দোয়া কবুলের মাস মাহে রমাযানঃ

লিখেছেন লিখেছেন আবু জারীর ২৩ জুলাই, ২০১৩, ০১:১৬:৪৪ দুপুর



بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ

বাকারা ১৮৬) আর হে নবী! আমার বান্দা যদি তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাহলে তাদেরকে বলে দাও , আমি তাদের কাছেই আছি ৷ যে আমাকে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং জবাব দেই, কাজেই তাদের আমার আহবানে সাড়া দেয়া এবং আমার ওপর ঈমান আনা উচিত একথা তুমি তাদের শুনিয়ে দাও, হয়তো সত্য-সরল পথের সন্ধান পাবে ৷

সংজ্ঞাঃ দোয়া অর্থ ডাকা বা আবেদন করা। আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাওয়াকে দোয়া বলে।

দোয়ার গুরুত্ব ও মর্যাদাঃ আল্লাহ বলেনঃ اُدعُونِى اَستَجِب لَكُم অর্থঃ তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। তিনি আরো বলেনঃ اَمَّن يُجِيبُ المُضطَرَّ اِذَا دَعَاهُ وَيَكشِفُ السُّوءَ

অর্থঃ অথবা কে বিপদগ্রস্থ লোকের ডাকে সাড়া দেয় এবং দুঃখ কষ্ট দূর করে? নিঃসন্দেহে তিনি হচ্ছেন আল্লাহ। আল্লাহ কখনও ওয়াদা খেলাফ করেন না। তিনি দোয়া কবুল করার যে ওয়াদা করেছেন, সেই ওয়াদা পূরণ করেন।

নোমান বিন বশীর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ اَادُّعاَءُ هُوَ العِبَادَةُ অর্থঃ দোয়াই হচ্ছে এবাদত (আহমদ, আবু দাউদ)

অন্য আর এক হাদিসে এসেছেঃ لَيسَ شَيئٌ اَكرَمُ عَلَى اللهِ مِنَ الدُّعاءِ

আল্লাহর কাছে দোয়ার চাইতে বেশী সম্মানিত জিনিস আর কিছু নেই। (তিরমিযী, হাকেম, ইবনে মাজাহ)।

আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ বলেন, আমি ঠিক সেরকম, যেরকম বান্দা আমার ব্যাপারে ধারণা করে, যখন সে আমার কাছে দোয়া করে তখন আমি তার সাথে থাকি (বোখারী ও মুসলিম)

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ اَدُّعَاءُ مُخُّ العِبَادَةِ অর্থাৎ দোয়া হচ্ছে ইবাদতের সার।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন দোয়া ছাড়া আর কোন কিছু তাকদীর পরিবর্তন করতে পারেনা। নেক কাজ ছাড়া আর কোন কিছু হায়াত বৃদ্ধি করতে পারেনা এবং বান্দা নিজ গুনাহর কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে হিব্বান ও হাকেম)

সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লঅহ (সঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ চিরঞ্জীব ও সম্মানিত। বান্দা তাঁর কাছে দুই হাত তুললে তিনি খালি হাতে তাকে ফেরত দিতে লজ্জাবোধ করেন। (তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, হাকেম)

আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ কোন মুসলমান যদি এমন দোয়া করে যাতে গুনাহ বিংবা আত্মীয়তার অধিকার ছিন্ন করার আহবান নাই, তাহলে আল্লাহ তাকে তিনটার যে কোন একটা বিনিময় দান করবেন, হয় সাথে সাথে তার দোয়া কবুল করবেন, না হয় আখেরাতের জন্য তা সঞ্চিত রাখবেন অথবা এ পরিমাণ ক্ষতিকর জিনিস থেকে তাকে হেফাজত করবেন। তখন সাহাবয়ে কেরাম বললেন, তাহলে আমরা বেশী বেশী দোয় করবো। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, আল্লাহ সর্বাধিক দাতা। (তিরমিযী, হাকেম)

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যে আল্লাহর কাছে কিছু চায় না আল্লাহ তার উপর রাগ করেন। (তিরমিযী) আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চায় যে দুঃখের সময় আল্লাহ তার দোয়া শুনবেন সে যেন সুখের সময় দোয়া করে। (তিরমিযী)

আবু দারদা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ কোন মুসলমান ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হয়। তার মাথার কাছে নিয়োজিত ফেরেশতা আমীন বলেন এবং বলেন, তোমার জন্যও অনুরূপ হউক। (মুসলিম)

আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন তিন ধরণের দোয়া কবুল হয়, এতে কোন সন্দেহ নেই। মা-বাবার দোয়া, মজলুমের দোয়া এবং মুসাফিরের দোয়া। (আবূ দাউদ, তিরমিযী)।

আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ সবচাইতে দ্রুত যে দোয়া কবুল হয় তা হচ্ছে, কোন ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করা। (আবূ দাউদ, তিরমিযী)

উপসংহারঃ রমযান ফজিলতের মাস। এই মাসে যাবতীয় ভোগ-লালসা থেকে দূরে থেকে আল্লাহর হুকুম মানার কারণে রোযাদার ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় পাত্রে পরিনত হন। তিনি দোয়া করলে আল্লাহ সেই দোয়া কবুল করেন। তাই রমযানে আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দেয়া করা দরকার। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ لِلصَّائِم دَعوَةٌ لاَتُرَدُّ অর্থাৎঃ রোযাদারের দোয়া ফেরত দেয়া হয়না। অর্থাৎ কবুল হয়।

আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ

اِنَّ لِلصَّائِم عِندَ فِطرِهِ لَدَعوَةٌ مَا تُرَدٌّঅর্থঃ ইফতারের সময় রোযাদারের দোয়া ফেরত দেয়া হয়না। তাই ইফতারের সময় সবারই উচিৎ বেশী বেশী দোয়া করা।

মুয়াজ বিন যাহরাহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইফতারের সময় বলতেনঃ

اَللّهُمّ لَكَ صُمتُ وَعَلَى رِزقِكَ أفطرت

(আল্লাহুম্মা লাকা’ছুমতু ওয়া'লা রিজকিকা আফতার’তু)

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি কোবলমাত্র তোমার জন্যই রোযা রেখেছি এবং কেবলমাত্র তোমার প্রদত্ত রিজক দ্বারাই ইফতার করেছি।

ইবনে ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সঃ) ইফতারের পরে বলতেনঃ

ذهب الظمأ وابتلّتِ العُرُقُ وثَبَتَ الاَجرُ إنشاء اللّه

(যাহাবাজ্জমায়ূ অবতাল্লাতিল ঊ'রুকু অ'ছবাতাল আযরু ইনশা'আল্লাহ)

অর্থঃ পিপাষা দূর হয়েছে, খাদ্যনালী সিক্ত হয়েছে এবং পারিশ্রমিক অর্জিত হয়েছে, ইনশা'আল্লাহ। (আবু দাউদ)

বিষয়: বিবিধ

২৪২৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File