উপন্যাস: দ্য প্রাইম মিনিস্টার [পর্ব-৬]
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ১৮ নভেম্বর, ২০১৪, ০৮:২০:২০ সকাল
সেলিনা বেগম পিঠা বানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়ির উঠোনে পা দিতেই টের পেলাম। পিঠার গন্ধ নাকের ভিতর সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। তবে তাঁদের ঘরে ঢোকার মূহুর্তেই দম বন্ধ হয়ে আসলো আমার। সেলিম শাহ্ পিস্তল উঁচিয়ে হান্নাহ-এর দিকে তাক করে আছেন। কিছুক্ষণ পর হাত গুটিয়ে চেয়ারে বসে পড়লেন বিমর্ষভাবে। হান্নাহ আমার দিকে নজর দিয়ে বললেন, ‘তুমি? এসো, বসো।’
আমি তাঁর পাশে গিয়ে বসলাম। তাঁর হাতের শক্ত মাংসপেশী আমাকে স্পর্শ করতেই বুঝলাম তিনি কতো শক্তিশালী।
সেলিম শাহ্ বললেন, ‘আমি ভাবতে পারি নি তুমি এটা করছো। তোমার জন্য আমার লজ্জা লাগে। আমার মাথাটা হেট হয়ে যায় মানুষের সামনে। গতকালই কথাটা প্রথম শুনেছি। আমার সন্তান টেরোরিস্ট, এর মতো লজ্জার বিষয় থাকতে পারে।’
মুচকি হেসে তিনি বললেন, ‘টেরোরিস্টকে তো কেউ আর প্রাইম মিনিস্টার বলতে পারে না।’
-দেখো, আমি এখনো তোমাকে অনুরোধ করছি, তুমি আর ফিরে যেও না। এখানে আমার ব্যবসা বাণিজ্য আছে, এগুলো দেখা-শুনা করো।
-ব্যবসাই তো করি আমি, নিজের ব্যবসা, এখানে এসেছিও ব্যবসা করতে। শুনেছি এলাকার চেয়ারম্যান অনেক প্রভাবশালী, অনেক অস্ত্রধারী চেলা আছে তার। এলাকার কি কোন উন্নতি হচ্ছে বাবা?
-একে দিয়ে কোন উন্নতি হবে না। নষ্টা মানুষকে দিয়ে কিছু হয় না, তোমার মতো বিপথগামী। তোমার জন্য কি করিনি আমি? যখন যা চেয়েছ তাই দিয়ে এসেছি, ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলাম, তবু তুমি কেনো এমনটি হয়ে গেলে।
একথা বলতে যেয়ে সেলিম শাহের চোখে জ্বল টলমল করে উঠলো।
-কোন উপায় ছিলো না আমার, আমার যোগ্যতা ছিলো না আর কোনো কিছু হবার।
সেলিনা বেগম পিঠার ট্রে-টা নিয়ে আসলেন আমাদের সামনে, সেলিম শাহের হাতে পিস্তল দেখে থমকে গেলেন তিনি। ভয়ার্ত চোখে সেলিম শাহের দিকে তাকালেন তিনি। চোখ ইশারায় হান্নাহ-এর দিকে তাকালেন সেলিম শাহ। সেলিনা বেগমের আর কিছু করার ছিলো না, একটা চড় বসিয়ে দিলেন তাঁর গালে। সেলিম শাহ আর সেলিনা বেগম দু’জনই সে ঘর থেকে চলে গেলেন।
তিনি বললেন, ‘আমি এই আশীর্বাদের জন্য প্রস্তুত ছিলাম।’
আমি বললাম, ‘আশীর্বাদ! এটা তোমার কাছে আশীর্বাদ। অবাক করার মতো ব্যাপার। তবে, তুমি ব্যাপারটা তোমার পরিবারের কাছে লুকাতে পারতে।’
-লুকিয়ে রাখা দুর্বলদের কাজ। একদিন তারা এই টেরোরিস্টের জন্য গর্ব করতে পারে। তাদের একদিন এই টেরোরিস্টকে দরকার হতে পারে।
-তারপর কালকে যাচ্ছো তাহলে?
-একা নই, তুমিও আমার সাথে যাচ্ছো।
-মানেটা কি? কি বুঝাতে চাচ্ছো?
-আমি জেনেছি তোমার পরিবারের অবস্থা। তোমার আর কোনো উপায় নেই। পরিবার সামলাতে হলে তোমাকে আমার সাথেই যেতে হবে।
আমি আঁতকে উঠলাম। টেরোরিস্টের সাথে থাকা মানে নিজে টেরোরিস্ট হয়ে যাওয়া। আমি নিজেকে টেরোরিস্ট করতে পারি না। তবে সত্যি বলতে কি আমার কোনো উপায় ছিলো না। সেটাকে লুকিয়ে বললাম,
-না, আমি তোমার সাথে যেতে পারবো না।
-দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া একটা অসুখ। ভেবে দেখো, ভেবে দেখার পর সবকিছু গুছিয়ে চলে এসো। বাড়ির জন্য একজন কাজের লোকের দরকার পড়বে। টাকা নিয়ে কোন সমস্যা নেই, আমি আছি। জেনে রাখো, ভাবনার পর সঠিক সিদ্ধান্তটা বেশিরভাগ মানুষ নেয়।
-আমাকে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্তটা নেওয়া তোমার জন্য ভুল। কি কাজ হবে আমার? নিশ্চয় মানুষ হত্যা।
-সেক্রেটারি।
-কার? তোমার?
-হু!
একটি বিস্কুট পিঠা দুই আঙুল দিয়ে তুলে নিলেন তিনি। আমিও একটা ভাপা পিঠা চিমটি দিয়ে খেতে লাগলাম।
জানালা খুলে দিলেন তিনি, শীতের সকালের মিষ্টি রোদ ঘরটাকে ভরিয়ে দিলো। হঠাৎ আসাদ ঘরে ঢুঁকে একটা ক্রিকেট বল দিয়ে তাঁর পিঠ বরাবর ছুঁড়ে দেয়। আসাদ হলো হান্নাহ’র একমাত্র ছোটভাই, বয়স বারো-তেরো হবে। পিঠে আঘাত করে বলটা মাটিতে পড়ে যায়। পিছন না ফিরেই তিনি বললেন, ‘আসাদ, তোকে ক্রিকেটার হতে হবে।’
আসাদ বলে, ‘ঠিক আছে ভাই।’
বলটা কুঁড়িয়ে নিয়ে আমাকে বলে, ‘তুমি কিন্তু ভাইয়ার সাথে যাচ্ছো।’
একথা বলেই ছুটে অন্য রুমে চলে গেলেন তিনি। সুতরাং কিছু বলার সুযোগ পেলাম না।
তিনি বললেন, ‘আজ সকালের বাতাস বলছে, কেউ একজন আসছে।’
**********************************************
বিষয়: সাহিত্য
৯০১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন