গল্পঃ শিয়াল পণ্ডিতের নব্য পাঠশালা
লিখেছেন লিখেছেন মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:৩৮:৩৫ রাত
সারা বনে রটে গেল, শিয়াল পণ্ডিত চাঁদে গেছে। শিয়াল পণ্ডিতও সুযোগটা নিল। কিছুদিন এদিক-ওদিক পালিয়ে থাকল। তারপর হঠাৎ একদিন শিয়াল পণ্ডিত বড় একটা ব্লাক বোর্ড নিয়ে বনের মাঝখানে আবার পাঠশালা খুলে বসল। বানর থেকে শুরু করে সবাই তাদের বাচ্চাদের শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালায় ভর্তি করে দিল।
আর সারা বনে ছড়িয়ে পড়ল, শিয়াল পণ্ডিত চাঁদ থেকে বস্তা ভর্তি করে শিক্ষা-দিক্ষা নিয়ে এসেছে।
শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালার খবর বাঘ মামার কাছে যেতেও দেরি হল না। বাঘ মামাতো এ খবর পেয়ে রেগে মেগে অস্থির। একদিন হঠাৎ করেই শিয়াল পণ্ডিতকে শায়েস্তা করতে শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালার দিকে রওনা হল। শিয়াল পণ্ডিত দূর থেকে বাঘ মামাকে আসতে দেখেই তার ছাত্রদের পড়াতে লাগল, ‘বাঘ মামা সবার মামা! বাঘ মামাকে ভয় নয়! বাঘ মামা মহান মামা!’
নিজের এত সুনাম শুনে বাঘ মামারতো রাগ গেল উড়ে।
তারপর একটু থেমে শিয়াল পণ্ডিত আবার পড়াতে শুরু করে, ‘চাঁদ খুব খারাপ জায়গা! চাঁদে থাকে রাক্ষস-খোক্ষস! চাঁদে যেতে সবার মানা!’
বাঘ মামাতো এ কথা শুনে ভাবল, যাক বাবা! বড্ড বেঁচে গেছি চাঁদে না গিয়ে।
বাঘ মামা কাছে আসতেই সবাই একসাথে সালাম ঠুকল। শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘মামা এসো, আমার পাঠশালা দেখে যাও।’
বাঘ মামাতো এমন সালাম কোনদিন কারো কাছ থেকে পায় নি। তাই তার বুকটা আনন্দে ভরে গেল। শিয়াল পণ্ডিত ক’দিন আগেই তাকে যে নাকানি-চুবানি দিয়েছে সে কথা বাঘ মামার একবারের জন্যও মনে আসল না। তাই সেদিন ভাগ্নের পাঠশালা দেখে খুশী মনে ফিরে গেল।
ওদিকে কুমীরতো চিন্তায় অস্থির। সবার বাচ্চারা চাঁদের বস্তা ভর্তি শিক্ষা নিচ্ছে আর তার বাচ্চাগুলোকে পাঠাতেও পারছে না পাছে শিয়াল খেয়ে ফেলে। তাই বাঘের শরণাপন্ন হল কুমির।
বাঘ মামা সাথে চারটা কুমিরছানা নিয়ে আবার একদিন হাজির শিয়াল পণ্ডিতের পাঠশালায়। শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘মামা কি মনে করে?’
বাঘ মামা বলে, ‘দেখতো ভাগ্নে এই কুমিরছানা চারটাকে শিক্ষা-দিক্ষা দিতে পারিস কিনা। সাবধান, আগের বারের মত খেয়ে ফেললে কিন্তু তোর ঘাড় মটকে দেব। শিক্ষা শেষ হলে, আমি এসে নিয়ে যাব।’
শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘ও তুমি চিন্তা করো না মামা।’
শিয়াল পণ্ডিত কুমিরছানা চারটাকে আলাদা করে রাখে। আর রাত হলে আলাদা করে পড়ায়। বাঘ মামাও মাঝে মাঝে এসে দেখে যায় চারটি কুমিরছানা আছে কিনা।
শিয়াল পণ্ডিত তো কুমিরছানাদের দেখে জীভের জল ধরে রাখতে পারে না। আবার বাঘ মামার ভয়ে কুমিরছানাদের খেতেও পারে না। শেষ পর্যন্ত শিয়াল পণ্ডিত ঠিক করল, কুমিরছানা না খেতে পারে পারুক কিন্তু বাঘ মামাকে একটা উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে।
শিয়াল পণ্ডিত কুমিরছানাদের শিক্ষা দিতে লাগল,
‘বাঘ-কুমির দা-কুমড়া
জলের ধারে তোল চামড়া’
কুমিরছানারা শিখতে লাগল, বাঘকে জলের ধারে পেলেই তাকে ঘায়েল করতে হবে।
শিয়াল পণ্ডিত ভালোমত কুমিরছানাদের বাঘ-কুমির দা-কুমড়া শিক্ষা দিয়ে দিল। এই এক শিক্ষা বারবার দিতে দিতেই কুমির ছানারা বেশ বড় হয়ে গেল। যখন শিয়াল পণ্ডিত বুঝল কুমিরছানাদের বাঘকে ঘায়েল করার মত শক্তি হয়েছে, তখন শিয়াল পণ্ডিত বাঘ মামার কাছে খবর পাঠালো কুমিরছানাদের নিয়ে যাবার জন্য। বাঘ মামাতো চারটা মুরগী নিয়ে শিয়ালের কাছে হাজির। শিয়াল পণ্ডিতও বাঘ মামার হাতে মুরগী দেখে বেজায় খুশী।
বাঘ মামা বলে, ‘নে ভাগ্নে তোর বকশীস।’
শিয়াল পণ্ডিত খুশী মনে মুরগী চারটা নিয়ে বলে, ‘মামা, কুমিরছানাদের যে শিক্ষা দিয়েছি তা ওরা কোনদিন ভুলবে না।’
বাঘ মামা কুমির ছানাদের নিয়ে নদীর দিকে চলল কুমিরের কাছে তার বাচ্চাদের ফিরিয়ে দিতে। যেই না বাঘ মামা কুমিরছানাদের নিয়ে নদীর ধারে আসল, কুমিরছানারা চিৎকার করে বলতে লাগল,
বাঘ-কুমির দা-কুমড়া!
জলের ধারে তোল চামড়া!
বোকা বাঘ মামা কিছু বোঝার আগেই কুমিরছানা চারটি বাঘের চারটা পা ধরে টানতে টানতে নদীর জলে নিয়ে গেল।
শিয়াল পণ্ডিত দূর থেকে বাঘের করুণ অবস্থা দেখে খিল খিল করে হাসতে লাগল।
---সমাপ্ত---
বিষয়: সাহিত্য
১২৯২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্দের এ গোলকধাঁধা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে!
যদিও প্রায় সবাই জানে যে এগুলো মিথ্যে কথা, তবুও এসব গল্প আমাদের হিসাবের খাতায় লালকালির আঁচড় দিতা পারে!!
আর শিশুমনে এর প্রভাব তো অবশ্যই মন্দ!!
তাই পরামর্শ রইলো গল্পে যেন নৈতিকতার শিক্ষা গুরুত্ব পায়- শিশুতোষের আশায় যেন মন্দকে মাধ্যম বানানো না হয়!!
আমি শেষ দেখার অপেক্ষায় ছিলাম এবং আশাও করেছিলাম যে একটা শিক্ষণীয় উপসংহারে গল্প শেষ হবে!!
আগামীতে সুন্দর গল্পের অপেক্ষায় রইলাম!!
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সার্বিক কল্যান দান করুন আমীন
মন্তব্য করতে লগইন করুন