উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০৯ জুন, ২০১৬, ০৭:১৭:৩৭ সন্ধ্যা
বিগত ৪ দলীয় জোটের সময়কার কথা বলছি। কোন এক টকশোতে সরকারের পক্ষে হাজির হয়েছিলেন তদানীন্তন আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ, আর বিরোধী দলের পক্ষে বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ তার আলোচনায় দাবি করেন যে, দেশ সঠিক পথেই এগুচ্ছে এবং সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। সরকারের কোথাও কোন ব্যর্থতা নেই। তাদের সময়ে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তা রীতিমত অভূতপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকলেও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেগেছে। দেশের প্রায় সকল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। বাকিগুলোও অতিদ্রুত সমাধান করা হবে। ব্যারিষ্টার মওদুদের ভাষায় সরকার রাষ্ট্রপরিচালনায় প্রায় শতভাগ সফল।
পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ নেতা বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বক্তব্য মি. মওদুদের সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি দাবি করেন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় সকল ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সরকার দেশকে কোন ভাবেই এগিয়ে নিতে পারেনি। মূলত কোন ক্ষেত্রেই সরকারের তেমন কোন সাফল্য। সর্বত্রই লুটপাট চলছে। সরকারের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণেই রাষ্ট্রের উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি । ফলে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তাদের এই পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের স্ব স্ব পক্ষের ব্যাখ্যা দেয়ার অনুরোধ করলে মি. মওদুদ আহমদ বাবু সেনগুপ্তের বক্তব্যকে বিরোধীতার খাতিরে বিরোধী বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু বাবু সেনগুপ্তের বক্তব্য ছিল পুরোপুরি ব্যতিক্রম ধর্মী। তিনি তার জবাবে বলেন, ‘ যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা সব কিছুই রঙ্গীন চশমা দিয়ে দেখেন। সরকার এখন সবকিছুই রঙ্গীন চমশা দিয়ে দেখছে। তাই তারা কোন ভাবেই বাস্তবতা উপলদ্ধি করতে পারছেন না। তাই তাদের চোখে এখন সবকিছুই বর্ণিল বলেই মনে হয়’।
তার এই বক্তব্যে উপস্থিত সকলেই মুচকি হেসেছিলেন। সঞ্চালকও তা থেকে বাদ যান নি। এক সময় তিনি বাবু সেনগুপ্তকে প্রশ্ন করলেন, ‘ আপনারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন কি সবকিছু রঙ্গীন চশমা দিয়ে দেখতেন’। বাবু সেনগুপ্তের সোজাসাপটা জবাব, ‘হ্যাঁ আমরাও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না’।
বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেদিন রূঢ় বাস্তবতার আত্মস্বীকৃতি দিয়েছিলেন। যা আমাদের সমাজে কালেভদ্রেও ঘটে না। অনেক পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগ এখন আবারও ক্ষমতায়। আর সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে বাবু সেনগুপ্তের কথায় বারবার মনে পড়ছে। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ তার বক্তব্যের মাধ্যমে বেশ লোক হাসিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। তিনি বলেছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য টকশো আলোচকরা দায়ী। তিনি বলেন, টকশোতে আলোচকরা দ্রব্যমূ্ল্েযর দাম বাড়িয়ে দেন। তারা এমন আলোচনা করেন যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তিনি সচিবালয়ে রমজান উপলক্ষ্যে দ্রব্যমূল্যের বাজার মনিটরিং উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাজারে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রয়েছে দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রমজান উপলক্ষ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়েনি। তবে কেউ যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তাহলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, টক শোতে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানো হয়। আলোচকরা পণ্যের দাম এমনভাবে উপস্থাপন করে ফলে দাম না বাড়লেও এই আলোচনা বাজারে প্রভাব ফেলে। রমজান উপলক্ষ্যে চাহিদার তুলনায় পণ্যের মজুদ বেশি রয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চাহিদার তুলনায় সব পণ্যের মজুদ বেশি আছে। সুতরাং সংকটের কোনো সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিশ্ব বাজারে ছোলার দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশেও কিছুটা বেড়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগের সুযোগ নেই। ছোলা-ডাল-চিনি-আদা-মরিচ-পেঁয়াজ এসব পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু তিনি বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমার কোন ব্যাখ্যা দেন নি।
আমার মনে হয় সরকারের মন্ত্রীরা এখন সবকিছুই ক্ষমতার রঙ্গীন চশমা দিয়েই দেখতে শুরু করেছেন। পবিত্র রমজান মাস আসার আগেই দ্রব্যমূল্য বহুলাংশে বেড়েছে। গতকাল চিনি কিনলাম ৭০ টাকা কেজিতে। এরপরও বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। চিনির দাম আর কত বাড়ালে তা অস্বাভাবিক হতে মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আমজনতার সে প্রশ্নই বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। আমার মনে হয় টকশোওলারা দেশের বাস্তবচিত্র তুলে ধরেন বলেই বাণিজ্যমন্ত্রী তাদের সাথে এমন উষ্মা প্রকাশ করেছেন। সরকার রাষ্ট্রপরিচালনায় কতখানি সফল সেদিকে না গিয়ে একথা বলা যায় যে, সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে। আর টকশোওয়ালাদের নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সর্বসাম্প্রতিক বক্তব্য মূলত ‘ উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চাপানোর শামিল। জনগণ মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আরও দায়িত্বশীল বক্তব্য আশা করে।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন