আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম কে ছিলেন ?
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ৩১ আগস্ট, ২০১৫, ০৩:৩০:২৭ দুপুর
আল্লামা হাফিয ইবনুল কায়্যিম ইসলামি দুনিয়ার এক অত্যুজ্জ্বল দেদীপ্যমান নক্ষত্র । বহু বছর আগে তাঁর দৈহিক মৃত্যু হলেও ইসলামের জ্ঞানরাজ্যে তাঁর উৎসবাহী বিপুল অবদানতাঁকে সুরাইয়া সিতারার মতো সমুজ্জ্বল করে রেখেছে ।
তাঁর জন্ম হয়েছিল ৬৯১ হিজরিতে, দামেস্কে ।
ইসলামি ইলম ও আমলের দুনিয়ায় অসাধারণ উচ্চতার কারণে তাঁর যুগের লোকেরা তাঁকে তিনটি উপাধিতে ভূষিত করে :
১. ‘আল্লামা’ – বিদ্যাসাগর ।
২. ‘শামসুদ্দীন’ – দীন ইসলামের সূর্য ।
৩. ‘হাফিয’ – তিনি একাধারে কুরআন ও হাদিসের হাফিয ছিলেন । তাঁর মেধা মেধা ও স্মৃতিশক্তি ছিল অনন্য ।
তাঁর কুনিয়াহ্ ছিলো আবু আবদুল্লাহ্ । মূল নাম মুহাম্মদ ইবনে বকর ইবনে আইউব ইবনে সা’আদ । কিন্তু ‘আল্লামা ইবনুল কায়্যিম আল জাওযী’ নামে তিনি বিশ্বব্যাপী সমধিক পরিচিত ।
ইবনুল কায়্যিম ছিলেন শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র এবং স্বার্থক উত্তরসূরী । ইমাম ইবনে তাইমিয়া তো ‘শাইখুল ইসলাম’ অর্থাৎ ইসলামের শিক্ষক বা উস্তাদ উপাধিতে ভূষিত ছিলেন । ইমাম ইবনে তাইমিয়া সস্পর্কে বিখ্যাত বাক্যটি সকলেরই জানা ছিলে যে ‘ইবনে তাইমিয়া যে হাদিস জানতেন না, সেটা হাদিস নয়।’
ইবনুল কায়্যিম ছিলেন তাঁর স্বার্থক শিষ্য । হাদিস শাস্ত্রে ইবনুল কায়্যিমের পান্ডিত্য ছিলো তাঁর উস্তাদেরই মতো । ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিশ্লেষণ ও মতামতসমূহ মূলত ইবনুল কায়্যিমের মাধ্যমেই বেশী প্রচার ও প্রসারিত হয়েছে । ইবনুল কায়্যিম তাঁর গ্রন্থাবলীতে বার বারই বলেছেন ‘কা-লা শায়খুনা’ অর্থাৎ ‘আমাদের উস্তাদ- শাইখ বলেছেন’ । আল্লামা ইবনুল কায়্যিম ছিলেন একাধারে-
কোরআন ও হাদিসের হাফিয, সুন্নতে রসূলের শ্রেষ্ঠ পন্ডিত, শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, শ্রেষ্ঠ হাদিস হাদিস বিশ্লেষক, শ্রেষ্ঠ সীরাত বিশ্লেষক, শ্রেষ্ঠ ফকীহ্ এবং সর্বোপরি তিনি ছিলেন ‘মুজতাহিদে মতলক’ (স্বাধীন স্বয়ংসম্পূর্ণ মুজতাহিদ ।
আল্লামা ইবনুল কায়্যিমের শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য ছিলো এই যে, তিনি ছিলেন কট্টর ও আপোসহীন সুন্নতে রসূলের অনুসারী । সুন্নতে রসূলে অনুষন্ধানের ক্ষেত্রেও ছিলেন তিনি সর্বাগ্রে । তাঁর লেখা গ্রন্থাবলী এর উজ্জ্বল প্রমাণ ।
বিশেষ করে তাঁর লেখা মহান গ্রন্থ ‘যাদুল মা‘আদ’ তো সুন্নতে রসূলের সোনালি স্মারক ।
আল্লামা ইবনুল কায়্যিমের অমর গ্রন্থাবলীর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো:
১. যাদুল মা’আদ (চার খন্ড)
২. তাহযীব সুনানে আবু দাউদ ওয়া ইযাহু মুশকিলাতিহি ।
৩. সফরুল হিজরাতাইন ।
৪. মারাহিলুস সায়েরীন
৫. আল কালিমুত তায়্যিব
৬. যাদুল মুসাফিরীন
৭. নকদিল মানকূল
৮. ই’লামুল মু’ফীকীন আন রাব্বিল আলামীন (তিন খন্ড)
৯. বাদায়েযুল ফাওয়ায়িদ (দুই খন্ড)
১০. আস সওয়ায়িকুল মুরসালা
১১. হাদীউল আরওয়াহ ইলা বেলাদিল আফরাহ
১২. নুযহাতুল মুশতাকীন
১৩. আদ্দাউ ওয়াদ্দাওয়া
১৪. মিফতাহু দারিস সা’আদাহ্ (একটি বিশাল গ্রন্থ)
১৫. গরীবুল উসলূব
১৬. ইজতেমাউল জুয়ুশুল ইসলামিয়া
১৭. কিতাবুত তুরুকুল হিকমাহ্
১৮. ইদ্দাতুস সাবেরীন
১৯. ইগাসাতুস সাবেরীন
২০. আত তিবয়ান ফী আকসামিল কুরআন
২১. কিতাবুর রূহ
২২. আসসিরাতুল মুস্তাকীম
২৩. আল ফাতহুল কুদসী
২৪. আততুহফাতুল মাক্কীয়াহ
২৫. আল ফাতাওয়া , ইত্যাদি ।
২৬. জামউল ইফহাম ।
তার লেখা আরেকটি বই হচ্ছে নামাযের উপর সেরা গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত, “আল্লাহর রাসূল [সাঃ] কিভাবে নামায পড়তেন’’ । সেই বইর শুরুতে লেখক পরিচিতি হিসেবে এই লেখাটি স্থান পেয়েছে । বইটির পিডিএফ কপি আমার কাছে আছে যদিও আমি এখনও পড়িনি । কারো লাগলে মেইল আইডি দিতে পারেন ।
সুন্নতে রসূলে কাড়াকড়ি অনুসরণ এবং বিদআতের বিরোধিতা করার কারণে আল্লামা ইবনুল কায়্যিমকে তাঁর উস্তাদ ইবনে তাইমিয়ার মতোই অনেক জেল-যুলুম-নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে ।
কাজি বুরহানুদ্দীন যরয়ী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন: ‘আসমানের নিচে তাঁর চাইতে ব্যাপক জ্ঞানের অধিকারী লোক দেখা যায়নি।’
সুন্নতে রসূলের বাস্তব নমুনা এই মহান জ্ঞানতাপস।
৭৫১ হিজরির ১৩ রজব তারিখে ইহকাল ত্যাগ করেন ।
আল্লাহ এই মহান ব্যক্তিকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন, আমিন ।
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Facebook : চাটিগাঁ থেকে বাহার
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
জাজাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন