হিজাব ব্লগিং
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৩:০২:১০ রাত
হিজাব হচ্ছে ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী পোষাক ও আচার-আচারণের সম্মিলিত বিষয় । প্রচলিত অর্থ হিজাব বলতে মুসলিমদের মেয়েদের পোষাকের নীতিমালাকে বোঝানো হয়ে থাকে । যার উর্দূ বা বাংলা অর্থ পর্দা ।
অমুসলিমরা ও সাধারণ মুসলিমরা মুসলিম মেয়েদের ঘোমটা বা বা মাথা ঢাকার কাপড়-কে প্রায়ই হিজাব বলে থাকেন । এটাকে মূলত খিমার বলা হয় । কারণ কুরআনে খিমার বা জিলবাব বলে এটাকে আক্ষায়িত করা হয়েছে । বাংলায় এটাকে ওড়না বা চাদর বলা হয় ।
হিজাব ব্লগিং:
হিজাব সম্পর্কিত বিষয় ও ফ্যাসন, মুসলিম মেয়েদের জীবনধারা, অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুসাসন নিয়ে ব্লগ লেখাকে হিজাব ব্লগিং বলা হয় ।
হিজাব ব্লগিং হচ্ছে একটি বিশ্বব্যাপী প্রবণতা যা ব্লগ জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সারা বিশ্বে হিজাবী মেয়েরা তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ব্লগ লিখে যাচ্ছেন । তারা বর্ণনা করছেন হিজাবের ফ্যাশন, জীবনধারা, অভিজ্ঞতা আর রাজনৈতিক ও হিজাবকে ঘিরে থাকা ধর্মীয় অনুশাসন । তারা শালিনভাবে চলাফেরা ও শালিনতাবোধকে সমাজে পতিষ্ঠার জন্যও ব্লগ লিখে যাচ্ছেন ।
প্রথমে হিজাব ব্লগিং শুধুমাত্র হিজাবী মুসলিম মেয়েদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও অমুসলিম মেয়েরাও হিজাব ব্লগিং-এ এগিয়ে এসেছেন । অনেক ছেলেও হিজাব ব্লগিং –কে ব্লগ লেখার বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন ।
হিজাব ব্লগিং-এর সুত্রপাত :
হিজাব ব্লগিং আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিচ্ছে নরওয়েতে অবস্থিত হিজাব্লগ http://thehijablog.wordpress.com । এই ব্লগের সাথে সম্পৃত্তরা সব কিছু নিয়ে লেখেন ।
যেমন :
১. রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে, যেমন : https://www.facebook.com/Hijabbeauty
২. বিয়ের ফ্যাসন নিয়ে : মালয়েশিয়ায় ইসলামিক বিয়ের ফ্যাশন : http://thehijablog.wordpress.com/2008/12/13/cute-colorful-wedding-gowns/
৩. ইসলামী ফ্যাশন নিয়ে : ইন্দোনেশিয়ার ইসলামিক ফ্যাশনের ডিজাইনার ইতাংগ ইউনাজ কে তুলে ধরেছে: http://thehijablog.wordpress.com/2008/12/11/islamic-wear-designer-itang-yunasz/
ইতাংগ ইউনাজ একজন ডিজাইনার যিনি খোলামেলা জামা তৈরি করতেন । কিন্তু তিনি কয়েক বছরের জন্য ফ্যাশন ডিজাইনের জগত হতে উদাও হয়ে যান। তারপর তিনি ফিরে এলেন পর্দানসীন নারীদের জন্য কিছু ডিজাইন নিয়ে। তার ডিজাইনগুলো দেখানো হয় তুরস্কের ইসলামিক ফ্যাশন উৎসবে।
হিজাব ব্লগিং-এর মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার :
অভিজ্ঞতা - ১ :
হিজাব ব্লগিং-এর মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হিজাবী মেয়েরা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকেন । যেমন : কানাডার ব্লগার
মারিয়া পাঠকদের এই বাক্য দ্বারা সম্ভাষণ জানায়: “আমার হিজাব ভ্রমণে স্বাগতম…”। এই ব্লগারের পোস্ট থেকে এটা পরিষ্কার যে প্রায় আট মাস আগে তার হিজাব পরার সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়া আসলেই একটা ভ্রমণ ছিল। তিনি বলেন :
আমি জানি না সব নারীর জন্য হিজাব প্রযোজ্য কিনা । কিন্তু আমার মনে হয় আমি আসলে ব্যাপারটা ধরতে পেরেছি কেন বেশীরভাগ নারীর জন্য হিজাব কষ্টসাধ্য । এবং আমার জন্যও হিজাবে অভ্যস্হ হওয়া কঠিন ছিল । কারণ আগে আমি খোলামেলাভাবে পোষাক পড়তাম । হিজাব পরলে আর আপনার নিজেকে লুকাবার কোন জায়গা থাকে না।কারণ সবাই আপনার পোষাক পড়ার ধরণ দেখছে । আপনার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করছে ।
বিশ্বাস হচ্ছে না ? আপনি নিজে ধারণা করছেন লুকাতে পারবেন ।কিন্তু যে সব জিনিষ আপনি অপছন্দ করেন সেগুলো অজান্তে বের হয়ে আসবে। কারন নিজের চরিত্র গঠনের পরিবর্তে আপনি হয়ত গত ২৫ বছর সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে একটি মেকী জীবন গঠন করতে ব্যয় করেছেন ।
আপনি প্রথম প্রথম হিজাবী মেয়ে হলে আপনার নিজেকে তখন কুৎসিত মনে হবে । যদিও আমি যে কোন নারীকে হিজাবে দেখেছি তাদেরকে আগের থেকে দেখতে ভালো লাগে।
আপনার শরীর সম্পর্কে আপনার নিজের ভাবনা, আপনার চেহারা আপনার ব্যক্তিগত ধারণা সবার সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে- এসব বিষয়কে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন নতুন হিজাবী মেয়েরা ।
তার কাছে মেক আপ, চুল, উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পোশাক দ্বারা পৃথিবীর কাছ থেকে তার আসল সত্বা না লুকানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় ।
হিজাবী মেয়ে ভুয়া চরিত্র বা আকর্ষণ দিয়ে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার কিছুই নেই ।
সে যে কথা বলে, যে চিন্তা মনের মধ্যে থাকে সেটাই সেটাই প্রকাশ করে ।আর এটাই আসলে ভীতিজনক।
কারণ পৃথিবীটা হলো এমন যেখানে আপনি আপনার চোখের পাতা ফেলেন, চুল ওড়ান আর হাসি দিয়ে সাথে সাথে গ্রহণযোগ্যতা পান ।
সেখান থেকে এমন একটি দুনিয়ায় আসা যেখানে মানুষ আসলে হিজাবী মেয়ের কথা আর কাজকে সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে না ।
আপনি হিজাবী মেয়ে হলে যে সব জিনিষ নিজের সম্পর্কে খারাপ মনে করেন সেগুলো হলো :
ফ্যাশন, মেক আপ, অলঙ্কার আর চুলের স্টাইল । এগুলো দিয়ে নিজেকে দিয়ে লুকানো সহজ।
হিজাবী মেয়ে হয়ে গেলে আপনি নিজের মুখোমুখী হয়ে যাচ্ছেন । কারণ আপনি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য যৌনতাকে ব্যবহার করছেন না । আপনি পরিপূর্ণভাবে হিজাবী মেয়ে হয়ে গেলে আপনি নিজের ভেতরের দানবের সম্মুখীন হন- সেটাই সব থেকে কঠিন। আর বাহিরের জগতের সবাই আপনার ভুল খুজে বের করার চেষ্টা করবে । সুতরাং যদি আপনি মেয়ে হিসেবে এতো দিন খোলামেলা জীবন যাপন করে থাকেন এবং সবমাত্র হিজাবী মেয়ে হওয়ার চেষ্টা করলে উভয় সংকটের মুখোমুখি হবেন ।
অভিজ্ঞতা - ২ :
নিজ জার্সি (আমেরিকা) থেকে ইজ দেয়ার ফুড অন মাই নেকাব? ব্লগের লেখক সাম্প্রতিক এই পোস্টে হিজাব স্যালুনের ধারনা নিয়ে চিন্তা করেছেন:
আমি আপনাদের বলছি, খুব শীঘ্রই আপনারা সব জায়গায় হিজাব পার্লার দেখবেন। একজন বোন অনায়াসে সেখানে যেতে পারেন এবং একজন হিজাব স্টাইলিস্ট এসে তাদের হিজাব বেঁধে দিতে পারে যদি তাদের কোন বিয়ে বা আকিকায় যেতে হয়, বিশেষ করে যদি তাদের অভ্যাস না থাকে আকর্ষণীয়ভাবে হিজাব বাঁধার। আসলে আপনারা হয়তো ওখানে গিয়ে হিজাব ভাড়া নিতে পারবেন সুন্দরভাবে স্টাইল মেলানো হিজাব পিনসহ! আপনি পরে এটা ফেরত দিতে পারেন যেখানে এটাকে ভালোভাবে ধুয়ে পরের গ্রাহকের জন্য প্রস্তুত রাখা হবে।
বোনেরা পিছনে বসে অপেক্ষা করবেন… হিজাবের স্টাইল সমৃদ্ধ পাতা কোকড়ানো ম্যাগাজিনের পাতা উল্টিয়ে, যা থেকে তারা স্টাইল পছন্দ করতে পারে। তারা তাদের ভেতরের পোশাক আর একটি ব্যাগে আনবে তার সাথে হিজাব, মাথার কাপড় আর পিন ঠিকমতো মেলানোর জন্য। হিজাব স্টাইলিস্ট তাদের চেহারা আর গায়ের রঙ দেখে কাজ শুরু করবে, হিজাব দিয়ে বিশাল ঢেউ খেলানো খোঁপা আর আয়োজন করে এটাকে সম্ভাব্য সব ধরণে বেঁধে আর ঝুলিয়ে। হয়তো তাদের বিশেষ ধরনের হিজাব স্প্রে লাগবে এটা যাতে ঝুলে না পড়ে সেই ব্যবস্থা করতে! হতো কোন বিউটিশিয়ান থাকবেন মেক আপে সাহায্যের জন্য আর তারা আপনাকে একটা নেকাব দেবে পরে বের হওয়ার জন্য যেহেতু আপনি সেজে থাকবেন।
আমি এখন এটা দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি…হুমম…।
একটা কথা, যদি কেউ আমার ধারণা নিয়ে একটা হিজাব পার্লার খোলেন তাহলে আমি তার কাছে আসবো ৫০% লভ্যাংশ নেবার জন্য…অন্তত! হুমম.!
http://istherefoodonmyniqaab.blogspot.com/2009/02/hijab-styles.html
উপরের দুইটি উদাহরণ ছাড়া আরো কিছু উদাহরণ নিন্মে দেওয়া হলো :
http://hijabislam.blogspot.com
https://www.facebook.com/SalwarKameezHijab
https://www.facebook.com/SareeHijab
http://hijabistyle.blogspot.com/
http://hijabicouture.blogspot.com/
http://projecthijab.blogspot.com/
http://www.hijabstyle.co.uk/
আশা করা যায়, ব্লগার ও হিজাবী আপুবৃন্দ এসব উদাহরণ বা ব্লগ সাইট হতে প্রয়োজনীয় বিষয় সংগ্রহ করে বাস্তব জীবনে এসব বিষয় প্রয়োগ করবেন এবং তার-ই সাথে সাথে ইসলামী নীতিমালা অনুযায়ী সমাজ গঠণে অগ্রণী ভুমিকা রাখলেই হিজাব ব্লগিং এর উদ্দেশ্য সার্থক হবে ।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার :
http://bn.globalvoicesonline.org/2009/03/07/1901/
https://www.facebook.com/Tahoor.Closet
https://www.facebook.com/Hijabbeauty
https://www.facebook.com/SalwarKameezHijab
https://www.facebook.com/SareeHijab
বিষয়: বিবিধ
২৫৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন