মাদ্রিদে কাটানো মায়াবী মুহূর্তগুলো..
লিখেছেন লিখেছেন সাদিয়া মুকিম ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:১৪:৩০ রাত
জীবনের বালুচড়ে চলার পথে সযতনে কুঁড়িয়ে নেয়া নুড়ি গুলোর সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বন্ধুত্বের মায়াবী নীড়। যে নীড়ের প্রতিটি নূড়ি অমূল্য এবং অনন্য যার ভাঁজে ভাঁজে জড়িয়ে আছে, লুকিয়ে আছে বন্ধুত্বের মূল্যবান প্রাপ্তি। যে প্রাপ্তির উপলব্ধি মনে ভালোলাগার দোলা দিয়ে যায়, রেখে যায় গুচ্ছ গুচ্ছ ভালোবাসার সুখের শিশির বিন্দু ..
জানুয়ারীতে আমাদের ভ্যাকেশন উপলক্ষে উড়াল দিয়েছিলাম আফরোজা হাসান পরিবার ডোরে । সেখানে কাটানো সময়গুলো বন্ধুত্বের নীড় কে করেছে সমৃদ্ধ , দিয়েছে চির অমলীন মূল্যবান কিছু মুহূর্ত যা কখনো ভুলবার নয়!
আমাদের এখান থেকে মাদ্রিদ যেতে লেগেছিলো মাত্র দু ঘন্টা। এয়ারপোর্ট থেকে আফরোজার বাসাও খুব কাছে ,পূর্ব পরিচিত ভাতিজার সাথে মাদ্রিদ শহরের গল্প শুনে এবং দৃশ্য উপভোগ করতে করতে অল্প সময়েই পৌঁছে গিয়েছিলাম ওদের বাসায় ।
দীর্ঘ বিরতির পর দেখা, কাছে পাওয়া আর মধুর আলিংগনটুকু মুছে দিয়েছিলো সমস্ত ক্লান্তি। গল্প, হাসি কথা মালায় দু পরিবারের পুনর্মিলন মুহূর্তেই জমিয়ে তুলেছিলো গুন গুন কথা -স্মৃতি চারণ সন্মেলন!
ঘুরাঘুরি ১- হেরোন সিটি
সন্ধা বেলায় বেড়িয়েছিলাম হেরোন সিটির উদ্দেশ্যে। মাদ্রিদ শহরটি পুরোটাই পাহাড়ের মাঝে, রাস্তায় বে্রোলেই চোখে পড়বে উঁচু নিচু রাস্তা, কখনো আঁকা বাঁকা মোড় তো আবার কখনো লম্বা টানেল । টানেলগুলো সব পাহাড় কেটে কেটে তৈরি করা হয়েছে। রাত হয়ে গিয়েছিলো, রাস্তার দুপাশের ল্যাম্পপোস্টের আলোর সাথে সাঁ সাঁ করে ছুটে চলা সাথে ছিলো ননস্টপ মধুঝরা গল্প!
ঘুরাঘুরি ২- আতোচা স্টেশন
রাজধানী মাদ্রিদের চমৎকার স্থান গুলোর একটা হলো এই আতোচা স্টেশন । এই স্টেশনটির নির্মান কাজ ১৮৮৯ সালে প্রথম শুরু হলেও পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে আর্কিটেক্ট রাফায়েল মোনেও এর অধীনে স্টেশনটির ডিজাইনে মডিফিকেশন করা হয় । দূর দূরান্তের ক্লান্ত পথিকরা যখন স্টেশনটিতে আসবেন, স্টেশনটির সৌন্দর্য দেখে এক পলকেই মুগ্ধ হবেন । ঘন সবুজ সুউচ্চ প্লাম ট্রি, নানান রকমের পাতাবাহার, বিভিন্ন ধরণের লাগানো গাছগুলোর সজীবতা তো আছেই সাথে কবুতর, ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট মাছ আর কচ্ছপ বাহিনীর লম্ফ ঝম্ফ উপভোগ করার মতোন।
শুধু সুন্দরের দিক থেকেই নয় বরং ইউরোপের প্রথম দশটি সেরা স্টেশন এর মধ্যে স্পেনের মাদ্রিদের এই আতোচা স্টেশন সেরা তিন নাম্বারের গৌরব অর্জন করে আছে সুদীর্ঘ সময় কাল থেকে!
আতোচা স্টেশন
পাথরে ফুটেছে ফুল ..
এই পাতা বাহার ইউরোপে প্রথম দেখলাম
অবিশ্বাস্য হলেও এটি কলাগাছ ..
একেবারে খাঁটি বাংলাদেশী কচু গাছ!
পানিতে কচ্ছপ বাহিনী
ঘুরাঘুরি ৩- স্টেডিয়াম রিয়েল মাদ্রিদ
বিখ্যাত স্টেডিয়াম রিয়েল মাদ্রিদের নাম শুনেন নি এমন মানুষ কম। নাম আমিও অনেক শুনেছি, সুযোগ যখন পেলাম তাই এবার স্টেডিয়াম এর সামনে দিয়ে ঘুরে কিছু ছবি তুলে চলে আসলাম। স্টেডিয়ামটির মূল নাম হলো Santiago Bernabéu Stadium।
ঘুরাঘুরি ৪- জোয়ান কার্লোস পার্ক স্পেনিশ উচ্চারণে খোয়ান
মাদ্রিদ এর উত্তর পূর্বকোনে অবস্থিত জোয়ান কার্লোস পার্ক টি প্রায় ১৬০ হেক্টর জায়গা নিয়ে গঠিত, এই পার্কটি মাদ্রিদের সবচাইতে বড় পার্ক গুলোর একটি। শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্য রয়েছে নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা। এতে রয়েছে দশ হাজার ভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং নব্বই হাজার প্রজাতির ফুলের সমাবেশ । বিকেল থাকতেই রওয়ানা হয়েছিলাম আমরা , ঘুরে ফিরে ক্লান্ত হয়ে যখন সবাই বাসায় ফিরছিলাম তাকিয়ে দেখলাম মাদ্রিদ গগনে বিশাল পূর্নিমার চাঁদ মিটি মিটি হেসে আলো ছড়াচ্ছে....
শরতের কাশফুল...
গাছ ভেবে ভুল করবেন না ..
সাঁঝের বেলায় চাঁদের ছোঁয়ায়...
ঘুরোঘুরি৫- বৃষ্টি ভেজা সন্ধায় চুররোস উইথ কাপুচিনো
আমি, আফ্রু আর সারামণি মিলে বাসার নিচের চুররোস শপে-
ঘুরাঘুরি ৬- হালাল বার্গার এর সন্ধানে
এদিন আমরা দুই পরিবারের সব সদস্যরা মিলে রাটের খাবার খেতে এসেছিলাম আমাদের ভাতিজার হালাল বার্গার শপে।
(চমৎকার সময় কাটিয়েছিলাম সবাই!)
ঘুরাঘুরি ৭- মাদ্রিদ সেন্টার কাইয়ো
এদিন অবশ্য আমরা শুধু পতি -পত্নী মিলে বের হয়েছিলাম। যেতে হয়েছিলো মেট্রো দিয়ে। ভয় পেতে পেতে অবশেষে ঠিক ভাবে এসে পৌঁছেছিলাম সেন্টারে । আনন্দরা মুঠো মুঠো সুখ ছড়িয়েছিলো সর্বক্ষণ .........
এটা সেন্টার পয়েন্ট, এখান থেকে মাদ্রিদ শূন্য কিলোমিটার গণনা হয়।
উড়ন্ত নাকি ঝুলন্ত_?
একটু আইসক্রিম ....
ঘুরে ফিরে দুজনে পথ হারিয়েছিলাম তবু টেনশন লাগে নি একটুও! পাশে উনি আছেন এটা ছিলো পরম নির্ভরতার কারণ! তারপর আবার পথ খুঁজে পেয়ে মেট্রো ধরে বাসায় ফিরে এসেছিলাম, স্মৃতিরা কল্পনার বুননে এঁকে নিয়েছিলো নতুন স্বপ্ন কাঁথা !
( পরের পর্বে আসছে কর্ডোভা ভ্রমণ.. ইনশা আল্লাহ)
বিষয়: বিবিধ
২১৮৭ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুভক্ষণে তোমার আনন্দময় উপস্থিতিতে অপূর্ব লাগছে.........!
চমৎকার ছবিসহ বর্ণনা অসাধারণ!!
পুত্রের জৃর আপু এটা নিয়ে চলছে এই সপ্তাহ! দ্রুত আসছি বলেও দেরিতে আসতে হলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আপু!
প্রথমেই আপনাকে পাওয়া এটা কিন্তু অন্য রকম আনন্দ! সত্যি বলছি
আমাদের সোনামণি বাবুটা এখন কেমন আছে?
দোয়া করি দ্রুত সুস্থতার জন্য।
অনেক খাবার দেখতাছি, একটু পরে আসছি।
খাবার তো অনেক কম এতো বেশি কোথায় দেখলেন? ভার্চুয়াল লালার ভার নিতে চাই না বলে খাবার ছবি কম দিলাম!
উপস্থিতি ও মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া। দোয়া করবেন।
আফরোজা আপুকে যদি ব্লগে নিয়িমিত করাতে পারতেন, তবে আপনার ভ্রমনানন্দের ছেয়েও আনন্দিত হতাম।
শুকরিয়া।
পুটির মাকে আগে জোগাড় করেন আপনাদের দাওয়াতের অভাব হবে জানিয়ে রাখলাম।
লম্বা, বাঁকানও দুরকম ই পাওয়া যায়। লম্বাটাকে বলে পুররোস। আসলেই মজার খাবার।
শুকরিয়া।
আপনার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ও মন্তব্যের জন্য শুকরিয়া। শুভকামনা ও দোআ রইলো।
কত্তোদিন পর এলেন আপু। আমি নিজেও অনেক অনিয়মিত হয়ে গেছি!
আসলেই অন্নেক সুন্দর মায়াবী সময় কাটিয়েছি আমরা দু পরিবার আলহামদুলিল্লাহ!
আমাদের ভ্রমনে শরীলক থাকার জন্য শুকরিয়া আপু !
কর্ডোভার অপেক্ষায় রইলাম। সেই মসজিদে কবে নামাজ হবে? গত ৬০০ বছরে সেখানে কেবল আল্লামা ইকবাল ২ রাকাত নামাজ পরেছিলেন।
বার্গার টা হালাল এবং কোয়ালিটি খুব হাই! আপনার জন্য দোআ থাকলো বিশাল সাইজের বার্গার রিজিকে চলে আসুক।
মসজিদে গিয়ে আক্ষেপ আর দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছু করার ছিল না! ঢুকার মুখেই সিকিউরিটি বলে দিয়েছিলো এতা আর মসজিদ নেই সুতরাং কেউ যেনো নামায না পড়ে!
শুকরিয়া!
স্নো ফল হলে তো আপনারা এক রকম গৃহবন্দি বলা যায়! বরফের ভেলায় ভেসে চলছেন!
আমি ফুটবল বা ক্রিকেট কোনোটাই বুঝি না আর ঘুরতে গিয়েছিলাম লেডিস গ্রুপের সবাই মিলে যাদের কারো ফুটবলের প্রতি আগ্রহ নেই তাই আর স্টেডিয়ামের ভিতর ঢুকিনি!
বার্সেলোনা শহরটিতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো, সঠিক প্ল্যানের অভাবে যাওয়া হয়নি!
আপনার উপস্থিতি এবং চমৎকার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক শুকরিয়া ও শুভাকামনা জানবেন!
লিখে ফেলুন না বরফের মাঝে কাটানো সময় ও অভিজ্ঞতা !
ব্যস্ততা আমায় দেয় না অবসর
জাযাকাল্লাহ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন