কান্নার লোনাজল [গল্প]
লিখেছেন লিখেছেন চাটিগাঁ থেকে বাহার ২২ জুলাই, ২০১৫, ১১:৪১:৫৯ সকাল
[ গল্প পড়লে নেকী ফ্রি....]
খালেদ নিজের মধ্যে বেশ অস্থিরতা অনুভব করতে লাগল । ঐ বেটা ইছমাইল তার মোড়টাই নষ্ট করে দিয়েছে । কত সুন্দর পরিকল্পনা করা ছিল মিন্টুর সাথে । গতকাল মিন্টুর বাসায় মিন্টুর খালাত বোন জোসনা এসেছে। মেয়েটির বয়স অল্প হলেও বেশ স্মার্ট । এখনও স্কুল জীবন শেষ করেনি, আগামীবার মেট্রিক পরীক্ষা দিবে।
জোসনা ফর্সাসুন্দর না হলেও আধুনিক বেশ ভুষায় চলাফেরা করে । বুকে ওড়না পড়েনা, কথাবার্তায়ও অনেক চটপটে । শ্যামলা গায়ের রং হলেও চেহারায় যথেষ্ট শ্রী আছে । উন্নত নাসিকা, টানা টানা ডাগর চোঁখে মায়াময় চাহনী, ঠোট দুটো হালকা গোলাপী । হাসলে গালের বামপাশে টোল পড়ে । রহস্যময় হাসে বেশী, ডান পাশের ভ্রুর নীচে চোঁখ বরাবর কাল একটি তিল আছে । তিলটি জোসনার সৌন্দর্যের মধ্যে দোলায়িত ছন্দের সমাবেশ ঘটিয়েছে । বয়সে সে মিন্টুর সমান, মিন্টুও দশম শ্রেণিতে পড়ে ।
জোসনা সবসময় নিজের মধ্যে ওভার স্মার্টনেস দেখাতে চায় । তার কাছে মিন্টু অনেকটা হাবাগোবা টাইপের ভিজা বিড়ালেম মত হয়ে থাকে । তবে তার বন্ধু খালেদ পাশে থাকলে মিন্টুর মুখে যেন খই ফোটে । তখন মিন্টু এটা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লাগে যে সে হাবাগোবা টাইপ ছেলে নয় ।
জোসনা এ বয়সে অনেক কিছু জানে, ফেসবুকে তার হাজার হাজার বন্ধু । অনেক বন্ধুদের সাথে সে চ্যাট করে । অনেকের সাথে মোবাইলেও কথা বলে, স্কাইপি ওয়াটসপেও তার আইডি আছে।
জোসনার বাবা মা কারো ফেসবুকে একাউন্ট নেই, তাই তারা জানেনা জোসনা সেখানে কি করে । জোসনার বাবা মা মনে করে সে ইন্টারনেটে এমন কিছু করে যা ওর পরীক্ষা পাশের জন্য সহায়ক। বাবা মায়ের বেখেয়ালের কারনেই মেয়েটি দিন দিন বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য তারা অনেকটা ইচ্ছা করেই মেয়েকে এভাবে ছেড়ে দিয়েছে। তাদের ধারনা এ বয়সে ছেলেমেয়রা একটু আধটু টুষ্টুমি করতেই পারে।জোসনা মিন্টুকেও মাঝে মাঝে এমনসব কথা ইনবক্স করে যা পড়ে মিন্টু বিব্রত বোধ করে, এসব কথার কি জবাব দিবে সে বুঝতে পারেনা । এসব কথা মিন্টু কাউকেও বলেনা, এমন কি তার বেস্টফ্রেন্ড খালেদকেও না ।
গতকাল জোসনা মিন্টুদের বাসায় এসে জানায় সে এবারও তিনচার দিন থাকবে । মিন্টু তাই খালেদকে আজকে বিকালে তাদের বাসায় আসতে বলেছে জোসনাকে নিয়ে বাসার ছাদে আড্ডা দেবার জন্য । দু’বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোসনা যে এতদিন তাদেরকে ভীতুর ডিম বলে উপহাস করে এসেছে আজকে তার জবাব দিবে । প্রমাণ করে দিবে যে তারা ভীতুর ডিম নয় ।
বিকালে রেডি হয়ে মিন্টুর বাসায় যাবার জন্য খালেদ আম্মুকে বলল, আম্মু আমি মিন্টুদের বাসায় যাচ্ছি, আসতে সন্ধ্যা হবে, তুমি চিন্তা করনা । আম্মু বলল, ঠিক আছে যা তবে আসতে দেরী করিসনা ।
খালেদের বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে গলি পার হয়ে তারপর রাস্তায় উঠতে হয় । গলির মাঝামাঝি বাম পাশে ইছমাইলদের বাসা । গলির সাথে লাগোয়া রুমটি ইছমাইলের পড়ার রুম। ইছমাইলও মিন্টু-খালেদের সাথে একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে । ইছমাইলের রুমের পাশ দিয়ে যাবার সময় খালেদ ইছমাইলের পড়ার আওয়াজ শুনতে পেল, সে গুণ গুণ করে কি যেন পড়েই চলেছে । ইছমাইলের এই এক অভ্যাস, সারাদিন শুধু পড়া আর পড়া এবং সময় মত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে আসা । নামাজ সে জামাতেই পড়বে । খালেদ বুঝেনা কম বয়সে এত বেশী বেশী এবাদত করার কি দরকার । নামাজ রোজা এবাদত এসবতো বৃদ্ধ বয়সের কাজ, এখন থেকে এসব করা শুরু করলে সবাই তো মাওলানা বলে ডাকবে।
খালেদের কৌতুহল হল ইছমাইল এ মুহুর্তে কি পড়তেছে তা দেখার, সে আস্তে আস্তে ইছমাইলের রুমের জানালার পাশে গিয়ে মনোযোগ দিল ।
রুমের ভিতর থেকে ইছমাইলের জবানে সে যা শুনতে পেল তাতে খালেদের বুকটা ধরপড় করে উঠল । খালেদ খেয়াল করল ইছমাইল বাক্যটি একে একে আরো তিনবার পড়ল । তা শুনে খালেদের কলিজা মোচড় দিয়ে উঠল । সে তাড়াতাড়ি জানালা থেকে সরে গিয়ে আনমনে সামনের দিকে হাটতে লাগল । রাস্তার মোড়ে গিয়ে খালেদ থমকে দাড়াল, তার পা যেন আর সামনে যেতে চাচ্ছেনা । খালেদের মনে হল তার চালচলন, চলাফেরা সব যেন কেউ ভিডিও করে রাখতেছে, কেউ যেন নির্ভুলভাবে লিখে সংরক্ষন করে রাখছে। এমনকি তার মনের খবরও।তাহলেত সে মিন্টুর বাসায় কি জন্য যাচ্ছে তাও লিখে রাখা হবে অথবা হচ্ছে। সে আনমনে কিছুক্ষণ চিন্তা করে আবার ইছমাইলের জানালার পাশে এসে ইছমাইলকে ডাক দিল, ইছমাইল !
ইছমাইল: কে খালেদ নাকি ?
খালেদ: হ্যাঁ, আমি ।
ইছমাইল: ভিতরে আসবি ?
খালেদ: না, এখন আসব না, তুই এখন যেটা পড়ছিলি সেটা কি ?
ইছমাইল: কেন ? আমি তো কোরআন শরীফ পড়ছিলাম, কেন বলছিস ?
খালেদ: আমি অবশ্য আইডিয়া করছিলাম তুই কোরআন শরীফ পড়ছিস, তা কোন সূরা পড়ছিলি ?
ইছমাইল: পড়ছিলাম নাবা বা মহাসংবাদ সূরাটি ।
খালেদ: আচ্ছা একটু আগে তুই একটি লাইন তিনচার বার পড়েছিলি, সেটি কত নাম্বার আয়াত ?
ইছমাইল: মহাগ্রন্থ পড়ার সময় আমার যে আয়াতটি পড়ে মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে বা প্রশ্নের উদ্রেক হয় সেটি আমি কয়েকবার পড়ি এবং তা ডায়রীতে নোট করে রাখি । দাড়া আমি দেখছি, এইতো পেয়েছি, এটা হচ্ছে ২৯ নাম্বার আয়াত । এখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘‘অতচ প্রত্যেকটি জিনিস আমি গুণে গুণে লিখে রেখেছিলাম ।’’ এটা হচ্ছে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ৭৮নং সূরা নাবার ২৯নং আয়াত ।
খালেদ: তোকে ধন্যবাদ, ভাল থাকিস, চলিরে ।
এরপর খালেদ সোজা বাসায় চলে আসে, খালেদের আম্মু খালেদকে দেখে বলল, কিরে তুই নাকি মিন্টুর বাসায় যাবি, আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে, ফিরে আসলি যে !
খালেদ: মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল তাই গেলাম না । কালকে যাব ।
খালেদের আম্মু: কেন মনে আবার কি হল ?
খালেদ: আম্মু, আব্বুর একটি বাংলা অর্থসহ কোরআন শরীফ ছিল না ! সেটি কোথায় ?
খালেদের আম্মু: হঠাৎ কোরআন শরীফ কেন ?
খালেদ: আহা, আগে বলনা !
খালেদের আম্মু: আলমারীর উপরে আছে ।
খালেদ আগে ওজু করে নিল, তারপর কোরআন শরীফ নামিয়ে ধূলা ঝেড়ে পরিস্কার কাপড় দিয়ে মুছে কয়েকটি চুমু দিয়ে বুকের সাথে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখল । খালেদের মনে হল যেন বুকটা শীতল হয়ে গেল । তারপর সূচীপত্র দেখে ৭৮নং সূরায় চলে গেল । সূরাটি মাক্কী, ২ রুকু, ৪০ আয়াত । সে ২৯নং আয়াতটি নিজে নিজে পড়ে নিল, ‘‘সবকিছুই আমি সংরক্ষণ করে রেখেছি লিখিতভাবে ।’’
এরপর সে প্রথম থেকে পুরা সূরাটি একবার তরজমা পড়ে নিল । সূরাটি পড়তে গিয়ে তার অন্তরাত্মা বার বার কেপে কেপে উঠছিল । খালেদ অনুভব করছে তার শরীরে শীত কাটা উঠছে, তার চোঁখ যেন ঝাপসা হয়ে আসছে ।
কখনও কখনও মানুষের অন্তরখানি এতই নরম কোমল হয়ে যায় যে তখন স্বর্গের মালিক তার সামনে এসে বলে তোমার কি চাই বল, আমি তোমায় সব দিব। খালেদের অন্তরও আজকে খুব নরম, তার ডুকরে ডুকরে কাদতে ইচ্ছে করছে ।কখন থেকে যে খালেদের আম্মু খালেদের পিছনে দাড়িয়ে খালেদকে লক্ষ্য করছিল তা সে বুঝতে পারেনি । হঠাৎ আম্মুর চোঁখাচুখি হওয়ায় খালেদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না । আম্মুর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগল, তার পুরো শরীরটা ঝাকুনি দিয়ে কেপে কেপে উঠছিল। খালেদের আম্মু কিছুই বুঝতে পারলনা । তবে ছেলের কান্নার ব্যাকুলতা দেখে সেও নিজের কান্নাকে আটকাতে পারল না । মা ছেলের কান্নার লোনাজল ফোঁটা ফোঁটা ঝড়ে পড়তে লাগল মেঝেতে ।
[ইহা একটি আসমানী মেসেজ পরিবেশনা ]
# সূরা নাবা অবলম্বনে ।
ইতিপূর্বে প্রকাশিত আরো কয়েকটি আসমানী মেসেজ পরিবেশনা হল:
বিষয়: বিবিধ
১৯৩২ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
অনেক সুন্দর এবং শিক্ষনীয় পোস্টটি। ধন্যবাদ গল্পকারকে।
হাসলে গালের বামপাশে টোল পড়ে গর্তের সৃষ্টি হয়
লাইনটা একটু দেখবেন জনাব..
বাহার প্রকাশনী থেকে একই সাথে আরো ৩/৪টি বই প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে ।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমরা ভুলে গেলেও তা লিপিবদ্ধ থাকে।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ
অনেক ভাল লাগল পড়ে।
আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ
আপনাকেও আন্তরিক ধন্যবাদ
অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন