২৮ অক্টোবরের অমলীন স্মৃতি; আমার অনুপ্রেরনার উৎস
লিখেছেন লিখেছেন অনিবার্য বিপ্লবের ইশতেহার ২৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৫:১১:০৩ বিকাল
২৮ অক্টোবর, ২০০৬। আমার জীবনের স্মরনীয় একটা দিন। অামরা তখন সবেমাত্র মিন্টু রোডের সরকারী বাসভবন ছেড়ে মগবাজারের ভাড়া বাসায় উঠেছি। মগবাজারে অধ্যাপক গোলাম আযমের যে বিল্ডিং, তারই একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলাম আমরা।
ঐদিন সারাটা সময় রাজপথেই ছিলাম। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে নিরাপদেই থাকতে পেরেছিলাম। রাজপথের লড়াইতে আমাদের ভাইরা জীবন বাজি রেখে জয়ী হলেন। কিন্তু সন্ধার পর থেকে এক মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারনা হলো। চারিদিকে শুধু আহত নিহত ভাইয়েরা, তাদের চিৎকার সর্বত্র। আহত ভাইদের যে সব হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল মোটামুটি তার সবগুলোই পরিদর্শন করার সুযোগ আমার হয়েছিল। ইসলামী ব্যাংক কাকরাইল হাসপাতালের অবস্থা হয়েছিল অনেকটা যুদ্ধকালীন হাসপাতালের মত। স্ট্রেচারে করে একের পর এক আহত ভাইরা আসছেন, একেক জনের তুলনায় আরেক জনের অবস্থা করুন। চোখে দেখা যায় না সেই সব ভয়াবহ দৃশ্য।
গেলাম ইবনে সিনায়। সেখানে আমাদের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল ইসলাম বুলবুল, মুজিবুর রহমান মঞ্জু, ড, শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ড.রেজাউল করিমসহ অসংখ্য আহত নেতা কর্মী ভর্তি ছিলেন। ২৮ অক্টোবরের আন্দোলনের একটা বড় বৈশিষ্ট ছিল সংগঠনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দও সেদিন কর্মীদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে রাজপথে লড়াই করেছিলেন।
ইবনে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন শহীদ সাইফুল্লাহ মোহাম্মাদ মাসুম। মাসুম বয়সে আমার ছোট ছিল। ওকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না। কিন্তু যতদিন মাসুম জীবিত ছিল, কেন যেন প্রতিদিন আইসিইউতে গিয়ে আমি দেখেছি ওকে। আমাদের মধ্যে অনেকেই দেখি প্রায়শই মিশরের ফিলিস্তিনের মহিলাদের ত্যাগ, তাদের সাহস ও ধৈর্য্যের প্রশংসা করেন। আমি আমার জীবনে মাসুমের মা অর্থাৎ রুবি চাচীর মত সাহসী আর ধৈর্য্যশীলা নারী কম দেখেছি। তিনি জানতেন মাসুম নাও ফিরে আসতে পারে কেননা মাসুম মাথায় আঘাত পাওয়ার পর যে কয়দিন ছিল পৃথিবীতে, ওর জ্ঞান ছিলনা। ও ছিল কোমায়। কিন্তু তার মাকে কোনদিন আমি ভেঙ্গে পড়তে দেখিনি।
শহীদ মাসুমের শাহাদাতের পর সবুজবাগে ওদের বাসায় যে দোয়া অনুষ্ঠান হয়, তাতেও অংশ নেয়ার সুযোগ আল্লাহ রাব্বুল আলমীন আমায় দিয়েছিলেন। সেখানেও ওর অভিভাবকদের আমি চরম ধৈর্য্য ধারন করতে দেখেছি। এরপর আমি বেশ কয়েকবার শহীদ শিপন ভাইদের বাসায়ও গিয়েছি। ইসলামী আন্দোলনের জন্য এই পরিবারগুলোর যে আবেগ তা অামাকে আজও আন্দোলিত করে।
মহান আল্লাহ ২৮ অক্টোবরের সব শহীদদের আত্মত্যাগ কবুল করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন