রাজাপুর সাবসেন্টার
লিখেছেন লিখেছেন মো মহিউদ্দিন ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৭:১৪:০৬ সকাল
এক
এক দৃষ্টিতে ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরের মনোমুগ্ধকর চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখছিলাম । শীতকাল হওয়ায় একটু দুরে দেখতে পেলাম হালকা কুয়াশার চাদর গ্রামগুলাকে ঢেকে রেখেছে, তার সাথে পড়ন্ত বিকেলের রক্তিম সূর্য এ সৌন্দর্য্যকে আরোও বাড়িয়ে তুলেছে।পাশে একটি খালি জমিতে ছেলেরা গোল্লাছুট খেলছে,সবার গায়ে মাটি মাখা হাফ প্যান্ট পড়া । সামনে জমি থেকে সাত আট হাত উচু ছোট্ট একটি বাড়ি। বাড়ির সামনে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজন মহিলা গল্প করছে হয়ত রান্না শেষ করে নিজেদের দুংখের কথা একজন আরেকজনকে শুনাচ্ছে ।একজনকে দেখলাম তার কোলের বাচ্চাকে ট্রেন দেখাচ্ছে।আরেকটু এগিয়ে আসতেই দেখলাম রাস্তার পাশে কয়েকটি ছেলেমেয়ে তাদের খেলা বন্ধ করে ট্রেনের দিকে তাকিয়ে আছে। একজন কি মনে করে যেন ট্রেনের দিকে ঢিল ছুড়ে মারছে। হঠাৎ একদল পাখি ট্রেনের উপড় দিয়ে উড়ে গেল । সারাদিনের আহার শেষে আপন নীড়ে ফিরে যাচ্ছে ।মৃদু ঝাকুনিতে ধ্যানটা ভেংগে গেল । সামনে দেখতে পেলাম বড় করে লেখা রাজাপুর ।বুজতে পারলাম আমার গন্তব্যে চলে এসেছি। ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম।ছোট্ট একটি স্টেশন ,কয়েক মাইলের মধ্যে কোন বাড়ি নেই।রেললাইনের দুপাশেই তাল গাছের সারি,কুয়াশা থাকাতে বুজতে পারলাম না কতদুর পর্যন্ত আছে। বামপাশ দিয়ে চিকন একটি রাস্তা চলে গেছে গ্রামের দিকে ,তার দু’পাশেই ধানক্ষেত । অনেক দূরে মাগরিবের আজান শুনতে পেলাম ।
- আপনি কই যাইবেন?
হঠাৎ ডাকশুনে চমকে উঠলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি আনুমানিক পঞ্চাশ বছরের একজন লোক আমার দিকে এগিয়ে আসছে। গায়ের ড্রেস দেখে বুজতে পারলাম স্টেশন মাস্টার ।চুলগুলা এলোমেলো ,রোগাটে চিকন । গায়ের জামাটা একটু ময়লা হয়ে গেছে । অনেক পুরাতন একটা চশমা চোখে । পকেট এ একটা কলম আর ভাজ করা কয়েকটি কাগজ দেখা যাচ্ছে।
-আমি এ এলাকায় প্রথম এসেছি।আপনাদের রাজাপুর যে সাবসেন্টার আছে আমি সেখানের নতুন ডাক্তার।
ডাক্তার বলতেই কেন জানি মুখটা কাল হয়ে গেল।নিস্পলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
-ঐ খানে কিভাবে যাব একটু বলে দিবেন?
-জ্বি!
আমার কথা শুনে মনে হয় ধ্যান ফিরে পেলেন।আমি আবার বললাম ।
-হাসপাতাল তো এখান থেইক্কা দুই কিলোমিটার , সন্ধ্যার পরে রাস্তায় কিছু পাইবেন না। হাইট্যা যাওন লাগব। তয় আপনি যদি ৬.০০ পর্যন্ত থাহেন তাইলে আমার লগে সাইকেল এ যাইতে পারবেন ।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম ৫.২৫ বাজে । বেশি সময় বাকি নাই ।
-কাকা, আমাকে নিয়ে চালাতে পারবেন? আর আমাকে নামিয়ে দিয়ে আপনার বাড়ি ফিরে যেতে অনেক রাত হবে ।
-কি যে কন ,৩-৪ মণ ধান এ সাইকেলে কইরা নি ,আর আমার বাড়ি হাসপাতালের লগেই। আপনি একটু বসেন ।আমি আপনারে নিয়া যামু ।
মাজখানে তেমন আর কথা হয় নাই ।ওনার নাম আবদুল আলিম জানতে পারলাম । ৬.০০ টার ট্রেন চলে আসছে । ট্রেন চলে যাওয়ার দশ পনের মিনিট পর আমারা বের হলাম।রাস্তায় আর আমাদের খুব বেশি কথা হয় নাই।
সাবসেন্টারে যখন আসলাম তখন প্রায় রাত আটটা বেজে গেছে । গ্রামের উচু নিচু রাস্তা হওয়াতে সময় বেশি লেগেছিল। সাইকেল থেকে নেমে ব্যাগটা হাতে নিয়ে বিদায় নিলাম । স্টেশন মাস্টার অবশ্য ওনার বাড়িতে খেতে বলেছিলেন।
-ডাক্তার সাব, আমার বাড়ি হাসপাতালের পিছনে। বেশি সময় লাগব না । আমার সাথে চলেন, খাইয়া আইসেন।
-না কাকা, আপনাকে এমনি অনেক কষ্ট দিয়েছি। আরেকদিন যাব।
অনেক কষ্টে ওনাকে বিদায় দিয়ে সাবসেন্টারে ঢুকে দেখি চেয়ারে বসে একজন ঘুমাচ্ছে ।আমি ডাক দিতেই লাফ দিয়ে উঠল।
-স্যার ,আপনি আইছেন । আমি মকবুল , এ হাসপাতাল দেখাশুনা করি । মেম্বার সাব কইল আপনি আইবেন তাই আপনার জন্য খাবার নিয়া বইসা আছি । আপনার এত দেরি অইল কেন স্যার ?
-আর বল না, স্টেশন থেকে কিছুই পাইনি। শেষ পর্যন্ত স্টেশন মাস্টারের সাইকেল দিয়ে আসলাম ।
-আপনার রুম আমি গোছাইয়া রাখছি , খাইয়া ঘুমাই পড়েন। আমি সকালে আসুম ।
দুই
সকালে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাংল । অনেকদিন পর শুনলাম। শহুরে জীবনে এ শব্দ শুনাই যায় না । ফজরের নামাজ পড়ে প্রতিদিনের অভ্যাসমত হাটতে বের হলাম। সাবসেন্টার খুব বেশি জায়গা নিয়ে তৈরি হয়নি। দুই তালা একটি বিল্ডিং ,আশেপাশে কিছু গাছ আছে। সাবসেন্টারের পূর্বপাশ দিয়ে পিছনের দিকে একটা রাস্তা চলে গেছে।রাস্তার পাশেই কয়েকটি কুমড়া গাছ । হয়ত মকবুল লাগিয়েছে । পশ্চিম পাশে কয়েকটি ডোবা তারপরই বাড়ি । পূর্বপাশে বিশাল একটা পুকুর ,দিঘী বললে চলে । সাবসেন্টারের পিছনের রাস্তাটি পুকুর পাড়ের সাথে মিলে উত্তর দিকে চলে গেছে। পুকুরের চারপাশে অনেক বড় বড় কড়ই গাছ , ফাকে ফাকে দুই একটি হিজল গাছ ও আছে । সামনে দিয়ে পাকা রাস্তা চলে গেছে ,রাস্তার পরেই বিশাল মাঠ । কোন ঘরবাড়ি নেই। মাঠের পানি শুকিয়ে গেছে , ধানক্ষেত আর ধানক্ষেত। কয়েকদিন পরেই কাটবে । অনেকদিন পর এ ধরনের সৌন্দর্য্য দেখতে পেলাম।
আমি পাকা রাস্তা ধরে পূর্বদিকে হাটা শুরু করলাম । সামনে আগাতেই দেখলাম ছোট ছোট বাচ্চারা মক্তবে যাচ্ছে , বুজতে পারলাম সামনে মসজিদ আছে।আমি যে কত ফাকি দিয়েছি, বাড়ি থেকে মক্তবের জন্য বের হয়ে বাগানে বসে থাকতাম, সবার সাথে আবার বাড়ি চলে আসতাম। সামনে যাবার পর দেখলাম একটি মসজিদ ,তার দক্ষিন পাশে প্রাইমারি স্কুল । স্কুলের সাথেই কিছু দোকান আছে। স্কুলের সামনে গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়,কচুয়া । হঠাৎ মনে পড়ে গেল রাহাতের বাড়ি কচুয়া।
রাহাত আমার রুমমেট ছিল ।একসাথে শেষের তিনটা বছর ছিলাম । মেডিকেল জীবনের কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে । ও মাইগ্রেশান করে আসছিল কক্সবাজার মেডিকেল থেকে । যেদিন আসল সেদিন কি মজাই না নিয়েছিলাম ওর কাছ থেকে বড় ভাই সেজে । ওর সেদিনের সেই ফুটা বেলুনের মত চুপসানো মুখটা আজ ও মনে পড়লে হাসি আসে । খুব শান্ত স্বভাবের ছিল । সারদিন পড়া নিয়ে ব্যাস্ত থাকত । কারও সাথে বেশি কথা বলত না । তারপর থার্ড ইয়ার এ এক সাথে রুম পেলাম । তখন থেকে আমার অনেক কাছের মানুষ হয়ে গেছে । ওর উৎসাহের কারনেই আমি ফাইনাল প্রফ পাশ করেছি । তা না হলে আমি তিন বাড়েও পাশ করতে পারতাম না ।
রাহাতের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে সাব সেন্টারে চলে আসলাম বুজতেই পারিনি।
-স্যার, আপনি কই গেছিলেন ?
-এইতো একটু হাটতে গিয়েছিলাম। তুমি এত সকালে কেন মকবুল ?
-আমার বউ পিঠা বানাইছে , আপনারে দিতে আইলাম ।
-কেন শুধু শুধু কষ্ট করেছ ।
-কি যে কন স্যার , আপনি নতুন আইছেন । কোন খাওন নাই রুমে, তাই নিয়া আইলাম ।
নাস্তা করে মকবুলকে আমার চেম্বারটা পরিষ্কার করে দিতে বললাম ।
সকাল নয়টায় আমি রোগী দেখার জন্য চেম্বার এ বসলাম । প্রথম দিন যেহেতু তাই খুব একটা রোগী আসবে না জানি । বাহিরে একটা মটর সাইকেলের হর্ণ শুনতে পেলাম । হয়ত গ্রামের মেম্বার এসেছেন। যা ধারনা করেছিলাম তাই হল । রুমে ঢুকেই সালাম দিয়ে বলল আমি হালিম মেম্বার । প্রায় একঘন্টা ধরে কথা হল , শেষে বলল আমার আসতে কোন কষ্ট হয়েছে কিনা ।
- স্টেশন পর্যন্ত কষ্ট হয়নি কিন্তু সেখান থেকে সাবসেন্টারে আসতে স্টেশন মাস্টার না থাকলে অনেক কষ্ট হত ।
-ও ,আলিমের কথা বলছেন । অনেক ভাল মানুষ ।
হঠাৎ মেম্বারের মোবাইল বেজে উঠল ।
-জরুরি মিটিং আছে । কোন সমস্যা হলে জানাবেন । আজিকে আসি বলে মেম্বার চলে গেলেন ।
আমার ধারনা ভুল ছিল, মেম্বার যাওয়ার পর প্রায় বিশজনের মত রোগী দেখেছি ।
বিকেলে পাকা রাস্তার পশ্চিম দিকে হেটে আসলাম । আসলেই অনেক সুন্দর । রাহাত প্রায় বলত, রুমমেট আমার কচুয়া অনেক সুন্দর। আমি বলতাম দুর , কচু সুন্দর । কিন্তু আজকে মনে হল মিথ্যা বলে নি । অনেকবার আসতে বলেছিল কিন্তু আসিনি। আজকে নিজের প্রয়োজনে আসলাম। রাহাত থাকলে আরও ভাল লাগত।
মাগরিবের আজান হয়ে গেছে , পাশেই মসজিদ ছিল । নামাজ পড়ে রুমে ফিরলাম । সারাদিনের ক্লান্তির কারনে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম ।
তিন
এক সপ্তাহ হয়ে গেল রাজাপুর , সারাদিন রোগি দেখি আর তেমন কাজ নেই।আজকে তেমন ভীড় নেই, রোগি অনেক কম। সাবসেন্টারের পিছনে যাওয়াই হয়নি।মকবুলকে রুমে রেখে আমি বের হলাম। পূর্বপাশের পকুর পাড় রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করে সবাই।আমি সে রাস্তা ধরে সামনে হাটা শুরু করলাম।একপাশে আখক্ষেত।আখক্ষেত শেষ হতেই রাস্তাটা বাক নিয়ে পূর্বদিকে গেছে ।আমি সে দিকেই এগিয়ে গেলাম। রাস্তার শেষ মাথায় অর্থাৎ যেখানে পুকুর শেষ সেখানে একটি কবরস্থান । পাচ ছয়টা কবর হবে । তার মধ্যে পুকর পাড়ের সাথে লাগানো একটি কবরে খুব সুন্দর করে বাশের বেড়া দেওয়া।কবরের ঘাসগুলো অনেক বড় হয়ে গেছে। কবরস্থানের সামনেই একটি বাড়ি। আমার রুম থেকে বাড়িটি দেখা যায় কিন্তু কবরস্থানটি বুজাই যায় না। আমি আর সামনে না গিয়ে রুমে চলে আসলাম ।
আজকে বাড়ি যাব। তাই একটু তারাতারি চেম্বার থেকে বের হওয়ার কথা ভাবছিলাম।
-ভাইয়া , আমার মা অসুস্থ । আমাদের বাড়িতে একটু আসবেন ?
ভাইয়া ডাক শুনে তাকালাম। তের চৌদ্দ বছরের একটি মেয়ে দরজায় দাঁড়ানো ।গ্রামে যে কেউ আসুক হয়ত স্যার অথবা ডাক্তার সাব ডাকে কিন্তু মেয়েটি ভাইয়া বলে ডাকাতে একটু অবাক হলাম । মেয়েটিকে দেখে মায়া লেগে গেল।
-ভাইয়া , একটু তারাতারি আসেন ।
-ও, কি হয়েছে তোমার মায়ের ?
-প্রেসার বেড়ে গেছে মনে হয় ।
-আচ্ছা আমি ঔষুধ দিয়ে দিচ্ছি ।
-না ভাইয়া আপনাকে আসতে হবে ।মা আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।
মেয়েটির কথা আর ফেলতে পারলাম না । ওর সাথে হাটা শুরু করলাম । যাওয়ার সময় জেনেছিলাম মেয়েটির নাম শাহিদা , ক্লাস সেভেন এ পড়ে । পুকুরের সাথের বাড়িটি তাদের। কবরস্থানের কাছে আসতেই একেবারে রাস্তার সাথের কবরটির দিকে একবার তাকিয়ে মেয়েটি বাড়িতে ঢুকে গেল । আমি ও তার সাথে ঢুকলাম ।
আধাপাকা বাড়ি , সামনে বড় উঠান । উঠানের দক্ষিন পাশে একটি রান্না ঘর তার পাশে টিউবওয়েল। দেখে বুজা যাচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবার ।
-ভাইয়া , আপনি আমার রুমে বসেন ,আমি মাকে নিয়ে আসি ।
আমি ঘরের ভিতরে এসে বসলাম । অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে । এক পাশে পড়ার টেবিল , আমি সেই টেবিলে গিয়ে বসলাম। টেবিলে বই গুলা দেখতে ছিলাম হঠাৎ টেবিলের ঘড়িটার দিকে নজর গেল । কেন জানি পরিচিত মনে হচ্ছে । এমন একটা ঘড়ি আমি রাহাতকে তার জন্ম দিনে উপহার দিয়ে ছিলাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি ঘড়িটার পিছনে একটা প্রজাপতির স্টিকার লাগিয়ে দিয়েছিলাম কারন প্রজাপতি রাহাত খুব পছন্দ করত । ঘড়িটা হাতে নিতে যাব এমন সময় পিছনে ডাক শুনতে পেলাম।
-বাবা ,আমার রুমে আইবা কষ্ট করে ?
পিছনে তাকিয়ে দেখি একজন মধ্যবয়সি মহিলা ভিতরের রুম এ দাঁড়িয়ে ডাকছেন । আমি ওনার রুম গিয়ে বসলাম ।
-আসলে বাবা আমার কোন অসুখ নাই , সারাদিন আমার ছেলেটার কথা চিন্তা কইরা অসুস্থ হইয়া পড়ছি। তাই প্রেসারটা বাইড়া গেছে ।
আমি প্রেসার দেখে ঔষুধ লিখতেছি আর চিন্তা করতেছি ওনার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করব ,কিন্তু আবার চিন্তা করলাম এমনি প্রেসার বেশি পরে কোন একদিন শুনে নিব ।
-বাবা, আমার ছেলেটা থাকলে তোমাকে কষ্ট দিতাম না।
- কি হয়েছে আপনার ছেলের?
হঠাৎ করে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম।
কোন উত্তর না পেয়ে মুখের দিকে তাকালাম।ওনি দেখলাম সামনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আর চোখের পানি পড়ছে ।
-ঐ যে দেখ, আমার ছেলে আমার দিকে তাকাই আছে।
আমি মাথা ঘুরিয়ে তাকালাম । জানালার পাশেই একটি ছবি টানানো। নিজের হাতে তোলা ছবি তিন বছর পর এভাবে দেখতে পাব ভাবতেই পারিনি।কালো শার্ট পড়ে একটি ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ,সেই তাকানোর মধ্যে কত অভিমান লুকিয়ে আছে ।এ শার্ট আমি পছন্দ করে কিনে দিয়েছিলাম , আর কে জানত এ শার্ট পড়েই রাহাত চির বিদায় নিবে।আজ থেকে তিন বছর আগে এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে।মাইক্রোবাসের ধাক্কায় রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে গিয়েছিল । রাস্তায় প্রায় বিশ মিনিট পড়ে ছিল ,কেউ ধরেনি । সদ্য এমবিবিএস পাশ করা যে ছেলেটি সারাদিন মানুষের চিকিৎসা দিয়ে আসল তাকেই হাসপাতালে নিয়ে আসার কোন লোক ছিল না । মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরনে চিরদিনের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে যায় রাহাত। রাহাতের মামা গিয়েছিল আনতে। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে করে ক্যাম্পাস থেকে চির বিদায় দিয়েছিলাম।সেদিনের রক্তমাখা মুখটি আজও আমার চোখে ভাসে।
ছবি থেকে চোখ আস্তে আস্তে পুকুর পাড়ের সাথে লাগানো কবরটির দিকে চলে গেল । দখিনা বাতাসে কবরের ঘাসগুলোর ছন্দময় আলোড়ন ক্রমেই ঝাপসা হতে লাগল।
বিষয়: সাহিত্য
১০২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন