রাজদন্ড তো নিজের হাতেই
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১৫ জুন, ২০১৬, ০৯:১৩:৫১ রাত
যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের জায়গা রাজপথ নয়। কারো কাছে দাবি-দাওয়া করাও তাদের পক্ষে মোটেই শোভনীয় নয়। কথামালার ফুলঝুড়িটাও তাদের মানায় না। তাদের কাজ হলো শুধু ‘একশন’। মূলত সরকারের কাজ হলো রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ক্ষমতার চর্চা করা। আর গণমানুষের সকল সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব হলো সরকারের। এর জন্য বাইরে কোন নির্দেশনার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। রাজদন্ড যাদের হাতে থাকেই তারাই রাষ্ট্র ও জনগণের অভিভাবক। তাই ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের নায্য অধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালন যথাযথভাবে করতে পারছে কী-না তা-ই এখন বিচার্য বিষয়।
আমাদের দেশ সাম্প্রতিক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বের রোল মডেল হিসাবেই স্বীকৃত। যেখানে প্রতিবেশী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটে সেখানে আমাদের দেশ সেক্ষেত্রে স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে অনন্য সাধারণ দৃষ্টান্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সেই দৃষ্টান্ত কিছুটা হলেও ম্লান করার অপচেষ্টা হচ্ছে। রহস্যজনকভাবে খুন বা হামলার শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন ধর্মশালার পুরোহিতরা। এর সাথে যোগ হয়েছে মসজিদের ঈমাম-মুয়াজ্জিন নিগ্রহের ঘটনাও। ধারণা করা হচ্ছে মহল বিশেষ দেশের সাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য বিনষ্ট করার জন্যই পরিকল্পিতভাবেই এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আর ফসলটা উঠছে বিভিষণদের ঘরেই। যা আমাদের জন্য রীতিমত আত্মঘাতি।
সম্প্রতি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত নিয়ে দেশে-বিদেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য নাকি প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংখ্যালঘুরা হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। যারা সবসময়ই দেশীয় সমস্যাকে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে আখ্যা দেন, তারা আবার নিজেদের রক্ষার জন্য ভিনদেশীয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। যা স্ববিরোধীতার শামিল। যা কখনো কাম্য হতে পারেনা।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদের এক অভিনব ঘটনার অবতারণা হয়েছে। জানা গেছে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতন বন্ধে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সব সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সরকারি দলের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন। যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি মহান জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘এখন কিছু ঘটলেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হয়। মন্দির-গির্জায় হামলা করা হয়। যখনই নির্বাচন আসে, তখনই প্রথমে হামলা হয় সংখ্যালঘুদের ওপর। এ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কোনো দিনই নষ্ট করতে দিতে পারি না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অর্থ ভয়ানক, এটা আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে।’
ধীরেন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে বারবার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানদের ওপর চরম আক্রমণ করা হয়েছিল। তাদের কাফের ঘোষণা করে ধরে ধরে হত্যা করা হয়েছিল।’
মূলত যারা নিজেদেরকে সংখ্যালঘু বান্ধব সরকার মনে করেন তারাই এখন ক্ষমতায় রয়েছেন এবং জাতীয় সংসদেও ভিন্নমতের কোন অস্থিত্ব নেই। মূলত রাজদন্ড তো তাদের হাতেই। তাই দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বা সাম্প্রদায়িক সংঘাত হওয়ার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। যদি কখনো ঘটেও যায় তার প্রতিবিধান করার দায়িত্বও তো সরকারের। তাই দেশের মানুষ জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সাংসদদের কোন বাগাড়ম্বর দেখতে চায় না বরং যাদের কারণে দেশে সংখ্যালঘু বা নির্যাতন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে বাধা কোথায় ? রাজদন্ড তো অন্যের হাতে নয় বরং নিজের হাতেই।
বিষয়: বিবিধ
৯৯৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন