﴿قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ﴾

লিখেছেন লিখেছেন হৃদয়ে বাংলাদেশ ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১০:৫৫:১২ সকাল



﴿قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ﴾

১.) বলো,১ তিনি আল্লাহ,২ একক।৩

১) এখানে ‘বলো’ শব্দে মাধ্যমে প্রথমত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ তাঁকেই প্রশ্ন করা হয়েছিল রব কে? তিনি কেমন? আবার তাঁকেই হুকুম দেয়া হয়েছিল, প্রশ্নের জবাবে আপনি একথা বলুন। কিন্তু রসূলের ﷺ তিরোধানের পর এ সম্বোধনটি প্রত্যেক মু’মিনের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে যায়। রসূলুল্লাহকে (সা.) যে কথা বলার হুকুম দেয়া হয়েছিল এখন সে কথা তাকেই বলতে হবে।

২) অর্থাৎ আমার যে রবের সাথে তোমরা পরিচিত হতে চাও তিনি আর কেউ নন, তিনি হচ্ছেন আল্লাহ। এটি প্রশ্নকারীদের প্রশ্নের প্রথম জবাব। এর অর্থ হচ্ছে, তোমাদের সামনে আমি কোন নতুন রব নিয়ে আসিনি। অন্য সব মাবুদদের ইবাদাত ত্যাগ করে কোন নতুন মাবুদের ইবাদাত করতে আমি তোমাদের বলিনি। বরং আল্লাহ‌ নামে যে সত্তার সাথে তোমরা পরিচিত তিনি সেই সত্তা। আরবদের জন্য ‘আল্লাহ’ শব্দটি কোন নতুন ও অপরিচিত শব্দ ছিল না। প্রাচীনতম কাল থেকে বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টার প্রতিশব্দ হিসেবে তারা আল্লাহ‌ শব্দটি ব্যবহার করে আসছিল। নিজেদের অন্য কোন মাবুদ ও উপাস্য দেবতার সাথে এ শব্দটি সংশ্লিষ্ট করতো না। অন্য মাবুদদের জন্য তারা “ইলাহ” শব্দ ব্যবহার করতো। তারপর আল্লাহ‌ সম্পর্কে তাদের যে আকীদা ছিল তার চমৎকার প্রকাশ ঘটেছিল আবরাহার মক্কা আক্রমণের সময়। সে সময় কা’বা ঘরে ৩৬০টি উপাস্যের মূর্তি ছিল। কিন্তু এ বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য মুশরিকরা তাদের সবাইকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে ছিল। অর্থাৎ তারা নিজেরা ভালোভাবে জানতো, এ সংকটকালে আল্লাহ‌ ছাড়া আর কোন সত্তাই তাদেরকে সাহায্য করতে পারবে না। কা’বা ঘরকেও তারা এসব ইলাহের সাথে সম্পর্কিত করে বায়তুল আ-লিহাহ (ইলাহ--এর বহুবচন) বলতো না বরং আল্লাহর সম্পর্কিত করে একে বলতো বায়তুল্লাহ। আল্লাহ‌ সম্পর্কে আরবের মুশরিকদের আকীদা কি ছিল কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তা বলা হয়েছে। যেমনঃ সূরা যুখরুফে বলা হয়েছেঃ “যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, কে তাদের পয়দা করেছে, তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে আল্লাহ।” (৮৭ আয়াত)

সূরা আনকাবুতে বলা হয়েছেঃ “যদি এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আকাশসমূহ ও যমীনকে কে পয়দা করেছে এবং চাঁদ ও সূর্যকে কে নিয়ন্ত্রিত করে রেখেছে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা বলবে আল্লাহ।............আর যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলেন এবং কার সাহায্যে মৃত পতিত জমিকে সজীবতা দান করলেন, তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে আল্লাহ।” (৬১-৬৩ আয়াত)।

সূরা মু’মিনূনে বলা হয়েছেঃ “এদেরকে জিজ্ঞেস করো, বলো যদি তোমরা জানো, এ যমীন এবং এর সমস্ত জনবসতি কার? এরা অবশ্যি বলবে আল্লাহর।............এদেরকে জিজ্ঞেস করো, সাত আকাশ ও মহাআরশের মালিক কে? এরা অবশ্যি বলবে, আল্লাহ।......এদেরকে জিজ্ঞেস করো, বলো যদি তোমরা জেনে থাকো প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর কার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত? আর কে আশ্রয় দান করেন এবং কার মোকাবিলায় কেউ আশ্রয় দিতে পারেন না? এরা নিশ্চয়ই বলবে, এ ব্যাপারটি তো একমাত্র আল্লাহরই জন্য।” (৮৪-৮৯ আয়াত)

সূরা ইউনুসে বলা হয়েছেঃ “এদেরকে জিজ্ঞেস করো কে তোমাদের আকাশ ও যমীন থেকে রিযিক দেন? তোমরা যে শ্রবণ ও দৃষ্টি ক্ষমতার অধিকারী হয়েছো এগুলো কার ইখতিয়ারভুক্ত? আর কে জীবিতকে মৃত থেকে এবং মৃতকে জীবিত থেকে বের করেন এবং কে এ বিশ্ব ব্যবস্থাপনা চালাচ্ছেন? এরা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ।” (৩১ আয়াত)

অনুরূপভাবে সূরা‌ ইউনুসের আর এক জায়গায় বলা হয়েছেঃ “যখন তোমরা জাহাজে আরোহণ করে অনুকূলে বাতাসে আনন্দ চিত্তে সফর করতে থাকো আর তারপর হঠাৎ প্রতিকূল বাতাসের বেগ বেড়ে যায়, চারদিক থেকে তরঙ্গ আঘাত করতে থাকে এবং মুসাফিররা মনে করতে থাকে, তারা চারদিকে থেকে ঝনঝা পরিবৃত হয়ে পড়েছে, তখন সবাই নিজের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে নিয়ে তাঁরই কাছে দোয়া করতে থাকো এই বলেঃ “হে আল্লাহ‌ যদি তুমি আমাদের এ বিপদ থেকে উদ্ধার করো তাহলে আমরা কৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত হবো। কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে বাঁচিয়ে দেন তখন এই লোকেরাই সত্যচ্যূত হয়ে পৃথিবীতে বিদ্রোহ সৃষ্টির কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।”

সূরা বনী ইসরাঈলে একথাটিরই পুনরাবৃত্তি এভাবে করা হয়েছেঃ “যখন সমুদ্রে তোমাদের ওপর বিপদ আসে তখন সেই একজন ছাড়া আর যাদেরকে তোমরা ডাকতে তারা সবাই হারিয়ে যায়। কিন্তু যখন তিনি তোমাদের বাঁচিয়ে স্থলভাগে পৌঁছিয়ে দেন তখন তোমরা তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।” (৬৭ আয়াত)

এ আয়াতগুলো সামনে রেখে চিন্তা করুন, লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, আপনার সেই রব কে এবং কেমন, যার ইবাদাত বন্দেগী করার জন্য আপনি আমাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন? তিনি এর জবাবে করলেনঃ (আরবী----------) তিনি আল্লাহ! এ জবাব থেকে আপনা আপনি এ অর্থ বের হয়, যাকে তোমরা নিজেরাই নিজেদের ও সারা বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা, প্রভু, আহারদাতা, পরিচালক ও ব্যবস্থাপক বলে মানো এবং কঠিন সংকটময় মুহূর্তে অন্য সব মাবুদদের পরিত্যাগ কর

বিষয়: বিবিধ

১০১২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

355309
২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:১৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
355382
২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০০
হৃদয়ে বাংলাদেশ লিখেছেন : অনেক ধন্যবা। আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File