আল্লাহকে পেতে চাই স্বচ্ছ হৃদয়
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৯:১৭:৫৪ সকাল
রাসেল সাহেবের বন্ধের দিনটির বেশীরভাগ সময়ই কাটে তার ছোট মেয়েকে নিয়ে। বড় মেয়ের সামনে পরীক্ষা। তাই সে পড়াশুনায়ই সময় দেয় বেশী। আগের মত বাবার সাথে ঘুরতে বের হওয়া ইদানিং হয়ে উঠছে না। ওদের মা ও ঘর-সংসার সামলাতে এবং মেয়ের পড়ালেখার দিকটিকে নজর দিতে দিতে সপ্তাহটি কিভাবে যেন পার করে ফেলে।
সেদিন মেয়েকে নিয়ে ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে রাসেল সাহেব যাচ্ছিলেন। লেকটির কাছে এসে কেন জানি দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনদিলে সবুজাভ অটবির নির্জনতার ভিতর দিয়ে উদীয়মান সুর্যরশ্মি পানিতে পড়েছে! এক বিস্ময়কর দৃশ্য ফুটে উঠেছে। সেদিকে তাকিয়ে ওনার ছোট মেয়ে বলে উঠল, ' ওয়াও! ওহ মাই গড! কি সুন্দর, না পাপা?'
অনাবিল সৌন্দর্যের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন। তবে মেয়ের হাসিমুখ ছাপিয়ে অন্য কিছুকে দেখতে পেলেন... আসলে কিছুই দেখতে পেলেন না। চিন্তার গভীরে একটি কথাই সেই মুহুর্তে ওনাকে দোলা দিয়ে যাচ্ছিল। একজন মুসলমান হিসেবে নিজের মেয়েকে তিনি কি শিক্ষা দিচ্ছেন? এইমাত্র ওর মুখ থেকে বের হওয়া কথাগুলো কি একজন মুসলিমের জন্য আদর্শ অভিব্যক্তি?
আল্লাহপাক আমাদেরকে দৃষ্টি দিয়েছেন- তার অপার সৃষ্টিসমুহকে দেখে সেগুলোর ভিতর দিয়ে তার মহিমাকে অনুধাবন করার জন্য। আর হৃদয়ে তার সৃষ্টির নিখুঁত অনুভূতিতে বিলীন হয়ে তার মহিমা মুখ দিয়ে উচ্চারণের দ্বারা অন্যের কাছে প্রকাশ হল আল্লাহপাকের কাছে বড়ই পছন্দনীয়।
এই ক্ষেত্রে তার মেয়ের মুখ দিয়ে বের হবার কথা ছিল, 'সুবহান আল্লাহ!' এই একটিমাত্র শব্দই অনেক বিশাল কিছু ধারণ করে আছে।
একটু দুঃখ পেলেন রাসেল সাহেব। নিজের জন্য কিছুটা করুণাও হল। কি শিক্ষা দিচ্ছেন নিজের সন্তানদেরকে। সহীহ ইসলামী ভাবধারায় এদেরকে পরিচালিত করতে না পারলেও তো আল্লাহপাকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে ঘাসের উপর বসলেন। বললেন, ' আম্মু, এই দৃশ্যগুলো দেখে তোমার মনে যখন আনন্দ হবে, তখন বলতে হবে, সুবহান আল্লাহ!'
মেয়ে জিজ্ঞেস করে, ' এইটা বললে কি হয়?'
বাবার উত্তর,' এইটা বললে যে আল্লাহপাক এইগুলো বানিয়েছেন, তিনি অনেক খুশী হন।' মেয়ে ঘাড় নেড়ে তার সম্মতি জানায়।
মেয়ের হাত ধরে একজন বাবা সামনের দিকে এগিয়ে যায়। হৃদয়ে নতুন এক চিন্তার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। গতানুগতিক শিক্ষার উপর নির্ভর করে থাকা এক বাবা আজ হোঁচট খেয়েছে। আধুনিক শিক্ষার দরকার রয়েছে। তবে একই সাথে নিজের ধর্মের ফাউন্ডেশন সন্তানদের হৃদয়ে আগে জাগ্রত করতে হবে। এই ফাউন্ডেশনকে ঘিরেই অন্য সব শিক্ষা পাক খেতে থাকবে। আধুনিক বলার দ্বারা ইসলামী শিক্ষাকে অনগ্রসর ভাবারও কোনো স্কোপ নেই। গতানুগতিক শিক্ষার নিরিখে এবং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের তুলনায় ইসলাম ১৪০০ বছর এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু আমরা নিজেরা নিজেদেরকে না চিনবার কারণে নিজেদেরকে অনগ্রসর ভেবে চলেছি। নাহলে ইসলামী সংস্কৃতি ধারণ করতে এতো দ্বিধা কেন? এই মানসিকতা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আল্লাহ পাক আমাদের জন্য সমগ্র সৃষ্টি জগতকে তৈরী করেছেন। কত সুন্দর এবং দৃষ্টি নন্দন-ই না এই পৃথিবী। চোখের আরামের জন্য সবুজাভ বনভুমি এবং সতেজ গাছপালা বানিয়েছেন। দিনের পরে রাতকে এনে দিয়েছেন আমাদের বিশ্রামের জন্য। এভাবে প্রতিটি জিনিসই মানব জাতির কল্যাণের জন্য তিনি বানিয়েছেন। তবে এতো কিছু যিনি বানিয়েছেন, তিনি কোথায় থাকেন? অনেককেই দেখি সৃষ্টিকর্তার নাম নিলেই উপরে, আসমানের দিকে তাকায়- আর মনে মনে কল্পনাও করে, আল্লাহ বুঝি উপরেই বসে আছেন। কিন্তু এই ধারনা ভুল। তিনি সব যায়গাতেই বিরাজমান। তবে মানুষের হৃদয়ের একটি যায়গাতেই তিনি বেশী থাকতে পছন্দ করেন। সেটি হল, ক্কলব, যাকে অন্তরের অন্তঃস্থল বলতে পারি। এই মানুষ আবার যে সে মানুষ হলে হবে না। সৃষ্টা সব সময় সাদা মনের মানুষের হৃদয়ে আসন গাড়তে চান। এমন সাদা মন- যেখানে না থাকবে ধর্মান্ধতা, আবার ধর্মহীন হলেও হবে না।
একজন সাদা মনের মানুষকে সবার প্রথমে, ' আমি-ই এই পৃথিবীর সব চেয়ে নিকৃষ্ট মানব এবং আমি কিছুই জানি না' এটাকে হৃদয়ে বিশ্বাস করতে হবে। কারণ নিজেকে নিয়ে গর্ব এবং জ্ঞানের অহংকার যুগে যুগে বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকেও ধ্বংস করেছে। তাঁদের ভিতরে অনেক আমল করনেওয়ালা এবং জানলেওয়ালা মানুষেরাও ছিলেন।
তাই নিজের হৃদয়ের হালচাল অন্তত প্রতিদিন একবার নির্জনে বসে ভাবা উচিত। আজ কতবার নিজের ভিতরের 'আমিত্ব' জেগে উঠেছিল? কতবার অন্যকে হেয় মনে করেছি? নিজে নিজের অনুভূতি অনুধাবন করে নিজেকে মার্কস দেয়া উচিত। এভাবে সাপ্তাহিক নাম্বারগুলো একটি সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছালে মাসিক টার্গেট পূরণ করার চেষ্টা করায় আগাতে পারি। মোটকথা নিজের 'আমিত্ব'কে বিলীন না করা পর্যন্ত কোনোভাবেই সাদা মনের মানুষ হবার স্কুলের রাস্তায় প্রবেশ করতে পারব না। ঢোকার দরোজায় ই আটকে যাবো।
আমি সাপ্তাহিক পরীক্ষায় প্রতিবারই ফেল মারছি।
তবুও নিজের অপুর্ণতাকে মুখ ভেংচে আবারো প্রথম থেকে শুরু করতে চাই। আবার ফেল করি... আবার শুরু করি...
আসলে আমার মনটা যে কোনো ধরণের বিরোধীতা শুনতে এতোটা নারাজ যে, আমার দ্বারা সাদা মনের মানুষের অন্তর্ভুক্ত হওয়া ইহজীবনে কি আদৌ সম্ভব কি, মাঝে মাঝে ভাবি। আমার ভিতরে 'আমিত্ব' এমনভাবে গেঁড়ে বসেছে, আমি বের হয়ে আসতে পারছি না।
আপনাদের কি অবস্থা?
আল্লাহপাক আমাদেরকে স্বচ্ছ হৃদয় অর্জনের তৌফিক দান করুন-আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১১০৯ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর অনুভূতি রেখে গেলেন।
শুভেচ্ছা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
স্বীয় পরিবার প্রত্যেক ব্যক্তির প্রথম বিদ্যাপিঠ।এখান থেকে নিজেকে গড়ার সুচনা...পর্যায় ক্রমে ক্রমে.....। নরম মাটির আদলে গড়া শিশুদের পরিবার থেকে শেখা বিষয়গুলো আজীবন বয়ে বেড়ায়।নৈতিকতা সমৃদ্ধ ধর্মীয় বিষয়ে জানার ও মানার অভ্যেস ছোট্টকাল থেকে চালু করতে হবে।তাহলেই ধর্মান্ধতা বা ধর্মহীনতার নাগপাশ এড়িয়ে 'আমিত্ব' কে পরিহার পুর্বক একজন 'সাদা মনের মানুষ' হিসেবে সমাজে ভূমিকা রাখবে।
'আমিত্ব' থেকে বের হয়ে আসার তাওফিক আল্লাহ মহান আমাকে-আপনাকে-সবাই কে দিন, আমিন।
জাযাকুমুল্লাহু তায়ালা খাইরান ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ.......
খুব সুন্দর ভাবে আসল বক্তব্যটুকু ফুটে উঠেছে আপনার মন্তব্যে।
আপনার দোয়া আল্লাহপাক কবুল করুন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবর শব্দ গুলো হৃদয়ের প্রশা্ন্তি বৃদ্ধি করে। ফুসফুস প্রসস্ত করে। হার্ট মজবুত থাকে। এসব মানুষ আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে মুক্ত থাকে। কঠিন পরিস্থিতিতে দৃঢ় থাকতে পারে।
বিষ্ময়কর এই তিনটি শব্দের মহা ক্ষমতা দেখে মনোবিজ্ঞানীর পর্যন্ত হতবাক হয়ে যায়। গত বছর গ্রীসে ২৪ শতাংশ কর্মহীন যুবক আত্মহত্যা করেছে কপর্দক শূন্য হয়েছে এই বিষন্নতায়।
এই শব্দ গুলোর প্রতি আকৃষ্ট মানুষ কোন দিন আত্মহত্যা করেনা তারা বিষন্নতায় ভুগেনা। অনেক ধন্যবাদ
খুব ভালো লাগলো এই শব্দ তিনটির আশ্চর্য ক্যারিশমা শুনে! ধন্যবাদ আমাদেরকে এই তথ্যটি জানানোর জন্য।
আল্লাহপাক আপনাকে সবসময় ভালো রাখুন এবং উত্তম বদলা প্রদান করুন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
খুব কঠিন প্রশ্ন-
জবাব নাই রে ভাই, জবাব নাই
আ মী ন...
সুন্দরভাবে অনুভুতি রেখে গেলেন, এজন্য অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
আপনার দোয়ায় আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করুন-আমীন।
আপনার সকল নেক কামনাও পুর্ণ করুন-আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
১৯৯ ভাগ সহমত আপনার সাথে।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে তাঁর শোকরগুজার বান্ডা হিসেবে কবুল করে নিন-আমীন।
আপনার অনুভুতির জন্য অনেক শুভেচ্ছা বোন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সহমত আপনার সাথে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন