বাবরি মসজিদ ও আমরা

লিখেছেন লিখেছেন ইসলামিক রেডিও ২৫ মার্চ, ২০১৫, ০১:১২:৪৩ রাত



আমরা সবাই অযোধ্যার "বাবরী মসজিদ"- এর নাম শুনেছি । কিন্তু আমরা কি জানি এ মসজিদের নির্মাতা কে ? হ্যা , তিনি আর কেউ নন । ভারতবর্ষের মহান মুঘল সম্রাট জহিরুদ্দীন মুহাম্মদ বাবর ।

ভারত বিজয়ের পর সম্রাট বাবর কিছু মসজিদ নির্মানের ব্যাবস্থা করেন । বিখ্যাত বাবরী মসজিদ তার মধ্য্র অন্যতম । বাবরী মসজিদটি ১৫২৭ সালে নির্মান করা হয় । মসজিদটির অবস্থান ছিলো ভারতের উত্তর প্রদেশের ৈফজাবাদ জেলার অযোধ্যা শহরে । এ মসজিদটি এখন কেবলি ইতিহাস । উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা মসজিদটি ধ্বংশ করা হয় , সাল ১৯৯২ ।

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর মসজিদটির নিকটে হিন্দুরা একটি রাজনৈতিক সভা ডাকে । দেড় লাখ লোক এ সভায় যোগ দিয়েছিলো। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিলো মসজিদের কোন ক্ষতি করা হবে না । কিন্তু তা কেবল কাগজে কলমেই । কারন ঐ সভায়ই অত্যন্ত বর্বরের মত হিন্দুরা প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এ মসজিদকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় । শুরু করা হয় দাঙ্গা । এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০০০ এর মত মুসলিম হত্যা করা হয় ভারতের বিভিন্ন অংশে । এখানে আমার একটা কথা আছে । "দাঙ্গা" বলা হবে তখনই যখন দুই পক্ষই অপর পক্ষকে ক্ষতি করতে বদ্ধপরিকর হবে । কিন্তু ভারতে যতগুলো দাঙ্গার খবর পাওয়া যায় তাতে মুসলিম সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কারো তেমন কোন ক্ষতির খবর পাওয়া যায় না । কাজেই আমরা বলতে পারি এ স্রেফ গনহত্যা । গুজরাট গনহত্যাও একই নজির স্থাপন করে ।

বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার পেছনে হিন্দুদের যুক্তি ছিলো , সম্রাট বাবর নাকি রাম মন্দিরের যায়গায় বাবরী মসজিদ নির্মান করেছেন ! অথচ প্রত্নতত্ববিদরা বাবরী মসজিদের জায়গায় রামমন্দিরের অবস্থানকে হাস্যকর এবং অযৌক্তিক বলেছেন । তাছাড়া আমরা পুর্বেই বলেছি বাবর হিন্দুদের অত্যাচার করা তো দূরের কথা বরং তাদের নির্বিঘ্নে মুঘল সাম্রাজ্যে বসবাসের অনুমতি দেন ।

এ মর্মান্তিক ঘটনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাও লিবারহান কমিশন গঠন করেন । যদিও এ কমিশনকে প্রভাবিত করার ব্যার্থ চেষ্টা তিনি করেন । কমিশন ২০০৯ সালের ৩০ জুন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছে প্রতিবেতন জমা করে । কিন্তু তা চাপা দেয়ার ব্যাবস্থা করা হয় । পরে এ কমিশনের রিপোর্ট "দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস" ফাঁস করলে সমগ্র ভারতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে । লিবারহান কমিশনের এ রিপোর্টে বলা হয় , ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনাটি একটি পূর্বপরিকল্না ছিলো । এ রিপোর্টে ৩ জন ভারতীয় হিন্দু নেতার নাম উল্ল্যেখ করা হয় ।

অর্থাৎ বোঝা গেলো , রামমন্দিদের দাবিটি সম্পূর্ন অবাস্তব এবং বাবরী মসজিদটি ভাঙ্গাও কোন দাঙ্গা ছিলো না । এটা ছিলো তৎকালীন ভারতীয় রাজনীতিক ও উগ্র হিন্দুদের একটি ষড়যন্ত্র । এরপরেও সবচেয়ে বড় চমক ছিলো ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরে এলাহাবাদ হাইকোর্টের মামলার রায় । এ রায়ে বাবরী মসজিদের মোট ভূমিকে ৩ ভাগে ভাগ করে ২ ভাগ হিন্দুদের দেয়া হয় । আর ১ ভাগ মুসলিমদের । কি ন্যায়বিচার ! এ রায়ে সমগ্র বিশ্ব হতবাক হয়ে যায় ।

এবার কিছু ব্যাক্তিগত কথা বলি । যখন আমি খুব ছোট , তখন বড়দের মুখে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার কথা শুনতাম । সে সময় কিছুই বুঝতাম না । ২০১০ এর দিকেও কিছু শুনেছি , তবে তা মনে তেমন দাগ কাটেনি । কারন তখন জানতামই না বাবরী মসজিদের ইতিহাস কিংবা হিন্দু মুসলিমদের এ জটিল সম্পর্কের কথা । সম্রাট বাবরকে নিয়ে পড়াশোনা করার সময় বাবরী মসজিদ আর বাবরের ভেতর নামের দিক থেকে মিল চোখে পড়লো । তারপর সব পরিস্কার হলো । আমরা যে সময়ের ইতিহাস আলোচনা করছিলম , আজকের ইতিহাস সে সময়ের না । তারও বহু পরের ইতিহাস । তবে ভাবলাম এ বিষয়টা একটু বলে যাওয়াই ভালো ।

এ লেখাটা লেখার সময় ব্যক্তিগতভাবে খারাপ লেগেছে । কারণ আমি জানি মুসলিমরা কেবল বিজয়েই অভ্যস্ত । পরাজয় আমাদের কাছে পরিচিত ছিলো না । কিন্তু আমরা আজ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছি যে, পবিত্র একটা মসজিদ আমরা রক্ষা করতে পারিনি । যাই হোক, জয় যেমন আমাদের ইতিহাসের অংশ, ঠিক তেমনি পরাজয়ের গ্লানিও আমাদেরই ইতিহাসের অংশ । এ বিশ্বাস থেকেই লেখাটা লেখা ।...

বিষয়: বিবিধ

১৮৯৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

310963
২৫ মার্চ ২০১৫ রাত ০২:১০
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : পড়ে খুব ভাল লাগলো , সুন্দর ইতিহাসিক লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ Good Luck Good Luck

২৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:২২
252409
ইসলামিক রেডিও লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
310993
২৫ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:৩৬
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : এটাকে অনেকে 'Communal violence' বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে থাকে অথচ তা কখনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল না, তা ছিল সম্পূর্ণভাবে 'anti muslim violence' বা মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা। কেননা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তখনি বলা যায়, যখন দুই পক্ষই একে অপরকে মারে মরে। কিন্তু ভারত মুসলমানের উপর হিন্দুদের নির্যাতন, মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর বৌদ্ধদের, চীনা সরকারের উইঘুর মুসলমানদের উপর নির্যাতন কোনভাবেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয়, প্রত্যেকটা মুসলিম নিধন অভিযান!
২৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:২২
252410
ইসলামিক রেডিও লিখেছেন : খুব ভালো বলেছেন। জাঝাকাল্লাহ।
311013
২৫ মার্চ ২০১৫ সকাল ১০:৫৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই বাবরি মসজিদ এর উপর তাদের শত বছর ধরে লোভ ছিল। রাম এর জন্মভুমি বর্তমান অযোধ্যা কোনভাবেই হতে পারেনা।
২৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:২৩
252411
ইসলামিক রেডিও লিখেছেন : হুম...
311037
২৫ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০২:১৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : মুরুব্বীদের প্রায় বলতে শুনি "হিন্দুদের বগলের নিচে ইট" অর্থাৎ এরা কথনো মুসলমানদের ভালো চায় না, সুযোগ পেলেই ইট নিক্ষেপ করবেই। আমাদের দেশের মুসলিমরা শান্ত বলে বাংলার হিন্দুরা সুখেই দিন কাটছে, অপু উকিলের মত যৌন-ইটপাটকেল এমপিরাও পার পায়, ছোর-রঞ্জিত বাদুর রাও পার পেয়ে যাচ্ছে দেবতায় বিশ্বাসী প্রধান মন্ত্রীর বদান্যতায়। অথচ হিন্দু প্রধান দেশ ভারতে মুসলমানদের অবস্থা শোচনীয়। কিছু দিন পরপর অকাতরে জিবন বিলিয়ে দিয়ে হচ্ছে। এর পরও দেবতা প্রেমী নামের মুসলিমরা ভারত প্রেমে মুগ্ধ। তাদের হুশ ফিরিয়ে আসুক এই কামনা করছি। সুন্দর পোষ্টটির জন্য জাযাকাল্লাহ খাইর
২৭ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৯:২৩
252412
ইসলামিক রেডিও লিখেছেন : ওয়াইয়্যাকা আইজন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File