পালাবো কোথায় ???

লিখেছেন লিখেছেন নান্দিনী ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:৫৫:৫৭ রাত

তখন খুব ছোটো ছিলাম,আম্মার কাছ থেকে শুনতাম মৃত্যু,আজরাঈল,কিয়ামত,হাশর,ইত্যাদি,,যা মুসলিম হিসেবে বিশ্বাস করা অতি গুরুত্বপূর্ণ । সেই ছোট্ট আমিও বিশ্বাস করতাম এসব,করতে হতো,,হ্যা,,আলহামদুলিল্লাহ,এখনো এসব বিশ্বাস করি মনে প্রাণে । তবে ছোটো বেলার সেই আমির চিন্তাভাবনা আর বর্তমানের আমির চিন্তাভাবনা বিস্তর পার্থক্য রয়েছে ।

ছোটোবেলা খুব ভাবতাম,যখন আজরাঈল (আঃ) আসবেন,তখন আমি কোথায় কেমনে লোকাবো,,কিন্তু কোনোদিনও এতো চিন্তা করেও এমন কোনো নিরাপদ জায়গা খুজে পাইনি,যেখানে লুকালে আজরাঈল আমাকে পাবে না,সুতরাং জানও কবজ করতে পারবে না,আমিও মরবো না ।

তবুও প্রতিয়ত চিন্তা করতাম,কোনো কূল পেতাম না ।

এখন আর এসব চিন্তা করি না,তবে সেই সময়ের চিন্তাভাবনার কথাগুলা মনে পরলে খুব হাসি পায় ।

ছোটোবেলা আমরা কতোই না বোকা ছিলাম !!!

আমরা কি আসলেই বোকা ছিলাম ?? এখনকার কোনো ছোটো শিশু (আমার মতো সেই বয়সের) কি আমার মতো এমন ভাবনা চিন্তা করে ?? এখনকার শিশুদের মনে এমনসব চিন্তাভাবনা ঢোকার সুযোগ আছে ???

নাই,,একদম সত্য কথা,,কারন আমাদের ছোটোবেলা কেটেছে আম্মার আচলে লুকিয়ে,আব্বুকে জড়িয়ে শুয়ে গল্প শুনে শুনে,সেই সব গল্প ছিলো বীর যুদ্ধাদের,সাহসী বীর দের,,সেখানে ছিলো নেপোলিয়ান থেকে শুরু করে নবী রাসুল পর্যন্ত । আমরা শুনতাম বিভিন্ন নবী রাসুলের জীবনি,বুযুর্গুর জীবনি,কোরআনের বিভিন্ন সূরার বিষয়বস্তু গল্পাকারে,যেমন আবাবীল পাখির গল্প,মান্না সালওয়ার গল্প ইত্যাদি ।

আমরা যা শুনতাম, তাই নিয়ে চিন্তাভাবনা করতাম,,এখনকার শিশুরাও যা শুনে,যা দেখে তাই নিয়েই চিন্তাভাবনা করে,সেভাবেই জীবন গঠন করে । একটা শিশুর সকাল থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত কাটে মা এর সাথে,যে মা সদা ব্যস্ত বিভিন্ন হিন্দি-বাংলা সিরিয়াল নিয়ে ।এই শিশু যতো বড় হবে,তার মন-মগজ এসবই ধারন করবে,,এখানে আর হাশর নশর নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ কোথায় ??

পাপ পূণ্য নিয়ে ভাবার সুযোগ কোথায় ? তাদের চিন্তা জগত দখন করে নিচ্ছে ডরিমন,শিবা আর মটো পাটলো,,চাচা চৌধুরি বা সাবুর কোনো চান্সই নাই সেখানে,,এরা তো বরং এখন অনর্গল হিন্দি কথা বলতেও পারে ।

.

.

.

একটু যখন বড়ো হলাম,বুঝতে পারলাম আজরাঈল থেকে পালানো অসম্ভব,,তখন আম্মা বকাঝকা করলে,মারলেই দিতাম দৌড়,এক দৌড়ে রাস্তায় । অপেক্ষা করতাম,কখন রাত হবে,আব্বা আসবেন,আব্বার সাথে ঘরে যাবো (যদিও আব্বা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগতো না,পরিস্থিতি শান্ত মনে হলে চলে আসতাম নিজেই :p ) তখন খুব চিন্তা করতাম,রবিনসন ক্রুশোর মতো চলে যাবো দূরের কোনো দেশে,কেউ খুঁজে পাবে না,আরো চিন্তা করতাম সেখানে কিভাবে একা একা থাকবো,কিভাবে জঙ্গল থেকে খাবার খুঁজে আনবো,কোনো বন্যপশু বা বন্যমানুষ থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবো ইত্যাদি । আরো ভাবতাম,যদি আমিও কোনো ফ্রাইডে পেয়ে যাই,তাহলে কেমন হবে ? আচ্ছা আম্মা আব্বা ভাই এরা কি আমাকে খুব খুঁজবে ? আমাকে না পেলে ওরা কি করবে ইত্যাদি ইত্যাদি হিজি বিজি ।

মাঝে মাঝে তিন গোয়েন্দার কথা চিন্তা করে ভাবতাম আমেরিকা চলে যাবো,ওদের সাথে যোগ দিবো গোয়েন্দাগিরি করতে ।

আমাদের সেই ছোটোবেলার ভাবনা চিন্তাগুলা ছিলো কতোই না স্বচ্ছ,কতোই না প্রাণবন্ত ।

এখনকার কিশোর কিশোরিরা এসব ভাবে? ওদেরও কি ইচ্ছে করে কিশোর পাশা বা রবিনসন ক্রুশো হতে ??

সে সুযোগ কোথায় ?? ওদের মনে চিন্তা জগতে এখন ওমুক তমুক গান নাচের কম্পিটিশনে প্রথম হওয়া সেই "সেলিব্রেটি" র চিন্তা,তাকেই তারা "আইডল" ভেবে বসে আছে,কিশোর পাশা বা রবিনসনের সেখানো কোনো চান্সই নাই ।

.

.

.

.

.

ছোটো বেলা আজরাঈল থেকে পালানোর ফন্দি করার চিন্তা করতাম (যা অসম্ভব এবং অবাস্তব) এখনও পালানোর চিন্তা করি তবে আজরাঈল এর কাছ থেকে নয়,নিজের জীবন থেকে । মাঝে মাঝেই অতিষ্ট লাগে । এখন প্রায়ই মনে হয় রবিনসনের মতো দূর্গম সাগর তীরে বা পাহাড়েই বসবাস করা উচিত,যেখানে থাকবে না কোনো মানুষরুপি জানোয়ারের ছায়া । বন্য জন্তু গোলাও এই মানুষরুপি অমানুষ গুলা থেকে ভালো আছে ।

কিন্তু এটাও অসম্ভব আর অবাস্তব,,তাই এখন সত্যি সত্যি অপেক্ষা করি,কবে আজরাঈল আসবে,আর এই দুনিয়া থেকে মুক্তি মিলবে,আর স্বাক্ষাত ঘটবে আমার রবের সাথে । ইয়া ইলাহি, মাফ করো আমাদের ।

বার বার যে ভূমিকম্প হচ্ছে,আমরা সবাই ভয় পাই,আমিও ভয় পাই । তবে আমি এখন চিন্তা করি,পরিবারের সবাই একসাথে মরে গেলে মন্দ হয় না ।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366352
২০ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১২:১০
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : আমার বাচ্চা কাচ্চা নাই, বুঝতাছিনা, বাচ্চাদের নিয়া কি কমেন্ট করুম।
366353
২০ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১২:১২
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : খুব সাধারণ চিন্তাগুলো যে কত অসাধারণ হতে পারে, সেটাই প্রমাণ করলেন ভাইয়া। আসলে আমিও অনেক ভয় পাই। আমরা যদি ভূমিকম্পের মত আল্লাহকে একটু ভয় পেতাম তাহলে হয়ত ভূমিকম্পটাও বন্ধ হয়ে যেত। রাতে ইদানিং ঘুমাতেই আমার ভয় লাগে কেননা হাদিস বলা হয়েছে, যখন কোন জনপদের উপর আল্লাহ আযাব পাঠান, সেখানে বসবাসরত মুমিন, পাপাচারী সকলের উপরেই সমানভাবে সেই শাস্তি আরোপ হয়। তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ মানুষের নিয়ত দেখে ফয়সালা করবেন। তাই আমার ইবাদত বন্দেগী এই বিপদে কতটুকু কার্যকর বলেন? কিছু লোকের পাপাচারের জন্য গোটা সমাজটাকেই শাস্তির স্বাদ নিতে হবে।
366373
২০ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০১:১৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
366379
২০ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০১:৩০
শেখের পোলা লিখেছেন : ভাল লাগল৷ এমন কল্পনা অনেকের মাথাতেই এসে থাকবে৷ বর্তমান জামানার ছেলে মেয়েরা ভাবে অন্য কিছু৷ তাদের ভাবার সময়ও কম, কারণ মোবাইলের মাঝেই বেশীক্ষন ডুবে থাকতে হয়৷ ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File