মুখ, কয়েকজন 'মহামান্য' এবং এক হওয়া
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৭:২০:০৬ সন্ধ্যা
দু'মুখো সরীসৃপঃ
আমি মাঝে মাঝে ফেসবুকে কারো কারো পোষ্টে সাপ দেখতে পাই। কেউ কেউ আবার দু'মুখো সাপের ছবিও দেন। এরকম একটি ফনা তোলা দু'মুখো সাপের ছবি আমার কনিষ্ঠা কন্যা জ্ঞানী বাবুকে দেখালে সে অবাক হয়।
অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে। এরপর নিজের পিতৃদেবকে জানায়, ' আমাদেরও যদি এরকম দুইটা মুখ থাকত পাপা! তখন কেমন হত?'
জ্ঞানী বাবুকে কাছে টেনে নিয়ে পাশে বসাই।
বলি,' আমাদের ভিতরেও এরকম অনেক দু'মুখো সর্পমানব রয়েছে পাপা। এদেরকে চেনাটাই একটু কষ্টকর।' জ্ঞানী বাবু অবাক হয়ে তাকায় এবং শেষে আমার কথা হেসেই উড়িয়ে দেয়।
ওর বয়স অনুযায়ী এই দু'মুখো সর্পমানবের অস্তিত্বের কথা ওকে বোঝানো যাবে না। কিন্তু আমাদের আশেপাশে কি অণুক্ষণ এদেরকে অনুভব করছি না?
আমার এক মামা ক্ষমতাসীন দলের ইউনিয়ন লেভেলের নেতা ছিলেন। ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান হিসেবে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে তখনকার একজন প্রভাবশালী এম পি (এখন ক্ষমতাসীন দলের একজন 'মাননীয়' ) যিনি আমার মামার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন। তিনি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে জানাজা নামাজে অংশগ্রহন করতে আসেন। এই নেতার বিরুদ্ধে রুমালে গ্লিসারিন মাখিয়ে জনসম্মুখে কান্নার অভিনয়ের বহুল 'ফালতু কথা' শোনা যায় (আমি যেহেতু দেখিনি, তাই বিশ্বাস করিনি)। তিনি এলেন, সবার সামনে আমার মরহুম মামার অনেক প্রসংসা করলেন। এরপর মরহুম মামার অন্য এক ভাইকে চেয়ারম্যানের শুন্য পদে মনোনীত করে গেলেন।
এবং ঢাকা ফিরেই আমার প্রয়াত মামার বিপক্ষের প্রার্থীকে হাইকোর্টে একটি মামলা করে দিতে বললেন। যেন এই নির্বাচন ঝুলে থাকে। মামার পরিবারের কেউ যেন চেয়ারম্যান হতে না পারে, সেদিকটি একেবারে নিছিদ্র করে রাখলেন। এই হল একজন 'মহামান্য' দু'মুখো সর্পমানব। প্রকাশ্যে ওনারা একমুখ দিয়ে কথা বলেন-কিন্তু গোপনে ওনাদের 'মারফতি' কথাবার্তা বের হয় অন্য মুখটি দিয়ে। এতো গেলো একজন হাই-প্রোফাইল দু'মুখো সর্পমানবের কথা।
আমার জীবনে আমি এরকম হাই থেকে ক্রমান্বয়ে একেবারে লো-লেভেলের দু'মুখো সর্পমানবের দেখা পেয়েছি।তবে আজ একজন মানবের দেখা পেলাম, যিনি মনে হয় মুখ দিয়ে কথা বলেন না। মুখ নয় তবে শরীরের অন্য কোনো বিষাক্ত যায়গা দিয়ে তিনি কথা বলেন। তিনিও একজন এই সরকারের 'মহামান্য' লেভেলের। ইসলাম ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ হজ্জ নিয়ে ওনার সেই বিশেষ যায়গাটি দিয়ে এতোটাই বিষ উদ্গীরণ করলেন যে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে শেলসম আঘাত হেনেছে। এই 'মহামান্য' রোববার বিকালে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউ ইয়র্কস্থ টাঙ্গাইলবাসীদের সঙ্গে এক মতবিনিময়কালে বলেছেন, "আমি হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী"। আমি আর বেশী ডিটেইলসে গেলাম না। এই ব্লগেই অন্যদের পোষ্টে আনুপর্বিক বর্ণনা রয়েছে।
এইসকল বিষাক্ত মানুষদের প্রথমে হেদায়েতের জন্য দোয়া করতে হবে। তবে এদেরকে কিভাবে করা যায় বসে বসে ভাবছিলাম। চকিতে একটি গানের কথা মনে পড়ে গেলো-
'... আমি হ্যামিলনের সেই বাশীওয়ালা
বাজাবো বাঁশী সুরে সুরে...'- শুভ্র দে'র এই গানটির কথা মনে আছে?
এই সকল সর্পমানব এবং বিষাক্ত যায়গা দিয়ে বিষ-উদ্গীরণকারী মানবদের জন্য হ্যামিলনের সেই বাশীওয়ালাকে নিয়ে আসা প্রয়োজন। এতে করে যদি ওনারা সুরে সুরে সঠিক সুরে কথা বলাটা শিখে নিতে পারেন।
এ ছাড়াও আজ আমাদের দেশের অস্থির রাজনীতির প্লাটফর্মে এ রকম একজন বাশীওয়ালার দরকার, যার সুরে সুরে সকল দলের নেতা্রা এক হয়ে আনন্দে কাজ করবেন।
দুই নেত্রীর জন্য সার্বক্ষণিক বাঁশী শোনার ব্যবস্থা থাকবে। এরপরে সিরিয়ালে আসবেন মখা ফখা জাতীয় ঐতিহাসিক নেতারা। তাদের বক্তব্যের ভিতর যেন বাশীর সুর তথা মধুরতা থাকে, বাশীওয়ালা সেই ট্রেইনিং ই দিবেন তাদের।
বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেব্দ্রেও একজন বাশীওয়ালা দেওয়া যেতে পারে।সকল আমলাদের প্রাথমিক শিক্ষার শুরুর স্থান তো সেখানেই।
এরপর পর্যায়ক্রমে সকল বিভাগীয় ও জেলাশহর গুলোতে একজন একজন।
এক হওয়া
১.
সাভার থেকে কোনাবাড়ি শনি এবং বৃহস্পতিবার আমাকে বাসেই যাওয়া-আসা করতে হয়। এই আসা-যাওয়ার পথে সহযাত্রী এবং কন্ডাক্টরের ভিতরের পাঁচমিশালি খুনসুটি শুনে শুনে প্রায় একজন এক্সপার্টে পরিণত হয়েছি। একজন একটা কথা বলে ফেললে অন্যজনের উত্তর কি হবে, সেটা তার আগেই আমি বলে দিতে পারি। আজ দু'জন যাত্রী মৌচাক থেকে উঠেছে। কন্ডাক্টর এসে ভাড়া চাইতেই যাত্রী দুইটা দশ টাকার নোট বের করে দিতেই কন্ডাক্টরের সমান ভ্রু বাঁকা হল। সে বলল, ' দু'জন ত্রিশ টাকা। আরো দশ টাকা দেন।' ঠিক এই মুহুর্তে যাত্রীটি কি বলবেন সেটা আমার মন বলে ফেলল,' কবে থেকে ত্রিশ টাকা? প্রতিদিন যাচ্ছি।' অথচ অন্য সবাই ১৫ টাকা করেই দিয়ে যায় প্রতিদিন। সে হিসাবে দুজনের ত্রিশ টাকা ঠিকই আছে। যাত্রিটি আমার মন যা বলল সেটাই উত্তর দিলো। এবারে কন্ডাক্টর বলে, ' সেই বাবা আদমের আমল থেকেই তো এই ভাড়ায় যায় সবাই। দেন, বাকি দশ টাকা দেন।' এভাবে কথায় কথায় কথা বাড়ে... তবে যাত্রী আর বাস কন্ডাক্টর কখনো কোনো বিষয়ে এক হতে পারে না।
২.
ঈদের বাজার করতে গেছেন। বিশাল এক লিষ্ট হাতে নিয়ে গিন্নির কথামত দরদাম করে সব কিনে একজন কুলির ভুমিকা পালন করে পরিশ্রান্ত দেহে বাসায় এসে মনে মনে ভাবছেন, ' আজ আর কোনো খুঁত ধরতে পারবে না। অনেক যাচাই বাছাই করে এনেছি। 'ও' অনেক খুশী হবে।' কিন্তু ইন্সপেকশনের কিছু পরেই আপনার সকল খুশী বেমালুম উধাও। আলুর ভিতরে পচা পাওয়া গেছে... মাছটা বেশী মরা... এলাচির দামটা বেশী নিয়ে ফেলেছে... ধনিয়া পাতা আনতে লিখে দিলেও সেটা কীভাবে যেন ভুল হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু গিন্নিকে যতই বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, আজ অনেক সাবধানে- দরদাম করে কিনেছেন... সে কখনোই বিশ্বাস করে না। আপনি আর গিন্নী কখনোই মতানৈক্যে পৌঁছাতে পারবেন না।
৩.
দেশের বাড়ি থেকে আপনার মা নাতীদের জন্য নিজের পছন্দ মত ঈদের জামা-কাপড় কিনে পাঠালেন। কিন্তু সবার পছন্দ হলেও আপনার গিন্নীর কখনোই পছন্দ হবে না। এই ক্ষেত্রে বউ-শাশুড়ির পছন্দ কখনোই এক হবে না। এভাবে আপনিও শ্যালক বা শ্যালিকাকে সাথে না নিয়ে যদি নিজের পছন্দমত শপিং করে পাঠান, সেটাও জলে যাবে। আপনি VS বউয়ের দিকের আত্মীয়স্বজন কখনোই অন্তত এই কেনাকাটার ব্যাপারে এক হতে পারবেন না।
এভাবে অনেক অনেক ব্যাপার রয়েছে যেখানে কখনোই দু'পক্ষ এক হতে পারে না। আর এইজন্যই হরহামেশা ঘটে চলেছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত। আমাদের দেশের দুই নেত্রীর কথাই ধরুন না। রেললাইনের দুটি পাত ডেড-এন্ডে গিয়ে যদিও কখনো এক হতে পারে; কিন্তু আমাদের দুই নেত্রী কোনো বিষয়ে কখনোই এক হন না। নিকট ভবিষ্যতে এর নজির খুব কম।
তবে যদি দৈবাৎ ওনারা দুজন কোনো বিষয়ে এক হন? তবে কি হবে?
ভাবছেন দেশের চেহারাটাই পালটে যাবে... আমরা অচিরেই উন্নত বিশ্বের কাতারে সামিল হব... ইত্যাদি ইত্যাদি কিছু সুখকর ভাবনা মাথায় খেলে থাকলে, এখনই ভাবনার লাগাম টেনে ধরুন।
আমাদের দুই নেত্রী মহান সংসদের একজন গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেত্রীকে সাথে নিয়ে একটি বিষয়ে এক হয়েছিলেন... তিনজনই ঐ ব্যাপারটিতে সমর্থন দিয়েছিলেন।
ফলাফলঃ ব্রাজিলকে ৭-১ গোলের লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করার পরে হল্যান্ডের কাছে ৩-০ গোলের হার নিয়ে নিজের দেশের বিশ্বকাপ মিশন শেষ করতে হয়েছিল।
এই তিনজনই যে এবার ব্রাজিলের সাপোর্ট করেছিলেন।
তাই সব ক্ষেত্রে এক হওয়াটাও কিন্তু শুভ লক্ষণ নয়।
বিষয়: বিবিধ
১০২৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সহমত আপনার সাথে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সহমত আপনার সাথে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনি আর গিন্নী কখনোই মতানৈক্যে(মতৈক্যে বা ঐকমত্যে হবে) পৌঁছাতে পারবেন না।
সহমত ভাইয়া আপনার সাথে
শুভেচ্ছা রইলো।
সমাজের নির্মম বাস্তবতার সুনিপুণ অংকন,সামান্য বিষয়েও কত সংঘাত-ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ে মানুষ।স্বীয় স্বার্থের লাগাম টা একটু টেনে ধরলেই সমাজে নেমে আসতো বেহেশ্তি প্রশান্তি......!!!
সচেতনতায় ভূমিকা রাখুক আপনার পরিশ্রমের এই 'লেখনি' আল্লাহ পাকের কাছে এই দোয়া। ভালো থাকবেন.......সবাই কে নিয়ে.....
আল্লাহপাক আপনার দোয়া কবুল করুন-আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন