চাঁটগাইয়া আঞ্চলিক গান. অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত. (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন চাটগাইয়া নওজোয়ান ০৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৫:৩১:১৯ বিকাল
খুব সম্ভবত ১৯৯৪ সালের কোন একদিন আমার এক বন্ধু দেশে ছুটি কাটিয়ে প্রবাসে ফিরে গেলে তার সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে তার বাসায় যাই সাক্ষাতের এক পর্যায়ে সে আমাকে বলে যে দোস্ত তুমিতো আঞ্চলিক গানের ভক্ত, তোমার জন্য নতুন শিল্পীর কয়েকটি ক্যাসেট নতুন এনেছি. ক্যাসেট গুলি পেয়ে আমি খুব খুশী হই. এরপর বাসায় এসে ক্যাসেটগুলি একটার পর একটা শুনতে থাকি..
সব কয়টি ক্যাসেটের গান শোনার পর আমার মনে হয়েছিল আমি নরকের দরজায় দাড়িয়ে আছি, যেই গান নিয়ে আমরা চাঁটগাবাসীরা গর্ব করতাম যেই গান শুনে নিজেকে বড়ই অপরাধী বলে মনে হলো. গান তো নয় যেন পর্ণোগ্রাফির অডিও শুনছি, গানের কথা ও ভাষা ছিল অশ্লীল ও রুচি বিবর্জিত,. নকল সুর ও যেন তেন ভাবে গাওয়া তথাকথিত এই গানের ক্যাসেট গুলি ভেঙ্গে ডাস্টবিনে ফেলে দিই এবং মনে মনে শপথ করি যতদিন সুস্থ ধারার গান তৈরী হবেনা ততদিন আমার গান শোনার তালিকা থেকে আঞ্চলিক গান বাদ থাকবে....
এরপর থেকে আমি অনেক দিন নতুন আঞ্চলিক গান শোনা থেকে বিরত থাকি, তবে মাঝে মধ্যে সংগ্রহে থাকা পুরাতন আঞ্চলিক গানগুলি শুনতাম, এর মাঝে আবিষ্কার করলাম আমরা এতদিন পুরাতন যে আঞ্চলিক গানগুলি শুনতাম সেই গানগুলি মৌলিক অথবা সম্পূর্ন আঞ্চলিক গান নয়, গানের কথায় ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে বিকৃত করা হয়েছে যা আঞ্চলিক গানে বেমানান. যা হোক, আমিতো ভাষা বিশেষজ্ঞ নই তবুও আঞ্চলিকতার বিকৃতি দেখলে মনে দুঃখ লাগে. ২০০৪ সাল দেশে বেড়াতে এসে বাস যোগে মামার বাড়ী যাচ্ছিলাম সঙ্গে আমার স্ত্রী কন্যাও ছিল বাসটি শহরের প্রান্তসীমা ছাড়িয়ে যখন চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়েক আপন বেগে চলছিল তখনি গাড়ীর সাউন্ড বক্সে গান বাজতে শুরু করল বেশ কিছুক্ষন বাজার পর আমি কান খাড়া করে গানের কথাগুলি শোনার চেষ্টা করলাম.. সত্য বলতে কি গানের কথা ও সুর শুনে আমি অভিভূত না হয়ে পারিনী "ও মামুরে হেড মাষ্টরে তোঁয়ারে তোয়ার" খোঁজ নিয়ে জানলাম গায়কের নাম "সিরাজুল ইসলাম আজাদ" , এই শিল্পীর গান সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে. আমি এর পর ঐ শিল্পীর আরো গান শুনে আঞ্চলিক গানের প্রতি যে অনীহা ছিল তা নিমিষেই উবে যায় ছুটি কাটিয়ে আমি আমার কর্মস্থলে ফিরে যাই খুব সম্ভবত ২০০৬ সালে শিল্পীর আরেকটি এলবাম বাজারে আসে. ভিডিও মিউজিকে শিল্পীকে দেখলাম , "শোনরে সাধনের বৈদ্য/গাছ ফাডা বৈদ্য" গানের সাথে সাথে অভিনয় করতে, https://m.youtube.com/watch?v=6t-fIa_Ryxc&sns=fb সঙ্গে আরো ছিলেন সাইফুদ্দিন পারভেজ ও দিলীপ হোড়. আমার মনে একটি শংকা ছিল অপসংস্কৃতির কবলে পড়ে আঞ্চলিক গান বোধহয় হারিয়ে যাবে তবে যত দিন "সিরাজুল ইসলাম আজাদরা" এই জগতে আছেন অন্তত তত দিন এই অঙ্গন নিরাপদ থাকবে. https://m.youtube.com/watch?v=TJrksdjsqrQ&sns=fb স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই জাতীয় ভাবে সঙ্গীতাঙ্গন ছিল চট্টগ্রামের দখলে এখনও তা অটুট আছে, তবে যে সংখ্যায় জাতীয় ভাবে চট্টগ্রামের শিল্পীর দাপট ছিল বা আছে সে তুলনায় আঞ্চলিক গানের শিল্পী খুব কম পেয়েছি. https://m.youtube.com/watch?v=4ht09flqzfE রশীদ নিজামী, শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব, শেফালী ঘোষেরা আঞ্চলিক গানের ভিত্তি গড়ে গেছেন...
শ্রদ্ধাভাজন আবদুল গফুর হালির মত গীতিকারের লেখায় হেড মাষ্টর খ্যাত "সিরাজুল ইসলাম আজাদ" সেই ভিত্তিকে আরো মজবুত করবেন তার আপন জাদুময় কন্ঠে, এই প্রত্যাশা সকল চাঁটগাবাসীর...
কয়েকদিন আগে একটি বিপনীতে সিরাজুল ইসলাম আজাদের সাথে সাক্ষাত হয় .. উনাকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে কার্পণ্য করিনি ....
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বের আনাচে কানাচে, একজন চট্টগ্রামবাসী হিসাবে এটাই কামনা করছি....
...... শেষ .......
বিষয়: বিবিধ
৩২৪৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন