রাতের অন্ধকারের সকল অনিষ্টকারিতা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি
লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:৫৮:৪২ রাত
রাতের অন্ধকারের সকল অনিষ্টকারিতা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি
"বলো , আশ্রয় চাচ্ছি আমি প্রভাতের রবের ,এমন প্রত্যেকটি জিনিসের অনিষ্টকারিতা থেকে যা তিনি সৃষ্টি করেছেন৷এবং রাতের অন্ধকারের অনিষ্টকারিতা থেকে ,যখন তা ছেয়ে যায়৷ আর গিরায় ফুঁৎকারদানকারীদের ( বা কারিনীদের ) অনিষ্টকারিতা থেকে৷ এবং হিংসুকের অনিষ্টকারিতা থেকে , যখন সে হিংসা করে"৷সুরা আল ফালাক
"আর ব্যাপার হচ্ছে এই যে ,মানব জাতির অন্তরভূক্ত কিছু লোক জিন জাতির অন্তরভূক্ত কিছু লোকের কাছে আশ্রয় চাইতো ।"( আল জিন ,৬ )
" যদি তোমার আল্লাহর ভয় থাকে , তাহলে আমি দয়াময় আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি।" (মারয়াম ,১৮ )
হযরত নূহ (আ ) যখন আল্লাহর কাছে অবাস্তব দোয়া করলেন এবং জবাবে আল্লাহ তাঁকে শাসালেন তখন তিনি সংগে সংগেই আবেদন জানালেন
" হে আমার রব! যে জিনিস সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই তেমন কোন জিনিস তোমার কাছে চাওয়া থেকে আমি তোমার পানাহ চাই। " ( হুদ, ৪৭ )
"আমি মূর্খ - অজ্ঞদের মতো কথা বলা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাচ্ছি। (আল বাকারাহ,৬৭ )
" হযরত আয়েশা (রা ) থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের দোয়াগুলোতে বলতেন : হে আল্লাহ ! আমি যেসব কাজ করেছি এবং যেসব কাজ করিনি তা থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। অর্থাৎ কোন খারাপ কাজ করে থাকলে তার খারপ ফল থেকে পানাহ চাই এবং কোন কাজ করা উচিত ছিল কিন্তু তা আমি করিনি, যদি এমন ব্যাপার ঘটে থাকে তাহলে তার অনিষ্ট থেকে ও তোমার পানাহ চাই । অথবা যে কাজ করা উচিত নয় কিন্তু তা আমি কখনো করে ফেলবো , এমন সম্ভাবনা থাকলে তা থেকেও তোমার আশ্রয় চাই। " (মুসলিম)
" ইবনে উমর থেকে বর্ণিত । রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামের একটি দোয়া ছিল : হে আল্লাহ ! তোমার যে নিয়ামত আমি লাভ করেছি তা যাতে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে না নেয়া হয় , তোমার কাছ থেকে যে নিরাপত্তা আমি লাভ করেছি তা থেকে যাতে আমাকে বঞ্চিত না করা হয় , তোমার গযব যাতে অকস্মাৎ আমার ওপর আপতিত না হয় সে জন্য এবং তোমার সব ধরনের অসন্তুষ্টি থেকে আমি তোমার আশ্রয় চাচ্ছি" (মুসলিম )
" যায়েদ ইবনে আরকাম (রা) থেকে বর্ণিত । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন : যে ইলম উপকারী নয় , যে হৃদয় তোমার ভয়ে ভীত নয় , যে সফস কখনো তৃপ্তি লাভ করে না এবং যে দোয়া কবুল করা হয় না , আমি সেসব থেকে তোমার আশ্রয় চাচ্ছি" (মুসলিম )
" হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন : হে আল্লাহ ! আমি ক্ষুধা থেকে তোমার আশ্রয় চাই। কারণ , মানুষ যেসব জিনিসের সাথে রাত অতিবাহিত করে তাদের মধ্যে ক্ষুধা সবচেয়ে খারাপ জিনিস। আর আত্মসাৎ থেকে তোমার আশ্রয় চাই। কারণ এটা বড়ই কলুষিত হৃদয়ের পরিচায়ক।" (আবু দাউদ)।
" হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন : হে আল্লাহ ! আমি শ্বেতকুষ্ঠ , উন্মাদনা , কুষ্ঠরোগ ও সমস্ত খারাপ রোগ থেকে তোমার আশ্রয় চাই। " (আবু দাউদ)
" আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নোক্ত কথাগুলো সহ দোয়া চাইতেন : হে আল্লাহ ! আমি আগুনের ফিতনা এবং ধনী ও দরিদ্র হওয়ার অনিষ্ট থেকে তোমার আশ্রয় চাই।"
( তিরমিযী ও আবু দাউদ )
শাকাল ইবনে হুমাইদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন , আমাকে কোন দোয়া বলে দিন। জবাবে তিনি বলেন :
" হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই আমার শ্রবণশক্তির অনিষ্ট থেকে , আমার দৃষ্টিশক্তির অনিষ্ট থেকে , আমার বাকশক্তির অনিষ্ট থেকে , আমার হৃদয়ের অনিষ্ট থেকে এবং আমার যৌন ক্ষমতার অনিষ্ট থেকে । " (তিরমিযী ও আবু দাউদ )
" আনাস ইবনে মালেক থেকে বর্ণিত । রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন : হে আল্লাহ ! আমি অক্ষমতা , কুড়েমি , কাপুরুষতা , বার্ধক্য ও কৃপণতা থেকে আমার আশ্রয় চাই । আর তোমার আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে । ( মুসলিমের অন্য একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে : ) আর ঋণের বোঝা থেকে এবং লোকেরা আমার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করবে , এ থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই।" বুখারী ও মুসলিম )
"খাওলা বিনতে হুকাইম সুলামীয়া থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন , আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি কোন নতুন মনযিলে নেমে একথাগুলো বলবে -- আমি সৃষ্টির অনিষ্টকারিতা থেকে আল্লাহর নিষ্কলংক কালেমাসমূহের আশ্রয় চাই , সেই মনযিল থেকে রওয়ানা হবার আগে পর্যন্ত তাকে কোন জিনিস ক্ষতি করতে পারবে না। " (মসলিম )
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে যেভাবে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন হাদীস থেকে তার কয়েকটি নমুণা এখানে আমরা তুলে ধরলাম। এ থেকে জানা যাবে , প্রতিটি বিপদ - আপদ ও অনিষ্টকরিতার মোকাবেলায় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়াই মু'মিনের কাজ। তাছাড়া আল্লাহর প্রতি বিমুখ ও অনির্ভর হয়ে নিজের ওপর ভরসা করাও তার কাজ নয়।
কারণ , আশ্রয় চাওয়ার সাথে আল্লাহর "রব" অর্থাৎ মালিক , প্রতিপালক , প্রভু ও পরওয়ারদিগার হবার গুণাবলীই বেশী সম্পর্ক রাখে। তাছাড়া " রব্বুল ফালাক " এর অর্থ যদি প্রভাতের রব ধরা হয় তাহলে তাঁর আশ্রয় চাওয়ার মানে হবে , যে রব অন্ধকরের আরবণ ভেদ করে প্রভাতের আলো বের করে আনেন আমি তাঁর আশ্রয় নিচ্ছি। এর ফলে তিনি বিপদের অন্ধকার জাল ভেদ করে আমাকে নিরাপত্তা দান করবেন। আর যদি এর অর্থ সৃষ্টিজগতের রব ধরা হয় , তাহলে এর মানে হবে , আমি সমগ্র সৃষ্টির মালিকের আশ্রয় নিচ্ছি। তিনি নিজের সৃষ্টির অনিষ্টকারিতা থেকে আমাকে বাঁচাবেন।ইনশাল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
২৩১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহতায়লা আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন