১২ বছরের টিউশনি জীবন ও কিছু বিচিত্র অভিজ্ঞতা...
লিখেছেন লিখেছেন দিল মোহাম্মদ মামুন ১১ মে, ২০১৫, ০৬:৩২:৫৭ সন্ধ্যা
স্কুলের এক অনুষ্ঠানে আরব-আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের নিকট থেকে পুরুষ্কার গ্রহন করতেছি....
২০০৩ সালে এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ করে বাড়িতে অলস সময় পার করতে লাগলাম কারণ ফল প্রকাশের জন্য আরোও প্রায় তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে! সারাদিন ঘুরাফেরা, পত্রিকা, গল্পের বই, ইসলামিক বই পড়ে এবং বাবাকে কৃষিকাজে সহযোগীতার মাধ্যমেই আমার সময় অতিবাহিত হতে লাগলো।পার্শ্বের বাড়ির আমার এক জেঠিমা একদিন আম্মুকে বললেন, আমার ২টা নাতনী কে পড়ানোর জন্য কোথাও ভাল টিউটর খুজে পাচ্ছিনা, মামুনের এস.এস.সি পরীক্ষাতো শেষ, আমার ২টা নাতনী কে ১ ঘন্টা করে সময় দিতে পারবে কিনা একটু জিজ্ঞেস করিও।
পরিবারের সবাই যখন রাতের খাবার খেতে বসলাম, তখন আম্মু জেঠিমার কথাটা বললেন। কথাটা শুনে একটু লজ্জাবোধ করলেও আম্মুর উৎসাহ মূলক কিছু কথা শুনে রাজি হয়ে গেলাম। ১লা মে বিকাল চারটায় টিউশনিতে গেলাম, জীবনের ১ম টিউশন বলেই খুব বেশি নার্ভাস ফিল করলাম যদিও বাড়িতে ছোট ভাই-বোনকে নিয়মিতই পড়াতাম! এই পরিবারের সাথে আমি ছোট কাল থেকেই পরিচিত, পড়ার টেবিলে আমার ২ জন ছাত্রী অপেক্ষারত ছিল, তারা ছোট থেকেই আমাকে কাকা(চাচা) ড়াকতো বলে এখন হঠাৎ স্যার ড়াকতে সংকোচ বোধ করলো, তাই আমিও তাদেরকে স্যার না বলে কাকাই ড়াকতে বললাম।ওরা ছাত্রী হিসেবে খুব বেশি মেধাবী না হলেও একেবারে মেধাহীন ছিলনা। তাই আমি আমার মত করে একজন দায়িত্ববান টিউটরের মতই পড়াতে লাগলাম। অল্পদিনের মধ্যেই একজন ভাল টিউটর হিসেবে এলাকায় আমার নাম ছড়িয়ে পড়লো।
দুই মাসের মধ্যে আরোও ২টা টিউশন পেয়ে গেলাম....এভাবে সময় যত অতিবাহিত হতে লাগলো, আমার ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা ও বাড়তে লাগলো। পরবর্তিতে অবস্থা এমন হয়ে গেল, কারো বাসায় গিয়ে পড়ানোর মত সময় ও আমার হাতে অবশিষ্ট রইলো না। আমার এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটা ক্লাসেই আমার ছাত্র-ছাত্রী ছিল। সকালবেলা দুই ব্যাচ এবং বিকাল বেলা এক ব্যাচ (প্রতি ব্যাচে ৮ জন করে) আমার ঘরে এসে পড়তো, শুধু তিনটা টিউশন বাসায় গিয়ে পড়াতাম।
যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখার প্রতি মনযোগী ছিল, তাদের ফলাফল দেখে আমার এতই ভাল লাগতো যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না, তখন মনে হতো আমার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে, কারণ পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের ভাল ফলাফল করানোর জন্য এতবেশি ব্যস্ততার মধ্যে সময় অতিবাহিত করতাম, তখন নিজের প্রতি ও ছোট ভাই-বোনের প্রতি যত্ননিতেও ভুলে যেতাম। এই জন্য মাঝেমাঝে আম্মু-আব্বুর বকা ও শুনতে হত!
আমি ১৪ই জানুয়ারি ২০১০ইং থেকে আবুধাবিতে কর্মরত আছি। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত একটা ইসলামিক অনুষ্ঠানে একজন অভিবাবকের সাথে আমার পরিচয় হলো। কথা প্রসংগে উনি আমার বিস্তারিত জিজ্ঞেস করার পর আমাকে উনার বাসার ঠিকানা দিয়ে সন্ধায় বাসায় আসতে বললেন। আমি মাগরিবের নামায শেষ করে উনার বাসায় উপস্থিত হলাম। উনি খুব আন্তরিকতার সহিত আমার সাথে কথা বললেন, অনেক মেহমানদারি করলেন এবং শেষে উনার পঞ্চম শ্রেণীতে পডুয়া বাচ্চাকে পড়াতে বললেন। উনার বাচ্ছা "শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল এন্ড কলেজ(ইংলিশ মিডিয়াম) এ পঞ্চমশ্রেণীতে পড়ে। জীবনে প্রথমবারের মত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্র পড়াতে গিয়ে নার্ভাস পিল করলাম। ছাত্রটা মোটামুটি মেধাবী ছিল, তবুও টিউশনিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকার সুবাদে আমি আমার মত করে পড়াতে লাগলাম। আলহামদুলিল্লাহ্ আমার ছাত্রটা পি.এস.সি তে গোল্ডেন এ+ পেল। তার রেজাল্টে কে কেমন খুশি হয়েছে তা জানিনা, তবে আমার খুশির কোন সীমা ছিলনা! ছাত্রের অভিবাবক আমার খুব প্রশংসা করলেন, ফলস্বরুপ একের পর এক অনেক গুলো নতুন টিউশন পেয়ে গেলাম। আমি মনে করি এইগুলো সবই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার জন্য নিয়ামত বিশেষ, তাই সকল প্রসংশা শুধুই আল্লাহর। বর্তমানে আবুধাবির "শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল এন্ড কলেজ(ইংলিশ মিডিয়াম) এর ২য় শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেনী(একাউন্টিং) পর্যন্ত আমার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে।
দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে তোলা কোন ছবি না থাকার কারনে শুধুমাত্র প্রবাসের অনেক গুলো ছাত্রের মধ্যে কিছু ছাত্রের ছবি পোষ্ট করলাম।তবে দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের ভুলিনাই, তাদের সাথে এখনো যোগাযোগ হয়।
[img]http://www.monitorbd.net
সন্ধা ৬ টায় অফিস ছুটির পর থেকে রাত ১১:৩০ পর্যন্ত টিউশনিতে ব্যস্ত থাকতে হয়। বাংলাদেশের মত প্রবাস জীবনেও এইভাবে টিউশনি নিয়ে ব্যস্ত থাকবো তা কোনদিন কল্পনাও করিনি, সমস্ত প্রসংশা শুধুই মহান আল্লাহর। আমি ছাত্র-ছাত্রীদের শুধুমাত্র পাঠ্যবই অধ্যায়ন এর মধ্যে ব্যস্ত রাখতাম না। তাদের কে নানান রকমের ইসলামিক সাহিত্য, কোরানের তাফসির ও হাদিস পড়তে উৎসাহিত করতাম। নামায পড়তে ও পিতা-মাতার কথা মনযোগ দিয়ে শুনতে বলতাম, এখনো বলি....হেদায়াতের মালিক তো আল্লাহ, আমার দায়িত্ব শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ দাওয়াত দিয়ে যাওয়া।
প্রবাসে দীর্ঘ ৫ বছরের টিউশনি জীবনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের নানান রকমের অভিবাকদের সাথে মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে, এরা কেউ অনেক ভাল চাকুরী করেন, কেউ ব্যবসায়ী, এই অভিবাকদের বেশির ভাগই দেশে কোটিপতি। প্রবাসে টিউশনির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অভিবাকদের সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা কম নয়! তাও বিচিত্র অভিজ্ঞতা!
পরের পোষ্টে শুধু বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লিখবো...
অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন...
http://www.monitorbd.net/blog/blogdetail/detail/10481/4341216/65302#.VWUojZ6oXqA
বিষয়: বিবিধ
১০৬০৫ বার পঠিত, ৬২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটি ছবিতে সম্ভবত জুশান আবদুল্লাহ কে দেখা যাচ্ছে। আমাদের প্রিয় ব্লগার নজরুলইসলাম টিপু ভাই এর সন্তান।
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর। আল্লাহ
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর। আল্লাহ আপনার মিশন জারী রাখুন।
আপনার লিখা পড়ে অনেক আশাবাদী হলাম।দোয়াকরি আপনার মিশন এগিয়ে জাক।
সর্ব শেষ পড়িয়েছি ঢাকা সিটি কলেজের বিকমের এক ছাত্রকে এবং সেটাই আমার শেষ টিউশানি।
সেই ছাত্রকে আমি এসএসসিতেও পড়িয়েছি। এসএসসিতে পড়ানর সময় একটা বিব্রতকর অবস্থায় পরে তাকে পড়ান খান্ত দিয়েছিলাম আর বিকমে পড়াতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে কোনদিন আর টিউশানি করব না বলে খান্ত দিয়েছি এবং এখনও অটল আছি। কিন্তু এখন কেন যেন মাঝে মধ্যে আবার টিউশুনি করতে মঞ্চায়।
মাজার বিষয় হল আমার সীমিত ছাত্রছাত্রীর মাঝে ২ জন ডাক্তার এবং দুইজন ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে আর একজন ঢাবি থেকে সমাজ বিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছে।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আশা করছি আপনার এই লেখা পড়ে শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। আপনার সাথে যোগাযোগ করার ইচ্ছে হচ্ছে যদি সম্ভব হয় ফেসবুক আইডি দিবেন।
আমার ফেইসবুকের আইডি হচ্ছে
Dil Mohammed Mamun
ভালো লাগলো মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে মহান পেশায় আপনাকে নিয়োজিত রেখেছেন জেনে! অনেক অনেক শুকরিয়া ও শুভকামনা রইলো!
দৈত্যরাজের পরের পর্বগুলো ব্লগে দিবার জন্য অনুরোধ করছি।
এমন অনেক হয়েছে ছাত্র আমার থেকে অনেক বড়।
তাছাড়া ছোট বিধায় অনেকে টিউশনি দেয়নি কারন ছেলেপেলে ভয় পাবেনা।
ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
কষ্ট করে আমার লিখাটা পড়েছেন এবং আপনার ভাল লেগেছে, এটাই আমার লিখার সার্থকতা। সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পুরাই মাথানষ্ট অবস্থা ! ১০-৬ টা , তারপর আবার ৬-১১.৩০ টা !!!!
একেবারে শুরুর লাইনটাই মাথা নষ্ট করে দিয়েছে ম্যান !
০ এই লোকটাকে মহামান্য না বললে কি আরব আমিরাতে টেকা কঠিন হয়ে যাবে ?
আমরা যারা দেশে আছে তারা আপনাদেরই মুখে শুনি যে ঐসব দেশে বাংলাদেশের রাষ্টদূতেরা স্বদেশীদের প্রতি খুব একটা কেয়ার করে না যেটা অন্যান্য দেশেররা করে । এটা একটা মিথ হয়ে গেছে ।
যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশীদেরকে ''মিসকিন'' বলে এবং খুব look down upon করে ।
কারণ দেশে তো বটেই বিদেশেও এসব ''মহামান্যরা '' স্বদেশীদেরকে নিয়ে কোন পজিটিভ কিছু করেন না ।
ফেইসবুকে আমি রাষ্ট্রদূত কে নিয়ে একবার একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম,ঐ পোষ্টে আমি রাষ্ট্রদূতের সাথে কোন বিশেষণ লাগাইনি বলে আওয়ামী মার্কা লোকদের মাঝে অনেক সমালোচিত হয়ে ছিলাম, পরে পোষ্ট টাও ডিলেট করে দিয়েছিলাম। আর আমার কয়েকটা টিউশন আছে, যাদের অভিবাবক কট্টর লীগ। তাই মূলত তাদেরকেই পাম্প দিয়ে বিশেষন টা লাগিয়েছি। রাষ্ট্রদূত লোকটাকে মোটামুটি ভদ্র পরিবারের বলতে পারেন,কিন্তু উনার পাশে লীগের যে চামচা গুলো আছে, তারা উনার চেয়েও পাওয়ারপুল!!! আর তাদের ব্যবহার ভাষায় প্রকাশ করার মত না। বড় ভাই হিসেবে আপনি যে পরামর্শ টা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী বিশেষন টা রিমুভ করে দিব, ঐটা সাময়িক ছিল।
আশা করি আপনার উত্তর পেয়েছেন....আবারও আপনাকে সুন্দর বিশ্লেষণ মুলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনি তো তাহলে অনেক এলাকার লোকের সাথে মিশেছেন তাদের সম্পর্কে লিখবেন ভাইয়া । কোন এলাকার মানুষের কেমন আচার- আচরন আমার জানতে খুব ভাল লাগে ।
অভিজ্ঞতা পড়ার অপেক্ষায়..........
বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুলের চাত্রা-ছাত্রী এবং স্কুলের ছবি দেখে খুব ভালো লাগলো। আমার মেয়ে ঐ স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে। আমি নিজেও দীর্ঘদিন স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত মেম্বার এবং ট্রেজারার ছিলাম। আমাদের সময় স্কুলের ব্যাপক উন্নয়ন ও দ্বিতীয় ভবনটি নির্মিত হয়।
দোয়া করবেন, যেন এই পেশার মযাদা ধরে রাখতে পারি।ভাইয়া আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ,
মন্তব্য করতে লগইন করুন