কুইনিন জ্বর সারাবে বটে কিন্তু কুইনিন সারাবে কে?
লিখেছেন লিখেছেন মহিউডীন ১৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০২:০৯:০০ দুপুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি কেবল বেড়েই চলছে।কিছুসংখ্যক "পশু পবৃত্তি সম্পন্ন" শিক্ষকের দ্বারা গোটা শিক্ষক সমাজ কলন্কিত হচ্ছে কিন্তু এ নিয়ে খুব কম শিক্ষকদেরই প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতির মানুষ গড়ার কাজে অন্গিকারাবদ্ধ।যে শিক্ষকের নীতি নৈতিকতা থেকে ছাত্র ছাত্রীরা শিখবে এবং ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে সে শিক্ষকরাই যদি কলন্কিত হয় তাহলে তো আর অন্ধকার ছাড়া আলো দেখার আশা করতে পারে না জাতি।অসংখ্য ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও তাদের বিচার করা হচ্ছে না। এ থেকে প্রতিয়মান হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা অকার্যকর প্রশাসন।জাতীয় ভাবে ফলাও করে প্রচার হলেও সরকারের কোন পদক্ষেপ লক্ষ্যনীয় নয়।আজকাল ক্যাম্পাসগুলো দেখলে সেখানে শিক্ষার পরিবেশ আছে কিনা তা বুঝা যায় না।এটা একটা "প্রেম নিবাসে" পরিনত হয়েছে।ছাত্র ছাত্রীরা এখন অশ্লীল কাজ করতে তোয়াক্কা করে না।ইসলাম কেন নারী পুরুষের চলফেরার ব্যাপারে পর্দার বিধান করেছে তা এসব দেখে অনুমান করা যায়।তথাকথিত প্রগতিবাদিরা ইসলামের কথা শুনলে জ্বলে উঠে এর কারন হলো, ইসলাম সব সময় নারি পুরুষের ইজ্জতের সুরক্ষা করে, আর তারা নারীদের অশ্লিলতার দিকে ধাবিত করে।নারীরা যদি পর্দার ভিতরে কাজ করে তাহলে এরা তাদের লম্পটি চিন্তা ভাবনা চরিতার্থ করতে ব্যার্থ হবে।কেউ কেউ পর্দার অপব্যাখ্যাও করেন।ইসলাম নারিকে ঘরের কোনে বসে থাকতে বলে নি।নারিরা ও কাজ করবে তবে তাদের কাজের পরিবেশ থাকবে আলাদা।পুরুষ ও নারি পাশা পাশি নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষক হয়ে আসেন তারা পাশ্চাত্য শিক্ষানির্ভর।অনেকের জীবনে ছোটবেলা থেকে নীতি নৈতিকতার কোন ছাপ থাকে না।ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হলেও আলকোরআন ও সূন্নাহের অনুসারি নয়।এর মধ্যে অধিকাংশই ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলেন না যা তাদের এ সমস্ত অশ্লিল কাজ থেকে হেফাজত করবে।ক্যাম্পাস হলো একটা ফ্রিমিক্ক্সিং এর মত যায়গা যেখানে ছেলে মেয়েরা একসাথে পড়ে।যেহেতু নৈতিকতা দিয়ে তাদের জীবন গড়ে উঠে নি সেখানে ভাল বা মন্দের কথা চিন্তা তারা কোথা থেকে করবে।এর জন্য প্রথমত দায়ি বাবা মা,যারা পরিবার থেকে তাদের গড়ে তুলতে সক্ষম হন নি।দ্বীতিয়ত-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিকভাবে এ সবের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ার কারনে পুরো ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে বৈরি।মেয়েদের হোষ্টেলের একটা নিয়ম কানুন রয়েছে কতক্ষন তারা বাইরে থাকতে পারবে বা কখন ফিরে আসবে।সন্ধার দীর্ঘ পরেও দেখা যায় মেয়েরা বাইরে আড্ডা দেয়।আবার অনেকে সকালে বের হয় ও সন্ধায় ফিরে আসে।সারাদিন কোথায় থাকলো কি করলো এ সবের জবাবদীহিতা নেই কারন তারা পরিবারের বাইরে।কিছুদিন পূর্বে পত্রিকায় প্রচারিত হয়েছিল যারা লোকাল থেকে আসে তাদের মধ্যে অনেকেই সপ্তাহে ২ দিন অভিজাত হোটেল গুলোতে অনৈতিক কাজ করে যে টাকা অর্জন করে তা দিয়ে তাদের পরিবারের অভাব মিটায়।এই যে একটা চরম অবস্হা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করছে তার জন্য একটা কঠোর পদক্ষেপ নেয়া যে জরুরি তা বলার মত নয়।এখানে ভূমিকা রয়েছে অভিবাবকের,রয়েছে শিক্ষকদের নৈতিক চরিত্র গঠনের ,রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি বিধানের ও সর্বোপরি সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ, যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যার্থ হয়।একটা সাধারন আইন প্রনোয়ন করা জরুরি আর তা হলো, কোন ছাত্র ছাত্রী অশ্লীল কাজ করলে বা নির্জনে বসে থাকলে তাদের ধরে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি প্রদান করলে অন্যরা সতর্ক হয়ে যাবে।আমাদের মনে রাখতে হবে আইন শাস্তি দেয়ার জন্য নয়, আইনের প্রয়োগ হলো অন্যায় যেন সমাজ থেকে কমে যায় তার জন্য।কিন্তু আমাদের সমাজে আইন থাকলেও আইনের বাস্তবায়ন না থাকার কারনে এ বিপর্যয় গুলো ঘটছে।তা নাহলে পুলিশ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সহরাওয়ার্দি উদ্যানে সন্ধা নামার সাথে সাথে কিভাবে পতিতাদের আবির্ভাব হয়।আর দিনের বেলায় ও ভদ্রলোকদের পরিবার ও ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘুরার কোন অবকাশ নেই একশ্রেনীর যুবক যুবতীতের অনৈতিক কাজের জন্য।সামাজিক এই অবক্ষয় গুলোর জন্য সরকারি ব্যাবস্হা যেমন দায়ি তেমনি দায়ি সুস্হ পরিবার গঠন না করা ও ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষন না দেয়া।
আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনৈতিক কোন ঘটনা ঘটলে সে সমস্ত শিক্ষকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে তাদের দীর্ঘ ছুটিতে পাঠানো হয়।শুধু তা-ই নয় তাদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা ও দেয়া হয়।এর অর্থ হলো বিশ্ববিদ্যালয় এদের বিচারের পরিবর্তে সাহায্য করে চলছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক এটিএম ফখরুদ্দীন বিয়ে করেছেন চারটি। তার ছাত্রীও আছেন এদের মধ্যে। চতুর্থ স্ত্রী ও এক সময়ের ছাত্রীর অভিযোগের কারণে এখন তিনি আছেন বাধ্যতামূলক ছুটিতে।২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ফখরুদ্দীনকে ছুটিতে পাঠানো হয়। তার চতুর্থ স্ত্রী এবং এক সময়ের ছাত্রীর অভিযোগ, ওই বছরের ১৬ অক্টোবর ওই অধ্যাপকের কক্ষে তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন তিনি। একই সঙ্গে চারটি বিয়ে এবং চতুর্থ স্ত্রীর মাথা ফাটানোর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এএম আমজাদ এ তথ্য স্বীকার করেছেন।
ছুটিতে গেলেও সময়মতো বেতন-ভাতা এবং শিক্ষকতার অন্য সুযোগ সুবিধা সবই পাচ্ছেন ফখরুদ্দীন। দেড় বছরেরও বেশি সময়েও তার বিরুদ্ধে কেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হলো না জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এএম আমজাদ এই সময়কে বলেন, ‘আসলে একজন শিক্ষককে যখন বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয় তখন সে কিন্তু সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়। শিক্ষক সমাজেও সে নিগৃহীত হয়। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি একজন শিক্ষকের জন্য এটি কম শাস্তি নয়।’
সমাজে সাধারণ এক বিশ্বাস আছে যে, শিক্ষকদের নৈতিক মান অনেক উঁচু। এ কারণে শিক্ষকদের সম্মান, মর্যাদা, গ্রহণযোগ্যতাও অনেক পেশার চেয়ে বেশি। কিন্তু এর মধ্যেও মাঝেমধ্যেই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ওঠে যৌন হয়রানির অভিযোগ। ঢাকা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠার পর ২০০৯ সালের জুনে এই অভিযোগ তদন্তে আলাদা কমিটি করে সরকার। তবে সব অভিযোগ যে সব সময় এই কমিটির কাছে যায়, তা নয়। আবার গেলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণ একেবারেই বিরল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১০ বছরে কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ব্যবস্থা বলতে বিশ্ববিদ্যালয় একাধিক শিক্ষককে পাঠিয়েছে বাধ্যতামূলক ছুটিতে। কিন্তু পরে সব ভুলে যায় সবাই।
ব্যবস্থা না নেয়ায় কয়েকজন ছাত্রী অভিমানে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়েছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রী বিভাগেরই এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ভিসির কাছে যে অভিযোগ করেছেন তার এক জায়গায় লেখা আছে, ‘তিনি বইটি নিয়ে টেবিল ঘুরে এসে আমার হাতে দিলেন। আমি বইটি হাতে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেন।’ নানা ঘটনায় দেখা গেছে, টিউটোরিয়াল, ইনকোর্স ও অ্যাসাইনমেন্টের নম্বরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ছাত্রীদের হয়রানির চেষ্টা করেন কোনো কোনো শিক্ষক। এরপর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও ছাত্রীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও স্থাপন করেন কেউ কেউ। এরকম প্রতারণার শিকার হয়ে সম্প্রতি কুয়েত মৈত্রী হলের এক ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েও কিছু হয়নি । ছাত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক এবং শিক্ষকদের সম্পর্কে ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় ছুটিতে পাঠানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদীকেও। কিন্তু ২০১২ সালের ৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তার বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও পরে শাস্তিমূলক আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তারই বিভাগের এক ছাত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিভাগের একাডেমিক কমিটির বৈঠকে শিক্ষকরা এ নিয়ে একটি নিন্দা প্রস্তাব আনেন এবং রুশাদকে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে বলেন। কিন্তু রুশাদ উল্টো এই শিক্ষকদের নামে ফেসবুক ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। শিক্ষকরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে তুলে ধরলে রুশাদকে ছুটি দেয়া হয়। এরপর কেন আরও কঠিন শাস্তি দেয়া হলো না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমজাদ আলী বলেন, ‘ঘটনা তদন্ত করে দেখা গেল ওই শিক্ষক জোর করে কিছু করেনি। সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর সঙ্গে আগে থেকেই রুশাদ ফরিদীর সম্পক ছিল। যার কারণে বিষয়টি আর এগোয়নি।’
বিদেশে গিয়েও অভ্যাস যায়নি এমন অনেকের,গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিন। কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক এক মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর তাকে ফেরত পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। ঘটনা তদন্তে ওই সময়কার বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য এসএমএ ফায়েজ প্রশাসন কমিটি গঠন করে। কিন্তু সেই কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি আজও। বরং অভিযোগ মাথায় নিয়েই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের প্রশাসন রুহুল আমিনকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক বাহালুলের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন বিভাগের বেশ ক’জন শিক্ষার্থী। প্রতিকারে কলা অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়্যারম্যান ও প্রক্টরকে চিঠিও দেন তারা। অভিযোগের পর ওই শিক্ষককে সব ধরনের কোর্স থেকে প্রত্যাহার করে বিভাগীয় প্রশাসন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ হাসানের বিরুদ্ধেও যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের পর ২০১২ সালের ৩০ জুন বিভাগের একাডেমিক কমিটি এ অধ্যাপকের জন্য বিভাগের ২০০৯-১০ ব্যাচের সব কোর্স গ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে। একই বছরের ৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নূরউদ্দিন আলোর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ওই বছরই নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন এক ছাত্রী।
চলতি বছরের জুন মাসে পরিসংখ্যান, প্রাণ পরিসংখ্যান ও তথ্য পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাফর আহমেদ খানের বিরুদ্ধে পরকীয়া, নিপীড়ন ও যৌতুকের অভিযোগ আনেন তারই স্ত্রী। তিনি জাফরের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। বর্তমানে জাফর আহমদ বাধ্যতামূলক ছুটিতে আছেন বলে জানিয়েছেন প্রক্টর আমজাদ আলী।
২০০৯ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন এক ছাত্রী। এরপর ওই শিক্ষককে এক বছর একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ২০১০ সালে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তখনকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে।২০১১ সালে উর্দু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাফিলের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন এক শিক্ষার্থী। একই বছরের এপ্রিল মাসে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু মুসা আরিফ বিল্লাহর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ ওঠার পর মুসা আরিফ বিল্লাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনাটি এখনও তদন্তের পর্যায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর।ওই বছরেরই জুন মাসে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক মুহিত আল রশিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন এক ছাত্রী। এরপর তাকেও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। একই বছরে পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে। পরে ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য অভিযোগ সিন্ডিকেটে পাঠানো হয়। সিন্ডিকেট এখনও কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এমরান হোসেনের বিরুদ্ধে এক ছাত্রী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন। অভিযোগ ওঠার পর অন্যদের মতো এমরান হোসেনকেও বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। এ ঘটনাটিও তদন্তের পর্যায় রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র।
২০০৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কামাল উদ্দিন এর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন এক শিক্ষার্থী। ওই অভিযোগের পর অধ্যাপক কামাল উদ্দিনকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। এরপর ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কামাল উদ্দিনের বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহার করে নেয়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আমজাদ আলী জানান, ‘বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। তার বাধ্যতামূলক ছুটি প্রত্যাহার করা হলেও তাকে কোর্স পড়ানোর অনুমতি দেয়া হয়নি। এটি নিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের ও শিক্ষার্থীদের ঘোরতর অভিযোগ রয়েছে।’যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি অকার্যকর হয়ে আছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে ২০০৯ সালে যৌন নিপীড়নবিরোধী তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দেন আদালত। এ অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মাহবুবে আলমকে মনোনীত করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এফএম মেজবাহউদ্দীন, সৈয়দ রেজাউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমান। তবে এই কমিটি এখন পর্যন্ত কার্যকর কিছু করতে পারেনি বলে মনে করেন কমিটির সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম। এই সময়কে তিনি বলেন, ‘এই কমিটি আছে নামেই। এখনও কোনো কাজ করতে পারেনি কমিটি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ভারপ্রাপ্ত) প্রক্টর ড. আমজাদ আলী এই সময়কে বলেন, ‘কয়েকজনের কারণে গোটা শিক্ষক সমাজই পড়েছে লজ্জায়। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ শুনতে খুব খারাপ লাগে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নেয়া উচিত।শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ বডি সিন্ডিকেট কমিটিও একজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করতে পারে না। চাকরিচ্যুত করতে হলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাই এ ধরনের নৈতিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ না পারলে এটি আইনের কাছে সোপর্দ করতে পারে। এভাবে যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায় তাহলে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না বলে আমার বিশ্বাস।’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিক এই সময়কে বলেন, ‘যৌন নিপীড়নের ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় বদ্ধপরিকর। অনেকের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদনের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা সরকার যা-ই বলুক আমরা বাইরে থেকে প্রত্যক্ষ করছি কোন ঘটনারই দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হচ্ছে না।জাহান্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রনেতা ধর্ষনের সেন্চুরি উৎসব করলেও সরকার কোন ব্যবস্হা নিতে সক্ষম হয় নি।আমরা অতীতে ভ্যালেন্টাইন দিবসে টিএসসিতে একজন মন্ত্রীকে অশ্লিল উক্তি করতে দেখেছি যাতে যৌনতায় উদ্বুদ্ধ করেছে যুবক যুবতিদের।দু'বছর আগে শাহরুখ খানের একটি লাইভ অনুষ্ঠানে অতীতের সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী চেয়ার না পেয়ে মেঝে বসে পড়েছিলেন সেই অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য।এ যখন জাতির কর্নধারদের অবস্হা সে অবস্হায় সামাজিক শৃংখলা আসবে কেমন করে।এ মুহুর্তে সরকারের উচিত সামাজিক অনাচারকে রোধ করার জন্য আইনের শাসন বলবৎ করা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার সমস্ত উদ্যোগ গ্রহন করা।প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত নৈতিক মানের শিক্ষক নিয়োগ, লম্পটদের বহিষ্কার করা ,শিক্ষার মান উন্নোয়নে প্রতিজ্গাবদ্ধ হওয়া।তা নাহলে ছাত্র ছাত্রী বিশেষ করে ছাত্রীরা এদের শিকার হয়ে সামাজিক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে আর সমাজ ও জাতি ধাবিত হবে এক ভয়ংকর দিক নির্দেশনায়।
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন