কবর-৭৩ (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

লিখেছেন লিখেছেন নকীব আরসালান২ ০৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪৫:৫৪ সকাল

২৪ জুলাই, ২০০৬ সাল। তাদের বিয়ে হয়ে গেল এবং ডঃ আব্দুল্লাহ নতুন বউ নিয়ে ঢাকায় ফিরে গেল। নতুন বউ নতুন স্বামীর ঘরে পৌছেই তার চোখ আনন্দে নেচে উঠল। চোখ ধাঁধানো ফার্নিচার আর বিলাস ব্যসনের যাবতীয় উপকরণ এখানে মজুদ আছে। ভোগ বিলাসে জীবনকে কানায় কানায় ভরিয়ে তোলার সামগ্রিতে বাসাটা ভরপুর। কৃতজ্ঞতায় নওশার প্রতি নববধূর মাথাটা নুইয়ে আসে। সে স্বামীকে সেলাম করে। ডঃ আব্দুল্লাহ নববধূকে মিষ্টি মুখ করানোর জন্য ময়মনসিংহ- মুক্তাগাছার মণ্ডা, বগুরার দই, দিল্লি কা লাড্ডু যা চট্টগ্রামে পাওয়া যায়, নাটোরের কাঁচা গোল্লা, টাঙ্গাইলের চমচম ইত্যাদি বিভিন্ন জাত ও জায়গার মিষ্টি আগে থেকেই সংগ্রহ করে ফ্রীজে রেখেছিল। এখন সে সব প্যাকেট এনে এনে টেবিলে রাখল। একটা একটা করে নববধূর মুখে তুলে দিতে লাগল কিন্তু নববধূ বেশি খেল না, কারণ এতে স্বামী রাক্ষসী ভাবতে পারে। তারপর তারা গেল ফুলশয্যায়।

ডঃ আব্দুল্লাহ জানে ইসলাম ধর্ম মতে বাসর রাতে নববধূর দেন মোহর পরিশোধ করতে হয়, না পারলে অন্তত মাফ চেয়ে সময় নিতে হয়। স্ত্রী বাসর শয্যায় বসে আছে। সে টাকার একটা তারা নিয়ে স্ত্রীর হাতে দিয়ে বলল, আপাতত এইটা রাখ আর আমাকে মাফ করে কিছু দিন সময় দাও, আমি সবটা পরিশোধ করে দিব। নববধূ টাকার বান্ডিলটা নিয়ে সামনে উপবিষ্ট স্বামীর পায়ের কাছে রেখে কেঁদে ফেলল। তারপর স্বামীর পা ধরে বলল, ‘এটা দিয়ে আমি কি করব, আমি শুধু তোমাকে চাই’। সে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগল, ‘আমি টাকা কড়ি সোনা দানা কিছুই চাইনা, শুধু তোমাকে চাই, আমি খুব দুঃখি, সারা জীবন তোমার এ দু’টি পায়ের নিচে আশ্রয় চাই। এই দু’টি পায়ে মাথা রেখে আমি মরতে চাই’ বলে স্বামীর পায়ের উপর মাথা রেখে সে আকুল হয়ে কাঁদতে লাগল। ডঃ আব্দুল্লাহ আবেগাপ্লুত হয়, নববধূকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত চুমুতে থাকে। নববধূ ভাবাবেগে নিজের শরীরের ভার স্বামীর উপর ছেড়ে দেয়। তারপর তারা বিছানায় গড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় আদিম খেলা।

কুমার কুমারি যখন বাসরে মুখোমুখি হয় তখন তাদের মধ্যে নানামুখি অন্তরায় থাকে। পরস্পরকে ভয়, নতুনত্বের সঙ্কোচ, পরস্পর হাত ধরাধরি করে এই পৃথিবীর কণ্টকময় পিচ্ছিল পথে চলার সংকল্প ও প্রতিজ্ঞা, বিপরীত লিঙ্গের দু’টি দেহ একিভুত হওয়ার ভয় ও উৎকণ্ঠা, দু’টি প্রাণী একই বিছানায় প্রথম একত্র হওয়ার দ্বিধা দ্বন্ধ তাদেরকে ভোগের চরমে পৌছাতে অন্তরায় সৃষ্টি করে। কিন্তু আব্দুল্লাহ ফেরদৌসির ক্ষেত্রে ছিল ব্যতিক্রম। তারা উভয়েই ছিল সংসার সম্পর্কে বিজ্ঞ, দক্ষ, বিপরীত লিঙ্গের গুপ্তধন সম্বন্ধে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। মাংসাশির নরমাংসের স্বাদ আস্বাদনকারী ঝানু শিকারি। তাদের না ছিল নতুন্ত্বের সঙ্কোচ আর না ছিল ভবিষ্যতের শংকা, আর না ছিল পরস্পরের প্রতি প্রীতি বন্ধনের মমত্ববোধ, কারণ তা আগের বন্ধনে, শুরু যৌবনে বিলিন হয়ে গছে। এখন দেহটাই হয়ে উঠে তাদের কাছে মুখ্য। পশুত্বের অন্তহীন ক্ষুধা নিয়ে দুটি প্রাণী একে অন্যের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। শুরু হয় আদিম খেলায় দক্ষ দুই প্লেয়ারের ধাপাধাপি মাতামাতি। দীর্ঘ দিনের বুভুক্ষু দু’টি প্রাণী বিছানায় ঝড় তুলে। সারারাত ক্ষুধার্ত দু’টি সিংহ ক্ষুধার জ্বালায় একে অন্যকে ক্ষত বিক্ষত করে, খুবলে খুবলে খায়। শেষ রাত্রে তারা ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে অবসন্ন দেহে বিপরীতমুখী শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

২৫ জুলাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে তারা গোসল করল। তারপর ফেরদৌসি রান্না ঘরে ঢুকল। স্বামী নববধূকে সব কিছু দেখিয়ে বুঝিয়ে দিল। নতুন বউ চা নাস্তা তৈরি করে স্বামীর সাথে বসে খেল। তারপর ডঃ আব্দুল্লাহ বাজারে চলে গেল আর ফেরদৌসি আয়নার সামনে দাঁড়াল, নতুন যৌবন এসেছে চেহারা চকচক করছে, সে আশ্বস্ত হল।

তারপর রান্না ঘরে চলে গেল। স্বামী বাজার থেকে চিংড়ি ও ইলিশ মাছ আনল। সে ফ্রীজ থেকে মাগুর ও গরু গোশত নামিয়ে সকল মাধুরি মিশিয়ে সম্পূর্ণ মনযোগ নিবিষ্ট করে নতুন স্বামীর জন্য রান্না করল। হ্যাঁ, রান্না খুব সুস্বাদু হয়েছে। দু’জনে আনন্দ স্ফুর্তিতে তৃপ্তিসহকারে খাওয়া পর্ব শেষ করে বিছানায় গড়িয়ে পড়ল। স্বামী নববধূর রান্নার প্রশংসা করছে। ফেরদৌসি হাসছে, হাসছে সে প্রাণ খুলে। হাসিতে তুষার শুভ্র দাঁত ঝিলিক দিয়ে উঠে। স্বামীর হৃদয় স্পন্দিত করে তোলে, সে আলোড়িত হয়।

ফেরদৌসি পাশ ফিরে স্বামীর বুকে বুক চেপে বাহুতে শুয়ে হাসছে, স্বামীর মনোরঞ্জন করছে আর তোষামোদে আলাপ করছে, ‘আচ্ছা আমাদের কয়টা বাচ্চা হবে? স্বামী বলল, ‘একটা’। কারণ তার আগের চারটা বাচ্চা আছে। ফেরদৌসি আহলাদি হয়ে নাকি সুরে বলল, ‘না গো না, আমার একটা বাচ্চায় চলবে না, চার পাঁচটা হতে হবে। স্বামী মনে মনে বলল, ‘এর অর্থ হল, আমার আগের বাচ্চাগুলিকে তুই মেনে নিবে না। তোর স্বতন্ত্র পাঁচটা বাচ্চা লাগবে। মাগী, আমার ঘর করতে হলে আমার বাচ্চাদের মেনে নিয়েই থাকতে হবে’। কিন্তু নববধূকে মুখে বলল, ‘আচ্ছা দেখা যাক আমি কত বীজ বপন করতে পারি আর তুমি কত প্রডাকশন দিতে পার’। ফেরদৌসি খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। নববধূর এই হাসি স্বামীর কানে বেশ্যার হাসির মত ঠেকে। কারণ অতি মোসাহেবি কেউ পসন্দ করে না। সে ভাবে মুসলমান মেয়েরা সম্ভবত এমন নির্লজ্ব বেহায়াই হয়। বিয়ে না হতেই বাচ্চার চিন্তা শুরু করে দিয়েছে।

ফেরদৌসি স্বামীর বুকে শুয়ে মনে মনে ভাবে, ‘শালা পুরুষ জাতটাকে আমি চিনি, লেম দিলে ওদের খাই খাই বাড়তেই থাকে। আগের হারামজাদাটা বাঘের মত আমার সামনে আসত, দেখেই আমার পেটে কাঁপন ধরে যেত। শালা তোমাকে সেই সুযোগ দিবনা। তোমাকে এমন নাকানি চোবানি খাওয়াব যেন আমাকে দেখে তোমার পেটে কাঁপন ধরে। ‘বিয়ের রাইতে বিড়াল মার রে’ মনে মনে আবৃত্তি করতে করতে স্বামীর মুখে মাথায় সমস্ত শরীরে হাত বুলাতে থাকে। তার নিঃশ্বাস ঘনতর হয়, স্বামীর কাঁধে গরম নিঃশ্বস পড়তে থাকে।

২৬ জুলাই, সকালে খাওয়া- দাওয়ার পর তারা বিছানায় গড়াগড়ি করছে। হঠাৎ ডংকায় ঘা পড়ল, তাদের ঘোর কেটে গেল, বিরক্ত হল, প্রকৃতিস্ত হল, খাটের ক্যাচক্যাচ বন্ধ হল। কলিংবেল বেজেই চলেছে। ডঃ আব্দুল্লাহ একটা তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে আউটডোরে গেল। কিছুক্ষণ পর এসে বলল, ‘বাবা এসেছে’। ফেরদৌসি ধড়ফড় করে বিছানা থেকে উঠে দৌড়ে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। গালে দাঁতের দাগ পড়ে আছে, আঙ্গুলে ঘষা দিল’ উসকু খুসকু চুলে চিরুনির দু’তিনটা আচড় দিল। খোলা বক্ষ বন্ধনীটা ঠিক করল আর বুকটা সমতল থেকে তিন- চার ইঞ্চি উঁচু হয়ে গেল। তারপর মসলিনের চেয়েও সুক্ষ্ম পাতলা কাপড়ে দেহটা জড়িয়ে শ্বশুরের সাক্ষাতে গেল। মধ্যমাকৃতি, ক্লিন শেভড, বৃদ্ধ এক ভদ্রলোক গেস্ট রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে পুত্রবধূর অপেক্ষা করছে। ফেরদৌসি দ্রুত ছোটে গিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বলে মনে পরল হিন্দুরা ‘আদাব’ দেয়। তারপর ‘আদাব আব্বা’ মনে পরল হিন্দুরা বাবা ডাকে, ‘বাবা কেমন আছেন’। তারপর সে বসে শ্বশুরকে পা ছুয়ে সেলাম করে উঠে দাঁড়াল এবং অভ্যর্থনার হাসি দিল।

ফেরদৌসি শ্বশুরের চেয়ে দুয়েক ইঞ্চি উঁচু। সে শ্বশুরের একদম সামনে কাছাকাছি দাঁড়ানো, লম্বা ও স্বাস্থ্যবান মেয়েদের বুকের সাইজ বড় হয়, মাকড়সার জালে ঢাকা সমতল থেকে তিন চার ইঞ্চি উঁচু তার বেঢপ খাড়া বক্ষ একেবারে শ্বশুরের দৃষ্টি বরাবর। ভদ্রলোক মুখ সোজা করে তাকাতেই পুত্রবধূর বেখাপ্পা খাড়া বুকের উপর দৃষ্টি পড়ল। বেচারা লজ্বায় সাথে সাথে মাথা নিচু করে শুধু ‘ভাল আছি’ বলে ঘরে ঢুকে গেল। ফেরদৌসির মত আত্মম্ভরি মেয়ের ক্ষেত্রে এটা তার শ্লাঘায় বাধল। শ্বশুর তাকে ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করল না। মাথায় হাত দিয়ে আশির্বাদ করল না। তার মুখে যেন কেউ এক পোঁচ কালি মেখে দিল, অপমানিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। সে কিংকর্তব্যবিমুঢ়, বুঝতে পারছে না শ্বশুরের ঘরে ঢুকবে নাকি চলে যাবে। তখন স্বামী বলল চা নাস্তা নিয়ে আস।

দুপুরে ডঃ আব্দুল্লাহ কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে চলে গেল, ২৮ তারিখে তারা হানিমুনে যাবে, চট্টগ্রামগামী ট্রেনের টিকেট কেটে তারপর বাজার করে বাসায় আসবে। এদিকে রান্নার সময় যাচ্ছে। ফেরদৌসি তার শরীরটা গোছাল, গোছাল মানে আবৃত করা নয়, আরো প্রদর্শনীয় করে তুলল। তারপর শ্বশুরকে জিগাতে গেল সে কি কি খাবে। জিজ্ঞেস করল, ‘বাবা ফ্রীজে তো মাছ মাংস সবই আছে, গরু খাসি মুরগি ও পাখীর মাংস আছে, আপনি কি কি খাবেন? ভদ্রলোক উত্তর দেয়ার জন্য মুখ তুলে তাকাল কিন্তু নেটে আবৃত পুত্রবধূর বেয়ারা শরীর দেখে লজ্বায় লাল হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, ‘শুন মা, আমারা হিন্দু বটে কিন্তু মূর্তিপূজারী নই। আমি জীবনে কোনদিন মনুষ্য নির্মিত মাটির মূর্তির সামনে জ্ঞানে হাত জোড় করে দাঁড়াইনি। আমি বিশ্বাস করি এ মহাবিশ্বের স্রষ্টা ও পরিচালক তেত্রিশ কোটি নয়, শুধু একজন, একক স্বত্তা, যাকে আমরা ভগবান বলি আর তোমরা আল্লাহ বল অন্যেরা গড বলে। তোমার স্বামীর মধ্যে আমার এই উদারতাটাই প্রকাশ পেয়েছে। তবে পার্থক্য এতটুকু যে আমি ইসলাম গ্রহণ করিনি, তবে গরু খাওয়াও বাদ দেইনি। যে গরু দিয়ে আমরা হাল চাষ করি, গাড়ি টানাই সেই গরু আমার দেবতা হতে পারেনা। আমার সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য গরুর মাংস। কিন্তু তোমার শাশুড়ির জন্য তা আমি বাড়িতে নিতে পারিনা। তবে যখন বাইরে যাই তখন হোটেলে গিয়ে সেই ক্ষতিটা পুষিয়ে নেই। কাজেই গরু মাংস থাকলে আমার আর অন্য কিছুর দরকার নাই। বেশি করে রান্না করে গিয়ে আশ মিটিয়ে খাব। ফেরদৌসি খুশি হয়ে রান্না ঘরে চলে গেল।

রান্নার পর তার প্রসাধন সামগ্রী নিয়ে বাথরুমে ঢুকল, বিগত কয়েক মাসের নিয়মানুযায়ি গায়ে প্রসাধন মেখে বসে থাকল, দেড় ঘন্টা পর বেরিয়ে এল। তার শরীর স্বচ্ছ স্ফটিকের মত গ্লাস দিচ্ছে। তারপর শ্বশুরকে এই বলে গোসলে পাঠাল যে, ‘আপনি গোসল করে চলে আসুন, কাপড় আমি ধুয়ে আনব নে খন’। তারপর তার স্বামী এসে গোসলে গেল আর সে আয়নার সামনে দাঁড়াল। নিজের দেহটাকে মনের মত পরিপাটি করে তারপর তিনজন একসাথে খেতে বসল। ভদ্রলোক অবসর প্রাপ্ত একজন সরকারী চাকুরে। ঢাকায় কোন দরকারে তাকে আসতে হয়। তিনি উদার মানুষ, ছেলে ইসলাম গ্রহণ করাতে তার কোন আপত্তি নাই। সে বাড়িতে যায় না বিধায় তিনি মাঝে- মধ্যে দেখতে আসেন। কিন্তু বিয়ের দিন ছেলে কল করে বলল, সে নতুন বিয়ে করেছে তাই বৃদ্ধ পুত্রবধূ দেখতে এসেছে। কিন্তু প্রদীপের ন্যায় দিপ্তিমান প্রায় উলঙ্গ পুত্রবধূর উর্বশি দেহটার দিকে তিনি চোখ মেলে তাকাতে পারেন না, লজ্বায় দৃষ্টি অবনত হয়ে আসে। খাওয়ার সময়টা তিনি কাটালেন ছেলের সাথে আলাপ করে, মাউশিতে কত দুর্নীতি চলে, ঘুষ ছাড়া কাজ হয়না। তিনি খেলেন আর ছেলের দিকে তাকিয়ে আলাপ করলেন কিন্তু পুত্রবধূর দিকে তাকাতে সাহস পেলেন না।

বিকালে ডঃ আব্দুল্লাহ বাইরে চলে গেল, শ্বশুর ও পুত্রবধূ নিজ নিজ রুমে শুয়ে বিশ্রাম করতে লাগল। ফেরদৌসি শুয়ে শুয়ে ভাবছে, বিয়ের আগে তার বোনেরা ও অন্যান্য আত্নীয়- স্বজনরা বারবার প্রশ্ন তুলেছে, ডঃ আব্দুল্লাহ একা ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার স্ত্রী- সন্তানের কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি বিধায় সে চলে এসেছে, কিন্তু পরে যদি তারা মুসলমান হয়ে যায় তাহলে তো চলে যাবে। ফেরদৌসি নিজেও বহুবার চিন্তা করেছে। কিন্তু ডঃ পটেটো বারবার চ্যালেঞ্জ করে বলেছে, ‘তার স্ত্রী উচ্চ শিক্ষিত এবং চাকরিজীবি, তারা ইসলাম গ্রহণ করবে না, করলে তো আগেই করতো। তাছাড়া স্ত্রীর সাথে তার মনমালিন্য, চলে যাওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু শ্বশুরের আচরণে ফের এই চিন্তা ফেরদৌসির ললাটে বলিরেখা টেনে দেয়, এখন যদি তার সতীন ইসলাম গ্রহণ করে আর তার স্বামী স্ত্রী সন্তানের কাছে চলে যায়। ফেরদৌসির আত্মা ধক করে উঠে, সে লাফিয়ে উঠে বিছানায় বসল। কারণ সে স্বেচ্ছায় উচ্চ শিক্ষিত ও প্রতিপত্তিশালী স্বামীর ঘর ছেড়ে এসেছে, এখন সতীনের ঘর করা সম্ভব নয়। আবার স্বামী যদি তাকে ছেড়ে সতীন ও তার সন্তানদের কাছে চলে যায় তাহলে উপায়? তখন আগের স্বামীর কথা স্বরণ হয়, ‘তুই আমাকে যে কষ্ট দিলি, তোর কান্নায় গাছের পাতা ঝড়ে পরবে। মানুষ, পশু, পাখি, পাথর পর্যন্ত কাঁদবে, তোকে ভিক্ষে করে খেতে হবে, বেশ্যাগিরি করে খেতে হবে’। সে শিউরে উঠে দু’হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে উঠল। তার শরীর কেঁপে উঠে। হায় আমি কি তাহলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারলাম। না না, এখন যদি আবার এ্যাকসিডেন্ট ঘটে তাহলে সত্যিই আমাকে ভিক্ষে অথবা বেশ্যাবৃত্তিতে নামতে হবে। না না, সেই সুযোগ আমি দিবনা।

সে বসে বসে ভাবে তার সতীন তো বোধ হয় বুড়ি হয়ে গেছে, রূপ যৌবন শেষ হয়ে গেছে। অথচ সে চব্বিশ বছরের উর্বশি যৌবনা, রুপচর্চা করে পরীর মত সুন্দরী হয়ে গেছে। পুরুষ জাতটাকে সে চেনে, তার আত্মবিশ্বাস স্বামীকে সে রুপের মায়া জালে দেহের জটাজালে আবদ্ধ রাখতে পারবে। এমন যুবতি স্ত্রী রেখে তার স্বামী নিশ্চয়ই ঐ বুড়িটার কাছে যাবেনা। আর শ্বশুর শাশুড়িকে খেয় খেদমত করে, আনুগত্য করে বশে রাখতে হবে। যদি কোনদিন সতীনের সাথে স্বামী নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয় তাহলে যেন শ্বশুর শাশুড়ি তার পক্ষাবলম্বন করে। বোকা মেয়েটা আবার বাড়াবাড়ি শুরু করল।

পৃথিবীতে বুঝ সবারই আছে, এরপরেও কেউ বুদ্ধিমান আর কেউ বোকা কেন। যার বুঝটা সঠিক সে বুদ্ধিমান, যার বুঝ বিকৃত সে বোকা। ফেরদৌসি হল এই দ্বিতীয় শ্রেণীর। সে আগের স্বামী শ্বশুর শাশুড়িকে শ্রদ্ধা তো দূরের কথা মানুষ হিসাবেই গণ্য করত না। দেশ বরেন্য শ্বশুর পেয়েও কোনদিন বাবা আব্বা তো দূরের কথা শ্বশুর মশাই বলেও সম্ভোধন করত না বরং ‘আপনের বাপ’ বলে সম্ভোধন করত। কিন্তু এখন সে একটা হিন্দু পরিবারের স্বামী শ্বশুর শাশুড়িকে দেবতার মত পূজা শুরু করল। অথচ মুসলিম মেয়েরা কখনো হিন্দু স্বামী শ্বশুর শাশুড়ি মেনে নেয় না, নিতে পারে না।

ফেরদৌসি উঠে চা নাস্তা নিয়ে শ্বশুরের রুমে ঢুকল। বাবা চা খেয়ে নেন, বলে সে তোষামোদি শুরু করল, বাবা, আপনি ও মা তো এখন বুড়া হয়ে গেছেন, বয়স হয়ে গেছে, আপনাদের তো এখন খেদমতের দরকার। বুড়া বয়সে খেদমত ছাড়া চলে না। বাড়িতে থাকলে কে আপনাদের খেদমত করবে আর কেইবা দেখাশুনা করবে, তাই বলছিলাম কি আপনারা আমাদের বাসায় এসে পড়েন। আমি আপনাদের খেদমত করব। কাপড় ধুয়ে দিব, পানি গরম করে দেব, মাথা পা টিপে দিব ইত্যাদি বোকার মত খেদমতের ফিরিস্তি দিতে লাগল। ভদ্র লোক উঠে তার দিকে না তাকিয়ে চা খাওয়া শুরু করল।

ফেরদৌসি মনক্ষুন্ন হল, কারণ তার ইচ্ছা শ্বশুর তার দিকে তাকাবে, তার রূপ লাবন্যময়ী উর্বর যৌবনা দেহটা দেখবে। তারপর বাড়িতে গিয়ে আলাপ করবে প্রশংসা করবে যে, ‘বউটা অপরূপ সুন্দরী’। তখন তার সতীনের মুখে চুনকালি পড়বে। আর তখন সে দমে গিয়ে স্বামীর চিন্তা বাদ দিবে। কিন্তু এই হালার পুত তো ফিরেও তাকায় না। ফেরদৌসি শ্বশুরের মনতুষ্টির জন্য পা টিপে দিতে চাইল। সে খাটের পাশে বসে শ্বশুরের পায়ে হাত দিয়ে বলল ‘কি বলেন বাবা আপনারা আমাদের বাসায় আসবেন তো’। কিন্তু আজীবন গ্রামে কাটানো বৃদ্ধের কাছে এই অর্ধোলঙ্গ মেয়েটির মোসাহেবি ভাল লাগল না, তিনি ঘৃণায় সিটিয়ে উঠে বললেন, ‘বৌমা তুমি ঘরে গিয়ে বিশ্রাম কর আমি বাথরুমে যাচ্ছি’। বৃদ্ধ মনে মনে ভাবল, শ্বশুরের সামনে যে মেয়ে এমন অর্ধোলঙ্গ থাকে, খিলখিল করে হাসে, বেহায়াপনা করে- নিশ্চয় এ কোন ভাল ঘরের মেয়ে নয়, এর স্বভাব চরিত্রও বোধ করি ভাল হবে না। অথচ আগের বৌটা কত ভাল, কত মার্জিত। ভদ্রলোক ছেলের প্রতি ক্রোধে লাল হয়ে উঠলেন হারামজাদাটা জাত বংশ না দেখে এই বেশ্যাটাকে কোত্থেকে ধরে নিয়ে এল। হারামজাদাটা মাকাল ফল দেখে পাগল হয়ে গেছে, একটা বেশ্যা নিয়ে ঘর বেধেছে। তিনি আগের বৌয়ের সাথে এই বৌয়ের তুলনা করতে লাগলেন। আগের বৌয়ের প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ আর নতুন বউয়ের প্রতি ঘৃণাবোধ প্রবল হয়ে উঠল।

শ্বশুরের বারবার অশোভন আচরণে ফেরদৌসি ভীষণ লজ্বিত ও মনক্ষুন্ন হল, তার শ্লাঘায় বাধল। সে মনে মনে গালি দিল, ‘হারামজাদা মালুর বাচ্চা মালু আমার দিকে একবার ফিরেও তাকায় না, অথচ যে কেউ আমার দিকে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকে। ওর কাছে যেন আমার রূপ যৌবনের কোন দামই নাই। তাহলে কি ঐ বুড়ি সতীনটা আমার চেয়ে বেশি সুন্দরী নাকি। সে বিষণ্ণ হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবে, হায় আমার কপাল, ভাগ্যই আজ আমাকে এক মালাউনের বধূ আরেক মালাউনের পুত্রবধূ বানিয়ে ছেড়েছে। এখন এদের পায়ের উপরই আমাকে পরে থাকতে হবে, এছাড়া গত্যন্তর নেই।

সন্ধ্যার পর সে ভাবল শ্বশুরের রুমে যাবে, ভাব জমিয়ে তাকে তুষ্ট করার চেষ্টা করবে। প্লেটে কিছু ফল কেটে নিয়ে গিয়ে বলল, বাবা এখনো শুয়ে আছেন, উঠেন ফল খান। বৃদ্ধ উঠে বসল। ফেরদৌসি অভূতপূর্ব সমাদরে আহলাদিত হয়ে অনুযোগের কণ্ঠে রসিয়ে রসিয়ে বলল, ‘বাবা মনে হয় আমাকে দেখতে পারেন না, নইলে ঐ সময় পা টিপে দিতে চাইলাম কিন্তু আপনি সুযোগটাও দিলেন না’। বৃদ্ধ বলল, ‘আসলে আমার পা টেপাটেপির অভ্যাস নাই তো তাই, আচ্ছা বাদ দাও। সে সোহাগিনি হয়ে শ্বশুরকে ভুলানোর জন্য কণ্ঠকে লালিত্যময় করে বলল, ‘না বাদ দিব না, আপনি ও মা আমার এখানে এসে যাবেন। তখন বুঝবেন খেদমত কাকে বলে। পা টিপে দেয়া, মাথা টিপে দেয়া, পা ধুয়ে দেয়া, কাপড় ধুয়ে দেয়া, ঘুম পাড়িয়ে দেয়া- দেখতে পারবেন তখন আমি আপনাদের কিভাবে সেবা করি। মা যেভাবে বাচ্চা লালন পালন করে আমি আপনাদের সেভাবে লালন পালন করব। আপনারা হবেন আমার বাচ্চা, আমার ছেলে মেয়ে’ বলে খিলখিলিয়ে হাসল। বৃদ্ধ তার কথায় খুশি হল বটে কিন্তু অর্ধোলঙ্গ শরীর আর খিলখিলিয়ে হাসি সেই সাথে বেঢফ বুকের স্পন্দন তার নিকট পীড়াদায়ক হয়ে উঠল। পুত্রবধূর হাসি তার কানে বেশ্যার হ্রেসার মত ঠেকে। সে চিন্তায় ডুবে গেল, মুসলমান মেয়েরা কি এমন বেহায়াই হয় নাকি। কিন্তু না, ওরাই তো পর্দা পুশিদা বেশি করে। আসলে এ মেয়েটাই খারাপ, সম্ভবত মেয়েটার চরিত্র ভাল নয়, কোন খারাপ ঘরের মেয়ে। বৃদ্ধের ঘৃণা ধরে যায়।

২৭ জুলাই। ভদ্র লোক সকালে ঘুম থেকে উঠে চরম গাম্ভির্যতা নিয়ে নীরব হয়ে থাকলেন, তেমন কথা বার্তা বললেন না। তিনি এই আশায় এসেছিলেন যে, ছেলের বাসায় কিছুদিন থাকবেন আর মাউশিতে তার তদবীরের কাজটা করবেন কিন্তু শারীরিক উত্তাপ প্রদর্শন কারিণী এমন পুত্রবধূর সাথে আরো অবস্থান করা তার বিবেকে বাধল। খাওয়া দাওয়ার পর তিনি রওয়ানা হলেন। ডঃ আব্দুল্লাহ ও বাপের সাথে বাইরে যাচ্ছে। ফেরদৌসি পিছে পিছে ,‘বাবা, ছেলের বাসায় কাল এসে আজই চলে যাচ্ছেন এটা কেমন দেখা যায়, আরো কয়েক দিন থাকেন। আচ্ছা বলেন, মাকে নিয়ে কবে আসবেন, আমি কিন্তু আপনাদের অপেক্ষায় থাকব। আর বাড়ির সবাইকে আমার সালাম উহঃ না ‘আদাব’ জানাবেন’ ইত্যাদি প্যানপ্যান করতে করতে আউটডোরের কাছে এল। বের হওয়ার মুহুর্তে সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে শ্বশুরের পায়ের কাছে উবু হল সেলাম করার জন্য। গায়ে মাকড়সার জাল, উদোম বাহু এক নজর দেখেই বেচারা ঘৃণায় মুখ ঘুরিয়ে পা টেনে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল। ডঃ আব্দুল্লাহও খুশি হল, কারণ প্রথম থেকেই স্ত্রীর অতিরিক্ত আচরণে সে বিরক্ত হয়ে উঠেছে।

ফেরদৌসি বসে আছে, শ্বশুরের পায়ের দিকে তার বাড়ানো হাতটা কার্পেটের উপর পড়ে আছে। বেচারি দুঃখে কষ্টে মাটিতে লেপ্টে বসে পড়ল। তার চোখ থেকে টপটপ করে কার্পেটে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল, ‘হায় এই মালাউনের বাচ্চাকে বাবা ডাকলাম, এত আনুগত্য করলাম, সারা জীবন খেদমত করার আশ্বাস দিলাম অথচ সে আসার পর থেকেই আমার সাথে দুর্ব্যবহার করছে, বিদায় বেলায় পা ছুয়ে সেলামটা পর্যন্ত করতে দিলনা। আমি মুসলমান বলে সম্ভবত সে আমাকে ঘৃণা করে। তার মনের টান আমার সতীনের দিকে। তার লক্ষ্য সম্ভবত আমার সংসার ভাঙ্গা। সে আকুল হয়ে কিছুক্ষণ কাঁদল তারপর দরজা বন্ধ করে গিয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়ল।

সে শুয়ে শুয়ে ভাবছে, আমার আগের স্বামী কত বড় শিক্ষিত ছিল, মাটির মত ধৈর্য্যশীল ছিল, খ্যাতি পরিচিতি অবস্থা ব্যবস্থা সবদিক থেকেই ভাল ছিল। সে আমাকে ভালবাসত, আমার কাজ কর্ম করে দিত, ধৈর্য্য ধরত অথচ এমন আদর্শ স্বামী ও সোনার সংসার ফেলে এসে বিয়ে করলাম একটা বুড়া মালাউনের বাচ্চাকে। রুপচর্চা করে স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে নিজের দেহটাকে পরীর মত সুন্দরী বানিয়ে তাকে নিবেদন করলাম। অথচ বিয়ের দুই দিনের মাথায় তার শরীরের যে অবস্থা বুঝা যায় তাতে তো মনে হয় সারা জীবন জৈবিক ক্ষুধা নিয়ে এই বুড়াটার ঘরে আমাকে ধোকে ধোকে মরতে হবে। আমার সোনার যৌবন সোনার অঙ্গে শুকাবে কিন্তু তার মধু আহরণ করার লোক নাই। অথচ এই রূপ যৌবন আর উর্বশি শরীর যদি আমার আগের স্বামীকে দিতাম তাহলে আমায় মাথায় তুলে রাখত, আমার রূপ যৌবন সার্থক হত, সঠিক ব্যবহার হত।

আবার আমার আগের শ্বশুর ছিলেন বিখ্যাত আলেম, বুজুর্গ মানুষ, দেশ বরেন্য ব্যক্তি। তবুও আমি তাকে কোনদিন আব্বা বা শ্বশুর মশাই ডাকিনি, আপনের বাপ বলে ডেকেছি। অথচ এখন এই একটা হিন্দু মালাউনকে বাবা ডাকছি, আনুগত্য করছি, খেদমত করছি, সারা জীবন খেদমতের আশ্বাস দিয়েছি, এতদসত্ত্বেও সে আমাকে মানুষ হিসাবেই গণ্য করল না, বারবার অপমান করল। সেলাম তো দুনিয়ার সবাই চায় কিন্তু সে আমাকে সেলামটা পর্যন্ত করতে দিল না। আসলে সে আমাকে ঘৃণা করে আমার সতীনকে ভালবাসে। আবার আমার আগের শাশুড়ি যতবার গিয়েছি ডিম দুধ ফল ফলাদি নিয়ে পিছে পিছে ঘুরেছে, জোর করে খাইয়েছে। খাবার সময় পাত থেকে মাছ মাংস ভাল তরকারি আমার পাতে তুলে দিয়েছে। নিজের মেয়ের চেয়ে আমাকে বেশি আদর করেছে। আসার সময় মেয়ে বিদায়ের মত কেঁদেছে। এমন মহৎ স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ফেলে, সোনার সংসার ফেলে একটা মালাউন পরিবারে এসেছি- যা কোন মুসলিম মেয়ে মরে গেলেও করত না।

এতদসত্ত্বেও এখানে আমার কোন ভবিষ্যৎ নেই। স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি কেউ আমার পক্ষে নয়। আমার সতীনটা যদি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে স্বামী আমার কপালে লাথি মেরে তার কাছে চলে যাবে। সে ইসলাম গ্রহণ না করলেও বাপ তো তার সন্তানদের কাছে যাবেই। তখন এই সতীনের ছেলেরা যদি আমাকে তাড়িয়ে দেয় তাহলে তো আর আমার করার কিছুই থাকবেনা। আগের স্বামী বলত, তুই আমাকে যে কষ্ট দিলি একদিন তোকে ভিক্ষে করে অথবা বেশ্যাগিরি করে খেতে হবে। সে গুমরে কেঁদে উঠে। তাহলে কি তার কথাই ফলতে যাচ্ছে। ফেরদৌসি চরম নৈরাশ্যের অন্তহীন যন্ত্রনায় বিছানায় গড়াগড়ি দিতে থাকে, কপালে হাত মারতে থাকে আর ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে। আর এভাবেই স্বামী- সন্তান ত্যাগকারীনি, অপরিনামদর্শি, অভিশপ্ত এক আওরত তার কৃতকর্মের নির্ধারিত পরিণতির দিকে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে। বিয়ের দুই দিনের মাথায় তার চোখে যে ঢল নামল তা চিরদিনের জন্য তার ভাগ্যলিপির শামিল হয়ে গেল।

কিছুক্ষন কান্নাকাটির পর সে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে থাকে, যেন একটা নিশ্চল কাস্ট পুত্তলিকা বা পাথরের মূর্তি জড়বত পড়ে আছে। তার দুটি চোখে অমাবস্যার কালিমা, নৈরাশ্য, হতাশা আর অন্তহীন গ্লানি। সে ভাবছে, যা হবার হয়ে গেছে, ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে গেছে, এখন তো আর আগের স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়াও সম্ভব নয়। আর এই বিয়ে ভেঙ্গে গেলে তো আমাকে হয়ত ভাঙ্গা থালা নিয়ে পথে নামতে হবে অথবা বশ্যালয়ে গিয়ে দেহ বিক্রি করে ভাত খেতে হবে। তার চেয়ে সেই ভাল স্বামীর উপপত্নি হয়েই থাকব। সতীন ও সতীনের পোলাপানের দাসিগিরি করব। একটা হিন্দু পরিবারের বাদী হয়ে জীবন কাটাব। স্বামী শ্বশুর শাশুড়ির খেদমত করে যতটুকুই অধিকার পাওয়া যায় তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এছাড়া তো আর কোন উপায় নেই। আমি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছি, নিজের খুড়ে নিজের কবর খনন করেছি, নিজের নখে নিজের নাসিকা ছেদন করেছি। সে আর্তনাদ করে উঠে, ‘স্বামী গো, স্বামী, আমার আসল স্বামী, আমার প্রথম জীবনের প্রথম বাসরের স্বামী, আমায় ক্ষমা কর স্বামী ক্ষমা কর। আমার পাপের শাস্তি শুরু হয়ে গেছে। আমি অভিশপ্ত, আমি ঘৃণিত, আম অস্পৃশ্য, আমি স্বামী সন্তান পরিত্যাগ কারিণী, আমি নিষ্ঠুর, আমার শাস্তি হওয়া উচিত। আমি প্রেম করেছিলাম, সোলেমানের প্রেমিকা ছিলাম, স্বামীর সাথে বেঈমানি করেছিলাম। আর আজ এই হল আমার পরিণতি। কোথায় দুনিয়ার প্রেমিকেরা, দেখে যাও প্রেমের পরিণতি, দেখে যাও স্বামীর সাথে গাদ্দারির পরিণতি। সে আবার ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগল।

ডঃ আব্দুল্লাহ বাবার সাথে বেরিয়ে গিয়ে বাইরে ঘোরাফিরা করে দুপুর সময়টা কাটিয়ে দিল। কারণ সে জানে এ সময় বাসায় ফিরলে তার পুর্ণযৌবনা বৌ তাকে শারীরিক কসরতে লিপ্ত করবে। এ জিনিসটাকে সে ইতিমধ্যে ভয়ের দৃষ্টিতে দেখা শুরু করেছে। তিন দিনেই সে বুঝে গেছে সন্তানের বয়সী এমন একটা যুবতি মেয়েকে বিয়ে করা তার উচিত হয়নি। এই উর্বশি যৌবনা স্ত্রী- দেহের খোরাক যোগানোর মত সামর্থ ও রসদ ভাটির টানে ভেসে যাওয়া তার দেহে আর অবশিষ্ট নাই। তাছাড়া বৌ সম্পর্কে বাবা তাকে কিছু কটু কথা বলেছে, এতে তার মনক্ষুন্ন হয়েছে এবং মন ভেঙ্গে গেছে। কাজেই সে বাইরে ঘোরাফিরা করে গোসলের সময় বাসায় পৌঁছল। গোসল ও খাওয়া দাওয়ার পর ফেরদৌসি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। সে ভাবছে, এখন তার একমাত্র সম্বল এই শরীর, রুপের ছটা দেখিয়ে স্বামীকে বশে রাখতে হবে। যতদুর সম্ভব সতীন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। এখন একমাত্র এই স্বামী ছাড়া তার পৃথিবী অন্ধকার। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

বিষয়: সাহিত্য

২৩৩১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381221
০৯ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০৩:৩৪
আবু নাইম লিখেছেন : চালিয়ে যান সাথে আছি..দেখি পরিনতি কি হয়।
381238
১০ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০৩:২০
আল্লাহর সন্তুষ্টি লিখেছেন :

بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
পূণ্যময় তিনি, যাঁর হাতে রাজত্ব। তিনি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান। (1) যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়। (2) তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিতে কোন তফাত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টিফেরাও; কোন ফাটল দেখতে পাও কি? (3)
(( সূরা মূ্লক ))

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File