হ্যালো ডাক্তার- ৬, ৭ এবং ৮ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন লোকমান বিন ইউসুপ ৩১ মে, ২০১৪, ১০:১৮:০৫ সকাল
হ্যালো ডাক্তার-৬
জীবনে অনেক ডাক্তারের কাছে রোগী হয়ে গেছেন। বলেন তো কাউকে বাসায় দাওয়াত করেছেন কিনা? ট্রিটমেন্ট ছাড়া কাউকে ভাল আছে কিনা খোজ খবর নেয়ার জন্যে ফোন করেছেন কিনা বা রোগ ভাল হয়ে যাওয়ার পরে ভালবাসা থেকে কোন ফলমুল ,আপনার বাসার হাতের তৈরী করা কোন খাবার মনুষত্যর আবেদন থেকে পাঠিয়েছেন কিনা! আপনি ডাক্তারের সাথে ট্রিট করে আসছেন কমার্শিয়াল। রাতের গহীনে খোলা আকাশের নীচে ছাদে দাড়িয়ে তরুন ডাক্তার ভাবে কত মানুষকেই তো ভাল করলাম কিন্তু আজ আমি অসুস্থ তবুও তো কেহ খবর নিলনা! এমন ইমোশানাল হয়ে যাওয়া কি মানুষ হিসেবে একজন ডাক্তারের অনুচিত! আপনি পেশেন্ট তাই আপনি চেয়েই গেছেন ডাক্তার থেকে। কখনো মানবিক আবেদন থেকে আপনার ডাক্তারের খোজ নেননি। আপনার বাসা বাড়ির কোন স্পেশাল অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেননি। কই ...আপনার শিক্ষক বন্ধু বান্ধবী ,আপনার ছেলে মেয়ে ভাই বোনের শিক্ষক বন্ধু বান্ধবী, আপনার আইনজীবী, আপনার এলাকার চেয়ারম্যান সবারই সাথে আপনার পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। শুধু আপনার ডাক্তারের সাথেই আপনার পরিবারের সম্পর্ক গড়ে উঠেনা। ডাক্তারের সাথে আপনার এই আচরন অদ্ভূত নয় কি! যে ডাক্তার স্রষ্টার পরে আপনার শরীরের যত্নকারী সে ডাক্তারের সাথে আমার আপনার সমাজের এই অবহেলে আচরন কেন?
আমরা এমন কোন মায়ার আচরন করতে পারিনি যেটা ডাক্তার সমাজের মানবিকতা উসকে দিতে পারে। গ্রামে শহরে অনুষ্ঠানে যেখানেই আপনি ডাক্তারকে পান শুধু সমস্যাই বলে যান শুধু বলতে জানেননা ভাইয়া কেমন আছেন ? ভাবী কেমন আছে? ছেলে মেয়েদের কি খবর? আপনার আব্বু আম্মুর কি খবর? আসেন একদিন বাসায় সামান্য ডালভাত খেয়ে যাবেন।
এই সমাজ এক অ'দ্ভূত সমাজ ৷
হ্যালো ডাক্তার- ৭
ডাক্তারী লাইনের ক্লিনিক আর শিক্ষালাইনের কোচিং সিস্টেম একই রকম। কোচিংয়ের মাস্টার যেমন ক্লাশ প্রতি সম্মানী পায় ঠিক তেমনি ডাক্তারও ক্লিনিকের চাকরীর প্রতিদিনের জন্যে সম্মানী পায় বা মাস ভিত্তিক সম্মানী পায়। কোচিংয়ের অনেক আয় নিয়ে যেমন কোচিং মাস্টার দায়ী নন ঠিক তেমনি ক্লিনিকগুলো গলাকাটা টাকা নেয়াতে ডাক্তার দায়ী নন।
ক্লিনিক গুলোতে গলাকাটা দাম কমানোর জন্যে সরকারের অব্যস্থাপনা দায়ী। ক্লিনিকগুলোর বেশীরভাগ পরিচালনা বডিতে ননডাক্তার শিল্পপতিরা থাকে। এখানে বিভিন্ন পোস্টে ডাক্তারদের ব্যবহার করেন মাত্র।।
একজন মানুষের স্বাভাবিক কাজ করার একটা লিমিট থাকে ঠিক তেমনি ডাক্তারদেরও।এদেশ জনবহুল।সরকারী হাসপাতালে রোগীর লম্বা লাইন থাকে। বসে থাকতে থাকতে রোগীরা ক্লান্ত বিরক্ত হয়। স্কুল কলেজের ক্লাশে যেভাবে কত ছাত্রছাত্রী সর্বোচ্চ থাকতে পারবে বলে দিকনির্দেশনা আছে সেভাবে ডাক্তাররা দিনে কত রোগী দেখা আদর্শ তার নির্দেশনা আছে কি? সরকারী হাসপাতালে ডাক্তাররা রোগী দেখতে দেখতে ট্রায়ার্ড হয়ে যান। কিন্তু এর মধ্যে ফার্মাসিউটিকেলের লোকজন ডাক্তার থেকে সময় নিয়ে নিলে জনগন বিরক্ত হয়।ডাক্তাররা করবেন কি! ফার্মার লোকজনকে সহযোগিতা না করলে বেশীর ভাগ জায়গায় ট্রান্সফার সমস্যা থাকে। কারন ফার্মা চালায় ধনিক ক্ষমতাধর শ্রেনী। অনেক পার্সোনালিটির এই মেধাবী অংশ বাংলাদেশের মত ৩য় বিশ্বে একটু কোমড় সোজা রাখার তাকিদে সিস্টেমের সাথে আপোষ করতে শিখে যায়। যে দেশে প্রতিবাদ বা ভিন্নমত মানে গুম খুন সেখানে ডাক্তাররা অস্থিতিশীল সমাজে নিরাপদ কর্মসংস্থানের জন্যে উদ্বিগ্ন থাকে। তাই সে আপোষ করে করতে বাধ্য হয়।
হ্যালো ডাক্তার -৮
সরকারী হাসপাতালে থাকা খাওয়া সমস্যা হয়েছে? দিয়ে দিলেন ডাক্তারের বদনাম। গত লীগের আমলের প্রথম দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে খবর নিলাম ভিপি হলে লীগের বিনিফিটটা কি? একজন বলল ভাই ডেইলি চট্টগ্রাম মেডিকেলে ৭০০০ ডিম লাগে।ভিপি সাহেব যদি ডিম সাপ্লাই দেয় আর প্রতি ডিম থেকে ৫০ পয়সা লাভ করলে ডেইলি ইনকাম ৩৫০০টাকা। মাসে ইনকাম ১ লাখ ৫০০০ টাকা। তাইলে বুঝেন ঠেলা। এভাবে মেডিকেলের বিশাল ব্যবস্থাপনায় আয় ব্যয়ে জুড়ে আছে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। এখানে ডাক্তাররা নিরেট ভদ্রলোক ব্যবহৃত প্রানী। মেডিকেলের প্রিন্সিপ্যাল সচিব পদ মর্যাদার। তার কিইবা ক্ষমতা আছে একজন জেলা রাজনৈতিক লিডারের বিপরীতে? যেখানে বেআইনটাই আইন সেখানে ডাক্তারদের ঢালাও দোষারোপ দেশের এই গর্বিত অংশকে আরো সমাজ বিমূখী করে দিতে পারে।
রোগ ভাল হয়নি কেন? কারন খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে আপনি ঠিকমত ওষুধ খাননি অথবা ওষুধ যতটা খেতে বলা হইছিল অতটা খাননি। কিন্তু দোষ ও গালাগালি খেলেন ডাক্তার। বাংলাদেশে ডাক্তাররা গালি খান তা নয় শুধূ। এদেশের সার্ভিস দেয় এমন সব কাষ্টমার কেয়ারের এমপ্লয়ীদের প্রশ্ন করুন পাবলিক কেমন? তারপর তাদের মুখেই শুনুন আসলে আমরা জাতি হিসেবে কেমন?!!!
এম্বুলেন্স সমস্যা... দোষ ডাক্তারের।মেডিকেলের লিফট প্রোবলেম... দোষ ডাক্তারের।রক্ত পাওয়া যাচ্ছেনা ...দোষ ডাক্তারের। মেডিকেলের সামনের ফার্মেসীতে মেডিসিনের দাম বেশী ... দোষ ডাক্তারের। নার্স এর ব্যবহার ভালনা..দোষ কিন্তু ডাক্তারের। আয়া পিয়ন টেকনিশিয়ানের ব্যবহার ভালনা ...দোষ ডাক্তারের।
এনাফ বাংলাদেশ এনাফ। দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বের হও।
রাষ্ট তোমার জন্যে কিছু করতে পারবেনা। বরং তুমিই রাষ্টের জন্যে কিছু কর।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৪ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কয়েক মাস আগে আমি একতা পোস্ট দিয়েছিলাম খুব কাছাছিঃ "অনেক লোকজনকে যে কোন একটা সোশ্যাল ইস্যু নিয়ে কথা বলতে গেলে রগরগে এবং অবজেকশনেবল শব্দ ব্যবহার করেন।
কোরআনে ইউসুফ (আঃ) এর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। যে ব্যক্তি ইউসুফ (আঃ) কে কিনে নেয় তার স্ত্রী ইউসুফ (আঃ) কে নির্জনে তার রুমে ডাকে। যেহেতু তিনি ছিলেন সে ঘরে একজন আশ্রিত তাই তাকে সে লোক এবং তার স্ত্রীর নির্দেশ মত চলতে হত। তিনি এবারেও সে মহিলার কথামত সেখানে যান। সে মহিলা তাঁকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে সিডিউস করতে চেষ্টা করে। তার প্ল্যান ছিল প্রায় নিখুত। ফাঁকা ঘরে যখন কেউ ছিলনা তখন সে ইউসুফ (আঃ) কে তার ঘরের ভেতরে নিয়ে যায় এবং এরপর দরজায় মাল্টিপল লক ('ওয়া গাল্লাকা' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ একাধিক লক বা তালা) লাগিয়ে দেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল যাতে তিনি সহজে পালিয়ে যেতে না পারেন। একটার পর একটা লক অনেকগুলো খোলা সহজ নয়।
ইউসুফ (আঃ) তার খারাপ অভিপ্রায় বুঝতে পেরে দরজার দিকে দৌড়ে আসেন। সে মহিলাও চিৎকার করে বলে " এদিকে এসো ("হাইতালাক" শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ চিৎকার করে কাউকে আসতে বলা)। এরপর তিনি যাতে পালাতে না পারেন সে জন্য সে মহিলা পেছনে থেকে তার শার্ট টেনে ধরে। বাকি কাহিনী সবাই জানে।
এ ঘটনার বর্ণনা যেভাবে কোরআনে এসেছে আমি তার একটা ট্র্যান্সলেশন কোট করছি (আরবি না জানলে ট্র্যান্সলেশনে অনেক গুরুত্তপূর্ণ সেন্স মিসিং থাকবে আপনি যে ভাষায়ই পড়েন না কেন)--
"আর সে যে মহিলার ঘরে ছিল, ঐ মহিলা তাকে ফুসলাতে লাগল এবং দরজাসমূহ বন্ধ করে দিল। সে মহিলা বললঃ শুন ! তোমাকে বলছি, এদিকে আস, সে বললঃ আল্লাহ রক্ষা করুন; তোমার স্বামী আমার মালিক। তিনি আমাকে সযত্নে থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয় সীমা লংঘনকারীগণ সফল হয় না।"
ঘটনার বর্ণনা পড়লে সবাই বুঝবে ঘটনা কি ঘটতে যাচ্ছিল। কিন্তু পড়তে বা শুনতে অশালীন মনে হয় কি ? এ ধরনের ঘটনা কীভাবে বর্ণনা করতে হবে (not in case of evidence in the court where it should be explicitly mentioned. Here the context is the discussion in public discourse) এর একটা চমৎকার লেসন হতে পারে কোরআনের এ অংশ। এ সূরার শেষ অংশে আল্লাহ্ বলেছেন, " তাদের (নবীদের) কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয়..."। কোরআনে বর্ণিত গল্পগুলো কেবল কল্পকাহিনী নয়। এগুলো আমাদেরকে উদ্দেশ্য করা বলা হয়েছে যাতে আমরা শিখতে পারি। আফসোস, কোরআন থেকে আমরা খুব অল্পই শিখি !
আল্লাহ্ সূরা " আর-রাহমান " এ মানুষ সম্পর্কে বলেছেন, " عَلَّمَهُ الْبَيَانَ " অর্থাৎ " তাকে বর্ণনা শিখিয়েছেন ।" অশ্লীল শব্দ ব্যবহার না করেও কীভাবে ইফেক্টিভলি কমিউনিকেট করা যায় সেটা শিখে নেয়া খুব প্রয়োজন।
কারও কোন স্ট্যাটাসে অশালীন শব্দ থাকলে আমি সাধারণত সেটা লাইক দেই না যদিও অনেক সময় ইন প্রিন্সিপ্যাল তার কথার সাথে আমি একমত পোষণ করি। আমার কাছে মনে হয় এটাও অশ্লীলতার এক ধরনের প্রমোশন এবং সেলিব্রেটিদের মাধ্যমে এর আরও অনেক গুণ প্রমোশন হয়। নিজে এ ধরনের লেখা পড়তে খারাপ ফিল করি। পাশাপাশি এটা অন্যের নিউজ ফিডে যায়। আমার সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখেন এমন কেউ হয়ত আমাকে দেখে ব্যাপারটা ফর গ্র্যাণ্টেড নিয়ে নিতে পারে। এভাবে পড়তে পড়তেই মানুষ আস্তে আস্তে ডিসেন্সিটাইজড হয়ে যায়। তাই এটাকে হাল্কাভাবে দেখার সুযোগ নেই ।"
আপনার পরামর্শ খুব ভাল। সম্ভবত আপনি আমার ফেবুতেও এই কমেন্টটি করেছেন। অনলাইনে রুহামায়ু বাইনাহুম এর বড়ই অভাব। এখানে অনেকেই আশা করছে তার দৃষ্টিভঙ্গীকে লিখতে হবে। এটা পুরন করতে গেলে কলম কীবোর্ড ধরার আর প্রয়োজনীয়তাই থাকেনা। চলমান দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে একমত নই বলেই তো লিখছি। এখানে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু দুশমনী কেন?
আমি খুব কমই মেয়েদের আইটেম বানাই। আগের পোস্ট গুলো দেখুন ব্লগে।
ডাক্তাররাও মানুষ। কষ্ট পেলে তাঁরাও ব্যথা পান। হাসি কান্না, আনন্দ বেদনা তাঁদের জীবনেও আছে। ডাক্তারদের গালি দিয়ে যারা মানসিক প্রশান্তি পান তাঁরা বিকারগ্রস্ত। অসুস্থ হলে আবার ডাক্তারের কাছেই যান তাঁরা। তখন লজ্জা পকেটে ঢুকিয়ে রাখেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন