নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডার - শ্বাসরুদ্ধকর ১২ ঘণ্টা
লিখেছেন লিখেছেন মাহফুজ মুহন ০৮ জুন, ২০১৪, ০৫:০৭:০০ বিকাল

পূর্ব পরিকল্পনা মতে ২৭শে এপ্রিল দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে ১টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে মাত্র ২ মিনিট সময় নিয়ে নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করে মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানার নেতৃত্বে র্যাবের ১১ সদস্যের একটি টিম। রাত সোয়া ২টার দিকে লাশ নদীতে ডুবিয়ে দিয়ে ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর এক অপারেশনের সমাপ্তি টানা হয়। এর মধ্যে অপহৃতদের র্যাবের গাড়িতে তুলে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করা হয়। ওই অবস্থায় সাতজনকে গাড়িতে করেই নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংদীতে। কিন্তু নরসিংদীর র্যাব ক্যাম্প সহযোগিতা না করায় কিছুটা চিন্তায় পড়ে যান আরিফ। বিষয়টি জানানো হয় তারেক সাঈদকে।
পরে পরিকল্পনা নেয়া হয় ভিন্ন। নরসিংদী থেকে ফেরার পথে কৌশলের অংশ হিসেবে গাড়ির ভেতরে অচেতন হয়ে পড়ে থাকা সাতজনের প্রত্যেকের মাথা ও মুখমণ্ডল পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর গলা চেপে ধরা হয়। নিমেষেই একে একে প্রত্যেকের শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। গাড়ির সিটের উপর পড়ে থাকে নিথর দেহগুলো। এবার শুরু হয় তৃতীয় মিশনের কাজ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে নাসিক কাউন্সিলর নূর হোসেনকে ফোন দিয়ে আরিফ হোসেন কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বালু-পাথর ব্যবসাস্থল জনমানুষ শূন্য করার জন্য বলেন। মোট কথা সেখানে যেন কোন লোকজন না থাকে। টাইম পাস করার জন্য রূপগঞ্জের একাধিক পেট্রল পাম্প থেকে সিএনজি গ্যাস নেয়া হয়। র্যাবের ওই দু’টি গাড়িতে কোন নাম্বার প্লেট ছিল না।
নূর হোসেনের গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে এসে লাশবাহী দুটি গাড়ি ডান দিক দিয়ে নেমে ইউটার্ন হয়ে ব্রিজের নিচে চলে যায়। কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম পাড় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সওজ অফিস সংলগ্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট থাকায় র্যাবের গাড়ি ব্রিজ থেকে নেমে বামের লেনে সোজা না এসে রং সাইড দিয়ে ডানের লেনে গিয়ে ডানদিকে নেমে যায়। ব্রিজের নিচে আরিফ হোসেন ও এম এম রানার সঙ্গে এসে একত্রিত হয় তারেক সাঈদ। তিন জনের মধ্যে পরামর্শ হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ নং ঘাট থেকে র্যাবের নির্দিষ্ট ইঞ্জিনচালিত বড় একটি নৌকা নিয়ে যাওয়া হয় কাঁচপুর ব্রিজের নিচে। সাতজনের নিথর দেহ গাড়ি থেকে নামানো হয়। লাশগুলো নৌকায় ওঠানোর পর তিন র্যাব কর্মকর্তাও নৌকায় ওঠেন।
শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে যাওয়ার পথে আদমজী ইপিজেড (ইপিজেডের সামনে র্যাব ১১-এর সদর দপ্তর) ঘাট থেকে লাশ গুমের উপকরণ নৌকায় তোলা হয়। লাশ যাতে ভেসে না ওঠে এ জন্য নৌকার মধ্যেই একে একে প্রত্যেকটি লাশের সঙ্গে ২৪টি করে ইট বাঁধা হয়। এক একটি ইটের ওজন আড়াই কেজি। পানিতে ওই ইট ভেজার পর এক একটির ওজন হয় ৫ কেজি। একটি করে ফুটো করে দেয়া হয় লাশের নাভির নিচে। তারপর রাত সোয়া ২টার দিকে লাশগুলো নদীতে ডুবিয়ে দিয়ে ১২ ঘণ্টার অপারেশনের ইতি টানা হয় ।
নারায়ণগঞ্জ নৌপুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন ঘাট দিয়ে উঠে শহরের ভেতর দিয়ে নিজ গন্তব্যে পৌঁছার পথে শহরের হাজীগঞ্জে পুলিশ চেকপোস্টে লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ পুলিশের মুখোমুখি হন। রাত তখন ৩টা। চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল-ক) আজিবুল আহসানের সঙ্গে কথা হয় তারেক সাঈদের। তখন তারেক সাঈদ পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, আমরা আপনাদের মতো ‘ওদের’ উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছি।
এরপর ওই পুলিশ কর্মকর্তা আর কিছু বলেননি। অপরদিকে একই সময় নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডে জালকুড়ি এলাকায় ফতুল্লা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলামের চেকপোস্টের মুখোমুখি হন মেজর (অব.) আরিফ হোসেন। আরিফ হোসেনকে দেখে ওই পুলিশ কর্মকর্তা আর কিছু বলেননি। তবে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পে ফিরে যান এম এম রানা।
এদিকে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঘটনার পরের দিন ভোরে র্যাব সদর দপ্তরে তলব করা হয়েছিল তারেক সাঈদকে। তাকে ঘটনার বিষয়ে র্যাবের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে অবশ্য কিছু প্রমাণ সামনে উপস্থাপন করলে তিনি দায় স্বীকার করেন। র্যাবের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি প্রমাণ হওয়ার পরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সূত্র জানায়, নূর হোসেনের সঙ্গে চুক্তিতে কাউন্সিলর নজরুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করতে আগেও আরও দুই দফা চেষ্টা চালিয়েছেন মেজর আরিফ। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি প্রভাবশালী একজন মন্ত্রীর পুত্র এবং একজন রাজনীতিবিদও অভিযুক্তদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করেছেন ।



http://mzamin.com/details.php?mzamin=MjcwNTc%3D&s=Mw%3D%3D#.U5Q-2Hy7xFw.facebook
http://www.natunbarta.com/law-court/2014/06/05/84951/সাত+খুনের+দায়+স্বীকার+করলেন+রানাও
http://www.natunbarta.com/law-court/2014/06/05/84827/সাত+খুনের+দায়+স্বীকার++করেছেন+মেজর+আরিফ
http://www.justnewsbd.com/details.php?jnewsbd=NjUzMDY%3D
মেজর (অব.) আরিফের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
তারেকের তদারকিতে আমি ও রানা মিলে খুন করি
http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2014/06/05/92576
বিষয়: বিবিধ
২২২৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
প্রশ্ন হচ্ছে কর্নেল জিয়া কেন এ হত্যাকান্ড ঘটাবেন?
তা বোঝার জন্য চাই - শামীম ওসমানের ভাষ্য। তিনি ১০ মিনিটের মধ্যে, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন, দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ৭ জনকে এ্যারেস্ট করেছেন? শামীম ওসমান কি নারাগন্জের সব এ্যারেস্ট এর ঘটনা প্রধানমন্ত্রীকে জানান - নাকি এ ক্ষেত্রে ওনার উপর আদেশ ছিল এবং অন্য পাশে কেউ তার কাছ হতে এমন এ্যারেস্ট এর খবর শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল?
তারপর আমাদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে কর্নেল জিয়া ও লেঃ কঃ তারেক এর মধ্যে টেলিফোন কথোপকথন এ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কার নাম ছিল, তা কতটা সেনসেটিভ ছিল? কেন বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিস ডাইরেক্টলী ইন্টারভেইন করে সে কথোপকথনের রেকর্ড নষ্ট করে ফেললো?
আমাদেরকে সিরিয়াসলী জানতে হবে কেউ এই আদেশদাতা যিনি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও দফতরের বাসিন্দা?
কারন তাহলে এটা খুব সহজ হবে সাগররুনী, ইলিয়াস আলী সহ হাজার হাজার কেইস এর সমাধান হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন