Rose Good Luck পেন্সিলে লিখা বাবার ডায়েরি (ধারাবাহিক উপন্যাসঃ পর্ব-৩৩) Rose Good Luck

লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৯:২০:১৮ সকাল

ওরা এলো দু’মাস পরে।

নিঃশব্দ এক রাতের আঁধারে ঝড়ের গতিতে বিভীষিকা ফেলার জন্য। চল্লিশজন যুবক। সাথে অত্যাধুনিক অস্ত্র। সকলের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। পরণেও কালো পোশাক। আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢাকা সাক্ষাৎ যমের প্রতিনিধি যেন ওরা।

চেয়ারম্যান বাড়ি ওরা ঘিরে ফেললো।

পাঁচটি ছোট বড় টিনের দোতলা ঘর। ভিতরে একটি আয়তাকার উঠানকে ঘিরে সবগুলো ঘর। বাতাবি লেবুর গাছ রয়েছে একটি। একেবারে পশ্চিম পাশের কাছারি ঘরটিকে শাখা-প্রশাখায় আকড়িয়ে রেখেছে এই গাছটি। সবুজ পাতার আড়ালে সাদা ফুলগুলোর চমৎকার ঘ্রাণ রাতের নিস্তব্ধ প্রকৃতিকে মনোহর করে তুললেও ‘বাহিনী টানার’ জন্য যারা এসেছে তাদেরকে একটুও উন্মুখ করতে পারলো না।

এরা ছিল সবাই রক্তের ঘ্রাণে উন্মত্ত একদল হায়েনা। প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ একজনের নেতৃত্বে এরা ভয়ংকর রকম উত্তেজিত ছিল। তাই এদের নাসারন্ধ্রে কোনো ধরণের সুঘ্রাণ ভালোলাগার কোণ অনুভূতি এনে দিতে পারলো না।

এদের দলপতির নাম ‘গাল কাটা শেখর’।

উঠানের একেবারে মাঝখানে একটি কাঠের চেয়ার এনে দেয়া হল তাঁকে সাথের ঘরটির মাটির বারান্দা থেকে। সে বসার পর প্রতিটি ঘরের সামনে উদ্যত স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রগুলোর নীলচে-কালো নলের মুখে বাড়ির সকল পুরুষদেরকে উঠানে বের করে আনা হল। মহিলা এবং শিশুদেরকে অভয় দেয়া হল। তাঁরা যতক্ষণ ঘরের ভিতরে অবস্থান করবে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না জানানো হল।

পুরুষদেরকে সারি বেঁধে মাটিতে বসিয়ে রাখা হল। চেয়ারম্যান নুরু খলীফাকে ওদের থেকে একটু দূরে অন্য একটা কাঠের চেয়ারে বসতে দেয়া হল। দুটির লীডার লোকটি সকল পুরুষ সদস্যদেরকে বের করে আনা হয়েছে কিনা সাথের প্রকান্ড গোঁফওয়ালা কালো ছেলেটিকে ইশারায় জানতে চাইলে সে উপর নীচে মাথা নাড়ায়। এরপর অন্য একজনকে ইশারা করতেই সে তার পকেট থেকে একটুকরো কাগজ বের করে। অদূরে মাটিতে বসে থাকা এই বাড়ির একজন সদস্যকে কয়েকটি নাম পড়ে শোনায়। ওদের বাড়ি দেখিয়ে দিতে বলে। ওর সাথে দশ জনের অস্ত্রধারী একটি দল চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

রাত তখন সাড়ে এগারোটা বেজে যায় দশজনের ঐ দলটিকে ফিরে আসতে। তখন তাদের সদস্য সংখ্যা মোট পনেরতে দাঁড়িয়েছে। নতুন চারজনকেও মাটিতে বসে থাকা দলের সাথে বসানো হয়।

সবাই নিশ্চুপ। মাটিতে বসা দলটিকে ঘিরে এই আক্রমনকারী দলটি অবস্থান নেয়।

চেয়ারম্যান নুরু খলীফা তার স্বভাবসুলভ ভারিক্কী স্বরে জানতে চান এরা কি চায়? এবং তাদেরকে এভাবে রাতের আঁধারে কেন ঘর থেকে বের করা হয়েছে? এরা ডাকাত কিনা?

লীডার লোকটি কোনো কথা বলে না। ওর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড খুব সুন্দর চেহারার এক যুবক লীডারের দিকে সম্মতির জন্য তাকায়। চোখের পাতা ফেলে সে সম্মতি দেয়। এবার পুরো দলটি কি এক অজানা কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। নিজেদের হাতের অস্ত্র আরো একবার হাত বদল করে অস্ত্রের দৃঢ়তা অনুভব করে। বোধহয় আরো কিছু শক্তিকে উপলব্ধি করার জন্য।

নুরু খলীফা আরো একবার জানতে চায় আসলে কি করতে চাচ্ছে এরা। জবাবে তার পিছনে থাকা দু’জন সদস্যের একজন তার হাতের এ.কে. ফর্টিসেভেন অ্যাসল্ট রাইফেলের নলটি তার ঘাড়ে ঠেকিয়ে রাখে। একটু ব্যথাও দেয়। তার প্রতিক্রিয়ায় একই সাথে ক্রোধে এবং ব্যথায় উস্মা প্রকাশ করলেও পরিস্থিতি যে তাদের অনুকূলে নয় সেটা বুঝতে পেরে তিনি শান্ত হয়ে যান। তার চোখে এই প্রথম ভয়ের ছায়া দেখা যায়। লীডার ‘গাল কাটা শেখর’ নুরু খলীফাকে এতক্ষন তার কালো কাপড়ে ঢাকা মুখোশের একমাত্র অনাবৃত চোখ দুটো দিয়ে দেখছিল। দুটি চোখের একটি ছিল ভাবলেশহীন... পাথরের মত নির্বাক। তার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠেই মিলিয়ে যায়। সাথের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের দিকে তাকায়।

এবার দৃশ্যপটে আসে সে।

এর নাম জহির। তার সাথের পীঠে ঝোলানো ব্যাগ থেকে একটি ফুলস্কেপ কাগজ বের করে। সেখান থেকে দেখে দেখে সে পড়ে যেতে থাকে।

এরা ছিল বিপ্লবী কম্যুনিস্ট পার্টির একটি দল। যারা প্রথমবারের মত এই এলাকায় তাদের বাহিনী নিয়ে এসেছে শ্রেণিশত্রু খতমের এক মিশনে। পার্টির নাম উল্লেখ করে সে এখানে আসার কারণ জানায়। বাসেত সহ আরো যে চারজনকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে এদের কৃতকর্ম উল্লেখ করে তাদের অপরাধের ফিরিস্তি শোনায়। এলাকায় নিজেদের ক্ষমতার দম্ভে তারা কবে কি অন্যায় অত্যাচার করেছে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে জানায়। যেহেতু পার্টি সর্বহারাদের কে ন্যায় প্রদানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তাই এদের হাতে এই এলাকার যত গরীব মানুষ অন্যায়ের শিকার হয়েছে, আজ তার বদলা নেয়া হবে।

সব শেষে বিপ্লবী কম্যুনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে এই পাঁচজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হল। এদেরকে আজ এইখানে ‘খতম’ করা হবে। যাতে করে এলাকার অন্য কেউ গরীব সর্বহারাদের বিরুদ্ধে অন্যায়-অত্যাচার করার সুযোগ না পায়। এই রায় বিপ্লবী কম্যুনিস্ট পার্টির হাইকমান্ডের দ্বারা অনুমোদিত এটা জানিয়ে অভিযুক্ত পাঁচজনকে জিজ্ঞাসা করা হল তাঁরা দোষী না নির্দোষ?

রাতের আঁধারে ঘুমন্ত এই মানুষগুলো একেই চরম বিব্রত অবস্থায় ছিল। এরপর তাদের জীবনে এরকম ঘটনা এই প্রথম হয়েছে। আজীবন ক্ষমতার ঘেরাটোপে থাকায় এরা স্বপ্নেও কখনো ভাবতে পারেনি তাদের সাথে এরকম কিছু হতে পারে।

তাই হ্যাজাক লাইটের আলোয় এক মধ্যরাতে মৃত্যুর ঘোষণাকারী যখন তাদেরকে জানতে চাইলো তাঁরা তাদের দোষ স্বীকার করেছে কিনা, হতবিহবল এই পাঁচজন কি বলবে ভেবে পেলনা।

তাঁরা নিশ্চুপ রইলো।

লীডারের নির্দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দায়িত্বে যারা ছিল তাঁরা এগিয়ে এলো।

পাঁচজনের হাত-পা সাথে আনা শক্ত রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হল। একমাত্র বাসেত ছাড়া বাকী চারজন অনেক ধস্তাধস্তি করলো। চীৎকার করে কান্না শুরু করল। কিন্তু মুখ বাঁধার আগ পর্যন্ত যা শব্দ হল। এরপর ভীতিকর গোঙ্গানির সাথে সাথে তাঁরা কেঁপে উঠতে লাগল আসন্ন মৃত্যুর কথা ভেবে। নুরু খলীফা লীডারের কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করলো। তার সকল টাকা-পয়সা সোনা-দানার বিনিময়ে এদেরকে ছেড়ে দেবার অনুরোধ জানালো। কিন্তু কেউই তার কথায় কোনরূপ কর্ণপাত করলো না।

পাঁচজনকে উঠানের একটু নির্জন যায়গায় নিয়ে যাওয়া হল।

বাসেতের সামনে প্রচণ্ড ধারালো গরু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে একে একে চারজনকে ঘাড়ের দিক থেকে কেটে মাথা আলাদা করে ফেলা হল।

এরপর বাসেতকেও একই ভাবে জবেহ করা হল। পাঁচজনের লাশকে উঠানে সারিবদ্ধভাবে রেখে যার যার মাথা তাদের নিজেদের হাতে ধরিয়ে রাখা হল।

কি বীভৎস ছিল সেই দৃশ্য!

নুরু খলীফা সহ চেয়ারম্যান বাড়িরঅন্য পুরুষেরা এই দৃশ্য সহ্য করতে পারলো না। কয়েকজন বমি করতে করতে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললো। শুধু নুরু খলীফা শেষ পর্যন্ত শক্ত রইলো। ওরা খতমের মিশন শেষ করে যখন চলে যাচ্ছিল তখন নুরু খলীফা পিছন থেকে লীডার লোকটিকে উচ্চস্বরে জানতে চাইলো-

‘কেন এরকম করলা? কে তুমি?’

উত্তরে প্রচণ্ড গম্ভীর স্বরে লিডার লোকটি বলল-

‘আমি কেউ না। একসময় কেউ হয়তো ছিলাম। তবে এখন আমার নাম গাল কাটা শেখর।‘

নুরু খলীফা আলো-আঁধারের মাঝে এক বিষম সময়ের ভিতরে থাকলেও লিডারকে তার কেমন যেন চেনা চেনা মনে হয়। তাঁকে পেছনে রেখে চলে যাওয়া বিপ্লবী কম্যুনিস্ট পার্টির এই দলটির লীডার লোকটিকে একবারে শেষ সময়ে তিনি চিনতে পারেন। অস্ফুটে নিজের মনে উচ্চারণ করেন, ‘মনির!’

মিথিলা বাবু!

হ্যা, এই লীডার লোকটি আর কেউ ছিল না। সে তোমার চাচা মনির ছিল। আমার বড় চাচার বড় ছেলে। তবে ইতোমধ্যে সে ‘গাল কাটা শেখরে’ পরিণত হয়েছিল। ওকে বিপ্লবী কম্যুনিস্ট পার্টির এক আঞ্চলিক নেতা বানিয়ে ডুমুরিয়া অঞ্চল থেকে এই দলটিকে নিয়ন্ত্রণ করা দলের শীর্ষস্থানীয় মানুষটি শেষ পর্যন্ত আমার গ্রামটিকে কব্জা করায় এক ধাপ এগিয়ে গেলো!

মনির হাসপাতাল থেকে কোথায় গায়েব হয়েছিল এবার বুঝতে পারলাম। ‘ম’ আদ্যাক্ষরের ঐ নেতার লোকজন সবসময়েই যে আমাদের খবরাখবর রাখছিল সেটা বুঝতে পারলেও এভাবে এতো তাড়াতাড়ি যে ওরা মাঠে নেমে পড়বে ভাবিনি।

ঐ রাতে আমাদের পুরা গ্রামের জায়গায় জায়গায় পার্টির লিফলেট আর পোস্টার দিয়ে ছেয়ে দেয়া হল। থানায় চিঠি দিয়ে পার্টির পক্ষ থেকে সকল দায়দায়িত্ব স্বীকার করা হল। রাতেই খুলনার সকল পত্রিকা অফিসে ফ্যাক করে হত্যার দায় স্বীকার করে নেয়া হল। আমাদের থানার পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যানের পদলেহী উল্লেখ করে পরবর্তী তার্গেট যে সে হবে এই মর্মে চিঠি লিখে সতর্ক করা হল। গ্রামবাসীকে লিফলেটের দ্বারা জানানো হল এই এলাকায় অত্যাচারিদের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করতেই বিপ্লবী কম্যুনিস্ট পার্টি তাদের ঘাঁটি বানাতে চায়। সাধারণ গ্রামবাসীদের সাথে তাদের কোনরূপ শত্রুতা নেই। শ্রেণিহীন এক সমাজ তৈরী করতে গ্রামবাসী যেন পার্টিকে তাদের নৈতিক সমর্থন দেয় সে ব্যাপারে উদাত্ত আহ্বান করা হল।

এই ঘটনার পর মনিরের সাথে এলাকার আরো যুবকেরা যোগ দিলো। এরা প্রত্যেকেই ছিল চেয়ারম্যান বাড়ির ছেলেদের কিংবা তাদের পক্ষভুক্ত শক্তিশালী অন্য পরিবারগুলোর অত্যাচারের শিকার। তাই নিজেদের অন্তরের জ্বালা মিটানোর জন্য এবং নিজেরাও একধরণের রোমাঞ্চকর অদেখা জীবনের স্বাদ নিতে চরমপন্থি দলটির সদস্য হতে চাইলো।

এই ‘পাচ-মার্ডারের’ ঘটনা দেশব্যাপী প্রচণ্ড আলোড়ন তুলল। কিন্তু সরকার তখন নিজেরাই ছিল চরম বেকায়দায়। বি.এন.পি সরকার তখন বিরোধী আওয়ামী লীগের তত্তাবধায়ক সরকারের দাবীতে ব্যতিব্যস্ত ছিল। তাই চরমপন্থীদলের বেপরোয়া মনোভাব দেখেও তখন কিছু করতে চাইলো না। আর এই দলগুলোর কয়েকটিই সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে ছিল বিরোধী আওয়ামী লীগের আন্দোলনকে দমানোর কাজে সরকারকে সাহায্যের জন্য।

নুরু খলীফা সেই ঘটনার পরে একেবারে ভেঙ্গে পড়লেন। এক ছেলেকে সেই আমাদের ছেলেবেলায় খুন হতে দেখেছেন। আজ এতো বছর পরে নিজের চোখের সামনে বড় ছেলেরও একই অবস্থা দেখে নিজেকে সামলাতে পারলেন না। বিছানায় পড়ে গেলেন। একমাত্র ছেলে রশীদ প্রকাশ্যে ভয় পেলেও ভিতরে ভিতরে সে ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ চিন্তায় পাগল হয়ে ছিল। কিন্তু ওর বাবা মনিরকে চিনলেও সে কথা কাউকে জানায়নি। এরকম এক চরম খারাপ মানসিক অবস্থার ভিতর দিয়ে চেয়ারম্যান বাড়ির সদস্যরা দিন পার করছিল।

মিথিলা বাবু!

মনিরের এই অবস্থার জন্য কাকে দায়ী করা যায়? প্রচলিত ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থা? সামন্তবাদী মনোভাবে উন্মত্ত ক্ষমতাশালী ক্ষুদে বুর্জোয়াদের? নাকি ক্ষমতাসীনদের পদলেহী পুলিশ-প্রশাসনকে তাদের নির্জীবতার জন্য দায়ী করব?

সামান্য জমির একহাত সীমানাকে কেন্দ্র করে পুরো একটা গ্রামের আর্থ-সামাজিক কাঠামো এভাবে ভেঙ্গে পড়বে? আইনের হাত যখন সঠিক পদক্ষেপ না নেয়, তখন বাধ্য হয়েই আইন খারাপ হাতে চলে যায়। নিজের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে তখন তো আর বুক পেতে দিয়ে নিজের ধ্বংসকে চেয়ে চেয়ে দেখা যায় না।

মনিরের উপর অনেক অত্যাচার হয়েছিল। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে বিপ্লবের নামে সাধারণ জনগনকে বিভ্রান্ত করার একটি সুযোগকে কাজে লাগালো উচ্চাভিলাষী কয়েকজন তাত্ত্বিক নেতা।

মিথিলা বাবু!

মাও সে তুং বলেছেন, “ যদি বিপ্লব করতে হয় তাহলে একটি বিপ্লবী পার্টি থাকতে হবে। বিপ্লবী পার্টি ছাড়া, মার্কবাদী-লেনিনবাদী বিপ্লবী তত্ত্বে ও বিপ্লবী রীতিতে গড়ে ওঠা, একটি বিপ্লবী পার্টি ছাড়া শ্রমিক শ্রেণি ও ব্যাপক জনসাধারণকে সাম্রাজ্যবাদ অ তার পদলেহী কুকুরদের পরাজিত করতে নেতৃত্ব দান করা অসম্ভব।“

কিন্তু আমাদের দেশে গতানুগতিক যে মার্কসবাদী নামধারী পার্টি ছিল তা ‘মস্কোপন্থী’ ও ‘পিকিংপন্থী’ নামধারী দুই উপদলে বিভক্ত হয়ে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছিল। এ ব্যাপারে তোমায় পরে বলছি।

মার্কস ও এঙ্গেলস মার্কসবাদের প্রতিষ্ঠাতা। লেনিন মার্কসবাদকে সাম্রাজ্যবাদী যুগে সর্বহারা বিপ্লবে পরিচালনার গুরুতবপুর্ণ প্রশ্নের সমাধান করেন, সর্বপ্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশের প্রতিষ্ঠা করেন, মার্কসবাদ-লেনিনবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। স্তালিন লেনিনবাদকে রক্ষা করেন ও সর্বহারা বিপ্লবের কতকগুলো গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নের সমাধান করেন। সভাপতি মাওসেতুং প্রতিভার সঙ্গে সৃজনশীলভাবে ও সামগ্রিকভাবে মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে উত্ত্রাধিকারসূত্রে লাভ করেছেন, রক্ষা করেছেন ও বিকাশ করেছেন। তিনি এই মতবাদকে এক নতুন পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। তিনি সমাধান করেছেন, কিভাবে সমাজতান্ত্রিক দেশে ধনতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রতিরোধ করা যায় এবং যে সকল দেশে ধনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানকার সর্বহারা বিপ্লবীরা কিভাবে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে পারে। তিনি প্রতিভার সঙ্গে দুনিয়ার প্রথম মহান সর্বহারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা ও পরিচালনা করেন। এভাবে তিনি মার্কসবাদকে এক সম্পুর্ণ নতুন স্তরে উন্নীত করেন, যে স্তর হল মাওসেতুং চিন্তাধারার স্তর।

মিথিলা বাবু!

পরবর্তীতে কমিউনিস্ট আন্দোলনে এক নতুন ধরণের সংশোধনবাদ দেখা দেয়। এরা মুখে মাওসেতুং এর বুলি ঝাড়ে এবং কাজে তার বিরোধিতা করে। কথায় ও কাগজে মাওসেতুং চিন্তানুসারী ও অনুশীলনে সংশোধনাদী পথ অনুসারী। মাওসেতুং চিন্তাধারার মুখোশ এঁটে জনগনকে ও বিপ্লবীদের ধোঁকা দেয়ার বুর্জোয়া দালালদের এ এক অভিনব কারসাজি ছিল। যা কতিপয় তাত্ত্বিকদের নিজস্ব লাভের জন্য করা হয়েছিল।

আমরা যে সময় পার করছিলাম, সেই সময়ে এই সংশোধনবাদীরা আরো এক বিকৃত রূপ নিয়ে পার্টির নামে আন্দোলনের বারোটা বাজিয়ে চলেছিল।

(ক্রমশঃ)

বিষয়: সাহিত্য

৮৩৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

305044
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:০৪
কাহাফ লিখেছেন :
"আইনের হাত যখন সঠিক পদক্ষেপ না নেয়, তখন বাধ্য হয়েই আইন খারাপ হাতে চলে যায়। নিজের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে তখন তো আর বুক পেতে দিয়ে নিজের ধ্বংসকে চেয়ে চেয়ে দেখা যায় না।"

বর্তমানেও এই চরম অবস্হা বিরাজ করছে! শাসনযন্ত্র ও বিচার ব্যবস্হা সঠিক পথে না আসলে এই অরাজকতার বিনাশ হবে না স হজে!!
305061
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০১:২৪
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : সহমত কাহাফ ভাইয়ের সাথে।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:১৮
246793
মামুন লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সাথে থাকার জন্য।Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File