তথ্য প্রযুক্তি ও আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশি মেয়েদের সাফল্য
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৯ মে, ২০১৪, ০৯:৪৭:০৭ রাত
ইন্টার্নেটে কাজ করে আয় করার বিষয়টিকে তথ্যপ্রযুক্তির ভাষায় বলা হয় আউটসোর্সিং। যারা আউটসোর্সিং করে তাদের বাংলায় বলা হয় মুক্ত পেশাজীবী আর ইংরেজীতে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার ।
বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা প্রতিদিন প্রায় ৭০ কোটি টাকা বিদেশ থেকে আয় করছেন। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
সময়ের জনপ্রিয় পেশা ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। ইন্টার্নেটে কাজের ক্ষেত্রে হিসেবে বিবেচিত ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলো দেশের নিবন্ধিত দুই লাখের অধিক ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। তবে সফলদের সংখ্যা অর্ধলাধিক। তাদের মধ্যে প্রায় এক চতুর্থাংশ মেয়ে ।
ফ্রিল্যান্সিং দেশের লাখো তরুণের জীবন বদলে দিয়েছে। মেয়েরা ভিন্ন ধারার কাজের ক্ষেত্র হিসেবে
হিসেবে বেছে নিচ্ছেন ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে। অনেকের জীবন বদলের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন কাজের এক্ষেত্রটি । স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পরিবারেও হাসি ফুটিয়েছেন তারা।
তথ্যপ্রযুক্তির এ খাতে উৎসাহ দিতে ২০১১ সাল থেকে আউটসোর্সিং পুরস্কার দিচ্ছে সফটওয়্যার খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। চলতি বছরের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ১৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে ।
পুরস্কারপ্রাপ্ত কয়েক জন মেয়ের সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো । তাদের কার্যক্রম বাংলাদেশের অনেক মেয়েকেই ঘরে বসে থেকেই কাজ করে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি নিজের মেধা ও যোগ্যতাকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে ।
সায়েমা মুহিব
বিষয়টি ধৈর্যের - সায়েমা মুহিব
ঢাকা সিটি কলেজ থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক পড়ার সময় আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করেন সায়েমা মুহিব পড়াশোনার পাশাপাশি ২০১১ সালে প্রথম সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) কাজ শুরু করেছেন তিনি। স্বামী মহিউদ্দিন মুহিবও আউটসোর্সিংয়ে আছেন, গত বছর বেসিস পুরস্কার পেয়েছেন।
সংসার দেখাশোনার বাইরে পুরো সময় আউটসোর্সিং করেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে সায়েমা সবার বড়। বর্তমানে তিনি ১৫ ঘণ্টা করে কাজ করেন, এখন সায়েমার প্রতি মাসে আয় এক লাখ টাকার বেশি। তিনি বলেন, ‘আউটসোর্সিং বিষয়টি ধৈর্যের। মেয়েদের উদ্দেশে বলব, বাইরে চাকরি করার চেয়ে ঘরে বসে আউটসোর্সিং করা অনেক ভালো।’
সুলতানা পারভীন :
আউটসোর্সিং করার জন্য জানতে হবে - সুলতানা পারভীন
প্রায় দুই বছর ধরে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন চট্টগ্রামের মেয়ে সুলতানা পারভীন। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। পত্রপত্রিকায় আউটসোর্সিংয়ে অনেকের সাফল্য দেখেই কাজ করার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। ‘তাই বিকন আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ের ওপর একটি কোর্স করলাম। পরে ২০১২-এর ডিসম্বরে প্রথম কাজ শুরু করি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) নিয়ে।’ বললেন সুলতানা পারভীন।
এখন অবশ্য এসইও করেন না, রেসিপি, ব্লগ লেখার কাজ করছেন তিনি। ব্লগ এবং বিভিন্ন পর্যালোচনা লিখে থাকেন ফরমায়েশ মতো। ৪০ হাজার টাকা আয় করছেন প্রতি মাসে। অ্যামাজন থেকে তাঁর ই-বুকও বের হয়েছে। দুই ছেলেমেয়ে তাঁর। বললেন, ‘আসলে অনেকে বলে আউটসোর্সিং করতে গেলে বেশি কিছু জানা লাগে না। বিষয়টা এমন না। অবশ্যই জানা দরকার। কারণ ইংরেজি এবং যে বিষয়ের ওপর কাজ করতে চান, সেটির ওপর দক্ষতা থাকতে হবে।’
মাহফুজা সেলিম
শুধু টাকা আয়ের জন্য কাজ করা যাবে না , নিজের মেধা-যোগ্যতা-দক্ষতা বিকাশের জন্য কাজ করতে হবে - মাহফুজা সেলিম
ঢাকা মিরপুর বাঙলা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পড়ছেন মাহফুজা সেলিম। কম্পিউটার গ্রাফিকস তাঁর ভালো লাগে। তাই একটি কোর্স করেছিলেন তিনি। বললেন, ‘একদিন আমার এক বান্ধবী পরামর্শ দিল ফ্রিল্যান্সিং করার। ২০১১-এর জানুয়ারিতে ওডেস্কে কাজ শুরু করি। ধীরে ধীরে কাজের গতি বাড়তে থাকে।’
বর্তমানে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। ‘তবে শুধু টাকা আয়ের জন্য আউটসোর্সিং করি না। এটুকু মাথায় রেখে কাজ করি, আমি একজন বাংলাদেশি। আর আমি কাজ করছি বাইরের বায়ারদের সঙ্গে, আমার পরিচিতির সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা আছে।’
এ দেশ সেরা মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সারদের পুরস্কার দিচ্ছে সফটওয়্যার খাতের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। ২০১৩ সালে আলাদাভাবে তিন সেরা নারী ফ্রিল্যান্সারকেও পুরস্কৃত করছে সংগঠনটি। পুরস্কারজয়ী তিনজন হচ্ছেন এমরাজিনা ইসলাম, নুসরাত জাহান,শাহরিনা ইয়াছমিন
এমরাজিনা ইসলাম
২০১০ সাল থেকে নিয়মিত ফ্রিল্যান্সিং করে যাচ্ছেন ঢাকার এমরাজিনা খান। দেশের বাড়ি নীলফামারীতে, তবে পড়াশোনাটা ঢাকাতেই।অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সব মিলিয়ে দুই হাজার ঘণ্টা কাজ করেন। ইল্যান্স ও ওডেস্কে গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ করেন তিনি। ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক পড়ার পাশাপাশি শিখেছেন ছবি আঁকাও।
এক বন্ধুর কাছ থেকে প্রথম ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিষয়টি জানেন এমরাজিনা। পরবর্তী সময়ে নিজেই যুক্ত হয়ে যান ফ্রিল্যান্সিংয়ে। বিয়ের পর স্বামী এবং পরিবারের উৎসাহে ফ্রিল্যান্সিংকেই এখন ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। নিজের কাজের সঙ্গে যুক্ত করেছেন তাঁর ননদ ও আরও কয়েকজন নারীকে।
এমরাজিনার বাবা এমদাদুল ইসলাম ছিলেন ব্যবসায়ী। তিনি মারা গেছেন ২০০৫ সালে। মা সেলিনা আক্তার সংগীত শিক্ষক।
এমরাজিনা বলেন, ‘নারীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং দারুণ একটি কাজ। এতে করে ঘরে বসে যেমন কাজ করা যাবে, তেমনি সংসারও সামলানো যাবে। স্বপ্ন দেখি আরও অনেক নারীকে এর সঙ্গে যুক্ত করার।’
নুসরাত জাহান
পড়াশোনা করছেন ফার্মেসি বিষয়ে, তবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) এবং ওয়েবডেভেলপমেন্ট নিয়ে ।২০১০ সাল থেকেই এ পেশায় যুক্ত ঢাকার মেয়ে নুসরাত জাহান। এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন ফ্রিল্যান্সিংয়ের কথা। সে সময় অনেকটা শখ থেকেই শুরু।তবে বর্তমানে নিয়মিত করে যাচ্ছেন কাজ। গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মাসুরগাঁওয়ে। তবে ছোটবেলা থেকেই বেড়ে ওঠা আর পড়াশোনা ঢাকায়। শুরুতে এসইওর কাজ শেখেন, তারপর শুরু করেন কাজ। ব্যবসায়ী বাবা কাজী মো. হান্নান ও গৃহিণী মা তাহমিনা কাজীর তিন মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে বড় নুসরাত। ‘কাজ শিখে মার্কেটপ্লেসে প্রথম কাজ পাই এসওই বিষয়ে। তার পর থেকেই নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি’—বললেন নুসরাত। বর্তমানে সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার ঘণ্টা কাজ করা নুসরাত পরামর্শ দিলেন বায়ারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার। নারীদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং দারুণ একটি ক্ষেত্র বলে মনে করেন নুসরাত এবং শুধু নারীদের নিয়েই একটি ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠান করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
শাহরিনা ইয়াছমিন
কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে স্নাতক শেষে ২০১০ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন শাহরিনা ইয়াছমিন। মাঝে অবশ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেছেন। শাহরিনা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ওয়েবডেভেলপমেন্ট ও ওয়েবভিত্তিক অ্যাপ তৈরির কাজ করছেন সফটওয়্যার প্রকৌশলী স্বামীর আগ্রহে।সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার ঘণ্টা কাজ করা শাহরিনার বাবা মো. ইদ্রিস আলী সরকার সরকারি চাকরি করেন। মা শিরিন আকতার গৃহিণী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে বড় শাহরিনার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। তবে বাবার চাকরির সুবাদে পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রামে। বিয়ের পর থেকে ঢাকায় আছেন।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশে নারীদের সংখ্যা অনেক কম। শাহরিনা বলেন, ‘আসলে ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে নেওয়াটা এখন বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। তবে ক্ষেত্রটি এগিয়ে যাচ্ছে এবং নারীরা অনেক ভালো করতে পারবেন।’
তাঁর মতে, এ ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা লাগবে। আর কাজের ক্ষেত্রে ইচ্ছাশক্তি আর ধৈর্য প্রয়োজন। ভবিষ্যতে নিজেই একজন উদ্যোক্তা হতে চান শাহরিনা।
উপসংহার :
বর্তমানে সারাবিশ্বে কাজের বাজারের আকার ৪২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যার খুবই ছোট একটি অংশ, ১ বিলিয়ন ডলারের বাজার গতবছর ছিল অনলাইনে মার্কেটপ্লেসে। তবে আশার কথা হচ্ছে, গত কয়েক বছরে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং ক্ষেত্রটি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টের এক জরিপে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে ২০০৮ সালের তুলনায় ১২ শতাংশ ফ্রিল্যান্সার বৃদ্ধি পেয়েছে। জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইল্যান্সে ২০১২ সালের প্রথম প্রান্তিকে ২ লাখের অধিক জব পোস্ট হয়। এটি বৃদ্ধি পেয়ে এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩ লাখে পৌঁছেছে। আমরা আশা করছি, ২০১৮ সাল নাগাদ অনলাইন মার্কেটপ্লেস ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের বাজারে পরিণত হবে। শুধু তা-ই নয়, ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রতি ২ জন মানুষের ১ জন অনলাইন কাজের বাজারের সাথে যুক্ত থাকবে। এই অগ্রগতির ছোঁয়া আমরা বাংলাদেশেও দেখছি। গত কয়েক বছরে যেভাবে আমাদের দেশের আইসিটি সেক্টর এগিয়ে যাচ্ছে, সেটা সত্যিই অভাবনীয়। ২০০৯ সালে আমাদের দেশ থেকে মূলত ফ্রিল্যান্সিংয়ের জোয়ার শুরু হয়, এবং মাত্র ৩-৪ বছরের মধ্যেই আমরা ফ্রিল্যান্স সার্ভিস প্রদানকারী দেশ হিসেবে অন্যতম অবস্থানে আছি। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম দুটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইল্যান্স এবং ওডেস্কে প্রায় ১৮০টি দেশের মাঝে আমরা যথাক্রমে ৭ম এবং ৮ম অবস্থানে ছিলাম, যেটা শুরুর দিকে অকল্পনীয় ছিল।
আশা করা যায়, বাংলাদেশের দেশের প্রযুক্তিপ্রিয় তরুণ-তরুণীরা ভালো ইংরেজি ও নানামুখী কাজ শিক্ষার মাধ্যমে মেধা ধৈর্যের সাথে কাজ করতে পারলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠবে আউটসোর্সিং।
কৃতজ্ঞতা :
১. ইত্তেফাক , তথ্য প্রযুক্তিতে এগিযে যাওয়া বাংলাদেশ , ৭ মে ২০১৪
২. প্রথম আলো : http://m.prothom-alo.com/technology/article/194983/%E0%A6%86%E0%A6%89%E0%A6%9F%E0%A6%B8%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A7%9F%E0%A7%87_%E0%A6%B8%E0%A6%AB%E0%A6%B2_%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%B0%E0%A6%BE
৩. নেটজবস্ বিডি :
https://bn-in.facebook.com/netjobsbd/timeline
৪. কম্পিউটার জগৎ
৫. বেইসিস
৬. https://www.facebook.com/AdvanceITInstitute
এই বিষয়ে কেহ বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ।
বিষয়: বিবিধ
৪১২৯ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার এই ব্লগ পোস্টে উল্লেখিত মেয়েদের সাফল্য
বাংলাদেশের অনেক মেয়েকেই ঘরে বসে থেকেই কাজ করে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি নিজের মেধা ও যোগ্যতাকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে বলে মনে করি ।
আপনাকে আমার পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
নারীর ক্ষমতায়ন, সমতা এবং উন্নয়নের মূলধারায় পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে দরিদ্র, নিরক্ষরতা, সহিংসতা ও শোষণমুক্ত দেশ গড়ায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
এটা স্পষ্টভাবে প্রমানিত, নারীর সমতা মানে সবার অগ্রগতি। আমাদের দেশে মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ এবং নারীর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন সাধিত হয়েছে।
নারীর অগ্রগতি হলে মানবপ্রগতির সর্বাধিক বিকাশ সম্ভব হবে।
আর এজন্য আল্লাহ তায়ালা কুরআন বলেছেন :
وَالمُؤمِنونَ وَالمُؤمِنٰتُ بَعضُهُم أَولِياءُ بَعضٍ ۚ يَأمُرونَ بِالمَعروفِ وَيَنهَونَ عَنِ المُنكَرِ وَيُقيمونَ الصَّلوٰةَ وَيُؤتونَ الزَّكوٰةَ وَيُطيعونَ اللَّهَ وَرَسولَهُ ۚ أُولٰئِكَ سَيَرحَمُهُمُ اللَّهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزيزٌ حَكيمٌ
ঈমানদার নর-নারী পরস্পর বন্ধু । তারা সৎকাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজের নিষেদ করে, সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় ও আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে, তাদের আল্লাহ দয়া করেন । আল্লাহ শক্তিমান তত্ত্বজ্ঞানী । (সুরা তওবা : ৭১) ।
ইসলামরে র্স্বণযুগে দখো যায়, নারীরা সুদূর বাগদাদ থেকে মক্কা নগরীতে একাকী গমন করলেও তাদরেকে কে উত্যক্ত করত না। কেনা এরকম নিরাপত্তাই ইসলামী সমাজে প্রত্যাশিত ।যারা
নারীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি ইসলাম তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে বলে ।
আর কোন পুরুষ যেন নারীকে হয়রানি না করে বরং বোনরে দৃষ্টিত দেখে সেজন্য পুরুষকে মনস্তাত্ত্বকিভাবে প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
إِنَّمَا النِّسَاءُ شَقَائِقُ الرِّجَال
‘‘নারীরা পুরুষদরে সহোদরা’’। [সুনান আবি দাউদ ১/২৯৯, হাদীস নং ২৩৬]
মুসলিম দেশগুলোতে নারীর প্রতি সহিংসতা-অবদমন-নির্যাতন আগের অবস্হায়ই আছে । তবে নারী শিক্ষার হার বেড়েছে । পশ্চিমা বিশ্বে নারী নির্যাতন হচ্ছে পুজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে । আর মুসলিম বিশ্বে নারী নির্যাতন হচ্ছে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে । অথচ এমন হওয়ার কথা নয় । কারণ মানবতার মহান মুক্তির দুত মুহাম্মদ সা. বলেছেন : নারী পুরুষ পরস্পর সহোদর । ( সুনান আবি দাউদ ) আর আল্লাহ বলেছেন :বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু । ( সুরা তওবা : ৭১ )
কিন্তু মুসলিম বিশ্বে বাস্তব অবস্হা ভিন্ন । মুসলিম বিশ্বে অধিকাংশ বিবাহিত পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের পেটানো একটা ধর্মীয় অধিকার মনে করেন । আর তাদের মুসলিম ধর্মব্যবসায়ীরাও উৎসাহিত করে থাকেন । কিন্তু মুহাম্মাদ (সা.) কোন সময়ই তার স্ত্রী বা মেয়েদের প্রহার করা তো দুরে থাক ধমকের সুরেও পর্যন্ত কথা বলেননি । ঠিক তেমনি তার সাহাবীদের অধিকাংশই এমন চারিত্রিক গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন ।
ইসলাম মেয়েদের মায়ের এমন মর্যাদা দিয়েছে যে বলা হয়েছে মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত আর মেয়েরা পুরুষদের স্ত্রী হয়ে স্বামীর ধর্ম পালনকে পরিপূর্ণ রূপ দেয় । কারণ বলা হয়েছে বিয়ে ধর্মের অর্ধেক ।
মুসলিম বিশ্ব হতে নারীর প্রতি সহিংস আচরণ দুর করার জন্য আমাদের সোচ্চার হতে হবে ।
আমি মনে করি, নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি ও নারীর ক্ষমতায়নই পারে একটা দেশের দারিদ্র দূর করতে । আমাদের দেশকে উন্নায়ন-অগ্রগতি-প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের অবশ্যই নারীকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্হান দিতে হবে ।
এই নিউজের মধ্যে সায়মা মুহিবের স্বামী মহিউদ্দীন মুহিব সর্বদা উৎসাহ-অণুপ্রেরণা দিতেন বলে তিনি দেশের জন্য গর্বিত ব্যক্তিই নয়, বাংলাদেশের অনেক মেয়ের জন্য অণুপ্রেরণার উৎস হয়েছেন ।
এই নিউজ ও সায়মার স্বামী হতেও অনেক স্বামীর অনেক কিছু শেখার আছে । যেমন :
১। মেয়েরা ঘরে বসে থাকার জন্য নয় ।
২। ঘরে বসেও উপার্জন করা যায় ।
৩। মেয়েদের উৎসাহ - অণুপ্রেরণা দিলে ঘরে বসেও তারা পরিবারের জন্য আয় বৃদ্ধি করতে পারে এবং পরিবার ও সমাজের জীবনমান উন্নায়ন করতে পারে ।
আপনাকে ধন্যবাদ ।
লেখাটি বার বার পড়ুন । তাহলে আপনি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন ।
আপনাকে ধন্যবাদ ।
বুঝলাম 'আউটসোর্সিং' করে আয় করা যায়। সবাই বলল আউটসোর্সিং করে সাফল্য এসেছে! আমিও বহুবার পড়েছি কিন্তু এই আউটসোর্সিং জিনিষটাই বা কি সেটাই তো বুঝলাম না।
এটা কি টেলিফোন কথোপকথন?
এটা কি ক্রয় বিক্রয়ের কোন মাধ্যম?
এটা কি কাউকে লিখিয়ে দেবার কোন মাধ্যম?
এটা কি যোগাযোগ ঘটিয়ে দেবার কোন সিসটেম?
এটা কি গ্রাহক জুটিয়ে দেবার কোন ব্যবসা?
হাজারো প্রশ্ন কিন্তু কোন উত্তর নাই। আমার প্রশ্ন হল, আউটসোর্সিং জিনিষটা কি সেটা জানার জন্য কোন সেমিনারে প্রশিক্ষণ নিতে হবে কিনা? ইংরেজীতে আমি কাঁচা নই, সুযোগ পেলে প্রশিক্ষন নিয়েও ফেলতে পারি।
এটা কি টেলিফোন কথোপকথন?
এটা কি ক্রয় বিক্রয়ের কোন মাধ্যম?
এটা কি কাউকে লিখিয়ে দেবার কোন মাধ্যম?
এটা কি যোগাযোগ ঘটিয়ে দেবার কোন সিসটেম?
এটা কি গ্রাহক জুটিয়ে দেবার কোন ব্যবসা ?
উত্তর : হ্যা । এগুলো-সহ ১০০০ বেশী ধরনের কাজ রয়েছে । আউটসোসিং বিষয়টা ব্যাপক । এতে টাইপ করা হতে শুরু করে বিমানের নকশা তৈরী করার কাজও রয়েছে ।
আপনি যদি কম্পিউটার কম্পোজে দক্ষ হোন,মাইক্রোসফট এক্সেল,অ্যাডোব ফটোশপ ও অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটর জানেন তাহলে আপনি নিজেই আজ হতে ফ্রিল্যান্সারের খাতায় নাম লিখাতে পারেন বা আউটসোর্সিং করে টাকা উপার্জন করতে পারেন ।
তবে বর্তমানে বাংলাদেশে ওয়েব সাইট ডিজাইন জানেন এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এ দক্ষ লোকরা আউটসোসিং করে বেশী টাকা উপার্জন করে থাকেন ।
আউটসোর্সিং-এ সফল হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই । আমি নিজেই এই বিষয়ে আগে প্রশিক্ষণ দিতাম । আপাতত ব্যস্ত থাকায় আপনাকে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারছি না । তবে আপনি এই ব্লগ সাইট হতে কিছু তথ্য পেতে পারেন । যিনি এই সাইট পরিচালনা করেন, তিনি বাংলাদেশের শীর্ষ ফ্রিল্যান্সারদের একজন । দেখুন জাকারিয়া কাজল - এর ফ্রিল্যান্সার হওয়ার গল্প : http://www.freelancerstory.com/
আর যদি ঢাকার বাহিরে থাকেন তাহলে কোথায় থাকেন তার উপর ভিত্তি করে আমি পরামর্শ দিবো ।
আমার মতে, আপনার বোন গ্রাফিক ডিজাইন ও থ্রি ডি এনিমেশনের উপর কাজ শিখলে তিনি সফল হতে পারবেন ।
এজন্য তাকে আগে :
১. এডোব ফটোশপ,
২. এডোব ইলাস্ট্রেটর
ভাল করে শিখতে হবে । এজন্য তাকে বড় জোড তিন মাস বাড়িতে প্রতি দিন গড়ে ৩ হতে ৫ ঘন্টা সময় দিতে হবে ।
এগুলোতে সে দক্ষ হয়ে গেলে সে ওডেক্স, ফ্রিল্যান্সার, গ্রাফিক্স রিভার ইত্যাদি ফ্রিল্যান্সিং সাইট হতে কাজ নিজেই সংগ্রহ করতে পারবেন ।
পরবর্তীতে তিনি প্রয়োজন মনে করলে :
১. এডোব ফ্লাস
২. অটোক্যাড
৩. থ্রি ডি স্টুডিও ম্যাক্স
৪. এডোব প্রিমিয়ার
ইত্যাদিতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন ।
এসব সফটওয়্যার নির্ভর অনেক কাজ রয়েছে ।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভাল করার জন্য নিচের বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ।
১. প্রতি দিন নিয়মিত ৫ ঘন্টা দক্ষতা অর্জনের জন্য সাধনা করতে হবে ।
২. কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তির সাথে সম্পৃত্ত যন্ত্রপাতিকে বন্ধুর মতো আপন করে নিতে হবে । এজন্য বৃথা সময় নষ্ট করা, আড্ডা দেওয়া , বন্ধুদের সাথে গল্প করা , টিভি দেখা ,মুখি দেখা, কম্পিউটার গেমস খেলা, বিয়ের আগে অনৈতিক প্রেম করে সময় নষ্ট করা, অপ্রয়োজনীয় গল্পের বই পড়া সম্পূর্ণ রূপে বাদ দিতে হবে । বলতে গেলে ঘুমানো, খাবার খাওয়া, নামাজ পড়া ছাড়া বাকি সময় শুধু মাত্র কম্পিউটারের ও তথ্য প্রযুক্তির বই পত্রের সাথে কাটাতে হবে ।
৩. ফ্রিল্যান্সিং যারা করেন এবং এই বিষয়ে দক্ষ তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে হবে । এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ , কর্মশালা , সেমিনার ও সেম্পুজিয়ামে অংশ নিতে হবে ।
আর বিশেষ কিছু লিখছি না । আশা করি সাথেই থাকবেন । ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন