বিদআতের পরিচয়, পরিণতি ও ভয়াবহতা + সাথে ডাউনলোড করুন মাত্র এক এমবির একটি চমৎকার ই-বুক
লিখেছেন লিখেছেন ইসলামিক রেডিও ৩০ মার্চ, ২০১৫, ০৮:৪৭:১৭ সকাল
বিদআতের সংজ্ঞা
বিদ‘আত শব্দের শাব্দিক অর্থ নব উদ্ভাবন। প্রখ্যাত ভাষাবিদ ইবনু মানযুর লিখেন : ‘‘বিদ‘আত অর্থ : নতুন সৃষ্ট এবং দীনের পূর্ণতার পর যা উদ্ভাবন করা হয়েছে’’।[1] দ্বিতীয় অর্থটি মূলত পারিভাষিক। ইবনু ফারিস[2] বিদ‘আতের অর্থ লিখেন : পূর্ব নমুনা ব্যতিরেকে কোনো কিছু সৃষ্টি করা, শুরু করা বা প্রচলন করা।[3]
লিসানুল আরব অভিধান থেকে আমরা শাব্দিক অর্থের সাথে সাথে বিদআতের পরিভাষিক অর্থ জানতে পেরেছি। আরেকটু স্পষ্ট হওয়ার জন্য ফিক্বহী পরিভাষায় বিদ‘আতের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয় তা উল্লেখ করা হল :
"البدعة طريقة في الدين مخترعة تضاهي الشرعية يقصد بالسلوك عليها ما يقصد بالطريقة الشرعية".(الاعتصام، الباب الأول في تعريف البدع وبيان معناها...،1-26)
‘‘বিদ‘আত হচ্ছে, দীনের মধ্যে আবিষ্কৃত পদ্ধতি, যা শরয়ী পদ্ধতির সামঞ্জস্য, এই পদ্ধতির উপর চলার সেই উদ্দেশ্য যা শরয়ী পদ্ধতির উপর চলার উদ্দেশ্য।’’[4]
কেউ কেউ বলেন :
‘‘দীনের মধ্যে আবিষ্কৃত পদ্ধতি, যা শরয়ী পদ্ধতির সামঞ্জস্য, এই পদ্ধতির উপর চলার উদ্দেশ্য হলো : আল্লাহ সুব্হানাহুর ইবাদতের মধ্যে বৃদ্ধি করা।’’[5]
শরয়ী পদ্ধতি বলতে ইবাদতের সুন্নাত পদ্ধতি বুঝানো হয়েছে। কেননা সুন্নাত পদ্ধতি বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবাদত জাতীয় যে বিষয়ে তিনি যে পদ্ধতি উম্মতকে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন তাই শরয়ী পদ্ধতি। এর বাইরে কোনো শরয়ী পদ্ধতি নেই। এই অর্থেই আহলুস্সুন্নাহ শব্দের বিপরীতে আহলুল বিদ‘আহ শব্দটি উলামায়ে কেরাম প্রয়োগ করে থাকেন বলে আমরা ইতোপূর্বে দেখে এসেছি।
বিভিন্ন হাদীসে বিদ‘আত বা নব উদ্ভাবিত বিষয় বুঝাতে ‘মুহ্দাসাত’ শব্দটিও ব্যবহার করা হয়েছে, যা একটু পরেই আমরা দেখতে পাব ইনশাআল্লাহ। বিদ‘আত বা মুহদাসাতের শরয়ী সংজ্ঞা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, শরীয়তের পরিভাষায় বিদ‘আত শুধুমাত্র ইবাদত কেন্দ্রিক বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হবে। যে কোনো নব অবিস্কৃত জিনিসের উপর শাব্দিক অর্থে বিদআতের প্রয়োগ করা গেলেও শরয়ী অর্থে তার উপর বিদ‘আত শব্দ প্রয়োগ হবে না এবং তা বিদ‘আত ও মুহদাসাত সংক্রান্ত হাদীসের আওতাধীন হবে না। যেমন ধরুন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটে সওয়ার হয়ে সফর করেছেন, যানবাহনের আবিষ্কার আজ আপনাকে বিমান আরোহন করাচ্ছে, আপনি বিমান আরোহন করে সফর করছেন। বিমান নব আবিষ্কার। উটের পরিবর্তে আপনি বিমান আরোহন করছেন। এটাকে শরয়ী বিদ‘আত বলা যাবে না। কেননা উট বিমান কোনোটি ইবাদত নয়। এটি একটি বাহন মাত্র। তবে বাহনে সওয়ার হতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দো‘আ পড়তেন, তিনি সফরের যে দো‘আ পড়তেন তা ইবাদত। এই দো‘আর মধ্যে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন করার সুযোগ নেই। এই দো‘আ তিনি যে পদ্ধতিতে পড়তেন আমাকেও সেই পদ্ধতিতেই পড়তে হবে। যুক্তির আলোকে এখানে কোনো পরিবর্তন ঘটানো যাবে না। যেমন, উট একটি সাধারণ জন্তু, সে মাটিতে চলে, নবীজী উটে উঠতে এই দো‘আ পড়তেন। আমি আজ আকাশে চড়ছি, এই নেয়ামত অনেক বড়, সুতরাং দো‘আকে একটু বৃদ্ধি করতে হবে। অথবা নবীজী স্বাভাবিকভাবে দো‘আ পড়তেন, কেননা নেয়ামতটি স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু আমার নেয়ামতটি অসাধারণ, তাই বিমানে উঠেই সেজদায় পড়ে এই দো‘আ করতে হবে, অথবা সেজদায় পড়ে দো‘আটি পড়লে ছওয়াব বেশি হবে, এজাতীয় চিন্তাধারা সবই ভ্রান্ত। কেননা দো‘আ একটি ইবাদত। আর ইবাদতের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদ্ধতির বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। গেলেই তা বিদ‘আত বলে গণ্য হবে। মোটকথা : বিদ‘আতের সম্পর্ক ইবাদতের বিষয় ও তার পদ্ধতির সাথে। বস্তুর সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
জনৈক ব্যক্তি একবার এক বিদ‘আত বিরোধী আলেমকে গিয়ে বললেন : আপনারা সবকিছুই শুধু বিদ‘আত বিদ‘আত করেন, তবে আপনি চশমা পরেছেন কেন? আল্লাহর রাসূল কি জীবনে কখনো চশমা পরেছেন? চশমা তো নবীজীর সময়ে ছিল না, তাহলে এটা কি বিদ‘আত নয়? আলেম বললেন : ভাই, তাহলে তো আপনি নিজেই বিদ‘আত। আপনিও তো নবীজীর সময়ে ছিলেন না। বিদ‘আত না বোঝার কারণেই মাঝে মাঝে এমন কৌতুকের সৃষ্টি হয়। চশমা কোনো ইবাদত নয়। তাই এর সাথে বিদআতের কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন লোকটি নিজে কোনো ইবাদত নয়, তাই সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় না থাকা, আবার এখন থাকা বিদ‘আতের বিষয় নয়। যে ইবাদত বা তার পদ্ধতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক প্রমাণিত নয় একমাত্র তার আবিষ্কার শরয়ী পরিভাষায় বিদ‘আত বলে গণ্য হবে।
বিদআতের ভয়াবহ পরিণাম
বিদ‘আত মানেই ক্রমান্বয়ে দীনের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাওয়া। কেননা দীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক অনুমোদিত জীবন পদ্ধতির নাম। তাঁর পদ্ধতি থেকে বিভিন্ন যুক্তির আলোকে যে ব্যক্তি বেরিয়ে পড়ে, সে মূলত দীন থেকেই বেরিয়ে পড়ে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদ্ধতি থেকে যে যতটুকু বের হয়, সে মূলত ততটুকু দীন থেকে বের হয়। তাই এব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে পূর্ব থেকে সতর্ক করে গেছেন, যাতে করে যুক্তির আলোকে কেউ তাঁর দেখানো আদর্শ ও পদ্ধতি থেকে সরে না যায়। ইরবায ইবন সারিয়া আসসুলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
" وعظنا رسول الله صلى الله عليه و سلم يوما بعد صلاة الغداة موعظة بليغة ذرفت منها العيون ووجلت منها القلوب فقال رجل : إن هذه موعظة مودع فماذا تعهد إلينا يا رسول الله ؟ قال : أوصيكم بتقوى الله والسمع والطاعة وإن عبد حبشي فإنه من يعش منكم يرى اختلافا كثيرا وإياكم ومحدثات الأمور فإنها ضلالة فمن أدرك ذلك منكم فعليه بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين عضوا عليها بالنواجذ ". (سنن الترمذي، كتاب العلم عن رسول الله، باب ما جاء في الاخذ بالسنة واجتناب البدعة، رقم:2676)
‘‘একদিন ফজরের সালাতের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী নসীহত করলেন, এতে সবার চোখে অশ্রু বয়ে গেল, হৃদয়গুলো ভীত শঙ্কিত হলো। এক লোক বলে উঠল : নিশ্চয় এটি বিদায়ী নসীহত, অতএব আপনি আমাদের থেকে কী অঙ্গিকার নিবেন হে আল্লাহর রাসূল? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি অর্জনের ওসিয়্যত (অঙ্গিকার, গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ) করছি, নেতার কথা মান্য ও তাঁর আনুগত্যের নির্দেশ দিচ্ছি, যদিও সে হাবশী দাস হয়। কেননা তোমাদের মধ্যে যে জীবিত থাকবে সে অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। আর তোমরা সব নব অবিস্কৃত বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে, কেননা এগুলো পথভ্রষ্টতা। তোমাদের মধ্যে যে এই অবস্থা পাবে সে যেন আমার সুন্নাত এবং খুলাফায়ে রাশিদিনের সুন্নাত আকড়ে ধরে। তোমরা সুন্নাতকে মাড়ির দাঁত দিয়ে আকড়ে ধর।’’[6]
বিস্তারিত আরোও পড়ুন ও মাত্র এক এমবির একটি চমৎকার ই-বুক ডাউনলোড করুন এখানে
বিষয়: বিবিধ
১২১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন