নাস্তিকরা কীভাবে ও কেন ইসলাম ধর্মে আঘাত হানে ? (১ম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ১৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:২৮:০৪ রাত



পটভূমি :

আজ আমার কাছে আমার এক বন্ধু তার অনুভতি ব্যক্ত করলো । সে বল্ল সে ভীষণ মর্মাহত । কারণ মাহমুদুল হাসান সোহাগ (মোবাইল নম্বর ০১৮১৯৪৯৬০৪০ , তার প্রতিষ্ঠান রকমারী ডট কমের নম্বর ০১৫১৯৫২১৯৭১) - এর রকমারী ডট কমের মাধ্যমে হুমায়ন আজাদের বই আমার অবিশ্বাস বই সংগ্রহ করে পড়ছে তার ক্লাস সিক্সে পড়া ভাইয়ের ছেলে । এই বইটা চরম ইসলামবিরোধীই না, মুসলিমদের সম্পর্কে মিথ্যাচার ও ইসলাম অবমাননায় ভরপুর । এই বই সহ ৪২৯ টা ইসলামবিরোধী বই মাহমুদুল হাসান সোহাগ বিক্রি করে যাচ্ছে । তার অনেকগুলোই নিষিদ্ধ বই । আর মাহমুদুল হাসান সোহাগ তার উদ্ভাস কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে নাস্তিকতা প্রচারও নাকি করছে । বুয়েটে তার কোচিং সেন্টার হতে পড়ে চান্স পাওয়া ছেলেরাই নাকি নামাজ কালাম পড়া ছেলেদের মারধর করছে । এক কথায় তার হাত নাকি অনেক লম্বা । ইদানিং এই লোক নামাজ পড়াও নাকি শুরু করেছেন । এত দিন বাংলাদেশের সেরা নাস্তিকদের সাথে হট কানেকশন তার ছিল । মুক্তমনা নামক নাস্তিক সাইটের হিন্দু ও ইসলামবিদ্বেষী অভিজিৎ রায়ের সব বই মাহমুদুল হাসান সোহাগ বিক্রি করতো । এই কাজে সে ছিল প্রধানগুরু । বাংলাদেশের কোন প্রকাশক ও বই বিক্রেতাই ইসলামিবদ্বেষী এই হিন্দুর বই বিক্রি করতো না ।







মাহমুদুল হক সোহাগের কাজের বিস্তারিত বিবরন এখানে কিছুটা পাওয়া যাবে : https://www.facebook.com/notes/762557703757460/


আমি তার এসব কথা শুনছি আর হাসছি ।

আমি বল্লাম : "খুব ভাল তো, ভাল না । তোর ভাইয়ের ছেলের কথা ভাবার প্রয়োজন নেই । আমি তার ভবিষ্যত উজ্জল দেখতে পাচ্ছি । বড় হয়ে সে হুমায়ুন আজাদ না হলেও আসীফ মহীউদ্দীন হবে আর জামার্নীতে বসে জামার্ন মেয়েদের সাথে ফস্টিনস্টি করতে পারবে । এখন আমাদের সাওয়ালদের তো আর বাংলাদেশী মেয়ে ভাল লাগে না । তাই তারা বিদেশী ইহুদী - খৃষ্টান মেয়েদের দিকে ঝুকছে । তারা এসব অমুসলিম বেআব্রু মেয়েদের মুসলিম না বানিয়েই বিয়ে করছে । আর তারা একটা অক্ষরও বাংলা শিখছে না । তার উপর তাদের দাবি তারাই নাকি সেরা বাঙ্গালী ।

আমার বন্ধু বল্লো : আসছি সমাধানের জন্য । মারফতি কথা শোনার জন্য আসি নাই । এখন কি করবো বল । এই অবস্হা কত দিন চলবে ?

আমি বল্লাম : ২০৪১ সাল পর্যন্ত চলবে । দেখসি না টিভিতে এজাতীয় ওয়াজ । দোস্ত ভাইস্তার জন্য বলছি : ভাইস্তা রে বকা দিবি না । মারবি না । আগের চেয়ে বেশী ভাল বাসবি । তার আদর আবদার রক্ষা করবি । তাকে ভাল ভাল নতুন কিছু শখ বা কাজের দিকে আগ্রহী করে তুলবি । যেমন : গান শেখা, ছবি আকা, মার্শাল আর্ট শেখা, সাতার শেখা, ভাল ভাল বই পড়তে আগ্রহী করা, মসজিদে তাবলীগের লোকদের কথা শোনা আর দুরবীন দিয়ে আকাশ দেখা ..... ইত্যাদি ইত্যাদি কাজে তাকে ব্যস্ত রাখতে হবে এবং নিজেদেরও এমন কাজ করতে হবে । ভাল কাজ তাকে দিতে হবে আর ভাল কাজে তাকে ব্যস্ত রাখতে হবে । মাথায় ভাল কিছু না দিলে তো মাথায় আগাছা জন্মাবেই । আর নামাজ পড়ার সময় তাকে নিয়ে নামাজ পড়লি । আর মসজিদে যাওয়ার সময় বাড়ির সব ছেলে-মেয়েকে নিয়ে যাবি । এলাকার মসজিদে যাতে মেয়েরাও নামাজ পড়তে পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিবি । আর হুজুরদেরও বলবি যাতে নাস্তিকতা নিয়ে মসজিদে হুজররা নিয়মিত আলোচনা করে আর নাস্তিক আর নাস্তিকদের বন্ধুদের জানাজা , দাফন কাফনে যাতে হুজুররা অংশ না নেয় আর লোকরাও তাদের থেকে দুরে থাকে - সেই ব্যবস্হা করবি ।

দোস্ত সর্ট কাট পদ্ধতিতে কখনো সমাধান আশা করবি না । অন্তত এই ক্ষেত্রে না । আমাদের মা-রা আমাদের সর্ট কার্ট পদ্ধতিতে আমাদের জন্ম দেন নাই । তারা এই কাজটা করতে ৯ মাস ১০ দিন সময় নিয়েছেন । "

আমার বন্ধু আমার এসব কথা শোনার পর কতক্ষন মাহমুদুল হাসান সোহাগ , রকমারী , তাসলিমা নাসরীন, মালালা নিয়ে কতক্ষন কথা বলেই গেলো । আমি শুধু শোনলাম । তারপর আমি এই বিষয়ে ভাবতে লাগলাম । সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরোপেক্ষতার উপর কিছু বই আমি দেখলম । এসব বইয়ে আন্ডার লাইন করা অংশগুলোতে চোখ বুলালাম । তার ফল হিসেবে এই লেখা ।

যদি আমার এই লেখা ভাল লাগে পাঠকদের , তাহলে আমি এই বিষয়ে আমি আরো লিখবো । অনথায় লিখবো না । তবে অন্য বিষয় নিয়ে অন্য সাইটে বা নিজের সাইটে লিখবো ।





সূচনা :

বিভিন্ন কৌশলে বর্তমানে বলা শুরু হয়েছে বিশ্বের সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরোপেক্ষতা ও নাস্তিকতা একান্ত প্রয়োজন । ক্ষেত্র বিশেষে বলা হয় সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরোপেক্ষতা ইসলামবিরোধী নয় । মূলত সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরোপেক্ষতার সমর্থকদের বিভিন্ন লেখার প্রেক্ষিতে এবং বাংলাদেশের স্বঘোষিত নাস্তিকদের কার্যক্রমের কারণে এই পোস্ট লেখা । সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরোপেক্ষতা চরম ইসলামবিরোধী মতবাদ । এই দুই মতবাদের ব্যাপ্তি ব্যাপক । এজন্য এই পোস্ট এক দিনেই শেষ হবে না ।

বরং ধারাবাহিকভাবে লেখা হবে এবং প্রাসঙ্গিকতার কারণে লেখার সময় জিওফ্রে হইলার ও জিবিউগদানিউ ভেজনস্কি নামক সমাজতন্ত্র বিষয়ক বিশ্লেষকদ্বয়ের বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত প্রদর্শন করা হবে । আর বিভিন্ন সময় সোভিয়ত ইউনিয়ন হতে প্রকাশিত প্রগতি প্রকাশনের বিভিন্ন বই হতে উদৃতি দেওয়া হবে । আলোচিত বইগুলোর সাথে অনেকের পরিচয় থাকতে পারে । তবে আমার লেখায় উদৃতিগুলোর পৃষ্ঠা নম্বর সংস্করণের ভিন্নতার জন্য অনেক পাঠকের বইয়ের পৃষ্ঠা নম্বরের সাথে নাও মিলতে পারে



সামাজতন্ত্রের নামে নাস্তিকতার প্রবক্তা ভ্লাদিমির লেনিন

সমাজতন্ত্রে নাস্তিকতাকে কেন গুরুত্ব দেওয়া হয় :

বাংলাদেশের অনেক সংগঠণের আদর্শ সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরোপেক্ষতাবাদ । বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠণে সমাজতান্ত্রিক ধ্যান ধারণার লোকরা এখনও প্রবলতর । সুতরাং আমরা সমাজতন্ত্র প্রত্যয়টাকে আগে গুরুত্ব দিয়ে উপস্হাপন করবো ।

মূলত সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে আমরা জানি কার্ল মার্কস, ফেড্রিক এঙ্গেলস্ ও ভ্লাদিমর ইলিচ লেনিন -দের । তারা তাদের বিভিন্ন বইয়ে বলেছেন : পৃথিবীতে শ্রেণীতে শ্রেণীতে বিদ্বেষ-বিদ্রোহ-দ্বন্দ্ব-সংঘাতই সব সামাজিক ঘটনা ও দুর্ঘটনার একমাত্র কারণ । এর পিছনে কোন সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই ।

এসব দার্শনিকদের প্রবর্তিত মতবাদ হলো জড়বাদী নাস্তিকতাবাদী আদর্শ । তারা তাদের এই আদর্শের নাম দিয়েছেন দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ

এপ্রসঙ্গে কার্ল মার্কস বলেন : আমাদের কাছে এ জড় জগৎ ছাড়া আর কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই । ( কার্ল মার্কসের নির্বাচিত রচনাবলী :৫৩৬ পৃষ্ঠা ।)



কমিউনিস্ট পার্টির সংক্ষিপ্ত ইতিহাসে বলা হয়েছে :
পৃথিবী বস্তুর নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয় । এজন্য কোন সার্বজনীন সৃষ্টিকর্তা বা খোদার প্রয়োজন নেই ।

মোট কথা সমাজতন্ত্রকে যারা আদর্শ হিসেবে যারা নেন তাদের কাছে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব অগ্রহণযোগ্য বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে তারা স্বীকার করেন না । কারণ তাদের শীর্ষগুরুর আদর্শই তাদের আদর্শ । তাদের শীর্ষগুরুর আদর্শ হলো : দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ । কিন্তু মুসলিমরা বিশ্বাস করে মৃ্ত্যুর পর আরেকটি জগত আছে । আর বর্তমান বস্তু জগতই মানুষের জন্য শেষ কিছু নয় ।



মার্কসবাদী লেনিনবাদী আদর্শের সমাজতন্ত্রী কর্মী লাকী আক্তার (বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক)

ধর্মের বিরোধীতা কেন ও কিভাবে এবং কোথায় ?

বাংলাদেশের নাস্তিক ব্লগার ও এক্টিভিস্টদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল দেখলে দেখা যায়, তাদের অধিকাংশের গুরু হুমায়ুন আজাদ, কার্ল মাকর্স , লেনিন, কমরেড মোফাখ্খার, কমরেড মোজাফ্ফর, মাও জে দং, কিম উল সুং, ফিডেল ক্যাস্ট্রো, পেট্রিস লুম্বুম্বা, স্ট্রালিন প্রভৃতি । অনেকে তাদের ধর্মবিশ্বাসের ঘরে লিখেছেন এথিস্ট, স্যাকুলার হিউমেনিজম, অজ্ঞেয়বাদী ইত্যাদি ইত্যাদি ।

আমরা এসব প্রত্যয় পর্যায়ক্রমে ব্যাখ্যা করবো ।

আমরা এখন চলে যাবো তাদের গুরুরা কিভাবে ধর্মে আঘাত হেনেছেন ।

লেনিন http://en.wikipedia.org/wiki/Vladimir_Lenin ধর্ম প্রসঙ্গ বইয়ে বলেছেন :

১.ধর্মের বিরোদ্ধে অমনীয় এবং সংঘবদ্ধ ভাবাদর্শগত সংগ্রাম প্রয়োজনীয় ।…. আমরার রাষ্ট্র হতে ধর্মকে সম্পূর্ণভাবে বিলীন করার জন্য চেষ্টা করে যাবো । …. আমরা মুখের কথা ও প্রকাশনার মাধ্যমে ধর্মের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করে যাবো । ধর্ম অবৈজ্ঞানিক বলে সেটার বিরোদ্ধে আমরা আদর্শগত লড়াই চালিয়ে যাবো । ( ধর্ম প্রসঙ্গ : ৫ পৃষ্ঠা । )

২.ধর্ম জনগণের জন্য আফিমের মতো বিষয় । ( ধর্ম প্রসঙ্গ : ৮ পৃষ্ঠা । )

৩. অন্ধকারময় ধর্মের বিরোদ্ধে সংগ্রামে সমাজতন্ত্র বিজ্ঞানকে টেনে আনবে । সরকারী নথিপত্রে যে কোন নাগরিকের ধর্মের উল্লেখ প্রশ্নাতীতভাবে বর্জন করা হবে । ……. ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক সংস্হাকে কোন প্রকার সরকারী বৃত্তিদান করা চলবে না ।…. আমাদের প্রচারে নাস্তিকতাবাদের প্রচারও আবশ্যক ।

( ধর্ম প্রসঙ্গ : ১০ পৃষ্ঠা । )

৪. ধর্মের বিরোদ্ধে আমাদের লড়তে হবে । এটাই মার্কসবাদের অ-আ-ক-খ ।সুতরাং ধর্ম ধ্বংস হোক । ধর্ম,নিরিশ্বরতা চিরজীবি হোক । .....নিরীশ্বরবাদী মতাদর্শ প্রচারই হল আমাদের প্রধান কর্তব্য । … নেরাজ্যবাদী সে ব্যক্তি যে, ধর্মের সঙ্গে সংগ্রামে ভয় পায়, সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাসকে মেনে নেয় । ( ধর্ম প্রসঙ্গ : ২০ পৃষ্ঠা । )

৫. জনগণকো দেওয়া উচিত নিবীশ্বরবাদী প্রচারের অতি বিচিত্র সব মাল মসলা যাতে জাগিয়ে তোলা যায় ধর্মের ঘুম থেকে । ( ধর্ম প্রসঙ্গ : ৭৮ পৃষ্ঠা । )

লেনিন তার ধর্ম বইয়ে বলেছেন :

১. নাস্তিকতা মাকর্সবাদের অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মূলসূত্র । এটা মাকর্সবাদের সাথে স্বাভাবিক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ ।

…….ধর্মরূপী প্রেতের কবল হতে বিবেক বুদ্ধির মুক্তি সাধনের জন্যই চেষ্টা কর্তব্য । ধর্ম বইয়ের ভুমিকার প্রথম লাইন ।

২.ধর্ম আধ্যাত্মিক নিপীড়নের এক রকম রূপ । ধর্ম সর্বত্র অপরের জন্য অবিরাম পরিশ্রম, দারিদ্র ও চির বঞ্চনার কবলে নিষ্পেষিত জনসাধারণের বুকের উপর জগদ্দল পাথরের মতই চেপে বসে আছে । ( ধর্ম : ১২ পৃষ্ঠা । )

( চলবে )

বিষয়: বিবিধ

৪৭৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File