আধুনিক চৈনিক সভ্যতায় আমি যখন অতিথি-৩
লিখেছেন লিখেছেন জামিল খান ১৫ জুন, ২০১৫, ০৪:৪৩:১৪ বিকাল
কুনমিং-এ দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই বললেই চলে। নানারকম স্থাপনাগুলোকে অতি যত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে। কুনমিং-এ এসে এই স্থাপনাগুলোতে ঢুঁ মারেন না এমন পর্যটক খুঁজে মেলা ভার। দশটি দিনে আমরা চেষ্টা করেছি যতগুলো সম্ভব স্পট ভিজিট করতে।
ওয়েস্টার্ন হিলস, ড্রাগন গেইট এবং দিয়ানচি লেক :
কথায় আছে আপনি ইউনান ভিজিট করলেন আর ওয়েস্টার্ন হিলস ভিজিট করলেন না তাহলে আপনার গোটা ইউনান ভিজিটই বৃথা। আমরা আমাদের ইউনান ভিজিট যাতে বৃথা না হয় তাই একদিন চলে গেলাম ওয়েস্টার্ন হিলসে। কুনমিং থেকে ১৫ কিলোমিটার সোজা পাশ্চিমে দূর থেকে দেখলে গোটা পাহাড় গুলোকে ঘুমন্ত বিশাল বুদ্ধের মূর্তির মত মনে হয়। এজন্য ওয়েস্টার্ন হিলস কে বুদ্ধের ঘুমন্ত পাহাড়ও বলা হয়। মিস সোয়ানের প্রাইভেট কারে করে আমরা দুজন আমি আর আমার সহধর্মিনি প্রথমে গেলাম গেট অফ ওয়েস্টার্ন হিলস। সেখান থেকে পাহাড়ে ওঠার নির্দিষ্ট বাসে করে আমরা পৌছে গেলাম পাহাড়ের মাঝামাঝি।এই যায়গাটাকে আমার ওয়াইফ বলত বেইস কেম্প। কারন এখান থেকেই ড্রাগন গেট, দিয়ানচি লেক, সাওকাম পার্ক, কেবল কার সবকিছু তে যাওয়া শুরু করতে হয়। আমরা ওয়ান ওয়ে ড্রাগন যাওয়ার জন্য কেইবল কারের টিকিট ক্রয় করলাম। লাইন ধরে দাড়ালাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই আমাদের সিরিয়াল চলে এল। রোমাঞ্চকর ভ্রমন শুরু। এখান থেকে কেইবল কারে চরে উঠতে হবে পাহাড়ের আরো উপরে। দির্ঘ কেইবল কার ভ্রমন পাহাড় থেকে পাহাড়ে। মাঝে মাঝে কেবলকার দুই পাহাড়ের মাঝখানে গহিন খাদের অন্ধকারে পৌছে যায়। যেখানে শিতল বাতাশের স্পর্শ পেয়েই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। আবার কখোন কোন পাহড়ের চুড়ায় গিয়ে ক্যাবলকারের তারের ক্যাচ ক্যাচ পিলে চমকানো আওয়াজ । আর নিচের দিকে তাকালেই মাথাটা কেমন যেন শূন্য হয়ে যায়। ঢোক গিলতেও ভয় ভয় লাগে। সবকিছু মিলে রোমাঞ্চ আর ভয় মিশ্রিত অনুভূতি। পাশের জনের শত নিষেধ উপেক্ষা করেই শুরু করে দিলাম সেলফি তোলা। পাশের জন তো রিতিমত অপেক্ষা করতে শুরু করল কখন শেষ হবে এই কেইবল কার। উপরে উঠছি তো উঠছিই। অবশেষে একটা পাহড়ে এসে কেইবলকার থামল। আমরা নামলাম। নামার সময় চৈনিক ভাষায় ডাকাডাকি শুনে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আমাদের ডাকছে। গিয়ে দেখি আমাদের দুজনার কেইবল কারে চড়া অবস্থায় খুবই সুন্দর একটি ছবি ওদের লেপটবে। ২০ আরএমবি দেয়ে প্রিন্ট নিলাম একটা। ক্যাবলকার ভ্রমন শেষে ড্রাগন গেট যেতে উঠতে হবে পাহড়ের চূড়ায়। এবার শুরু চাইনিজ কারুকার্য দেখার। কখোন পাহাড় কেটে অন্ধকার গুহার সিড়ি, আবার কখোনো স্টিলের তৈরী সিড়ি ধরে উপরের দিকে পাহাড়ের চূড়ায় ড্রাগন গেটে পৌছালাম। কি অপরূপ দৃশ্য প্রাণ মন সব জুড়িয়ে যায়।নিচে নদি ও রাস্তাগুলোকে কেমন পিপড়ের মত মনে হয়।এবার নামার পালা। আবার পাহাড়ি সিড়ি ধরে কিছুদূর নেমে রাইডিং কারে করে ক্যাবলকার স্টেশনে পৌছালাম। সেখানথেকে আবার ক্যাবলকারে চড়ে পাহাড় থেকে নেমে লেক পার হতে হবে। ক্যাবলকার দিয়ে আদিগন্ত পাহাড়ী এই বিশাল লেকটাকে সমুদ্রের মতই মনে হয়।অবশেষে দিয়ান্চি লেক। স্বপ্নের দেশ যেন পায়ের তলায়। চায়নিজ প্রজুক্তি এটাকে যেন আরো কাব্যিক করে তুলেছে। পাহড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা দুষ্টু বাতাশ যেন বিশাল লেকটাকে পাড়ি দিয়ে গ্রাম্য কিশোরের মতই ইচ্ছে মত ছুটাছুটি করছে। এখানে বসলে যে কেউই কবি বনে যাবে এব্যাপারে আমি বেট ধরতে পারি। দিয়ান্চি লেক আর তার পারেই আধুনিক প্রজুক্তির ছোয়ায় সাওকাম পার্ক। অপুরুপ দৃশ্য। যখন লিখছি আর মনে করছি সেই দৃশ্য আমার শরিরের লোমগুলো দাড়িয়ে যাচ্ছে। আর কখোন যাব কিনা জানি না তবে আমার স্মৃতিতে সবসময় থাকবে এই স্মৃতি।
গ্রিন লেক, ইয়াঙ্গন টেম্পল, কুনমিং জু:
এই তিনটি স্পটই কুনমিং শহরের প্রাণকেন্দ্রে। অনায়াশে যে কেউ একদিনেই ভিজিট করতে পারে। আমরা সারাদিনে কুনমিং জু এবং গ্রিন লেক শেষ করতে পেরেছিলাম। সবুজের সমারোহ হলো এই গ্রিন লেক। ছুটির দিনে গিয়েছিলাম। আর তাই প্রচন্ড মানুষের ভির। বাংলাদেশের মেলার মতই বিভিন্ন এ্যাকটিভিটিজ। কিছু সুভ্যানিরস কিনেছিলাম এখান থেকে। ঘুরতে ঘুরতেই হটাত পেছেন থেকে একটি কমেন্ট শুনে পেছনে তাকালাম। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করল "বাঙালী অর ইন্ডিয়ান"। সম্ভবত চা্য়নিজ শুনতে শুনতে আমাদের মতই বোরড হয়ে যাওয়া কোন এশিয়ান মন খুলে ইংরেজি বলার আশায় আমাদের দেখেই ডাকছিল। কাছে যেতেই উনাকে পরিচিত মনে হচ্চে। জিজ্ঞাসা করলাম আপনি আমাদের শিক্ষা সচিব নজরুল স্যার না। উনি হেসে হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। পরিচয় দিয়ে বললাম আমরা ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে ১২ দিনের ট্যুরে।একসাথে কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে বিদায় নিলাম।দিন আমরা ইয়াঙ্গন টেম্পল ভিজিট করেছিলাম। গোটা টেম্পল ভ্রমন সময় টুকু একধরনের মেলডিয়াস ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক শুনতে শুনতে মনটা জুরিয়ে গিয়েছিল। চাইনিজ মুভি দেখার সময় এই মিউজিক টা আগেও শুনেছি। তখন এত আকর্ষনিয় মনে হয়নি এখানে যতটা মনে হয়েছিল। টেম্পল এর গেটটা অনেক বেশি আকর্শনিয়। পেছনে পাহার ফেলে সামনে এত সুন্দর ঐতিহ্যবাহি এই টেম্পল এর ব্যাখ্যা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। কুনমিং জু টা অন্যরকম একটি প্লানিং-এ এরা সাজিয়েছে। পাহাড়টাকে বিভিন্ন স্তরে কেটে কয়েকতলা বিশিষ্ট বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে বিভিন্ন ধরনের পশু। অনেকটা কয়েক তালা বিশাল স্টেডিয়ামের মত। যদিও এত বড় যে শুরু শেষ কিছুই ঠিক রাখতে পারিনি। অনেকগুলো পশু তার মধ্যে বানর এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশ থেকে বলে লেখা আছে। মনে ধরার মত একটি সেকসন ছিল ময়ুর। এত ময়ুর একসাথে এত কাছ থেকে আগে দেখিনি। শত শত ময়ুর। পেখম মেলে দাড়িয়ে থাকা ময়ুরগুলোর সাথে আমরা সবাই মোটামুটি সেলফি নিলাম। কারন কোন খাচা তো নেই। ইচ্ছে করলেই হাত দিয়ে ধরা যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
ছবি এবং একটু ডিটেইল বর্ণনা আরো ভাল হতো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন