গল্পে গল্পে বাচ্চাদের শেখানো
লিখেছেন লিখেছেন আফরোজা হাসান ৩০ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:৪৭:৫৮ বিকাল

বাগানে বসে কাজ করছিলো সিহাব। হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখল ভাতিজা আয়াত কান্না করতে করতে আসছে। অতি প্রিয় চাচ্চুকে দেখে আয়াতের কান্নার শব্দ আরো বেড়ে গেলো।কাজ বন্ধ করে ভাতিজাকে ধরে সিহাব বলল, কে ছেড়ে দিলো চোখের নল, ঝরছে অঝোর ধারায় জল।মোর আঁখিও ছলছল, এখনি বুঝি নামবে ঢল। চাচ্চুর ইন্সট্যান্ট কবিতা শুনে আয়াতের চোখে আনন্দের ঝিলিক দিয়ে উঠলেও সে কান্না জারি রাখলো।
-আরে আরে কি হয়েছে আমার সোনা বাবাটার? কেন কান্না করছেন আপনি বাবা? ব্যথা পেয়েছেন নাকি কেউ মেরেছে?
-(ফোঁপাতে ফোঁপাতে) নুবাঈদ আমার খেলনা নিয়ে গিয়েছে। সকালে তামান্না আমার চকলেট নিয়ে গিয়েছিলো। সবাই আমার কাছে থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে যায় সবসময়।
-(হাসি চেপে) সবাই তোমার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়ে যায়?
-(পুতুলের মত মাথা দুলিয়ে) হ্যা সবকিছু নিয়ে যায়।
-তুমি নিতে দাও কেন? কাউকে কিছু বলো না কেন?
-দাদুভাই আমাকে বলেছে কাউকে কষ্ট দিতে নেই। তা না হলে আল্লাহ রাগ করবেন আমার উপর।
-দাদুভাই তোমাকে কাউকে কষ্ট দিতে মানা করেছেন কিন্তু আত্মরক্ষা করতে তো নিশ্চয়ই মানা করেননি।
-দাদুভাই বলেছেন কারো সাথে রাগ না করতে। কাউকে কষ্ট না দিতে।
-(হেসে) আচ্ছা ঠিকআছে। এখন তুমি কান্না বন্ধ করো। চলো তোমাকে চাচ্চু একটা গল্প শোনাই। শুনবে গল্প?
-(চোখ মুছে হাসি মুখে) হ্যা শুনবো।
-(ভাতিজাকে কোলে বসিয়ে আদর করে দিয়ে) এক গ্রামের রাস্তার ধারে এক সাপ বাস করতো। ভীষণ ছিল তার আকৃতি। সে যখন ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করতো তখন রক্ত হীম হয়ে আসতো।
-সাপটার নাম কি চাচ্চু?
-সাপটার নাম মিস্টার ফোঁস ফোঁস। কারণ রাস্তা দিয়ে মানুষ যেতে দেখলেই সে ফোঁস ফোঁস করে তার দিকে তেড়ে আসতো আর কামড় দিতো। বিনা দোষে পথচারীরা প্রাণ হারাতো। মিস্টার ফোঁস ফোঁসের এই অত্যাচারের কারণে সেই রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো। একদিন এক সাধু সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
-দুষ্টু মিস্টার ফোঁস ফোঁস সাধুকেও কামড়ে দিলো তাই না চাচ্চু?
-শোনই না তারপর কি হল। মিস্টার ফোঁস ফোঁস তো অনেকদিন পর মানুষের দেখা পেয়ে ফোঁস ফোঁস করতে করতে ছুটে এলো। কামড়ে দেবার দেবার আগেই সাধু তার মন্ত্রের জোরে তাকে বশ করে ফেললো। সে তখন মাথা নত করে চুপ করে থাকলো। সাধুটি কাছে বসে বললেন, অকারণে মানুষকে কষ্ট দিয়ো না, কারো ক্ষতি করো না, হিংসা পরিত্যাগ করো পুরোপুরি এবং পারলে মানুষের উপকার করবে। উপদেশ দিয়ে তো সাধু চলে গেলেন।
-মিস্টার ফোঁস ফোঁস কি তখন ভালো হয়ে গেলো চাচ্চু?
-বলছি কি হলো। এরপর তো অনেকদিন পার হয়ে গেলো। হঠাৎ একদিন সাধুটি ঐ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন মিস্টার ফোঁস ফোঁস রাস্তার এক কোণে পড়ে আছে। তার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। সাধু তখন এগিয়ে গিয়ে বললেন, তোমার এই অবস্থা কি করে হল? সে জবাব দিলো, আপনার উপদেশ মানতে গিয়ে। সাধু অবাক হয়ে বললেন, সেটা কি করে? বলল, আপনি বলেছিলেন হিংসা ত্যাগ করো, কাউকে কষ্ট দিয়ো না। যখন থেকে আমি তা করছি সবাই আমার উপর অত্যাচার করছে। এখানকার ছেলেরা আমাকে মেরে এক কোনায় ফেলে রেখেছে। আমি তাদেরকে কিছুই বলিনি। তখন সাধু বললেন, আরে বোকা আমি তোমাকে হিংসা পরিত্যাগ করতে বলেছি, কাউকে অকারণে কষ্ট দিতে মানা করেছি কিন্তু আত্মরক্ষা করতে তো নিষেধ করিনি। তুমি অবশ্যই কারো ক্ষতি করবে না এবং সেই সাথে কেউ যাতে তোমার ক্ষতি করতে না পারে তাই ফোঁস ফোঁস করে তাদের ভয় দেখানোতে কোন দোষ নেই। এখন বলো কি বুঝলে গল্প থেকে?
-আত্মরক্ষা করবো কিন্তু কাউকে কষ্ট দেবো না। আমি কারো ক্ষতি করবো না এবং কেউ যাতে আমার ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনে প্রতিবাদ করবো।
-(হেসে) মাশাআল্লাহ! এই তো তুমি বুঝে গিয়েছো। এখন তাহলে কি করতে হবে?
-নুবাইদকে প্রতিবাদ করতে হবে। জাযাকাল্লাহ চাচ্চু আমাকে বুঝিয়ে বলার জন্য। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।
চাচ্চুর কোল থেকে নেমে প্রতিবাদ করতে ছুটল আয়াত। আর সিহাব হেসে কাজে মন দিলো।
বিষয়: বিবিধ
১৮৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন