শুদ্র দ্য গংরিড: দুশমন খাবলুশ

লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ২৯ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:০৫:২৭ রাত

Untitled99

কিছু অসঙ্গতি থেকে যাচ্ছে খসড়া পর্বগুলোতে। তবে দু'একটি চরিত্র সংযোজন করে পরবর্তীতে ফিকশনটির উৎকর্ষ সাধন করা হবে।

-মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী

------------------------------------------------

পৃথিবীর বুকে অনেক জাতি বীর জন্ম দিয়েছে। তবে গংরিডেরা জন্ম দিয়েছে জ্ঞানী বীর। বঙ্গ রাজ্য আর পতঙ্গ রাজ্যের অধিবাসীরা ছিল গংরিড। এখানকার সন্তানেরা ছোটবেলা থেকে পাঠশালায় যায়, কেননা গংরিডদের মতে, শিক্ষা হচ্ছে জাতির ভিত্তি। তাদের মতে গংরিডেরা হাজার বছর ধরে টিকে আছে শুধু শিক্ষার জোরে। প্রতিটা গংরিডের জীবন শুরু হয় পাঠশালা থেকে। রাজ্যে পাঠশালার অভাব নেই। পাঠশালা থেকে শক্তিশালী এবং মেধাবী পুরুষদের নিয়ে আসা হয় প্রশিক্ষণের জন্য। একারণে যুদ্ধক্ষেত্রে গংরিডদের সাথে কেউ পেরে ওঠে না। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিটা গংরিডীয় বীর কৌশলী। একারণে বঙ্গ আর পতঙ্গরাজ্যের পতন অসম্ভব ব্যাপার প্রায়।

তবে ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না। যুদ্ধবাজ রাজা খাবলুশ পতঙ্গ রাজ্য আক্রমণের প্রস্তুতি নেয় গোপনে। নিষ্ঠুর এই রাজার মনে মায়া দয়া বলতে কিছু নেই। খাবলুশের রাজ্যের প্রতিটা প্রাণী খাবলুশের কথা শুনে কাঁপে। খাবলুশ যখন বের হয় তখন কারো মাথা উঁচুতে থাকে না। সবাই মাথা নিচু করে থাকে। এমনকি পশু পাখিরাও তার দিকে তাকাতে ভয় পায়। খাবলুশের চোখ দেখতে লালবর্ণ, প্রশস্ত কাঁধ আর বিরাট কদাকার কালো চেহারা। খাবলুশের মূল শক্তি কালো যাদু। খাবলুশ তার রাজ্যে এক বিরাট কালো জাদুকরের বাহিনী গঠন করে। খাবলুশ যখন তার কালো জাদুকর বাহিনী নিয়ে রথে করে ঘুরতে বের হয়, প্রজারা ভয়ে কাঁপতে থাকে। খাবলুশের ছিল এক একান্ত ডাইনী সঙ্গী যার নাম তিররি। তিররি বাতাসের বেগে ছুটতে পারতো। প্রতি রাতে এক মানুষের রক্ত পান ছিল তার খাবারের সূচি। এককথায় খাবলুশের রাজ্যে খাবলুশই হচ্ছে স্রষ্টা, স্রষ্টাতে বিশ্বাস করা সে রাজ্যে নিষেধ। খাবলুশের লোকেরা যদি খবর পেত কেউ স্রষ্টার নাম নিচ্ছে। সাথে সাথে তাকে ধরে এনে হত্যা করা হতো।

পতঙ্গরাজ্য আক্রমণের বিষয়ে খাবলুশের সেনাপতি তাকে এসে বলে, ‘পতঙ্গরাজার সৈন্য সংখ্যা অনেক। এছাড়া বঙ্গরাজ্যের সহযোগিতা তারা পাবেই। তাই আমাদের পক্ষে পতঙ্গরাজ্য আক্রমণ করাটা খুব কঠিন হবে।’

খাবলুশ বলে, ‘চুপ! এসব শুনতে চাই না। শক্তিশালী সব পুরুষকে ধরে নিয়ে আয় সেনাবাহিনীতে।’

এ নির্দেশের পর সক্ষম সব পুরুষকে খাবলুশ তার সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে। খাবলুশ এভাবে দশ হাজার হস্তী বাহিনী, দশ হাজার তিরন্দাজ, বিশ হাজার অশ্ববাহিনী আর পঞ্চাশ হাজার সৈন্য প্রস্তুত করলো। তার সৈন্যদের প্রতি চলতো অমানুসিক অত্যাচার।

যুদ্ধপ্রস্তুতি শেষ হলে খাবলুশ তার সেনাপতিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে, ‘এবার কি হবে পতঙ্গরাজের?’

সেনাপতি বলে, ‘পতঙ্গরাজের পতন! জয় হোক মহারাজের! জয় খাবলুশ! জয় হোক মহারাজের!’

অতি বাস্তব হলেও সত্যি এই যুদ্ধপ্রস্তুতির কথা ঘুর্ণাক্ষরেও জানতে পারে না রাজা হরিদি অথবা আজাকা। কেননা, খাবলুশের রাজ্যের কেউ অন্য রাজ্যে যেতে পারত না, অথবা অন্য রাজ্যের কেউ খাবলুশের রাজ্যে যেতে পারত না। তাই পতঙ্গরাজের পতন প্রায় নিশ্চিত ছিল।

তবে শেষ মূহুর্তে রাজা হরিদির দরবারে এক রক্তাক্ত লোককে ধরে আনা হলো, যে রাজা হরিদির সাথে কথা বলতে ব্যাকুল ছিল। লোকটি জানায় সে খাবলুশের রাজ্যের এক প্রজা। এছাড়া খাবলুশের অত্যাচারের বর্ননা দেয়। সবশেষে যখন সে জানায়, খাবলুশ খুব দ্রুত পতঙ্গরাজ্য আক্রমণের পরিকল্পনা আটছে তখন রাজা হরিদি চিন্তিত হয়ে পড়লো।

রাজা হরিদি সাথে সাথে দূত পাঠালো রাজা আজাকার দরবারে। রাজা আজাকাও এ খবর শুনে চিন্তিত হয়ে পড়ল। রাজা আজাকার মনে শঙ্কা জাগে, তাহলে কি পতঙ্গরাজ অত্যাচারী খাবলুশের কবলে পড়তে যাচ্ছে। এমনিতেই রাজা আজাকার সৈন্যরা প্রস্তুত ছিল যুদ্ধ করার জন্য, সাথে সাথে রাজা আজাকা রাজা হরিদির সহায়তার জন্য সীমিত এক সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দিল।

তবে শেষরক্ষা হল না পতঙ্গরাজের। পরদিন সকালেই রাজা আজাকার সেনাপতি এসে বলে, ‘মহাশয়! রাজা হরিদিকে নিকৃষ্টভাবে হত্যা করেছে খাবলুশ। আক্রমণ এত দ্রুত এসেছে যে আমাদের সৈন্যরা পৌঁছাতেই পারে নি। খাবলুশের বাহিনী বিশাল। তাদের কালো জাদুকরেরা যুদ্ধকে একপেশে করে দিয়েছিল। তার বিরাট হস্তীবাহিনী আর অশ্ববাহিনী আছে।’

রাজা এ সংবাদে ব্যথিত হলেন। প্রিয় বন্ধু হরিদির মৃত্যুতে শোক নেমে আসল রাজার মনে, তবে তাকে ভেঙে পড়লে হবে না, কেননা সে রাজা। বন্ধু হত্যার প্রতিশোধের তেজও তার ভিতর জেগে উঠল। রাজা সেনাপতিকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আর কোন খবর?’

সেনাপতি বলে, ‘যতটুকু জানতে পেরেছি খাবলুশ তার বাহিনী আরো প্রসারিত করে বঙ্গ রাজ্যের উপর আক্রমণ করবে। আমরা প্রস্তুতির জন্য মাস দুয়েক সময় পাব।’

রাজা আজাকা বলল, ‘যাও যোদ্ধাদের খবর পাঠাও। তীব্র প্রস্তুতি নাও। যুদ্ধ কৌশল নির্ধারণ করো।’

এদিকে খাবলুশ শুধু রাজ্য দখল করেই ক্ষান্ত হলো না। সে তার কালো জাদুর প্রভাব ছড়িয়ে দিতে লাগল। পতঙ্গরাজ্যের অনেক মানুষ পালিয়ে আসল বঙ্গরাজ্যে, তারা এসে রাজা আজাকাকে খাবলুশের নিষ্ঠুরতার কথা জানাল। পতঙ্গরাজ্যেও এক বিরাট বন ছিল। তবে খাবলুশের হুকুমে সেই বন ধ্বংসের কাজ শুরু হল। বনের গাছ কাটার দায়িত্বে থাকত ডাইনি তিররি। তার বিরাট চাবুক দিয়ে তার কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করত তিররি। কারণে অকারণে যে কারো পিঠে সপাং করে চাবুকের ঘা পড়ত। বনের গাছপালা কেটে নিয়ে বিরাট স্তুপ তৈরি করা হতো খাবলুশের প্রাসাদের পাশে। প্রতিদিন রাতে খাবলুশ সেই স্তুপের মাঝে আসত, আর তার কালো জাদু দিয়ে গাছের সব শক্তি শুষে নিত। সে জানত গাছের শক্তি তীব্র। এই শক্তিতে একবার নিজেকে ভরপুর করে তুলতে পারলে সে হয়ে যাবে অবিনশ্বর এক মানব। তখন নির্দ্বিধায় সবাই স্রষ্টা মানবে। গাছের সব শক্তি শুষে নেওয়া শেষ হলে গাছগুলো ছাই হয়ে উড়ে যেত।

খাবলুশ এ সময় এমন চিৎকার দিত যে, আশে পাশের সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়ত। খাবলুশের ভয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা উড়ে চলে আসতে লাগল বঙ্গরাজ্যে। আবার বনের প্রাণীরাও ছুটে চলে আসতে লাগল বঙ্গরাজ্যের বনে। তবে খাবলুশ এটা টের পেয়ে তিররিকে পাঠালো। তিররি এমন তার মায়াবী কালো লাঠির বলে পতঙ্গরাজ্যের সব পাখি-জন্তুকে বশে এনে ফেলল।

এসব কারণে বঙ্গরাজ্যের সবাই স্পষ্ট বুঝে উঠলো যুদ্ধ অনিবার্য। পতঙ্গরাজ্যের যে সব মানুষেরা বঙ্গরাজ্যে এসেছিল তাদের জন্য আশ্রয় শিবির খোলা হল। তার সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি চলতে লাগল।

সন্না সোমান্দ্র তার সন্না বাহিনী নিয়ে তীব্র প্রস্তুতি শুরু করল। তাদের উদ্দেশ্য কালো জাদুকরদের রুখে দেওয়া। সেনাপতি তার সৈন্যদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিতে লাগল। এরকম যুদ্ধ প্রস্তুতির মাঝে শুদ্র থেমে থাকতে পারে না, কারণ সে তখন বিশ বছরের টগবগে তরুণ। সে তার ঢাল তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিতে লাগল। বর্শা নিক্ষেপেও শুদ্র ছিল নিখুঁত। আর তার অশ্বচালনার কৌশল ছিল অনন্য।

একটানা সে প্রস্তুতি নিতে লাগল। প্রস্তুতির মাঝে একদিন সেনাপতিপুত্র কেদুকি তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল। ইচ্ছে করেই শুদ্রকে ধাক্কা দেবার পায়তারা করলো কেদুকি। তবে শুদ্র এখন যেমন শক্ত সমর্থ তেমনি তার মুখাবয়ব মায়াতে ভরা। শুদ্র চোখ ফিরিয়ে কেদুকির দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তুমি তো আমার শত্রু নও।’

কেদুকি বলে, ‘বন্ধুও নই এখন। দেখি কার শক্তি বেশি। এসো শক্তিপরীক্ষা হয়ে যাক।’

এরপর দু’জন খালি হাতে কুস্তি শুরু করে দিল। তবে শুদ্রের দেহ মন কেদুকির চেয়ে অনেক দ্রুতগামী। গাছে গাছে বানরের মত ঘুরে বেড়ানোর যার অভ্যাস তার সাথে কৌশলে পেরে ওঠা কেদুকির পক্ষে সহজ নয়। একবার এক দুষ্টু কুমির শুদ্রের উপর আক্রমণ করলেও শুদ্রকে কুপোকাত করতে পারে নি, বরং শেষে কুমিরটিকে এমন শিক্ষা দিয়েছিল যে পরদিন থেকে বাবা বাবা বলে ডাকত। তাই শুদ্রের কাছে খুব দ্রুতই কুপোকাত হয়ে গেল কেদুকি। কেদুকি আগে ভাবত তার মত শক্তিশালী আর কেউ নেই, তবে শুদ্রের শক্তি যে তার চেয়ে বেশি সে বুঝতে পারল। চারপাশে অনেক সৈন্যরা এ মজাদার খেলা দেখছিল।

এ হার কেদুকির কাছে অনেক লজ্জার ব্যাপার ছিল। সে ফুঁসতে ফুঁসতে মাথা নিচু করে সে স্থান ত্যাগ করলো। এত ব্যস্ততার মাঝেও শুদ্রের সাথে নিয়মিত দেখা হত রাজকুমারী ইলির।

ততদিনে রাজকুমারীর ইলির সাথে শুদ্রের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। রাজকুমারী ইলি শুদ্রকে একদিন না দেখলে অস্থির হয়ে উঠতো।

*************************************

বিষয়: সাহিত্য

১১৩১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

279425
২৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৯:২৬
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
279457
২৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১০:৫৪
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : কুমিরটিকে এমন শিক্ষা দিয়েছিল যে পরদিন থেকে বাবা বাবা বলে ডাকত। Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File