কিশোর কিশোরীর আত্মহত্যা ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা -এম মিজান রহমান
লিখেছেন লিখেছেন এম মিজান রহমান ২৬ অক্টোবর, ২০১৪, ০১:৩৪:২০ দুপুর
ঘটনাঃ ১
- রাকিব পড়ালেখা করে শহরের
নামি দামি একটি শিক্ষা প্রতিষ্টানের নবম শ্রেনিতে । পড়ালেখায় সে তেমন বেশী আগ্রহী নয় ।প্রতিদিন স্কুলে শিক্ষকদের পড়া না পারায় কড়া শাসন , সহপাঠিদের ঘৃণাদৃষ্টি,বাড়ি
তে রোজকার বকাবকি ও শাসনের যন্ত্রনায় একদিন নির্জন রাতে নিজ বাড়ির বাগানের একটি গাছের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে
ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করে সে ।আর এভাবেই ঝরে যায় একটি কোমল প্রাণ......
ঘটনাঃ ২
- ক্লাস টেনে পড়ুয়া সুজন তার্ একই ক্লাসের রূপা নামের একটি মেয়েকে প্রচন্ড ভালবাসতো ।
(আধুনিকতায় যাকে আবেগ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না)
রিলেশনের এক পর্যায়ে রূপা সুজনকে ঘৃণা করতে শুরু করে ।সুজন এটাকে মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করে ।
এভাবেই ফুটার আগেই ঝরে যায়
একটি ফুলের পাঁপড়ি...
ঘটনাঃ ৩
-প্রতিদিনকার মত বখাটেরা উত্তক্তের একপর্যায়ে আলাদা কক্ষে নিয়ে জোড়পূর্বক ধর্ষন করল একাদশ শ্রেনির ছাত্রী মৌমিতাকে... ।পরদিন সকালে মৌমিতাকে পাওয়া যায় তার
বাড়ির একটি নির্জন কক্ষের
সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলানো...
উপরের তিনটি ঘটনা সাম্প্রতিক
সময়ের আত্মহত্যার শিরোনামে প্রায়ই দেখা যায় ।মানসিক চাপে, কিশোর/ কিশোরীরা প্রেমে ব্যর্থ
হয়ে (যা একমাত্র আবেগ থেকেই সৃষ্ট, বাস্তবতায় এসে হারিয়ে যায়), ইভটিজিংয়ের শিকার, কোন কাজে ব্যর্থ হয়ে ভেঙ্গে পড়ে নিজের মনোবল টিক রাখতে না পারা ,দারিদ্রতা, পরীক্ষায় ফেল করা ইত্যাদি হচ্ছে বর্তমান সময়ের কিশোর/কিশোরীদের আত্মহত্যার মূল ইস্যু ।যা অনেকটা না বুঝেই করে থাকে ওরা.....
ইসলামে আত্মহত্যা হলো মহাপাপ।
আল্লাহ মানুষকে মরণশীল
করে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই মৃত্যু
ঘটান। কিন্তু আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বান্দা স্বাভাবিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে নিজের হাতে নিয়ে নিজেই নিজেকে হত্যা করে ফেলে। এ কারণে এটি একটি গর্হিত কাজ।
আল্লাহর দেয়া প্রাণ ও আয়ুষ্কাল
একটি বিরাট নিয়ামত (পুরস্কার)
এবং পরকালের জন্য ভালো কাজ করার সীমিত অবকাশ।
একে যারা স্বহস্তে ধ্বংস করে তাদের ওপর স্রষ্টার ক্রোধ আপতিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী। তাই আল্লাহ তা’আলা তা মোটেই পছন্দ করেন না। এ কারণে যদিও
শরিয়তে আত্মহত্যাকারীর জানাযা হয়, কিন্তু কোন বড় আলেম তা পড়ান না কেননা, এই ধরনের জানাযা রাসূল (সা.) নিজে পড়াননি। নগন্য কোন
ব্যক্তি দ্বারা তা পড়ানো হয়।
মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র
কোরআনে এ প্রসঙ্গে ঘোষণা দেন-
“তোমরা নিজেকে হত্যা করো না।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর দয়ালু। আর যে বাড়াবাড়ি ও জুলুমের মাধ্যমে এ কাজ করবে,
তাকে আমি আগুনে পোড়াবো। আর এ কাজ করা আল্লাহর
পক্ষে সহজতর।” (সূরা নিসা-২৯-৩০)
উল্লেখিত আয়াতে আল্লাহ তাআলা আত্মহননকে নিরুৎসাহিত করার
পাশাপাশি ঘৃন্য এ কাজের পরিণামেরও চূড়ান্ত দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
আত্মহনন কেবল সকল নির্যাতন-
নিপীড়নের বিরুদ্ধে একমাত্র সমাধান হতে পারে না। কারণ মানব জীবন অতি মূল্যবান।
স্রষ্টা যে উদ্দেশ্যে মানবজাতি বিস্তারের মাধ্যমে পৃথিবীকে সৃজন করেছেন, সে উদ্দেশ্যের ফলাফল হয় বিধানের পরিপন্থী। যার পরিণতি হয় অত্যন্ত ভয়াবহ।
হযরত জুনদুব ইবন আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু
দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলল। তারপর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়।আল্লাহ বলেন, আমার
বান্দা নিজেকে হত্যা করার
ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করল। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম” (বুখারী)।
এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন-
“যে ফাঁসি লাগিয়ে বা গলা টিপে আত্মহত্যা করে, জাহান্নামে সে নিজেই নিজেকে অনুরূপভাবে শাস্তি দিবে। আর যে ব্যক্তি বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে জাহান্নামেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দিবে।” (বুখারী,
হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত)
আত্মহত্যা সম্পর্কে রাসূল (সা.)
আরো বলেন- “যে ব্যক্তি বিষপান
করে আত্মহত্যা করেছে সেও
জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজ হাতে বিষপান করতে থাকবে।”
অন্য হাদিসে নবী (সা.) বলেন,
“যে ব্যক্তি কোন ধারালো অস্ত্র
দ্বারা আত্মহত্যা করে তাকে সে অস্ত্র দিয়েই দোযখের
মধ্যে শাস্তি দেয়া হবে।” (বুখারী)
আইনে আত্মহননের চেষ্টা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কাউকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া আরও বড় অপরাধ।
যেহেতু এই বয়সের কিশোর/
কিশোরীরা আবেগের বশে চলেন সেহেতু প্রতিটি পরিবারের অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের সবসময় নিজেদের খেয়ালের আওতায় রাখা ।
সন্তানের চাল-চলন, সংঙ্গ, সমসাময়িক চিন্তাধারা সম্পর্কে সবর্দা তত্পর থাকা ।তাদের সাথে বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করা । কিশোর কিশোরীদেরও বোঝা উচিত নিজেকে নিয়ে, নিজের ভাল মন্দকে।
যতদূর সম্ভব আবেগকে প্রশ্রয়
না দিয়ে বাস্তবতাটাকে বিশ্বাস
করা ।বাস্তবতায় ফিরে আসা উচিত...
এ ব্যাপারে শিক্ষক শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ও মসজিদের ইমামগন নসিয়ত করে এ আত্মহত্যার প্রতি নিরুত্সাহিত
করতে বিরাট ভুমিকা রাখতে পারেন ।
তাছাড়া আমাদের সবাইকে সচেনতন থাকতে হবে ।
আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায়
করি মানুষ হিসেবে সৃষ্টির জন্যে ।
হেদায়ত প্রার্থনা করি ঐসব
নিবোর্ধদের জন্যে ....
______
(সিলেট ,বাংলাদেশ)
বিষয়: বিবিধ
৯৭৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন