অনুরোধ আমার
লিখেছেন লিখেছেন Raya ১৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৬:০৯:৪৩ সন্ধ্যা
কেন জানি চোখ ভারি হয়ে আসছে বার বার)
প্রচন্ড রোদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর ঘর থেকে বের হয়ে আসলেন।
.
মসজিদ-ই-নববীর দিকে হাঁটতে শুরু করলেন আবু বকর (রাঃ)। পথেই দেখা হয়ে গেল উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে। আবু বকরকে জিজ্ঞেস করলেন উমর,
.
– এই গরমের মধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলেন যে!
– কি করবো? দুঃসহ ক্ষুধা তাড়িয়ে নিয়ে এসেছে আমাকে বাড়ি থেকে।
– হে আবু বকর, আমি নিজেও যে একই কারণে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছি।
.
দুজনে কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলেন। হঠাত দেখলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এগিয়ে আসছেন তাঁদের দিকে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই কথা তুললেন,
.
– কি ব্যাপার? এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছ তোমরা?
– ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ), ক্ষুধার কষ্টই আমাদের বাড়ি থেকে বের করে এনেছে।
– সেই পবিত্র স্বত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমিও যে একই কারণে বের হয়ে এসেছি ঘর থেকে। চলো সামনে এগিয়ে যাই।
.
তিনজন মিলে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলেন আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রাঃ) এর বাড়িতে। আবু আইয়ুব (রাঃ) এর স্বভাব ছিল প্রতিদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য খাবার তৈরী করে অপেক্ষা করা। তিনি (সাঃ) না এলে বাড়ির সবার সাথে সেই খাবার ভাগাভাগি করে খেতেন আবু আইয়ুব।
.
সেদিনও অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খাবারের সময় না আসায় তিনি সবাইকে নিয়ে খাওয়া শেষ করে ফেলেছিলেন।
.
খাবার শেষ হয়ে গেছে। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং তাঁর দুই সঙ্গীকে নিয়ে এলেন। এই অবস্থায় আবু আইয়ুব আল-আনসারী তাড়াতাড়ি একটি বকরী জবাই করে ভুনা করার ব্যবস্থা করলেন। তাঁর স্ত্রী রুটি বানিয়ে ফেললেন ইতিমধ্যে। মেহমানদের সামনে খাবার পরিবেশন করা হলো এক সময়ে।
.
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খেতে নিয়ে থেমে গেলেন হঠাত। তারপর একটি রুটির উপরে কিছু ভুনা মাংস রেখে সেটি আবু আইয়ুব আনসারী'র হাতে দিয়ে বললেন,
.
"একটু আমার মেয়ে ফাতিমার কাছে দিয়ে এসো এই খাবার। অনেক দিন হয় আমার মেয়ে এমন খাবার খেয়েছে।"
.
আবু আইয়ুব আনসারী ফাতিমা (রাঃ) খাবার দিয়ে ফিরে এলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর দুই প্রিয় সাথীকে নিয়ে খাবার খেলেন। খাবার শেষে খাবারের দিকে তাকিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, "রুটি, মাংস, খুরমা, পাকা ও আধ-পাকা খেজুর!"
.
এইটুকু বলতেই গলা ধরে এলো তাঁর (সাঃ)। দু'চোখ ভর্তি পানি নিয়ে আবার কথা বললেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ),
"মহিমান্বিত আল্লাহ পাকের শপথ, এইসবই হচ্ছে সেই নিয়ামত - যার বিষয়ে তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। তোমরা যখন কোন নিয়ামত গ্রহণ করার জন্য হাত বাড়াবে, তখন 'বিসমিল্লাহ' ( بسم الله ) বলবে। তারপর তৃপ্তি নিয়ে খাবার শেষ করার পরে বলবে - 'আল'হামদুলিল্লাহিল্লাযি হুয়া আশবা'আনা ওয়া আন'আমা 'আলাইনা ফা আফদ্বালা' ( الحمد لله الذي هو أشبعنا وأنعم علينا وأفضل ) অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাকের যিনি আমাদেরকে পরিতৃপ্ত করেছেন এবং আমাদেরকে নিয়ামত দান করেছেন যা অনেক উত্তম।"
.
[সুত্রঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীস থেকে।
হায়াতুস সাহাবাঃ খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫১৫ – ৫১৮
আত তারগীব ওয়াত তারহীব, জাকিউদ্দিন আব্দুল আযীম আল-মুনযিরি (রহিমাহুল্লাহ)
সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবাঃ খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৪ – ১৩০]
বিষয়: বিবিধ
১০৮৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকিল্লাহ..
মন্তব্য করতে লগইন করুন