যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিয়ে প্রসঙ্গে কিছু কথা

লিখেছেন লিখেছেন শাফিউর রহমান ফারাবী ০৯ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৪৭:৪১ সকাল



আমি অনেকদিন ধরেই দেখছি যে যয়নবের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিয়ে নিয়ে অনেক নাস্তিক/তথাকথিত মুক্তমনারা নেট জগতে ঘৃণার বানী ছড়াচ্ছে। আর শার্ট প্যান্ট পরিহিত সাধারন যুবকরা সীরাত [ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনী কে সীরাত বলা হয় ] সম্পর্কে ভাল করে পড়াশুনা না থাকার কারনে দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই ভাবলাম এই বিষয় নিয়া একটা ব্লগ লিখি।

প্রথমেই বলে রাখা ভাল যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ৩ জন ছেলেই শৈশব কালে মারা গিয়েছিল। আর

যায়েদ ছিল আমাদের নবীর দাস। যায়েদ শৈশব কালে জাহেলিয়াত যুগে ঘটনাচক্রে দাস হিসাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে নীত হন। পরবর্তীতে যায়েদের পিতা, চাচা যায়েদ কে মুক্তিপণের মাধ্যমে মুক্ত করতে চাইলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যায়েদের পিতা কে বলেন মুক্তিপণ লাগবে না। আমি বিনা মুক্তিপণেই যায়েদ কে স্বাধীন করে দিলাম। কিন্তু যায়েদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ছেড়ে আর তার পরিবারের কাছে যায় নি। যায়েদ তার শৈশব ও যৌবণকাল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছেই কাটায়। এবং নবুয়তের প্রথম যুগেই যায়েদ মুসলমান হয়ে যায়। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যায়েদ কে খুব ভালবাসতেন। জাহেলিয়াতের যুগে যায়েদ কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালক পুত্রের মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং যায়েদ কে ডাকা হত যায়েদ ইবনে মুহাম্মদ। যায়েদের সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আপন ফুফাত বোন যয়নব কে বিয়ে দিয়েছিলেন।

কিন্তু পালক পুত্র কন্যা নেয়া ইসলামী শরীয়তে যখন হারাম হয় এবং পালক পুত্র কে কখনোই নিজের পুত্র বলে ডাকা যাবে না এই ওহী যখন নাযিল হয় তখন যায়েদ শুধু একজন মুক্ত দাসের মর্যাদা পায়। অর্থ্যাত্‍ যায়েদের স্ত্রী যয়নব কখনই আমাদের নবীর পুত্র বধু ছিল না বরং সে ছিল একজন দাসের স্ত্রী। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনই তাঁর পুত্র বধু কে বিয়ে করেননি বরং তাঁর দাস যায়েদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী যয়নব কে বিয়ে করেছিলেন।

উল্লেখ্য যে যয়নব ছিল আমাদের নবীর আপন ফুফাত বোন। বিয়ের পরে যায়েদের সাথে যয়নবের বনিবনা হয়নি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাদের মাঝে তালাক হয়। কিন্তু একজন দাসের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হিসাবে ও বয়স্ক নারী হিসাবে কেউই তখন যয়নব কে বিয়ে করতে চায়নি। পরবর্তীতে যয়নবের একান্ত ইচ্ছায় এবং পালক পুত্র নিজের পুত্র নয় শুধু এটা বুঝানোর জন্যই আল্লাহ সুবহানাতায়ালার নির্দেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যয়নব কে বিয়ে করেছিলেন। মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আপন ফুফাত বোন যয়নব কে বিয়ে করেছিলেন। যে যয়নবের বিয়ে নিয়ে এত কথা সেই যয়নবের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ৩৭ বছর।

হযরত যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহার বিভিন্ন মেয়েলী অসুখ ছিল। উনি ইস্তিহাযা/অনিয়ন্ত্রিত স্রাব/Menorrhagia নামক এক মেয়েলী অসুখে আক্রান্ত ছিলেন। বিভিন্ন মেয়েলী অসুখের সময় মেয়েরা কিভাবে নামায পড়বে এই ব্যাপারে হযরত যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্নিত কয়েকটি হাদীস আছে। হযরত যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললাম যে, আমি ইস্তিহাযা/অনিয়ন্ত্রিত স্রাব এ আক্রান্ত। আমি তাই এখন কিভাবে নামায পড়ব ? রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন: তুমি তোমার পূর্ব নির্ধারিত হায়েযের দিন গুলো পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। অতঃপর গোসল করে যোহর কে বিলম্ব করে আসর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। অতঃপর গোসল করে উভয় ওয়াক্তের নামায একসাথে পড়বে। অনুরুপ মাগরিব কে বিলম্ব করে এশা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর গোসল করে উভয় ওয়াক্তের নামায একত্রে পড়বে। আর ফজরের জন্যও আলাদা গোসল করবে। [ সূনানে আন নাসাই, ১ম খন্ড, পৃ. ৬৫-৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ]

মেয়েলী অসুখ বিসুখের কারনে হযরত যয়নবের বিয়ে অনেক দেরীতে হয়। যায়েদের সাথে যখন যয়নবের বিয়ে হয় তখন উনার বয়স ছিল ৩৫ বছর। আর এর ২ বছর পর রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যখন যয়নবের বিয়ে হয় তখন উনার বয়স ছিল ৩৭ বছর। হযরত যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহা রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন ফুফাত বোন ছিলেন।

হযরত যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহার আপন ২ বোন হামনা ও হাবীবারও মেয়েলী অসুখ বিসুখ ছিল। উনারা প্রায়ই রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মেয়েলী অসুখ সম্পর্কিত বিভিন্ন মাসলা জিজ্ঞাস করতেন।

জাহেলিয়াত যুগের অনেক প্রথাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের দ্বারা প্রথম রহিত করেছিলেন। যেমন খুনের বদলে খুন এই রীতি টা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রহিত করেছিলেন উনার বংশের ইবন রবীয়া ইবন হারিছের রক্তের বদলা বাতিল ঘোষনা করে, সুদ প্রথা প্রথম বাতিল ঘোষনা করেছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাদা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের সুদের দাবী মাফ করে ঠিক তেমনি পালক পুত্র সম্পর্কে যেইসকল অনৈসলামি আক্বীদা ছিল আরব সমাজে তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যয়নব কে বিয়ে করার মাধ্যমে দূর করেছিলেন। জাহেলিয়াতের যুগে পালক পুত্র সম্পত্তির অংশীধার হত এবং পালক পুত্র কে নিজের পুত্র হিসাবেই গন্য করা হত। কিন্তু এখন ইসলামি আইনে পালক পুত্র কন্যা বলতে কিছু নাই। পালক পুত্র কন্যার মাধ্যমে পর্দা প্রথা নষ্ট হয়। তবে মাহরুম অর্থ্যাত্‍ যাদের সাথে বিয়ে হারাম তাদের কে দত্তক/পালক নেয়া যাবে। যেমন আয়েশা রাযিআল্লাহু আনহা তাঁর আপন ভাইয়ের ছেলেকে দত্তক নিয়েছিলেন। আর তাবারীতে যয়নব কে নিয়ে যতগুলি বর্ণনা পাওয়া যায় তার সবগুলিই জাল। আর তাবারী কোন হাদীস গ্রন্থ না আত তাবারী হল একটা ইতিহাস গ্রন্থ। তাবারী নিয়ে নাস্তিকদের সব মিথ্যাচার জবাব আমি এখানে দিয়েছি

বিষয়: বিবিধ

২১৪৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

204976
০৯ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:০৩

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7238

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> রায়হান রহমান লিখেছেন : জয়নব বিবি জায়েদের মাতা হয় কি করে?


I Don't Want To See I Don't Want To See I Don't Want To See I Don't Want To See I Don't Want To See I Don't Want To See I Don't Want To See
০৯ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:২৭
153926
মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস লিখেছেন :
কিন্তু পালক পুত্র কন্যা নেয়া ইসলামী শরীয়তে যখন হারাম হয় এবং পালক পুত্র কে কখনোই নিজের পুত্র বলে ডাকা যাবে না এই ওহী যখন নাযিল হয় তখন যায়েদ শুধু একজন মুক্ত দাসের মর্যাদা পায়। অর্থ্যাত্‍ যায়েদের স্ত্রী যয়নব কখনই আমাদের নবীর পুত্র বধু ছিল না বরং সে ছিল একজন দাসের স্ত্রী। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনই তাঁর পুত্র বধু কে বিয়ে করেননি বরং তাঁর দাস যায়েদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী যয়নব কে বিয়ে করেছিলেন।

উল্লেখ্য যে যয়নব ছিল আমাদের নবীর আপন ফুফাত বোন। বিয়ের পরে যায়েদের সাথে যয়নবের বনিবনা হয়নি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তাদের মাঝে তালাক হয়। কিন্তু একজন দাসের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হিসাবে ও বয়স্ক নারী হিসাবে কেউই তখন যয়নব কে বিয়ে করতে চায়নি। পরবর্তীতে যয়নবের একান্ত ইচ্ছায় এবং পালক পুত্র নিজের পুত্র নয় শুধু এটা বুঝানোর জন্যই আল্লাহ সুবহানাতায়ালার নির্দেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যয়নব কে বিয়ে করেছিলেন। মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর আপন ফুফাত বোন যয়নব কে বিয়ে করেছিলেন। যে যয়নবের বিয়ে নিয়ে এত কথা সেই যয়নবের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বিয়ের সময় উনার বয়স ছিল ৩৭ বছর।

আপনি কি অন্ধ নাকি উপরোক্ত বাক্য গুলো পড়েন নি?
০৯ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৬
153992

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7238

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> রায়হান রহমান লিখেছেন : লুচ্চামি করতে যেয়ে ধরা খাওয়া আর কাকে বলে? এখন শুরু হয়েছে হাত সাফাইয়ের ভোগিযোগি। এতে কি এই সভ্য যুগের লজ্জা থেকে রেহাই পাবেন????
204999
০৯ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:৪০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ বিষয়টির ব্যখ্যা করার জন্য। প্রকৃতপক্ষে এই বিষয়টি এমন কোন গুরুত্বপুর্ন নয় কারন ইসলামে পালক পিতা মাতার কোন বিধানই নাই। সুতারাং বৈধ-অবৈধতার কোন প্রশ্নই আসেনা। বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারিরা সব জেনেও এই কথা বলে যাবেই।
205016
০৯ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:২৩
পবিত্র লিখেছেন : ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ।
212588
২৪ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:০২
শাফিউর রহমান ফারাবী লিখেছেন : হযরত যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহার বিভিন্ন মেয়েলী অসুখ ছিল। উনি ইস্তিহাযা/অনিয়ন্ত্রিত স্রাব/Menorrhagia নামক এক মেয়েলী অসুখে আক্রান্ত ছিলেন। বিভিন্ন মেয়েলী অসুখের সময় মেয়েরা কিভাবে নামায পড়বে এই ব্যাপারে হযরত যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্নিত কয়েকটি হাদীস আছে। হযরত যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললাম যে, আমি ইস্তিহাযা/অনিয়ন্ত্রিত স্রাব এ আক্রান্ত। আমি তাই এখন কিভাবে নামায পড়ব ? রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন: তুমি তোমার পূর্ব নির্ধারিত হায়েযের দিন গুলো পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। অতঃপর গোসল করে যোহর কে বিলম্ব করে আসর পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। অতঃপর গোসল করে উভয় ওয়াক্তের নামায একসাথে পড়বে। অনুরুপ মাগরিব কে বিলম্ব করে এশা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর গোসল করে উভয় ওয়াক্তের নামায একত্রে পড়বে। আর ফজরের জন্যও আলাদা গোসল করবে। [ সূনানে আন নাসাই, ১ম খন্ড, পৃ. ৬৫-৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ]
মেয়েলী অসুখ বিসুখের কারনে হযরত যয়নবের বিয়ে অনেক দেরীতে হয়। যায়েদের সাথে যখন যয়নবের বিয়ে হয় তখন উনার বয়স ছিল ৩৫ বছর। আর এর ২ বছর পর রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যখন যয়নবের বিয়ে হয় তখন উনার বয়স ছিল ৩৭ বছর। হযরত যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহা রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন ফুফাত বোন ছিলেন।
হযরত যয়নব রাযিয়াল্লাহু আনহার আপন ২ বোন হামনা ও হাবীবারও মেয়েলী অসুখ বিসুখ ছিল। উনারা প্রায়ই রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মেয়েলী অসুখ সম্পর্কিত বিভিন্ন মাসলা জিজ্ঞাস করতেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File