হয়ে বা ঢাকা থেকে কুমিল্লা হয়ে হাজিগন্জ চাঁদপুর এ সড়কে এখানকার বাসিন্দারা আসা যাওয়া করে।বিগত ৫০ বছরের সেই সবুজের স্মৃতি আর এখন খুঁজে পাই না ।তবুও স্মৃতিরা মালা গাঁথার আহ্বান জানাতে থাকে স্বপনে শয়নে।পৃথিবীতে আমার মনে হয় তড়িৎ থেকেও মনের গতি অনেক গতিময়।এক মুহুর্তে স্মৃতির যায়গাগুলো ঘুরে এসে জানান দেয় দেখতো আগের মত সব ঠিক আছে কিনা।কি চমৎকার ও অদ্ভুৎ পাড়া গাঁ যা ছিল সবুজে ঘেরা।কোথাও সোজা রাস্তা,কোথাও সর্পিল বা কোথাও ভাংগা পানিপথ।রাস্তার দু'ধারে সবুজ ধান ও পাটের সমারোহ, কৃষ্নচূড়া ,কড়াই ,আম কাঁঠাল ও কলা গাছের সারি ।আবার মাঝে মাঝে সবুজ তরি তরকারির বাগান।আমাদের আছে ছ'টি ঋতু।এই ঋতু দু'মাস পর পর পালা বদল করে নিয়ে আসে প্রকৃতির বিভিন্ন রুপ।সে জন্য আমাদের কৃষকেরা ফলায় হরেক রকমের ফসল।গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষ হলেই বর্ষা নিয়ে আসে অঝোর ও আঁধারঘন বৃষ্টি বাদল,শরতের মেঘের ভেলা ও কাশবন মনকে উদাস করে,হেমন্তের পাকা ধান নিয়ে আসে গ্রাম বাংলার কৃষকের নবান্নের উৎসব,শীতে পিঠা পুলি , খেজুরের রস ও সবুজ তরি তরকারি আর বসন্তে শীতের কায়ক্লিষ্ট মানুষ ও প্রকৃতির পুনর্জীবন আমদের উজ্জিবিত করে নব উজ্জিবনে।
দূরন্ত শৈশবে নির্ঘুম দিন রাত্রিতে আমরা "ক" জন ঘুরে বেড়িয়েছি গ্রামের পর গ্রাম।পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়িয়েছি আত্মীয় স্বজন ,পাড়া প্রতিবেশি ও বন্ধুদের বাড়ি।কখনো মাছ ধরা,কখনো গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়া,কখনো ফুটবল , ভলি বল, হা ডু ডু ও কানামাছি খেলা আবার মাঠে বসে ফুটি - তরমুজ খাওয়া।আমরা "ক" জন আড্ডা জামাতাম দীর্ঘ সময় ধরে।রাতের আঁধারে সর্পিল রাস্তা ধরে কখনো একা আবার কখনো বন্ধুরা মিলে যেতাম গ্রাম্য বাজারে আবার কখনো বা যাত্রা পার্টিতে।সেকালে আজকের মত মিডিয়া ছিল না।অনেক বিজ্গ লোকেরাও তখন যাত্রা পালাতে যেত কারন টিভি ছিল না আর ছিল না তড়িৎ ব্যাবস্হা-ও।আমার পড়ার ঘর ছিল আলাদা।বাবা ছিলেন চরম কনজারভেটিভ।রাতে বন্ধুদের সাথে যেতে হলে নিতে হতো বুদ্ধিমত্তার সাথে পদক্ষেপ যাতে বাবা বুঝতে পারে আমি ঘরেই আছি।এটা ছিল নিতান্তই শৈশবের দূরন্তপনা যা থেকে খুব কম বাবা মা রেহাই পায়।বেডে দুটো বালিশ সমান্তরাল রেখে তার উপর কম্বল মুড়িয়ে বাইরে থেকে খিড়কি দিয়ে চলে যাওয়া।অবশ্য এ কাজ বেশি দিন করা যায় নি,ধরা পড়তে হয়েছিল একদিন যেদিন আসতে দেরি হয়েছিল ও ফজরের নামাজের ওয়াক্ত হয়ে গিয়েছিল।
আজ ব্যাবধান শুধু কতগুলো বছর।অনেক বছর পর গিয়ে বুকটা ধপ করে উঠলো।শৈশবের সে চিত্র আর নেই। সে মাঠ গুলো এখন সংকীর্ন হয়ে এখন পাকা বাড়ি তৈরি হয়েছে,রাস্তার ধারে এখন আর সেই সবুজের সমারোহ নেই,মাঝে মাঝে দোকান পাঠ গড়ে উঠেছে আর দুর্বিত্তের আড্ডা জমে উঠেছে।ঘন আঁধারের সেই জোনাকি দেখার সুযোগ এখন নেই কারন রাতে বের হলে জীবনের ঘন্টাধ্বনি কখন বেজে উঠে কিনা ।বাড়ির সেই নারিকেল , আম জাম ও কাঁঠাল গাছ, পুকুরে মাছের ঝপ ঝপ শব্দ ও তার সাথে হাঁসের ভেলার মত ভেসে থাকা,রকমারি ফুলের সুগন্ধ, ধানখেতে বকের নি:শব্দ মাছ বধ করার প্রতীক্ষা,খালে জেলের জালপাতা, নৌকার মাঝির পাল তোলা নৌকা বাইতে শুরেলা গান,গ্রামের বধূদের রকামারি শাড়ি পরে বিভিন্ন উৎসব পালন, চাঁদনী রাতে মা বোনদের কাজলা দিদির সে ছড়া আর এখন মোহিত করে না আমাদের পাড়া গাঁকে। বড় ছোট'র মধ্যে কথা বলার শালিনতার যায়গা করে নিয়েছে রাজনৈতিক তর্ক - বিতর্ক।ধনী গরীবের ব্যবধান বেড়েছে অনেক।সারাক্ষন মারা মারি ও হানা হানি ও সংঘাতের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হয়ে আসে চারদিক থেকে।
জীবনের এই কঠিন বাস্তবতা থেকে কি আমরা আবার ফিরে যেতে পারিনা ছোট ছোট গ্রামগুলোতে? আমরা কি আবার সবাই গড়ে তুলতে পারিনা সেই অবারিত সবুজের মাঠ? আমরা কি একে অন্যকে আপন করে নিতে পারি না দেশ গড়ায়? আমাদের স্বার্থপরতায় বিষিয়ে তুলছে চারদিক।গুম খুন হত্মা যেন বেড়েই চলছে।অস্হির এক সমাজ,কারো চোখে ঘুম নেই রাতে যে এই হানাদার রা এলো।সেই ১৯৭১ এ যেভাবে আমরা ভীত ছিলাম আজ স্বাধীন দেশে তার প্রতিধ্বনি ভেসে আসছে।আমাদের অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলছে।আইনের শাসনের কোন তোয়াক্কা নেই।যারা রক্ষক তারাই এখন ভক্ষক। যত বড়-ই আমরা হই না কেন? কেউ মন্ত্রী,কেউ বা নেতা আবার কেউ বা আমলা।মৃত্যুর পরে তাদের ফিরে যেতে হয় সেই চিরপরিচিত গ্রামে।তাহলে কেন এই সীমাহীন অপরাধ হত্মা,ব্যাভিচার,গুন, খুন? যদি বুঝতে শিখি আমরা থাকবো না এই পৃথিবীতে তাহলে আপন করে নেই না কেন? সমাজ সংস্কারে এগিয়ে যাই না কেন? আমরা কেন প্রতিবাদি হতে পারি না? আমদের কি মনে নেই সেই বিখ্যাত কবিতার কথা? 'যখন তারা একজন কবিকে ধরতে এলো, তখন আমি প্রতিবাদ করিনি কারন আমি কবি না।যখন তারা একজন শিক্ষককে ধরতে এলো, তখন আমি প্রতিবাদ করিনি কারন আমি একজন শিক্ষক না।যখন তারা একজন রাজনীতিবিদকে ধরতে এলো, তখনো আমি প্রতিবাদ করিনি কারন আমি তো রাজনীতিবিদ না।যখন একদিন তারা আমাকে ধরতে এলো সেদিন কোন প্রতিবাদি ছিল না।' আমরা আজ যেন সবাই ভীত আমাদের প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।তবে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই ঝোপ ঝাড়ের আংগিনায় যেভাবে কিছুদিন পূর্বেও ফিরে গেলেন ও চির নিদ্রায় শায়িত হলেন নেলসন মান্দেলা কুনোর মত একটি গ্রামে।তবে আর একটি বিষয় অতি প্রয়োজন এর সাথে আর তা হলো সঠিক ধর্ম বিশ্বাস ও সৎ কাজ যা একজন মুসলিম লালন করে তার জীবনের প্রতিটি স্তরে কুরাআন ও সূন্নাহের অনুসরনে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন