°°°°°এক শিক্ষামূলক গল্প °°°°°°

লিখেছেন লিখেছেন সত্যলিখন ১৪ আগস্ট, ২০১৩, ১২:৫০:৪৭ রাত



এক দেশে ছিল এক প্রতাপশালী রাজা।রাজা যেমন ছিল প্রতাপশালী তেমনি ছিল নৈতিক চরিত্রবান। একদিন রাজা তার সভাসদদের ডেকে বললেন,

“আমি তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি এখন আমার উত্তরসুরী হিসেবে নতুন রাজা নির্বাচন করা দরকার।”

এই কথা শুনে সভাসদ সবাই হতবাক। সভাসদ সবাই বলে উঠলো,

“রাজা মহাশয় আপনি তার নাম বলুন আমরা তার আজ্ঞাবহ হয়ে যাব।”

রাজা বললেন,

“সেটাই তো সমস্যা। কার নাম বলবো, কাউকে তো আমার মত দেখছি না।”

এই কথা শুনে সভাসদ সবাই আবারও অবাক। তারা ভাবছে রাজার এতগুলো সন্তান থাকতে রাজা তার মত কাউকে দেখছে না কেন? হঠাৎ রাজা সভাসদকেহুকুম দিলেন যে রাজ্যের যত কিশোরবালক আছে তাদেরকে দরবারে হাজির করতে। যথারিতি একদিন রাজ্যের সকল কিশোরদের হাজির করানো হলো। রাজা সকল কিশোরদের উদ্দেশ্য ঘোষনা করলেন,

“শোন বাছা আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আমি চাই তোমাদের মধ্য থেকে কেউ একজন রাজ্যের রাজা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করো। কিন্তু তোমাদের মধ্যে কে রাজা হবার যোগ্যতা রাখ তা আমি কিভাবে জানবো। সেটা বের করার জন্য তোমাদের এখানে ডেকেছি।”

এই ঘোষনা শুনে সব কিশোররা তো মহাখুশি সাথে তাদের বাবা/মারাও। সবাই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিল যে সে এই রাজ্যের রাজা হতে চলেছে। এবার রাজা গম্ভীর কন্ঠে আবার ঘোষনা করলেন,

“আমি তোমাদের একটা পরীক্ষা করবো যাতে আমি বুঝতে পারি তোমাদের মধ্যে কে রাজা হবার যোগ্যতা রাখ।”

শিশুরা সবাই আনন্দিত হলো। এটা কোন সমস্যা না। এবার রাজা প্রত্যেক কিশোর বালকদের হাতে একটা করে গাছের বীজ দিলেন, আর ঘোষনা করলেন,

“তোমরা এই বীজ নিয়ে বাড়ীতে টবেলাগাবে। সেটার যত্ন নেবে, তারপর এক বছর পর তোমরা এই বীজ থেকে যা পেলে তা সাথে করে এই দরবারে আবারআসবে। তখন আমি তোমাদের বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”

বীজ হাতে নিয়ে কিশোর বালক আর তাদের বাবা/মা বেজায় খুমি মনে বাড়ীতে ফিরে গেল। সভাসদের সকলেই বিষয়টা অনুধাবন করতে না পেরে হতাশায় পড়ে গেল। বিষয়টা কি?

এই কিশোর বালকদের মধ্যে একজন বালকের নাম “জায়েদ”। সবার মত জায়েদও বীজ নিয়ে এসে বাড়ীতে একটা টবে বীজটা বপন করে দিল। জায়েদের মাও জায়েদকে গাছ জন্মানোর সব রকম সহযোগিতা করতে লাগলো। জায়েদ প্রতিদিন পানি দেয়। পরদিন স্কুলে গিয়ে অন্যান্য বন্ধুদের কাছে তাদের বীজের বিষয় নিয়ে আলাপ করে।

৪ সপ্তাহ, ৬ সপ্তাহ এভাবে ২ মাস ৬মাস কেটে যায় জায়েদের টবের বীজঅঙ্কুরিত হচ্ছে না অথচ অন্যান্য বন্ধুদের টবের বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বেশ বড় সড় গাছ হয়ে গেছে।জায়েদ বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। জায়েদের মা জায়েদকে সান্তনা দিতে লাগলেন যে হয়তো তার বীজ গজাতে সময় নেবে। জায়েদও তাই মনে করে ধৈর্য সহকারে বীজের পরিচর্চা করতে লাগলো। প্রতিদিন স্কুলে বন্ধুদের কাছে তাদের গাছের বিষয় গল্প শুনে জায়েদ প্রায় হতাশায় পড়লো। জায়েদ তার বীজের বিষয় বন্ধুদের বলে না। এভাবে বছর কেটে গেল কিন্তু জায়েদের বীজ থেকে আর গাছ জন্মায়নি। তারপর আবার এক বছর পররাজা তাদের ডাকলেন। সবাই তাদের নিজ নিজ সুন্দুর বড় আকারের ফুলেফলে শোভিত গাছ নিয়ে রাজ দরবারে হাজির হলো। জায়েদ তার শুন্য টব নিয়ে যেতে রাজী নয়। তারপরও সে মায়ের অনুরোধে তাই নিয়ে গেল। সকল বন্ধুরা জায়েদের শুন্য টব দেখে হাসা হাসি করতে লাগলো। কেউ কেউ টিজ করলো। কিন্তু জায়েদ ভয়ে ভয়ে তার শুন্য টবটি নিয়ে সবার পিছনে দরবারের এক পিলার পাশে কোন মতে লুকিয়ে থাকলো যাতেরাজা তাকে দেখতে না পারে।

রাজা দরবারে এসে সকলের ফুলে ফলে শোভিত গাছ দেখে বেশ মোহিত হয়ে গেলেন। রাজা সব কিশোর বালকদের বেশ উৎসাহ দিলেন। রাজা বলে উঠলেন,

“তোমরা বেশ যত্ন নিয়েছ তোমাদের গাছগুলোর। কি সুন্দর ফুল আর ফল তাতে। আমি মুগ্ধ।”

এই কথা বলে রাজা আশপাশ তাকাতেই নজর পড়লো পিলারে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জায়েদের প্রতি।রাজা জিজ্ঞাসা করলেন,

“তুমি কেন ওখানে ওভাবে লুকিয়ে আছ? বের হয়ে আস। কি সমস্যা তোমার?”

জায়েদ দেখলো সে রাজার দৃষ্টি এড়াতে পারেনি। তাই সে তার শূন্যটবটি নিয়ে ধীরে ধীরে রাজার সামনে এসে দাঁড়ালো। শুকনো মুখ নিয়ে জায়েদ যথেষ্ট জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। রাজা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন

“কি নাম তোমার?” উত্তরে সে বললো,

“আজ্ঞে আমার নাম জায়েদ।”

রাজা খুব নিখুত ভাবে জায়েদের টবপরীক্ষা নীরিক্ষা করলেন এবং সেই বীজটি টবের মাটির তলা থেকে বের করে আনলেন। এটা দেখে দরবারের সবাই বেশ হাসিতে ফেটে পড়লো। রাজা নিজেও অট্রহাসিতে ফেটে পড়লেন। সবার হাসি দেখে জায়েদ ওতার মা অপমানিত বোধ করে আরো জড়োসড়ো হয়ে পড়লো।

এবার রাজা বেশ গুরুগম্ভীর গলায় কথা বলে উঠলেন,

“তোমাদের গাছ পরিচর্চায় আমি মুগ্ধ ও অভিভুত হয়েছি। কিন্তু আমি তোমাদের সবাইকে সিদ্ধ করা বীজ দিয়েছিলাম যা থেকে কোন ধরনের গাছ জন্মানোর কথা নয়। কিন্তু তোমরা সে বীজ পরিবর্তন করে ভাল বীজ বপন করে গাছ জন্মিয়েছ। অথচ এই জায়েদ সে সত্য জিনিষ নিয়ে এসেছে। কাজেই আমি দেখছি জায়েদ হচ্ছে সত্যবাদী ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী। আর রাজা হবার জন্য দরকার একজন নৈতিক চরিত্রবান ও সত্যবাদী মানুষ। সে বিবেচনায় আমি জায়েদকেই আমার পরবর্তি রাজা হিসেবে নির্বাচন করলাম"…

বিষয়: বিবিধ

৬৭৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File