সরকার ও নিউজমেকারদের ইচ্ছের বলি হতে সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে হবে।
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ ওহিদুল ইসলাম ১৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:৫৮:২৭ দুপুর
রাশিয়ায় দুটি বহুল প্রচলিত সংবাদপত্র নিয়ে একটু কৌতুক চালু আছে- “দেয়ার ইজি নো ইজভেস্তিয়া ইন প্রাভদা এন্ড দেয়ার ইজ নো প্রাভদা ইন ইজভেস্তিয়া।” রাশিয়ান প্রাভদা শব্দের মানে সত্য এবং ইজভেস্তিয়া মানে খবর। কৌতুকটির মানে দাঁড়ায়- সত্যে খবর নেই এবং খবরে কোন সত্য নেই। এ কৌতুকটি আজ আমাদের মিডিয়ার জন্য চরমভাবে প্রযোজ্য।
একতরফ,জনধিকৃত এবং গণতন্ত্র বিনাশ ও ভোটাধিকারহরণকারী কলঙ্কজনক নির্বাচনের পর অবৈধ সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সহিংসতার নতুন খেলায় মেতে উঠেছে এবং গৃহপালিত নিউজমেকারদের সহযোগিতায় এসব ন্যক্কারজনক ঘটনার দায় কোন প্রকার যুক্তি প্রমাণ ছাড়া সরাসরি বিরোধী দলের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।সরকারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। এ ঘটনাকে পুঁজি করে একঢিলে দুই পাখি শিকার- হিন্দুদের সম্পত্তি দখল ও বিরোধী মত দমন। তথ্যসন্ত্রাসীরা আজ এত্টা বেপরোয়া যে, ফটোশপড ছবি ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে নিউজ মেকিং করতেও দ্বিধা করছেনা।যে সকল ঘটনায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা হাতে নাতে ধরা পড়ছে ও প্রমাণিত হচ্ছে সেসব ক্ষেত্রে এসব মিডিয়া নিশ্চুপ কিংবা সংবাদ বিকৃত করে অন্য খাতে প্রবাহিত করে। এদের কৌশল হচ্ছে প্রমাণিত ঘটনা আড়াল করে অপ্রমাণিত ন্যক্কারজনক ঘটনাসমূহের দায় বিএনপি জামায়াত এর উপর চাপানো। ছাত্রলীগ এর হিন্দু সদস্য কোথাও দুষ্কর্ম করতে গিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ এর শিকার হলে সে ঘটনাকেও সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে এসব মিডিয়া। সংঘাত উস্কে দিয়ে , বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রাষ্ট্র প্রমাণ করে এসব মিডিয়া কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে?
বগুড়ায় গত ৭/১/১৪ তারিখে জনৈক আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রধান শিক্ষক বিরোধী দলের উপর দোষ চাপানোর হীন উদ্দেশ্যে নিজ স্কুলে আগুন দিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়েন। আলোচিত ঘটনাটি অন্য খাতে প্রবাহিত করতে দেশের একটি বহুল প্রচারিত ধর্মবিদ্বেষী পত্রিকা পরদিন শেষ পাতায় খুব ছোট আকারে –“প্রধান শিক্ষকের এ কী কান্ড!” শিরোনামে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে এবং উক্ত ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে হাস্যকর দাবি করে - তিনি নাকি সরকারী অনুদান পেতে স্কুলে আগুন দিয়েছেন। অথচ একই দিন তারা সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপ্রমাণিত কিছু ঘটনার উপর ভিত্তি করে কোন প্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়াই সরাসরি বিএনপি এবং জামায়াত শিবির এর উপর দায় চাপিয়ে প্রথম পাতায় তিনটি প্রতিবেদন এর পাশাপাশি সরকারপন্থী বুদ্ধিজীবি আবদুল মান্নান এর “এ সহিংসতার জন্য আমরা লজ্জিত” শিরোনামে একটি কলাম ছাপে সম্পাদকীয় পাতায় একটি ফটোশপড ছবিসহ যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে সিঁদুর পড়া এক রমণী ও তার শিশুকন্যা হাউমাউ করে কাঁদছেন।
লিংক http://www.prothom-alo.com/opinion/article/117835
একই ঘটনায় ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকার রিপোর্টে একই মহিলার ছবি দিয়ে সংবাদ ছাপা হয় কিন্তু সে ছবিতে মহিলার কপালে কোন সিঁদুর ছিলনা। তাহলে কোনটি সত্যি? আলোচিত পত্রিকাটির ছবি নাকি আনন্দবাজারের ছবি?আনন্দবাজার পরবর্তীতে সংবাদটি মুছে দিলেও গুগল এর কল্যাণে সে সংবাদ এর লিংক ফেসবুক এর স্ট্যাটাসবারে পেস্ট করলে মহিলাটির ছবি দেখা যাচ্ছে সিঁদুর ছাড়া ।
http://www.anandabazar.com/9bdesh1.html
এর আগেও নির্বাচনের ছবি দিতে গিয়ে প্রথমোক্ত পত্রিকাটি হাসপাতালের কিউতে দাঁড়ানো মহিলাদের একটি ছবিকে ফটোশপ করে সিঁদুর ও শাখা লাগিয়ে প্রকাশ করে।একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলে পরিষ্কার যে, ছবিতে কেউ ভোট দেয়ার মুডে ছিলেননা, সকলকে রোগ যন্ত্রণায় কাতর মনে হচ্চে। ছবিটি সত্যি ধরে নিলেও যে প্রশ্নটি থেকে যাচ্ছে তা হল- এ ছবিটি তাদের পরবর্তী নিউজ মেকিং এর পরিকল্পনার পূর্বধাপ কিনা?
http://www.prothom-alo.com/contents/cache/images/800x500x1/uploads/media/2014/01/05/52c95d35b6d5b-4.jpg
অথচ সংখ্যালঘু নির্যাতনের বেশ কয়েকটি প্রমাণিত ও হাতে নাতে ধৃত ঘটনা সম্পূর্ণ আড়াল করে রেখেছে এ তথ্য সন্ত্রাসীরা। কারণ সেসব ঘটনায় যে স্বয়ং আওয়ামী লীগ জড়িত ।
http://www.bdtomorrow.org/blog/blogdetail/detail/1646/activist/35647#.UtE25vsuLDc
যশোরের অভয়নগরে আলোচিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার মূল হোতা মনোনয়নবঞ্চিত সরকারদলীয় হুইপ অধ্যক্ষ আবদুল ওহাব।উক্ত আসনে ওহাব এর পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রণজিত রায়। নির্বাচনের পূর্বে আবদুল ওহাব সংখ্যালঘুদের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন-“ এবার নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় সংখ্যালঘুরা যদি ভেবে থাকেন ওহাব আর আওয়ামী লীগে নেই, তার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেছে, তাহলে তারা ভুল করবেন। নৌকার প্রার্থী রণজিৎ রায় আপনাদের স্বজাতি হওয়ায় যদি ভাবেন তাকে ছাড়া আপনারা অন্য কাউকে ভোট দেবেন না তাহলে ভুল করবেন। ভোটের পরে এর জন্য আপনাদের খেসারত দিতে হবে। হিন্দু সমপ্রদায়ের নেতৃস্থানীয়দের উদ্দেশ্য করে হুইপ ওহাব বলেছিলেন, আপনারা সামপ্রদায়িকতা থেকে বের হতে পারবেন না, আর আমার কাছে অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা আশা করবেন- সেটা হবে না। আপনাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করছে ভোটের পরে আমি অসাম্প্রদায়িক থাকবো না সাম্প্রদায়িক আচার-আচরণ করবো।”
http://mzamin.com/details.php?mzamin=NjIxNw==
বরিশালে গত নভেম্বর মাসে খেলা নিয়ে বিতর্কের জের ধরে পারভেজ নামের এক মুসলমান ছেলেকে জবাই করে খুন করে স্থানীয় হিন্দুরা। তিনদিনের মাথায় আরো এক শিশুকে জবাই করে খুন করে কয়জন হিন্দু সন্ত্রাসী।তখন এসব মিডিয়া উল্টো এসব ঘটনাকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে ছাত্রলীগ কর্তৃক হিন্দুদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ এর দায় নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের উপর চাপিয়ে অনেক আবেগধর্মী রিপোর্ট ছাপায়।মুসলমান শিশু কিশোর হত্যা এদেশে কোন অপরাধ নয়। মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই।উক্ত ঘটনায় নিহত মুসলমানদের লাশের ছবি না দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাত্রলীগ কর্তৃক হিন্দুদের পুড়িয়ে দেয়া একটি বাড়ির ছবি ছবি দিয়ে প্রতিবেদন করা হয়।
http://durbarnews24.com/feature/details/4566.html
হাতে নাতে ধৃত ও প্রমাণিত কয়টি ঘটনার কথা বলবো? কক্সবাজারের রামুতে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কর্তৃক বৌদ্ধ মন্দির ভাংচুর, সিলেটের এমসি কলেজ এর হোস্টেলে আগুনে ভস্মিভূত করা, ঢাকায় বিশ্বজিত হত্যাকান্ড, পাঞ্জাবী টুপি পড়ে মিল্কি হত্যাকান্ড, ফেনীতে পেট্রোলবোমা বানাতে গিয়ে ৪ যুবলীগ কর্মীর আহত হওয়া, মাগুরায় পেট্রোল বোমা দিয়ে বাস পোড়াতে গিয়ে ৪ ছাত্রলীগ কর্মীর ধরা পড়া, বগুড়ায় আওয়ামী শিক্ষক কর্তৃক নিজ স্কুলে অগ্নিসংযোগ, শহীদ মিনার ভাংচুর করতে গিয়ে যুবলীগ নেতার ধরা পড়া, যশোরে হুইপ আবদুল ওহাব কর্তৃক হিন্দুদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ, বরিশালের বিএম কলেজের ছাত্রলীগ কর্মীদের দ্বারা হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় গৃহবধু রাণী দাসকে আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি মেম্বার সোবহান বিশ্বাস এর বেধড়ক মারধর, পাবনায় স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী টুকু কর্তৃক সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগৃ..
এখন লোকজন বলাবলি করছে। ধরা পড়লে ও প্রমাণ হলে দেখি আওয়ামীলীগ আর ধরা না পড়লে মিডিয়ায় শুনি বিএনপি জামায়াত। তাহলে কোনটি সত্যি? যেটা দেখলাম নাকি যেটা শুনলাম?
সরকার ও হলুদ মিডিয়া গুলো অসৎ উদ্দেশ্যে বিরোধী দলকে দায়ী করা হলেও বিরোধী দলের পক্ষ হতে শুরু হতেই এসব ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ ও বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা দলবেঁধে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির পাহারা দিচ্ছে।সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে জামায়াত এর বিবৃতিটি বেশ উল্লেখযোগ্য। জামায়াত সংখ্যালঘু নির্যাতন এর প্রতিটি ঘটনায় জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের পাশাপাশি বলেছে, ‘জামায়াত ও শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ এ তদন্তের মাধ্যমে পাওয়া গেলে আমরা দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।' এসব খবর হলুদ মিডিয়াগুলো প্রকাশ করার কোন প্রয়োজনই মনে করেনা। পাছে আবার তাদের কপটতা ধরা পড়ে যায়!
http://www.rtnn.net/newsdetail/detail/1/4/59765#.UtEz9vsuLDc
কলংকিত নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনাগুলো এতটাই প্রকাশ্য ও প্রমাণিত যে, হলুদ মিডিয়ারই একটি অংশ প্রকৃত ঘটনা আর চেপে রাখতে পারেনি। কারণ নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এর পক্ষ হতে সরাসরি আওয়ামীলীগকে দায়ী করে একাধিক বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামীলীগ এর বিরুদ্ধে মিছিল করেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন, এমনকি অনেক স্থানে থানা ঘেরাও করে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের শাস্তির দাবিতে মিছিল করেছেন তারা।খোদ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এর পক্ষ হতে বিবিসি কে সাক্ষাতকারে উল্লেখ করা হয়েছে- জামায়াত নয়, আওয়ামীলীগই সংখ্যালঘু নির্যাতন করছে। সরকারের জন্য এটি খুব দ্রুতই বুমেরাং হয়ে উঠছে বেশ কিছু ঘটনা হাতে নাতে ধরা পড়ার পর।
১০ তারিখে দৈনিক মানবজমিন এর খবর অনুযায়ী, ডিসিদের কর্তৃক লিখিত চিঠিতে বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য স্থানীয় সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের দায়ী করা হয়েছে।
খ্রিস্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর সভাপতি অ্যালবার্ট ডি কস্তা বলেছেন-
মুসলমানরা নৃশংস নন, এদেশে জঙ্গিও নেই। যারা বার বার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন তারাই সংখ্যালঘু নির্যাতন করছেন।
আজ ভাবার সময় হয়েছে-সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে বাংলাদেশে যা হচ্ছে তার পেছনের রহস্য কি। যেখানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা পুলিশী হয়রানি ও মামলার ভয়ে নিজ বাড়িঘরেও থাকতে পারছেনা এবং মিডিয়ার অপপ্রচারে ভাবমূর্তি নষ্টের ভয়ে নিজেরা উল্টো সংখ্যালঘু কর্তৃক নির্যাতিত ও অপমানিত হয়েও নিশ্চুপ থাকে সেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সুযোগ কোথায়? এরপরও সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে। এসব সংখ্যালঘুরা সাজানো নাটকের শিকার হয়ে সরকার ও হলুদ মিডিয়ার নিউজ মেকারদের ইচ্ছের বলি হচ্ছে।
আপনার বিবেককেও জাগ্রত করুন। নিজের বিবেককে মনুষত্ব্যকে প্রশ্ন করুন। অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন।
সংখ্যালঘুরা এদেশেরই নাগরিক। নিউজমেকারদের ইচ্ছের নির্মম বলি হতে তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে নিউজ মেকারদের সকল চক্রান্তের বিরুদ্ধে। নাহলে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা উস্কানি ছড়িয়ে এদেশের শান্তিকামী মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলবে এসকল মিডিয়া।রাশিয়ায় দুটি বহুল প্রচলিত সংবাদপত্র নিয়ে একটু কৌতুক চালু আছে- “দেয়ার ইজি নো ইজভেস্তিয়া ইন প্রাভদা এন্ড দেয়ার ইজ নো প্রাভদা ইন ইজভেস্তিয়া।” রাশিয়ান প্রাভদা শব্দের মানে সত্য এবং ইজভেস্তিয়া মানে খবর। কৌতুকটির মানে দাঁড়ায়- সত্যে খবর নেই এবং খবরে কোন সত্য নেই। এ কৌতুকটি আজ আমাদের মিডিয়ার জন্য চরমভাবে প্রযোজ্য।[/b]
একতরফ,জনধিকৃত এবং গণতন্ত্র বিনাশ ও ভোটাধিকারহরণকারী কলঙ্কজনক নির্বাচনের পর অবৈধ সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতন ও সহিংসতার নতুন খেলায় মেতে উঠেছে এবং গৃহপালিত নিউজমেকারদের সহযোগিতায় এসব ন্যক্কারজনক ঘটনার দায় কোন প্রকার যুক্তি প্রমাণ ছাড়া সরাসরি বিরোধী দলের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।সরকারের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। এ ঘটনাকে পুঁজি করে একঢিলে দুই পাখি শিকার- হিন্দুদের সম্পত্তি দখল ও বিরোধী মত দমন। তথ্যসন্ত্রাসীরা আজ এত্টা বেপরোয়া যে, ফটোশপড ছবি ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে নিউজ মেকিং করতেও দ্বিধা করছেনা।যে সকল ঘটনায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা হাতে নাতে ধরা পড়ছে ও প্রমাণিত হচ্ছে সেসব ক্ষেত্রে এসব মিডিয়া নিশ্চুপ কিংবা সংবাদ বিকৃত করে অন্য খাতে প্রবাহিত করে। এদের কৌশল হচ্ছে প্রমাণিত ঘটনা আড়াল করে অপ্রমাণিত ন্যক্কারজনক ঘটনাসমূহের দায় বিএনপি জামায়াত এর উপর চাপানো। ছাত্রলীগ এর হিন্দু সদস্য কোথাও দুষ্কর্ম করতে গিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ এর শিকার হলে সে ঘটনাকেও সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে এসব মিডিয়া। সংঘাত উস্কে দিয়ে , বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রাষ্ট্র প্রমাণ করে এসব মিডিয়া কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে?
বগুড়ায় গত ৭/১/১৪ তারিখে জনৈক আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রধান শিক্ষক বিরোধী দলের উপর দোষ চাপানোর হীন উদ্দেশ্যে নিজ স্কুলে আগুন দিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়েন। আলোচিত ঘটনাটি অন্য খাতে প্রবাহিত করতে দেশের একটি বহুল প্রচারিত ধর্মবিদ্বেষী পত্রিকা পরদিন শেষ পাতায় খুব ছোট আকারে –“প্রধান শিক্ষকের এ কী কান্ড!” শিরোনামে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে এবং উক্ত ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে হাস্যকর দাবি করে - তিনি নাকি সরকারী অনুদান পেতে স্কুলে আগুন দিয়েছেন। অথচ একই দিন তারা সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপ্রমাণিত কিছু ঘটনার উপর ভিত্তি করে কোন প্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়াই সরাসরি বিএনপি এবং জামায়াত শিবির এর উপর দায় চাপিয়ে প্রথম পাতায় তিনটি প্রতিবেদন এর পাশাপাশি সরকারপন্থী বুদ্ধিজীবি আবদুল মান্নান এর “এ সহিংসতার জন্য আমরা লজ্জিত” শিরোনামে একটি কলাম ছাপে সম্পাদকীয় পাতায় একটি ফটোশপড ছবিসহ যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে সিঁদুর পড়া এক রমণী ও তার শিশুকন্যা হাউমাউ করে কাঁদছেন।
লিংক http://www.prothom-alo.com/opinion/article/117835
একই ঘটনায় ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকার রিপোর্টে একই মহিলার ছবি দিয়ে সংবাদ ছাপা হয় কিন্তু সে ছবিতে মহিলার কপালে কোন সিঁদুর ছিলনা। তাহলে কোনটি সত্যি? আলোচিত পত্রিকাটির ছবি নাকি আনন্দবাজারের ছবি?আনন্দবাজার পরবর্তীতে সংবাদটি মুছে দিলেও গুগল এর কল্যাণে সে সংবাদ এর লিংক ফেসবুক এর স্ট্যাটাসবারে পেস্ট করলে মহিলাটির ছবি দেখা যাচ্ছে সিঁদুর ছাড়া ।
http://www.anandabazar.com/9bdesh1.html
এর আগেও নির্বাচনের ছবি দিতে গিয়ে প্রথমোক্ত পত্রিকাটি হাসপাতালের কিউতে দাঁড়ানো মহিলাদের একটি ছবিকে ফটোশপ করে সিঁদুর ও শাখা লাগিয়ে প্রকাশ করে।একটু ভালভাবে লক্ষ্য করলে পরিষ্কার যে, ছবিতে কেউ ভোট দেয়ার মুডে ছিলেননা, সকলকে রোগ যন্ত্রণায় কাতর মনে হচ্চে। ছবিটি সত্যি ধরে নিলেও যে প্রশ্নটি থেকে যাচ্ছে তা হল- এ ছবিটি তাদের পরবর্তী নিউজ মেকিং এর পরিকল্পনার পূর্বধাপ কিনা?
http://www.prothom-alo.com/contents/cache/images/800x500x1/uploads/media/2014/01/05/52c95d35b6d5b-4.jpg
অথচ সংখ্যালঘু নির্যাতনের বেশ কয়েকটি প্রমাণিত ও হাতে নাতে ধৃত ঘটনা সম্পূর্ণ আড়াল করে রেখেছে এ তথ্য সন্ত্রাসীরা। কারণ সেসব ঘটনায় যে স্বয়ং আওয়ামী লীগ জড়িত ।
http://www.bdtomorrow.org/blog/blogdetail/detail/1646/activist/35647#.UtE25vsuLDc
যশোরের অভয়নগরে আলোচিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার মূল হোতা মনোনয়নবঞ্চিত সরকারদলীয় হুইপ অধ্যক্ষ আবদুল ওহাব।উক্ত আসনে ওহাব এর পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রণজিত রায়। নির্বাচনের পূর্বে আবদুল ওহাব সংখ্যালঘুদের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন-“ এবার নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় সংখ্যালঘুরা যদি ভেবে থাকেন ওহাব আর আওয়ামী লীগে নেই, তার ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেছে, তাহলে তারা ভুল করবেন। নৌকার প্রার্থী রণজিৎ রায় আপনাদের স্বজাতি হওয়ায় যদি ভাবেন তাকে ছাড়া আপনারা অন্য কাউকে ভোট দেবেন না তাহলে ভুল করবেন। ভোটের পরে এর জন্য আপনাদের খেসারত দিতে হবে। হিন্দু সমপ্রদায়ের নেতৃস্থানীয়দের উদ্দেশ্য করে হুইপ ওহাব বলেছিলেন, আপনারা সামপ্রদায়িকতা থেকে বের হতে পারবেন না, আর আমার কাছে অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা আশা করবেন- সেটা হবে না। আপনাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করছে ভোটের পরে আমি অসাম্প্রদায়িক থাকবো না সাম্প্রদায়িক আচার-আচরণ করবো।”
http://mzamin.com/details.php?mzamin=NjIxNw==
বরিশালে গত নভেম্বর মাসে খেলা নিয়ে বিতর্কের জের ধরে পারভেজ নামের এক মুসলমান ছেলেকে জবাই করে খুন করে স্থানীয় হিন্দুরা। তিনদিনের মাথায় আরো এক শিশুকে জবাই করে খুন করে কয়জন হিন্দু সন্ত্রাসী।তখন এসব মিডিয়া উল্টো এসব ঘটনাকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে ছাত্রলীগ কর্তৃক হিন্দুদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ এর দায় নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের উপর চাপিয়ে অনেক আবেগধর্মী রিপোর্ট ছাপায়।মুসলমান শিশু কিশোর হত্যা এদেশে কোন অপরাধ নয়। মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই।উক্ত ঘটনায় নিহত মুসলমানদের লাশের ছবি না দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছাত্রলীগ কর্তৃক হিন্দুদের পুড়িয়ে দেয়া একটি বাড়ির ছবি ছবি দিয়ে প্রতিবেদন করা হয়।
http://durbarnews24.com/feature/details/4566.html
হাতে নাতে ধৃত ও প্রমাণিত কয়টি ঘটনার কথা বলবো? কক্সবাজারের রামুতে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কর্তৃক বৌদ্ধ মন্দির ভাংচুর, সিলেটের এমসি কলেজ এর হোস্টেলে আগুনে ভস্মিভূত করা, ঢাকায় বিশ্বজিত হত্যাকান্ড, পাঞ্জাবী টুপি পড়ে মিল্কি হত্যাকান্ড, ফেনীতে পেট্রোলবোমা বানাতে গিয়ে ৪ যুবলীগ কর্মীর আহত হওয়া, মাগুরায় পেট্রোল বোমা দিয়ে বাস পোড়াতে গিয়ে ৪ ছাত্রলীগ কর্মীর ধরা পড়া, বগুড়ায় আওয়ামী শিক্ষক কর্তৃক নিজ স্কুলে অগ্নিসংযোগ, শহীদ মিনার ভাংচুর করতে গিয়ে যুবলীগ নেতার ধরা পড়া, যশোরে হুইপ আবদুল ওহাব কর্তৃক হিন্দুদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ, বরিশালের বিএম কলেজের ছাত্রলীগ কর্মীদের দ্বারা হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় গৃহবধু রাণী দাসকে আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি মেম্বার সোবহান বিশ্বাস এর বেধড়ক মারধর, পাবনায় স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী টুকু কর্তৃক সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগৃ..
এখন লোকজন বলাবলি করছে। ধরা পড়লে ও প্রমাণ হলে দেখি আওয়ামীলীগ আর ধরা না পড়লে মিডিয়ায় শুনি বিএনপি জামায়াত। তাহলে কোনটি সত্যি? যেটা দেখলাম নাকি যেটা শুনলাম?
সরকার ও হলুদ মিডিয়া গুলো অসৎ উদ্দেশ্যে বিরোধী দলকে দায়ী করা হলেও বিরোধী দলের পক্ষ হতে শুরু হতেই এসব ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ ও বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা দলবেঁধে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির পাহারা দিচ্ছে।সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে জামায়াত এর বিবৃতিটি বেশ উল্লেখযোগ্য। জামায়াত সংখ্যালঘু নির্যাতন এর প্রতিটি ঘটনায় জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের পাশাপাশি বলেছে, ‘জামায়াত ও শিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ এ তদন্তের মাধ্যমে পাওয়া গেলে আমরা দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।' এসব খবর হলুদ মিডিয়াগুলো প্রকাশ করার কোন প্রয়োজনই মনে করেনা। পাছে আবার তাদের কপটতা ধরা পড়ে যায়!
http://www.rtnn.net/newsdetail/detail/1/4/59765#.UtEz9vsuLDc
কলংকিত নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনাগুলো এতটাই প্রকাশ্য ও প্রমাণিত যে, হলুদ মিডিয়ারই একটি অংশ প্রকৃত ঘটনা আর চেপে রাখতে পারেনি। কারণ নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এর পক্ষ হতে সরাসরি আওয়ামীলীগকে দায়ী করে একাধিক বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামীলীগ এর বিরুদ্ধে মিছিল করেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন, এমনকি অনেক স্থানে থানা ঘেরাও করে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের শাস্তির দাবিতে মিছিল করেছেন তারা।খোদ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এর পক্ষ হতে বিবিসি কে সাক্ষাতকারে উল্লেখ করা হয়েছে- জামায়াত নয়, আওয়ামীলীগই সংখ্যালঘু নির্যাতন করছে। সরকারের জন্য এটি খুব দ্রুতই বুমেরাং হয়ে উঠছে বেশ কিছু ঘটনা হাতে নাতে ধরা পড়ার পর।
১০ তারিখে দৈনিক মানবজমিন এর খবর অনুযায়ী, ডিসিদের কর্তৃক লিখিত চিঠিতে বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য স্থানীয় সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের দায়ী করা হয়েছে।
খ্রিস্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর সভাপতি অ্যালবার্ট ডি কস্তা বলেছেন-
মুসলমানরা নৃশংস নন, এদেশে জঙ্গিও নেই। যারা বার বার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন তারাই সংখ্যালঘু নির্যাতন করছেন।
আজ ভাবার সময় হয়েছে-সংখ্যালঘু নির্যাতনের নামে বাংলাদেশে যা হচ্ছে তার পেছনের রহস্য কি। যেখানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা পুলিশী হয়রানি ও মামলার ভয়ে নিজ বাড়িঘরেও থাকতে পারছেনা এবং মিডিয়ার অপপ্রচারে ভাবমূর্তি নষ্টের ভয়ে নিজেরা উল্টো সংখ্যালঘু কর্তৃক নির্যাতিত ও অপমানিত হয়েও নিশ্চুপ থাকে সেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সুযোগ কোথায়? এরপরও সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে। এসব সংখ্যালঘুরা সাজানো নাটকের শিকার হয়ে সরকার ও হলুদ মিডিয়ার নিউজ মেকারদের ইচ্ছের বলি হচ্ছে।
আপনার বিবেককেও জাগ্রত করুন। নিজের বিবেককে মনুষত্ব্যকে প্রশ্ন করুন। অনেক প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবেন।
সংখ্যালঘুরা এদেশেরই নাগরিক। নিউজমেকারদের ইচ্ছের নির্মম বলি হতে তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হলে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে নিউজ মেকারদের সকল চক্রান্তের বিরুদ্ধে। নাহলে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা উস্কানি ছড়িয়ে এদেশের শান্তিকামী মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলবে এসকল মিডিয়া।
বিষয়: বিবিধ
১৫২৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা
মন্তব্য করতে লগইন করুন