জমিদার-নীলকরদের অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য ‘তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা’ এবং হিন্দু জমিদারদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দালালি।
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ১৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:০২:২৪ দুপুর
জমিদার-নীলকরদের অত্যাচার থেকে মুক্তির জন্য ‘তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা’ এবং হিন্দু জমিদারদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দালালি। শিরোনামটি কোনো ধর্মীয় গুষ্ঠিকে আক্রমনের জন্য নয়। বাস্থব ইতিহাস যদি কারো বিরদ্ধে যায় , সেটা মেনে নিতে হবেই।
‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমসাময়িক সময়ে খেলাফত আন্দোলনের নেতা মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও মাওলানা শওকত আলীকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই মামলায় ডিফেন্স পক্ষে হিসেবে মাওলানা মোহাম্মদ আলী ২ মাস ২৪ দিন নিজের পক্ষে দাঁড়িয়ে জবানবন্দী দিয়েছিলেন।
১৪ নভেম্বর তিতুমীরের নেতৃত্বে জমিদার-নীলকরদের অত্যাচার থেকে রক্ষার জন্য লোকজন মোটা বাঁশের মজবুত খুঁটি দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করেন। ইতিহাসে এটা ‘তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা’ নামে পরিচিত।
তিতুমীর, গোলাম মাসুম ও তার লোকজন শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করে ২৫০ জন আহত হন এবং ৫০ জনের সাথে সাইয়েদ নেছার আলী তিতুমীর ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর ৪৯ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করে ইতিহাসে স্মরণীয়।
১৭৮২ সালে বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ২৪ পরগনা জেলার চাঁদপুর গ্রামে শহীদ সাইয়েদ নেছার আলী তিতুমীরের জন্ম। তত্কালীন কুখ্যাত জমিদার কৃষ্ণদেব রায় কয়েক শত লোক জড়ো করে লাঠিসোঁটা, ঢাল-তলোয়ার, তীর ধনুক সড়কিসহ শুক্রবারে জুমার নামাজরত অবস্থায় মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে বহু লোক হতাহত হয়। সেই সময়ের মুসলমানেরা মামলা দায়ের করে। কিন্তু কুখ্যাত জমিদার কৃষ্ণদেব ও তার হিন্দু অন্য বনিকেরা কালেক্টর ও জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হুমকি এবং চরম ভন্ডামি পূর্ণ ভুয়া কাহিনী লেখে পাটায়। সেই অবস্থায় মুসলমানেরা যখন প্রতিকার পেল না তখন তিতুমীর লোকজন নিয়ে ১৮৩১ সালের ১৭ অক্টোবর নারকেলবাড়িয়া অবস্থান করেন। ২৯ অক্টোবর কৃষ্ণদেব সহস্রাধিক লাঠিয়াল ও অস্ত্রধারী গুণ্ডাবাহিনীসহ নারকেলবাড়িয়া আক্রমণ করে বহু লোক হতাহত করে। মামলা দায়ের করতে গেলে বাধা আসে । এর পর ৬ নভেম্বর কৃষ্ণদেব আবার মুসলমানদের আক্রমণ করল।
বশিরহাটের কুখ্যাত জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের পোষা দারোগা তিতুমীর সম্পর্কে মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী কালেক্টর ও জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অনবরত লিখতে থাকে। ১৩ নভেম্বর, ১৮৩১ সালে হিন্দু জমিদাররা এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নেল স্টুয়ার্ড ১০০ ঘোড়া, ৩০০ পদাতিক সৈন্য, দু’টি কামানসহ নারকেলবাড়িয়ায় রওনা দেয় । ইংরেজ আলেক্সান্ডার হাবিলদার, একজন জমাদার, ৫০ জন বন্দুক ও তরবারিধারী সৈন্য নিয়ে নারকেলবাড়িয়া উপস্থিত হয় ।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্নেল স্টুয়ার্ড তিতুমীরের ‘তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা’ প্রধান দ্বারে পৌঁছে রামচন্দ্রকে বলল, ‘তিতুমিরকে বলো , তিতুমীর যেন আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে। অথচ ধূর্ত রামচন্দ্র তিতুমীরকে বলল, ‘কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এখন জপমালা ধারণ করেছেন। আসুন, তরবারি ধারণ করে বাদশার যোগ্য পরিচয় দিই।’ শুনে সাইয়েদ নেছার আলী তিতুমীর বললেন, ‘আমি কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিনি। জমিদার-নীলকরদের অত্যাচার দমনের প্রতিবাদের চেষ্টা করছি মাত্র।’ কারো সাথে আমার নিজের ক্ষমতার লড়াই নয়। অথচ রামচন্দ্র স্টুয়ার্ডকে বলল, ‘হুজুর, তিতুমীর আত্মসমর্পণ করবে না, যুদ্ধ করবে। সে বলে, সে তোপ ও গোলাগুলির তোয়াক্কা করে না।
হিন্দু জমিদার এবং তাদের সমর্থক মেজর স্কটের ইংরেজ সৈন্যের ভারী কামানের গুলির আঘাতে ‘তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা’ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। সেই সময় সাইয়েদ নেছার আলী তিতুমীর, গোলাম মাসুম ও তার লোকজন শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করে ২৫০ জন আহত হন এবং মজলুম জনতার ৫০ জনের সাথে সাইয়েদ নেছার আলী তিতুমীর ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর ৪৯ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। সাইয়েদ নেছার আলী তিতুমীর নিজের জন্য লড়াই করেছিলেন নির্যাতিত মানুষের মুক্তির জন্য।
এর পর অনেক ইতিহাস রয়ে গেছে। শুধু বাংলাদেশের একজন মানুষ এক সময় বলতেন একটি কথা।
একসময় যেকোনো দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তর্জনী উঁচিয়ে ‘খামোশ’ বলতেন মওলানা আব্দুল হামিদ ভাসানী। যিনি আওয়ামীলীগের মাতৃ সংঘঠনের জন্ম দাতা।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য যাকে ব্রিটিশ সরকার নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেছিল - সেই শেরে আলী খান পাঠানের নাম কেউ লিখতে গেলে যেন লজ্জা লাগে। কিন্তু ক্ষুদিরামকে মহা নায়ক সাজাচ্ছে কিছু কথিত লেখকেরা। কিন্তু এরা কি জানে না যে - সেই শেরে আলী খান পাঠানের হাতে নিহত হয়েছিল ব্রিটিশ অফিসার। কিন্তু ক্ষুদিরাম কাহিনী কি সেই রকম ?
তেমনি দেখুন আরেকটি বিষয়। ক্ষুদিরামের কাহিনী। সূর্য সেন, প্রীতিলতাদের কথা। সবাই রাত দিন জাতির সামনে তুলে ধরে আহারে ক্ষুদিরাম যেন মহামাতম। সেই সাথে সূর্য সেন, প্রীতিলতাদের কথা বাচ্চাদের থেকে বৃদ্ধদের শেখানো হচ্ছে। কিন্তু একটি বার ও কি বলা হয় শের আলী খান পাঠান নামক ব্রিটিশ বিরোধী মহাবিপ্লবীর কথা ?
ব্রিটিশ আমলে ১৮৭২ সালে গভর্নর জেনারেল লর্ড মেয়ো যখন আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ার পরিদর্শন করতে যান, তখন শের আলী নামে এক পাঠান দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি তাঁকে হত্যা করেন।
ব্রিটিশ শাসক শ্রেণী শেরআলী পাঠানকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। কিন্তু ক্ষুদিরাম কিছু করার আগেই তো ধরা পরে , এর পর হয়ে গেল মহা নেতা ? কিন্তু এর পিছনে ওই সব কথিত ইতিহাস লেখকেরা। তারা ক্ষুদিরাম কে হিরো করে দিচ্ছেন।
মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও মাওলানা শওকত আলী, সাইয়েদ নেছার আলী তিতুমীর, গোলাম মাসুম, শেরে আলী খান পাঠান এমনকি ওলানা আব্দুল হামিদ ভাসানী কে বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে গায়েব করে দেয়া হয়েছে।
এত কাহিনী এখন বিশেষ গুষ্ঠির বেতন ভুক্ত বিতির্কিত কথিত ইতিহাস লেখকেরা এই সব নিয়ে একটি কলম ও লেখে না। তারা শুধু বিশেষ একটি ধর্মের , গুষ্টির তোসামদে লেখা চালাচ্ছে।
বিষয়: বিবিধ
২৯৫০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন