প্রেম ভালবাসা আর পিরিত করার অধিকার -দায়িত্ব - দায়িত্ববোধ। = তৃতীয় পর্ব =
লিখেছেন লিখেছেন ইবনে আহমাদ ০৮ মার্চ, ২০১৫, ০৩:০৯:২০ দুপুর
সাত)
একটি দৃশ্যকল্প -
=========
কর্তার নাম জিব্রাইল হাসান। মধ্য বয়স পার করেছেন অনেক আগে। কত বয়স হয়েছে সে হিসাব জানা নেই।চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। গত দুই বছর থেকে ডাইবেটিজ। ডাক্তার সাহেব বলেন নিয়মিত হাঁটতে।তার সেই সময় নেই।নিয়মিত হাসপাতালে যেতে পারেন না। চাকুরী আর সংসার।কাজ আর কাজ।
প্রবাসে আছেন ১৮ বছর। বিয়ে করেছেন ১৩ বছর। বেগম সাহেব ইদানিং খুব বাজে আচরন করেন।তিনি তা সহ্য করেন। কিছু বলতে পারেন না।কারন ঘরে সন্তানর আছে। তারা বড় হয়েছে।
প্রতিদিন সকালে বাচ্ছাদের নামিয়ে দিতে হয় স্কুলে। তার পর বদলা দেবার জন্য অফিস।দুপুরে খাওয়ার সময়টা স্কুলে আবার যেতে হয়।বাচ্ছাদের নামিয়ে আবার অফিস।
এভাবেই প্রবাসের মহা সুখের জীবন। তিন পুত্র আর এক কন্যা।মোট পাঁচ জনের সংসার।ছেলেরা বড়। বড় ছেলেকে মালয়এশিয়াতে পড়তে পাঠানোর জন্য ঢাকার ফ্লাট বিক্রি করতে হচ্ছে। ডিজিটাল সরকারের সময় মানুষের হাতে এত পয়সা এসেছে। এক বছর থেকে কোন ক্রেতা যোগাড় করতে পারছেন না। আপন বন্ধু বান্ধব মহলে অনেক বলেছেন। যে দামে কিনা সে দামের চাইতে অনেক কমে ও পারছেন না। এই হল আমাদের বাস্তব গল্পের জনাব জিব্রাইল হাসান সাহেবের পরিবার।
জিব্রাইল হাসান চার ভাই এবং তিন বোন। পিতা ছিলেন সরকারী চাকুরী।মা গৃহীনি।জিব্রাইল সাহেবের মা বাপ ইন্তিকাল করেছেন বেশ কয়েক বছর আগে।ভাইরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। কেউ কাউকে সাহয্য করতে হয় না।
(আট)
জিব্রাইল সাহেবকে সবাই হাসান ভাই বলে ডাকেন। মসজিদে তিনি প্রায় নিয়মিত আসেন। জুমার দিন নিজের ছেলেদের নিয়ে আসেন। সবার কাছে প্রিয় তিনি। তিনি ভাল কোরআন পড়তে পারেন। স্যেকুলার দলের কর্মী হলেও ধর্ম কর্ম করেন। এটা তিনি পারিবারিক আবহ থেকে পেয়েছেন। তিনি মনে করেন দল করা রাজনৈতিক ব্যাপার।
জিব্রাইল হাসান সাহেবের এত লম্বা পরিচয় দিলাম এজন্য - তিনি ধর্মে কর্মে মুসলমান।তবে জীবনের বাকি অঙ্গনে খাটিঁ স্যেকুলার।তার সন্তানদেরকে ধর্ম কর্ম শিখাবার প্রবল আগ্রহ ছিল। কিন্তু সন্তানদের পড়া লেখা করাতে গিয়ে সে সময় হয়নি। তার ছেলে মেয়েরা কেউ ই কুরআন পড়তে পারে না। এর জন্য মাঝে মাঝে আফসোস করেন। তার ভাষায় - "আমরা যখন মক্তবে গিয়ে কুরআন পড়েছি। ঠিক সেই সময় বাচ্ছাদেরকে স্কুলে পাঠাতে হয়।বাসায় স্কুলের পড়া শেষ করতে করতে বাচ্ছারা শেষ।"
আলোচিত এই দৃশ্যকল্প থেকে দুটি বিষয়।
একটি হল হাসান সাহেব ব্যক্তি স্যেকুলার হলেও নিজে কিছু হলে ও দ্বীন শিখেছেন। যা তার পিতার পারিবারিক আবহে হতে পেরেছে।
দ্বিতীয় বিষয় হল - তার নিজের ইচ্ছা থাকার পর ও তার সন্তানদেরকে তিনি নূন্যতম দ্বীনি শিক্ষা দিতে পারেন নি।
এই বাস্তবতাটা প্রবাসের কত অংশের। হিসাবটা নিজেরাই করতে পারি। আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না। যারা আমার লেখা পড়েন তারা নিজেরা ঠিক করতে পারবেন। আমাদের জীবনবোধ আর যাপিত জীবন - এই দুইয়ের মধ্যে আকাশ জমীন ফারাক। আমরা যেভাবে চাই - যেমন চাই ঠিক সেরকম প্রিয় সন্তানদের লালন করতে পারি না।এই পারি না কেন? -তার উত্তর আগামী পর্বে আমার মত করে দেবার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
আমার নিজের জন্য বা আমার বন্ধুর জন্য নয় বরং আমাদের সবার জন্য। এটা মহামারীর আকার ধারণ করেছে।
আমরা আমাদের সন্তানদের (ইবনুদ দুনিয়া) দুনিয়ার জন্য তৈরী করবো না আখেরাতের জন্য। এই প্রশ্নের মিমাংশা - সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
ডাক্তার - প্রকৌশলী - বৈমানিক - ব্যরিষ্টার - বিজ্ঞানী হতে হবে। হওয়াটা উত্তম।
কিন্তু মুহাদ্দীস - মুফাস্সীর - মুফতী এগুলো কাদের সন্তানরা হবে?
আমাদের পরিচিতদের সবার অভিজ্ঞতা কি বলে?
==============
১ম পর্বের সরল কথা -
=============
জেদ্দাতে আমার পরিচিত জিয়া নামের তিন জন আছেন। এক) জিয়াউল হক। দুই) জিয়াউর রহমান।তিন) জিয়া ইবনে মানছুর। এই তিনজনই আমার পছন্দের তালিকার প্রথম সারিতে।
১ম পর্বের আলোচিত ঘটনায় এই তিনজন জিয়ার সাথে কোন দুরতম সম্পর্ক নাই। আমি লেখাটি ড্রাপ্ট করার সময় আসল নামে লিখেছিলাম। পরে তা জিয়া ছদ্ম নামে লিখেছি।এটাই লেখার নিয়ম। ঐ সময় আমার চিন্তার বাহিরে ছিল জিয়া নামটি সমস্যা হতে পারে। এটা আমার ধারণার বাহিরে ছিল। আবার কেউ এটাকে নিজের উপর নিয়ে নিবেন। কাউকে অপমান - বদনাম করার কোন উদ্দেশ্য ছিলনা।মূল ঘটনা চর্চা করা অথবা কাউকে টার্গেট করে লেখাটি ছিল না। মূলত এই ঘটনা থেকে আমাদের প্রবাসী কমিউনিটির জন্য কি পদক্ষেপ/শিক্ষনীয় হতে পারে তাই ছিল আলোচনার বিষয়।
আশা করছি যারা আমার লেখা পড়েন - অনুগ্রহ করে আপনাদের পরিচিত কোন জিয়া সাহেবের সাথে ঘটনা মিলাবেন না বা পড়বেন না। আলোচিত লেখার কোন অংশ কাকতালীয় ভাবে কারোর জীবনের সাথে মিল হলে সেটার জন্য আন্তরিক ভাবে দু:খিত। সবার কল্যাণ কামনা করি।
=======
আগামী পর্বে আমন্ত্রণ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭২ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১ম পর্বের সরল কথা - যদি প্রথম পর্বেই দিতেন তবে বারবার দেয়া লাগতোনা!!
আর "কাকতালীয়" শব্দটির সাথে বিশেষতঃ আমরা বাংলাদেশীরা অপরিচিত নই!
এ প্রশ্নের জবাব তো আপনাদেরকেই দিতে হবে, তাই নয় কি?
অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ.
জবাব দেয়ার মত হিম্মত আছে কি জানি না। দোয়া করবেন।
কবি আল মাহমুদকে আমরা তৈরী করতে পারিনি। কারণ, যেখানে কলমকে কেউ থামিয়ে দেয়না, সেখানে কবি আল মাহমুদের জম্ম। সামান্য পদবী পেয়ে অহংকারের পদভারে গদগদ নেতাদের অধীনে অন্ধভাবে জী স্যার হা সার বলার কোন মানে নেই। খুব কাছ থেকে অনেককেই দেখেছি। এদের দ্বীনের সাথে আমার দ্বীন মিলেনা। কেবলা বাবার দরগাহের রাজনীতিতে আমি অভ্যস্ত নই।
যাক, নিজের যোগ্যতাকে অযোগ্যর অধীনে কখনও প্রমান করতে পারেবন না।
কি লিখতে চাই কেন লিখতে চাই তা আমার কাছে স্পষ্ট। মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
“শিক্ষা ব্যবস্থা- ইসলামী দৃষ্টিকোণ” শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি ও করণীয় নিয়ে ওস্তায আবুল আলা মওদুদী এর একটি অসাধারণ গ্রন্থ।
প্রবাসী মজুমদারের কাছে আপনার গল্প অনেক শুনেছি। দোয়া করবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন