পিনুর সাংবাদিক হওয়া
লিখেছেন লিখেছেন মিকি মাউস ২২ মে, ২০১৫, ১১:০১:৩৮ রাত
স্কুলে পরিদর্শনে আসবেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এ উপলক্ষে সাজ সাজ রব পড়ে গেল সারা স্কুলজুড়ে। ছাত্রছাত্রীরা যে যার মত প্রস্তুতি নিচ্ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার জন্য। কেউ নাচে তো কেউ গায়, কেউবা আবৃত্তি করে আবার কেউ অভিনয় প্রাকটিস করছে।
ছাত্রছাত্রীরা ব্যাপক খুশি শুধু পড়া আর পড়া কত ভাল লাগে। একটু বিনোদন হলে মন্দ হয় না। এবার এমপি মহোদয়ের কল্যাণে অন্তত ক’টা দিন আরামসে কাটানো যাবে।
৮ম শ্রেণীর নম্র ভদ্র সুন্দরি এবং মেধাবী ছাত্রী পিনু। ক্লাসের ফাস্ট গার্ল। কারো সাতেও নেই পাচেঁও নেই। স্কুল টু বাসা, বাসা টু স্কুল। এত কিছু ছাপিয়ে তার আরেকটি গুণের কথা সবাই জানতো, আর তা হলো কণ্ঠস্বর। কণ্ঠস্বরের দিক দিয়ে কলকাতার অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলীকে পরিবর্তন করা যাবে পিনুর সঙ্গে।
স্কুলের এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ক্লাস টিচার পিনুর কাছে জানতে চাইলেন, পিনু তুমি কি করবে অনুষ্ঠানে? পিনু আমতা আমতা করে বলল, ম্যাডাম আমি তো নাচতে এবং গাইতে জানি না। আমি কি করবো?
ম্যাডাম পিনুকে বলল, তোমার গলা তো ভারী মিষ্টি, তুমি একটা আবৃত্তি করতে পার। তখন থেকে পিনুও প্রাকটিস শুরু করলো। তবে কারো সামনে নয়, চুপিচুপি।
নির্ধারিত দিনে এমপি মহোদয়ের আগমন। যথারীতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হলো, একে একে সবাই পারফর্ম করলো। এক সময় স্টেজে পিনুর ডাক পড়লো। স্টেজে উঠে পিনু শুরু করলো নির্মলেন্দু গুণ এর যাত্রাভঙ্গ কবিতা। সবাই তন্ময় হয়ে সে কবিতা শুনলো।
কখন যে কবিতা শেষ হয়েছে সেই খেয়াল কারো নেই। শুধু এমপি মহোদয় পিনুকে কাছে ডেকে নিলেন এবং ১ হাজার টাকা পুরস্কার দিলেন।
এরপর থেকে স্কুলের যে কোন অনুষ্ঠানে পিনুর ডাক পড়তে থাকল আবৃত্তির জন্য। প্রোগ্রাম উপস্থাপনায়ও পিনুর সুনাম ছড়িয়ে পড়লো। স্থানীয় সকল প্রোগ্রামে উপস্থাপনা এবং আবৃত্তির জন্য তার ডাক পড়তে থাকে। ভালই চলছিল পিনুর সময়।
ইতোমধ্যে এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হল পিনু। কলেজের নতুন পরিবেশে পিনু মুক্ত বিহঙ্গের মতো নিজের প্রতিভাকে বিকশিত করার চেষ্টা করে।
একদিন পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দেখে পিনু। ‘রেডিও-টেলিভিশনে সংবাদ পাঠক এবং উপস্থাপিকা হতে চান।’
পিনু বিজ্ঞাপনটি দেখে নিজের মনে ভিতর লুকিয়ে থাকা আগ্রহটি জেগে উঠে। মনে মনে পিনু এমন একটি কাজের চিন্তাই করছিল। না আমাকে এগিয়ে যেতে হবে বহুদূর।
পরদিনই পিনু সেই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের অফিসে যায়। তারা পিনুর একটি মৌখিক টেস্ট নেয়। তারপর বলে এখানে ভর্তি হয়ে যান এবং এ সম্পর্কিত কলাকৌশল শিখতে থাকুন। আপনি পারবেন সংবাদ পাঠক, উপস্থাপিকা কিংবা আরজে হতে।
পিনু ভর্তি হয়ে যায় সে কোর্সে। ক্লাস নিতে আসেন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের বিখ্যাত প্রতিবেদকরা। পিনু তাদেরকে ক্লাসে দেখে আর অবাক হয়। নিজেকে ভাবতে থাকে একদিন আমিও এমন হব। হব মুন্নিসাহা, কিশোয়ার লায়লা, নবনীতা চৌধুরীর ন্যায় দেশ বিখ্যাত সাংবাদিক। সবাই এক নামে চিনবে এই পিনুকে।
এভাবেই একদিন শেষ হয় পিনুর সাংবাদিকতার কলাকৌশল শিক্ষার কোর্স। এর মধ্যে পরিচিত হয় কয়েকটি চ্যানেলের বিখ্যাত সব রিপোর্টারের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে আদান প্রদান হয় ফোন নাম্বার এবং মেইল অ্যাড্রেস। ওই প্রতিবেদকরাও পিনুকে উৎসাহিত করে তার এগিয়ে যাওয়ার পথে।
এদিকে পিনু সাংবাদিকতায় নিজের একটা অবস্থানের জন্য কয়েকজন প্রতিবেদকের সঙ্গে প্রায়ই যোগাযোগ রাখছিল।
কয়েকজন প্রতিবেদক আবার অতি উৎসাহি হয়ে পিনুকে ‘অমুক জায়গায় সিভি দাও তমুক জায়গায় সিভি দাও’ বলেও ব্যাপক উৎসাহ দিচ্ছিলেন।
একদিন এক সিনিয়র প্রতিবেদক (টিভি খুললেই যাকে প্রায়ই দেখা যায়) একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে ৫ দিনের জন্য ঢাকার বাইরে যাবেন।
তিনি পিনুকে বললেন, পিনু চল আমার সঙ্গে, আমি একটা স্পেশাল নিউজ করবো। তুমি আমার সঙ্গে থাকলে অনেক কিছু শিখতে পারবে এবং রিপোর্টে তোমার নামটিও আমি জড়িয়ে দিব সহযোগী হিসেবে।
পিনু নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় ঐই প্রতিবেদকের সঙ্গী হয়। প্রথম দিন স্থানীয় দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন এবং ঘোরাফেরার মধ্য দিয়ে ভালই কাটলো যদিও তেমন একটা কাজই হয়নি।
দ্বিতীয় দিনে অনেক খাটাখাটুনির পর সন্ধ্যায় যথারীতি বেড়ানো শেষে হোটেল রূমে ফেরে পিনু এবং তাদের টিম। ক্লান্তি এবং অবসাদে গা এলিয়ে দেয় হোটেল রূমের বিছানায়।
কিন্তু পরদিন সকালে পিনু কাউকে কিছু না বলে ঢাকার উদ্দেশ্যে হোটেল ত্যাগ করে। ঢাকা ফেরার পর থেকে পিনু আর টিভি, রেডিওর খবর কিংবা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা-আবৃত্তি ইত্যাদির নামও শুনতে পারে না।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
২৭.০১.১৪
বিষয়: বিবিধ
১১৩৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই হইল বাংলাদেশের সাংবাদিক!
মন্তব্য করতে লগইন করুন