বখাটে (গল্প)
লিখেছেন লিখেছেন বার্তা কেন্দ্র ০১ আগস্ট, ২০১৫, ০২:৩৪:৪৬ দুপুর
উৎসর্গ : ফখরুল ইসলাম সমকামীকে (ভাকু)
দ্বিতীয় পর্ব:
বিকাল ৫টা ১৫। আজ স্থানীয় ক্লাবের বার্ষিক সভা। “বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি সংসদ” নামের ক্লাবটি গত কয়েক বছর আগে এলাকার যুবক ছেলেরা প্রতিষ্ঠা করে। আসরের সালাতের বিরতির পর প্রোগ্রাম আবার শুরু। মাইকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মসজিদ থেকে মুসল্লিরা একে একে বের হচ্ছে আসরের সালাত আদায় করে।
পুতুল দৌড়াতে দৌড়াতে সোমাদের বাড়ির উঠানে এলো। সবাই ওর দৌড়ান দেখে অবাক হল! মুহুর্তেই উঠানে জঠলা সৃষ্টি হল।
আমাকে এক গ্লাস পানি দাও। পানি দাও। হাঁফাতে হাঁফাতে বলতে থাকে পুতুল।
হাতে পানির গ্লাস থেকে এক চুমুক দিয়ে বলে, সোমাকে বাঁচাও। ওকে তুলে নিয়ে গেছে ফখরুলের দল।
রান্না ঘর থেকে সোমার মা বেরিয়ে এলো বাইরে হৈ চৈ দেখে। পুতুলের কথা শুনে দিল এক চিৎকার! আমার সোমার কী হইছে? আল্লাহ গো, তুমি আমার মেয়েকে রক্ষা করো। ওকে কোথা রেখে এলে? বিলাপ শুরু করে দেয় সোমার মা।
ফখরুলের মা উঠানে বরইয়ের ডালা হাতে ছিল। রোদে শুকাতে দিয়েছে।
পুতুলের কথা শুনে ঘরের মধ্যে ডুকে গেল।
ফখরুলের মা শুনছ? তোমার লম্পট ছেলের কাণ্ড! আমার মেয়ে যদি কিছু হয় তাহলে আমি কাউকে ছাড়ব না!
ফখরুলের পিছনে মেয়ে লাগিয়ে দিয়ে এখন নাটক করা হচ্ছে। তোমার মেয়ে যত নষ্টের মুল। পাড়ার সবাই জানে! ফখরুলের মা জোর গলায় বলতে থাকে।
কোন দিকে গেছে জান? আশরাফ নামের একজন বলে।
ওকে হাত ধরে তুলতে থাকে মোটর বাইকে। দুইটা মোটর সাইকেল ওরা তিনজন। আমি দৌড় দিই। পূর্ব দিকে গেছে।
ক্লাবের লোকজনও এই খবর জানতে পারে। এদিকে আসরের সালাত শেষ হওয়ায় মুসল্লিরাও সোমাদের বাড়ির দিকে আসে।
দিন-দুপুরে ন্যক্কার জনক ঘটনা! এমন একজন মুসল্লি বলে, চলুন। মেয়েটারে বাঁচাতে হবে।
চল সবাই, চল।
আরেক জন বলে, চলুন। দেরি করা যাবে না।
ফখরুল মোটর বাইকে করে বাড়ির দিকে আসে। আগে এলাকার প্রতিক্রিয়া দেখি, তারপরও এগুনো যাবে। পুতুল নামের মেয়েটিকে তো ছেড়ে দেয়া ঠিক হয়নি। প্লান একটু কাঁচা হয়ে গেল? সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে এতক্ষণে।
মোটর বাইকের আওয়াজ শুনে লোকজন তাকায়।
ঐ তো ফখরুল্যা আসতেছে!
বাইক দাড় করায়।
সোমাকে নাকি তুই অপহরণ করছিস? আশরাফ বলে।
কী যা বলছেন? ফখরুল বলে।
সোমার মা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে ফখরুলের দিকে আসে। আমার মেয়ে কোথায় বল? পুতুল কী মিথ্যা বলছে?
সমস্বরে সবাই বলে উঠল, মিথ্যে বলছে, পুতুল?
ফখরুল প্যান্টের পকেটে হাত দেয়। জিনিসটা হাতে ধরে, কিন্তু বের করে না। এখন মোটর বাইকের উপর চড়ে আছে।
আশরাফ চঞ্চলকে ইশারা করে। কানে কানে কিছু বলে।
সবাই কিল ঘুষ মারতে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহবল হয়ে পড়ে। মারের চোটে চিৎ হয়ে মাঠিতে পড়ে যায় ফখরুল। একেবারে গণপিটুনি শুরু। মুরব্বী গোছের একজন বলে উঠে। খামোশ। ফখরুলকে মারলে হবে এখন? আগে সোমাকে উদ্ধার করি।
অন্যজন বলে, ঠিক কথা তো?
আশরাফ বলে, সোমাকে কোথায় নিয়ে গেছে বল?
ফখরুল ভাবতেও পারেনি, এই এলাকায় কেউ তার গায়ে হাত দেবে। নারী ঘটিত স্পর্শকাতর ব্যাপার হওয়ার কারণ সেন্টিমেন্ট বেশি হয়ত।
প্যান্টের অন্য পকেট থেকে মোবাইল বের করে। জুলমত কই তোরা?
বস। আমরা তো এসে গেছি।
ছেড়ে দে সোমাকে। আর এখান থেকে চলে যা। সমস্যা হয়ে গেছে।
কী বলেন বস!
বেশি কথা বলিস সা! যা বলছি তাই কর।
ওকে।
কোথায় আমার সোমা? সোমার মায়ের প্রশ্ন।
পাহাড়ের পাশে। একটা কাছারি ঘরে। বলে ফখরুল।
চল তুই সহ। আশরাফ বলে।
ছেলেরাসহ কয়েকজন মুরব্বী সোমাকে উদ্ধার অভিযানে বের হয়।
পুলিশকেও খবর দেয়া হয়েছে।
রাতে বিচার বসেছে। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সবাই উপস্থিত। বিচারে ফখরুল সোমা এবং তার পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইবে। ভবিষ্যতে আর যাতে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়।
একজন বলে, বিচার আমরা মানি না। ফখরুলকে জুতার মালা দিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরাতে হবে।
আরেকজন বলে, ও চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ। তাই এমন সহজ বিচার করল।
চেয়ারম্যান বলে, তাহলে বিচার আপনার করুন। আমি আসি।
মুরব্বী রহমত আলী বলে, চেয়ারম্যান সাব। ছোটদের কথায় মনে কিছু নিয়েন না।
আপনার বিচারই ঠিক আছে।
পাশ থেকে আরেকজনকে বলে উঠে, ওদের দুজনকে বিয়ে পড়ালে কেমন হয়?
সোমার আব্বা বলে, অসম্ভব। এমন লম্পট ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দেব না।
চেয়ারম্যান সাহেব বলে, তাহলে আমি উঠি। আমার আরেকটা সালিশ আছে।
চঞ্চল বলে, ফখরুলকে এই সুযোগে একটু কানে ধরে উঠ বস করাই ।
কথায় বলে, শরমের চেয়ে মরণ ভাল। ফখরুল সিদ্ধান্ত নেয় আর নয় আপাতত গ্রামে থাকা। সেই অপমানের পর রাতেই ফখরুল কাপড়-চোপড় নিয়ে গ্রাম ছাড়ে।
তার কোন খোঁজ খবর কেউ পেলে দয়া করে জানাবেন....
=সমাপ্ত=
(তবে প্রয়োজনে পর্ব বৃদ্ধি পেতে পারে)
=====
বিষয়: সাহিত্য
১৩৬৭ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাই হোক দ্বিতীয় সংখ্যাও জব্বর। এই সংখ্যার দাম কত?
আর আশরাফ কে? সে কি বার্তা কেন্দ্রে কাজ করে?
(তবে প্রয়োজনে পর্ব বৃদ্ধি পেতে পারে)
মন্তব্য করতে লগইন করুন