বাংলাদেশের মেয়েদের মধ্য হতে শালীনতাবোধ ও মা-সুলভ বৈশিষ্ট্য লোপ পাচ্ছে ( ১ম পর্ব )
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০২:১৬:২১ রাত
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখ সকালে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য বের হলাম । গাড়িতে উঠলাম । প্রচন্ড গরম ও স্যাতস্যাতে অবস্হা । তার মধ্যে মহিলাদের আসনে ও ইঞ্জিনের উপর দাগাদাগি করে এবং সামনের দিকে ছেলেদের সাথে অনেকটা ঠেলাঠেলি করে কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয়গামী কিছু মেয়ে বসে আছে বা দাড়িয়ে আছে ।
গাড়ি দ্রুত চলছে । আর মাঝে মধ্যে ব্রেক করছে । তখন অনেক মেয়েই ছেলেদের উপর আছড়ে পড়ছে । ছেলেরাও কিছু মনে করছে না । হঠাৎ একবার এক লোক এক মেয়ের পিঠের উপর পড়লেন । ব্রেকের ধকল সামলাতে না পেরে মেয়েটার হাত ধরলেন । মেয়েটা তখন লোকটার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন তিনি একটা গর্হিত অপরাধ করলেন । অথচ লোকটাকে দেখতে মেয়েটার দাদুর বয়সী মনে হচ্ছিলো ।
কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে ভীষণভাবে অসুস্হ হয়ে পড়ে । জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । প্রথম তাকে কেহ সাহায্য করছিলো না । মেয়েরাও না । হঠাৎ একটা ছেলে মেয়েটার পাশের মেয়েকে উঠিয়ে দিয়ে তার বোতলের পানি মাথায় দিতে লাগলো । তখন সেই বৃদ্ধ মতো লোকটা বলছিলো : মেয়েটার তো দাতে দাত লেগে গেছে । কারও কাছে চামচ থাকলে দিন ।
এদিকে কেহ দাবি করছে তার মোবাইল হতে মোবাইল নম্বর যোগাড় করে গাড়ি থামিয়ে এই আপদ বিদায় করা হোক । তখন এক মেয়ে বল্লো : সে ইডেন কলেজের ছাত্রী । কোন বিভাগে পড়ে জানি না । তবে প্রায়ই কলেজে আসে । কলেজে নামিয়ে দিলেই হবে ।
কিন্তু সেই মেয়েও এই মেয়েকে সেবা যত্ম করছিলো না ।
এদিকে আমি পুরো বিষয়টার উপর নজর রাখার চেষ্টা করলাম । এক সময় বুঝতে পারলাম । ৪২ সিটের এই গাড়ীতে লোক ছিল কম করে হলেও ৬০ জন । আর মেয়ে ছিল প্রায় ২০ জন । মুখ ঢাকা বোরকা পড়া মেয়ে ছিল ৫ টা । ওড়না বা স্কার্ফ দিয়ে মুখ খোলা হিজাব করা মেয়ে ছিল ৬ টা । আর বাকী মেয়েগুলো ছিল সাধারন মেয়েদের মতো পোষাক পড়া । এদের একটাও এই মেয়েকে সেবা যত্ম করতে এগিয়ে এলো না - তা আমার কাছে বিশ্ময়কর মনে হলো । আমারা শরৎচন্দ্রের মেজদিদি, সেজ দিদি উপন্যাস পড়েছি । আমরা জোহরা, আনোয়ারা, মনোয়ারা, রক্তকরবী, শ্রীকান্ত, চার অধ্যায়, বিলাসী, হৈমন্তী পড়েছি । এসব উপন্যাস ও গল্পে বাঙ্গালী মেয়েদের যেভাবে উপস্হাপন করা হয়েছে - তাতে মনে হয়, তাতে মনে হয় প্রতিটা মেয়েই মায়ের প্রতিচ্ছবি । এজন্য হয়তো বাবারা ছোট মেয়েদের মা বলে সম্বোধন করে থাকেন । কিন্তু তাদের মধ্যে সেই মাতৃরূপ নেই কেন ?
আমি ভাবতে থাকলাম ।
এই অবস্হায় এক মেয়ের মোবাইল বেজে উঠলো । মেয়েটি ফিসফিস করে কথা বল্লো । মেয়েটি কথা শেষ করার পর তার পাশের মেয়েটা বল্লো : তোর বঁশের খবর কি ? (আমি ব্যাপারটি বুঝতে পারলাম না । ) তাদের কারো মধ্যেই আক্ষেপ বা চিন্তার কোন আভাস দেখলাম না ।
গাড়ি ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আসলে আমি নামলাম । লক্ষ্য করলাম এক মুখ ঢাকা বোরকা পড়া আপুও নামলো । আমি তার হাতে দেখলাম : ওরগানাজেশনাল বিহেভিওর নামক একটা মোটা ইংরেজী বই । এই নামে বিবিএ-তে একটা কোর্স আছে । আমি একটু সাহস করে বল্লাম : আপু ! একটু কথা বলতে চাচ্ছি । সময় হবে কি ?
: না না । আমি কথা বলবো না। আমার পরীক্ষা আছে ।
আমি বল্লাম : পরীক্ষা তো সেই মেয়েটারও ছিল । সে তো পরীক্ষা দিতে পারবে না । আমি মাত্র দুইটা প্রশ্ন করবো । উত্তর দিবেন কি ?
: বলুন কি বলবেন ?
: আচ্ছা , এতগুলো মেয়ে থাকতে একটা ছেলে মেয়েটার মাথায় পানি দিলো আর আরেকটা ছেলে বাতাস করলো একটা মেয়েকে । বিষয়টা কতটুকু মানবিক হলো ? মেয়েরাও তো এই কাজটা করতে পারতো । মেয়ে থাকতে ছেলেরা কেন একটা মেয়েকে সেবা করতে এগিয়ে গেলো ? আর আপনি মুখ ঢেকে রেখেছেন কেন ?
( মেয়ের মুখ ঢাকা বলতে বোঝাচ্ছি অর্ধেক মুখ ঢাকা । মানে নামের ডগা পযর্ন্ত । ) চোখের অবস্হা দেখে বুঝলাম ভীষণ রেগে গিয়েছেন । (কথায় আছে না চোখ যে মনের কথা বলে)
মেয়েটির উত্তর দিলো : মেজোরিটি ইসলামি স্কলার মত মেয়েদের মুখ ঢাকতে হবে । মুখ ঢাকি এজন্যই । আর বল্লেন : আপনি কি ইভটিজার ?
আমি বল্লাম : আমি ইভটিজিং করার মতো কিছুই করি নাই । আর আমাকে কি দেখতে ইভটিজারের মতো মনে হচ্ছে । দুই বাড়ি পরেই রাস্তার পাশেই আমার অফিস ।
আমার এই কথা শোনার পর আপু হন হন করে হাটা দিলেন ।
অফিসে যেয়ে দেখলাম ৩০ মিনিট দেরী করে ফেল্লাম । আমাদের কাজের চাপ নেই । অথচ অন্য ডিপার্টমেন্টের সবাই ভীষণ ব্যস্ত । তাই পাশের কলিগকে ঘটনাটি বিস্তারিত বলার সুযোগ পেলাম । তিনিও কৌতুল প্রকাশ করলেন ।
আমি তাকে বল্লাম : দাদা । তোর বাশের খবর কি বলে মেয়েটা কি বোঝাতে চাইলো ?
তিনি বল্লেন : আপনি তো কুমিল্লার ইজ্জত মারবেন ! আপনি না কুমিল্লার লোক ! তোর বাশের খবর কি কথাটা দিয়ে এই মেয়ের নাগর কথা জানতে চাওয়া হয়েছে ।
আমি বল্লাম : নাগর মানে কি ? বাশ বলা হলো কেন ?
: আপনি তো নাছড়বান্দা । নাগর মানে হলো অবৈধ প্রেমিক । বর্তমানে ধামরীরা তাদের বয়ফ্রেন্ডদের বাশ বলে থাকে ।
: আপনি আবার মেয়েটাকে ধামরী বলছেন কেন ?
: বরিশাল-নোয়াখালী-কুমিল্লা-চাদুপুরের লোকদের বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বলা হয় । সংক্ষেপে বিএনসিসি । আপনি যে এত আহমক তা তো জানতাম না ? ধামরী হলো উরধুরা মেয়ে । আর পাডি হলো ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না এমন মেয়ে । ধামরী আর পাডি (পাঠী ) হলো কুমিল্লার আঞ্চলিক শব্দ । আপনি জানেন না দেখে অবাক হচ্ছি । বাদ দেন তো , কে কার মাথায় পানি দিলো কি দিলো না ভেবে কাজে মনযোগ দেন । নতুন প্রজেক্টের ব্যাপারে ভাবুন । যে কোন সময় উপর হতে ডাক আসতে পারে ।
বসে ভাবছি আর অফিসের জরুরী ইমেইল পড়ছি । হঠাৎ পেছন হতে শুনলাম । ডিজিএম স্যার আপনাকে ডেকেছেন । ভয়ে ভয়ে গেলাম । কাচুমাচু হয়ে দাড়ালাম । বল্লেন :
আজও ল্যাইট করলেন । লেইট করে দেরী করলেন ? বিয়ে করেছেন ?
: না । স্যার ।
: বাড়িতে কি কেহ অপেক্ষায় বসে থাকে ?
: না । স্যার ।
: তাহলে তো বেচে গেলেন ? ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ অফুরন্ত । (কি বুঝাতে চাইলেন বোঝলাম না । )
: দেখুন । নতুন প্রজেক্টের জন্য কাজ করতে হবে আপনাদেরকে । ১৫ জনের টিম হবে । ঢাকার বাহিরে যে কোন সময় যেতে হতে পারে । পুরো একটা এলাকাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ করতে হবে । আর সিকুরিটি সিস্টেমের কাজও আছে । মেইল পাঠানো হবে । সেটা ভাল করে পড়ুন ।
আপনি এখন আসুন ।
আমি ফিরতে নিয়েছি । এমন সময় বল্লে : এই যে শুনুন ।
আমি বল্লাম : আমাকে বলছেন !
: আপনাকে বলছি না তো । কাকে বলছি । আপনি ছাড়া আর কে এখানে আছেন ? শোনেন অফিসে বসে ধামরী আর পাঠিদের গল্প করবেন না । মনে রাখবেন : নারী, ধর্ম আর রাজনীতি নিয়ে ক্যাচাল খুবই খারাপ । এই তিনটা নিয়ে যে বা যারা বেশী নাড়াচাড়া করেছে তাদের সর্বনাশ হয়েছে । আপনি সাইন্স এন্ড টেকনোলজির লোক । এগুলো নিয়েই নাড়াচাড়া করুন । সাইন্স এন্ড টেকনোলজি কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয় না । অনেকটা খাজা বাবার দরবারের মতো আর কি ? কথায় আছে না : খাজা বাবার দরবার হতে কেউ খালি হাতে ফিরে না । .....আপনি প্রেম পড়বেন, প্রেমে বিফল মনরথ হয়ে আসতে পারেন । আপনি ধর্ম নিয়ে বেশী নাড়াচাড়া করবেন তো নাস্তিক, নয়তো মৌলবাদী উপাধী পাবেন । আপনি যদি রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান তো জেলে পচবেন বা প্রতিপক্ষ আপনার জীবনকে অতিষ্ট করে তুলবে । আর যদি কম্পিউটারের প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বিল গেটসের কাছাকাছি না পৌছতে পারলেন অন্তত দুই একটা ভাল সফটওয়ার বানাতে পারবেন । সেগুলো বেচে আপনার তিন পুরষ খেয়ে পড়ে বাচতে পারবে । নেটওয়ার্কিং নিয়ে যদি পড়ে থাকেন, তাহলে আর কিছু না হোক অন্তত ভাল সেলারীর বেতনে বিদেশের কাজ করতে পারবেন ।
এখন কি বুঝলেন ?
: স্যার । বুঝলাম । ভাল পেশাজীবি হতে হবে ।
: এবার । তাহলে যান ।
ভাবতে লাগলাম । তিনি আমাদের কথোপকোথন শুনলেন কি করে ? পরে জানলাম তিনি আমাদের পেছনে একটা কম্পিউটারে বসে ছিলেন । আমরা লক্ষ্য করেনি ।
(সবার বিবেকের কাছে প্রশ্ন : কোন মহিলা কি তার ছেলে সন্তানকে বাঁশ হওয়ার জন্য জন্ম দেন ?
আর যারা ছেলেদের বাঁশ বলেন তারা কি এক সময় বাঁশ জন্ম দিবেন ? অথচ এসব বাশদের তারা কাছে পেলে জান, জানু বলে মুখে ফেনা তোলেন ।
তবে ছেলেরা মেয়েদের মেয়ে হিসেবেই জন্ম দেন ।আর আদর করে মা বলে ডাকেন । এখন যাকে আপনারা বাঁশ বলছেন সেও এক সময় তার মেয়েকে মা বলে আদর করে ডাকবে । )
কৃতজ্ঞতা : https://www.facebook.com/pages/Bangladeshi-Women/141698479361216?ref=hl
চলবে ...............
বিষয়: বিবিধ
৪৮২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন