ধারাবাহিক উপন্যাসঃ নাইয়র (পর্ব- বার)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৮:৪৮ সকাল
বিস্তীর্ণ মাঠ... সবুজ ফসলের ঢেউ খেলানো মুগ্ধকর নুয়ে পড়া... ছড়ানো ছিটানো ছবির মতো বাড়িঘর... সাপের মতো এঁকে বেঁকে বয়ে যাওয়া প্রশস্ত খাল... উঁচু মাটির রাস্তা আর নীলাকাশ – এসব কিছু নিয়ে তাঁদের গ্রামটি আসলেই যেন পটে আঁকা ছবির মত একটি গ্রাম! এ দেশের প্রতিটি গ্রামই কি তাই নয়?
একটু প্রগলভ হয়ে পড়া কবি মুজিবর খালের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায় ছোট্ট ক্লাব ঘরে বসে ভাবছিল। এই ঘরকে সে নাম দিয়েছে ‘ ভালবাসার কেন্দ্র বিন্দু’। একজন কবির হৃদয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের জন্য যে ভালবাসার ফল্গুধারা বহমান, সেটার কেন্দ্র বিন্দু এই ক্লাব ঘরটি। এখানে বসেই মুজিবর নিত্য নতুন আইডিয়ার জন্ম দিয়ে চলেছে। মানুষের ভালো করার চিন্তা-ভাবনায় সময় ব্যয় করছে। সাথে রয়েছে পারুল নামের এক রহস্যময়ী নারী।
রহস্যময়ী?
হ্যা, এই শব্দটাই পারুলের জন্য সঠিক মনে হয় মুজিবরের কাছে। একই হৃদয়ে ওর সবার জন্য নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যেমন বয়ে চলে, একই ভাবে গ্রামের দুষ্ট চক্রের জন্য সমপরিমাণে ক্রোধ... আর মুজিবরের নিজের জন্য? এটাই জানা হয়ে উঠলো না আজও। তাই পারুলকে ওর কাছে রহস্যময়ী মনে হয়। এক মানবী তার মানবী সত্ত্বার অন্তরালে একজন নারীকে আড়াল করে রেখেছে। এটাই মুজিবরকে ভাবায়।
সময় বয়ে চলেছে নিজ গতিতে। বয়সও থেমে থাকছে না। পরিবার থেকে মুজিবরের বিয়ের ব্যাপারে চাপ আসছে। কিন্তু মুজিবর এক রহস্যময়ীর হৃদয়ে যায়গা করে নেবার ব্যকুলতায় কোনো কিছুই লক্ষ্য করছে না। আবার পারুলকেও জোর করতে পারছে না। প্রতিদিন ভাবে, আজ এলেই ওর সাথে সিরিয়াসলি কথা বলতে হবে। কিন্তু কাছে এলে সেই সিরিয়াসনেস যে কোথায় গিয়ে লুকায়, সে নিজেও জানে না। মুজিবরের সারাক্ষণ পারুলের কাছে থাকতে ইচ্ছে হয়। থাকেও অধিকাংশ সময়। কিন্তু এ যেন নিজের ছায়ার সাথে লুকিয়ে থাকা।
নিজের অস্থায়ী আবাস থেকে বের হয়ে রাস্তায় কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। একটু দূরে সামছুর চায়ের দোকান। চায়ের সাথে সাথে মুদির অল্প-বিস্তর মালামালও রয়েছে। এই সামছু মুজিবরের থেকে একটু বড়ই হবে। লাল চা আর বিস্কিটই বেশী বিক্রী হয়। তবে এর জন্য নির্ধারিত সময় আছে। গ্রামের মানুষের তো আর ইচ্ছেমত কিছু করবার যো নেই। তাঁদের নিজেদের কাজ আগে। এরপর অন্য কিছু। সামছুর ছোট দুই ছেলেও বাবার সাথে দোকানে বসে। ওদের স্কুলের সময় পার করে তবে। ওদেরকে রেখে সামছু বিলে জাল নিয়ে মাছ ধরতে যায়। ওর শ'খানিক 'চাই' আছে। এই 'চাই'ও পেতে রাখে সে। বিকেলের দিকে সবগুলো তুলে নিয়ে আসে। বেশ মাছই পায়। প্রতিদিন ওর চায়ের দোকানের সামনে সেই তাজা মাছগুলো বিক্রী হয়। ছোটখাট একটা ভীড় জমে যায়। সব মাছই বিক্রী হয়।
কি মনে করে মুজিবর চায়ের দোকানের দিকে আগায়। একটু রঙ চা খেলে মন্দ হয় না। সেই ভেবেই দোকানের সামনের বেঞ্চটায় গিয়ে বসে। আরো কয়েকজন পরিচিত মুরব্বি বসে আছেন দেখতে পেল। তাদেরকে সালাম দিয়ে একটু হাসে মুজিবর। প্রতিউত্তরে তারাও হাসেন। সামছু মুজিবরের সাথে একটু রঙ ঢং করে। মোটকথা পরিবেশটা একটু তরল হয়ে যায়।
চা খেতে খেতে মুজিবর বরকত আলীকে তার হালচাল জিজ্ঞেস করে। চায়ের কাঁপে শেষ চুমুক দিয়ে তিনি বলেন, ' আর ভালো থাকা বাজান! পুরা জমিতেই এবার ধান লাগাইছি। ফলনও খারাপ না। কিন্তু ফইড়ারা যে দাম কইতাছে, তাতে খরচাপাতি বাদ দিয়া কিছুই তো থাকবে না মনে হইতাছে।' পাশের ছমির শেখ ও একই কথা বললেন।
এইটা একটা সমস্যা বটে। মুজিবর ভাবনার গভীরে চলে যায়। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজে এই ধানই প্রধান ফসল। এর দ্বারা প্রতিটি গৃহস্থ নিজেদের নির্দিষ্ট মেয়াদের জীবনযাপনের বাজেট নির্ধারণ করে থাকে। যদি জমিতে দুইবার ফসল ফলায়, তবে উক্ত মেয়াদের জন্য যা যা প্রয়োজন সেগুলো এই ফসল বিক্রীর টাকায় আনতে হয়। কিন্তু সার, কীটনাশক, পাম্পের জন্য ডিজেল - এসব কিছুর বর্ধিত মূল্যের কাছে কৃষক বড্ড অসহায়! আর আজকাল কামলা পাওয়া খুবই দুষ্কর। মাঠে ধান পেকে থাকলেও, কাটার সময় প্রয়োজনীয় কামলা পাওয়া যায় না। যদিওবা এসব কিছুকে অতিক্রম করে কেউ বাম্পার ফলন ফলায়, লাভের গুড়টুকু পিঁপড়া রূপী ফড়িয়া বা দালালের পেটে চলে যায়।
এই গভীর সমস্যাটি নিয়ে চিন্তা করতে করতে মুজিবর বাজারের দিকে আগায়। মোতাহারের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ করতে হবে। অবশ্য ইতোমধ্যে একটা আইডিয়ার জন্ম হয়েছে ওর ব্রেইনে। সেটাকেই আরো একটু ওলট-পালট করে গুছিয়ে নিচ্ছে কেবল।
বাজারে কোব্বাত মিয়ার সাথে হাবিব মুন্সী সেই অনেকক্ষণ আলাপ করছে। মালেক শিকদারের জন্য ওনারা লঞ্চ ঘাটের পাশে কেরামতের মুদি দোকানে বসে আছেন। দোকানের ভিতরেই এক পাশে বসার ব্যবস্থা আছে। প্রায়ই হাবিব মুন্সী গং এখানে বসে আলাপ আলোচনা করে। কেরামত সম্পর্কে মালেক শিকদারের ভাগিনা। এজন্য লঞ্চ ঘাটের একেবারে শেষাংশের এই দোকানটি দুষ্টচক্রের একটি অন্যতম ঘাটি।
হাবিব মুন্সী কথাবার্তার এক পর্যায়ে কোব্বাত মিয়ার কাছে জানতে চায় এবারের ধানের ব্যাপারে।কোব্বাত মিয়া হেসে জানায় সব কিছু প্রতিবারের মতই নিয়ম মেনে চলছে। এলাকার সকল ফড়িয়াদের নেতা আসলে এই হাবিব মুন্সী। সে কিছু চিহ্নিত ডামি ফড়িয়াদেরকে সামনে রেখে এলাকার সকল ফসল নিজের ইচ্ছেমত দামে কিনে নেয়। আর ঐ ফড়িয়ারা আসলে তার বেতনভুক কর্মচারি। অনেকগুলো বছর লেগেছে এই সিস্টেমটাকে দাঁড় করাতে। তার সাথে শেয়ার হিসাবে রয়েছে মোটে আর দুজন। কোব্বাত মিয়া এবং মালেক শিকদার। আশ্চর্যের বিষয় হল এটা যে, দুষ্ট চক্রের অন্য সদস্যরাও জানে না যে এই তিনজনে মিলে গ্রামের পুরো ফসলি জমির উৎপন্ন ফসলের দাম এভাবে নিয়ন্ত্রন করে চলেছে। তাও এক দুদিন নয়, বছরের পর বছর ধরে। যে কোনো ফসল হোক না কেন, হাঁটে বা বাজারে নিলেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা সেখানে টিকতে পারেনা। কারন ফড়িয়াদের পিছনে রয়েছে প্রভাবশালী হাবিব মুন্সীর কালো হাত। ধান,পাট, আলু, কলই ডাল এগুলো কৃষকের জমি থেকেই ভ্রাম্যমান ফড়িয়ারা হাবিব মুন্সীর নির্ধারিত দামে কিনে নেয়। অনেক সময়তো অগ্রীম দামও দিয়ে দেয়। আর সুপারি এবং নারিকেল- এ দুটো গাছে থাকতেই কিনে নেয় ওরা। মোট কথা চাষী এবং গৃহস্থরা এই ফড়িয়াদের হাতে জিম্মি হয়ে রয়েছে। বিশাল অংকের টাকা আয় করে থেকে হাবিব মুন্সী গং, যার সিংহভাগ হাবিব মুন্সীর নিজের।
কোব্বাত এবং মালেক শিকদারসহ অন্যদেরকে হাবিব মুন্সী সুযোগ সুবিধা দিয়েছে, যাতেই তাঁরা সন্তুষ্ট। সুদের ব্যবসায় কোব্বাতের বেশী শেয়ার, আবার মালেক শিকদার রাজনীতির দিক থেকে একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করে থাকে হাবিব মুন্সীর পৃষ্ঠপোষকতায়। এজন্য এই ফসলের দিকটাতে অন্য দুজন হাবিব মুন্সীর একচেটিয়াত্ব মেনে নিয়েছে।
কোব্বাত মিয়ার কথা শুনে হাবিব মুন্সী খুশী হয়। পারুল নামের নিজের ভাতিজি সম্পর্কের মেয়েটির বুদ্ধির কাছে অনেক ব্যাপারেই তো তার হার হয়েছে। কিন্তু এই যায়গাটিতে এখনো ওদের নজর পড়ে নাই। আর সে সম্ভাবনাও নাই। কারণ তিনি রয়েছেন একেবারে অদৃশ্য। তার কোনো লিঙ্কই নেই এই ব্যবসার সাথে।
কালিগঙ্গা নদীর বুক থেকে বিশুদ্ধ বাতাস পাক খেতে খেতে অন্য সকলের মত এই কুচক্রী মানুষটিকেও শীতল করে দিয়ে যায়। তার শ্বেত-শুভ্র দাঁড়ি বাতাসে দোল খেতে থাকে। হাবিব মুন্সী নিজের দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে অনাবিল আনন্দ উপভোগ করতে থাকেন। এই মুহুর্তে তার নিজেকে পরম সুখী একজন মানুষ মনে হয়। এক মুহুর্তের জন্য তার ভিতর থেকে সকল কুটিলতা দূর হয় যেন... ভাবের জগতে নিজের অজান্তে চলে যাওয়া একজন হাবিব মুন্সীকে এই অবস্থায় খুব ফ্রেস লাগে। একজন সাধুর মত মনে হয়। কিন্তু এই সাধুর ভিতরে যে শয়তান বাস করে, কোথা থেকে যেন সে হাজির হয়ে তার তন্ময়তা ভেঙ্গে দেয়। হাবিব মুন্সী নিজের হায়েনা সদৃশ হাসির সাথে কোব্বাত মিয়াকে জিজ্ঞেস করে, ' আবার বলতো প্রথম থেকে...'
... ... ...
প্রচন্ড একটা ঝড় আসার আগমুহুর্তে যেমন প্রকৃতি স্তব্ধ হয়ে যায়, এরপর গরম বাতাস ছাড়ে... তারপর ঠান্ডা বাতাসের সাথে পাগলা হাওয়া এবং প্রলয়কান্ড। সারা দেশের অবস্থাটাও এই মুহুর্তে ঠিক সেই স্তব্ধ নিঝুম। সরকারি দল কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনে রাজী না; বিরোধী দল চলমান সরকারের অধীনে ইলেকশন করবে না। আদালতের রায়ের প্রসঙ্গ দেখিয়ে সরকারি দল মানসিকভাবে নিজেদেরকে কিছুটা আগানো মনে করছে। আর বিরোধী দল সাংগঠনিক ভাবে দুর্বার আন্দোলনের দ্বারা তাঁদের দাবীকে মেনে নিতে বাধ্য করাতে পারবে ভেবে বসে আছে।তাঁদের পর্যবেক্ষণে সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার আলামত দেখে এই আন্দোলনের বিকল্প আর কিছুই নেই ভাবছে। মাঝখান থেকে কেউ কেউ এক এগারোর মতো কিছু একটা হতে পারে কিনা সে ব্যাপারেও জল্পনা-কল্পনা করে চলেছে।
শ্রীরামকাঠী গ্রামেও দেশের এই উত্তপ্ত রাজনৈতিক হাওয়ার আঁচ লেগেছে। এখানে ক্ষমতাসীন দলের ইউনিয়ন সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান মোতাহার। কিন্তু সে যতটা না দলীয় পরিচয়ে প্রস্ফুটিত, তার থেকে ওর ব্যক্তি ইমেজেই বেশী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এর পিছনে একমাত্র কারণ স্রেফ তার ভালোমানুষি স্বভাব। এবং গ্রামের জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাওয়া। সে চেয়ারম্যান হবার পরে যে সকল প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে, প্রতিটিতেই সফল হয়েছে। এবং তাতে দল-মত নির্বিশেষে গ্রামের ৯০ শতাংশ ভোটার তার পক্ষে চলে এসেছে।
মোতাহারের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী মালেক শিকদার এই কারণেই ভিতরে ভিতরে কালো সাপের বিষাক্ত অনুভূতি নিয়ে ফুঁসে রয়েছে। মালেক শিকদার যদিও ক্ষমতাসীন দলের নাজিরপুর উপজেলা সভাপতি। কিন্তু নিজের পুর্বেকার রেকর্ডের নিরিখে জনগনের মন থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে। আর জেলা আওয়ামী লীগ এসব কিছু যাচাই-বাছাই করে তৃণমূল কর্মীদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে এবার উপজেলা সভাপতি পদে রদবদল করতে চাইছে। আসন্ন কাউন্সিলে নতুন মুখ যে দেখা যাচ্ছে, তা প্রায় নিশ্চিত। দলীয় কর্মীরাও ব্যাপারটা জেনে গেছে। আসলে এসব কিছু আজকাল এতোটাই ওপেন সিক্রেট যে, না জানাটাই বিস্ময়কর!
মোতাহারকে জেলা সভাপতিও ব্যক্তিগতভাবে চিনেন। তরুন নেতৃত্বের প্রতি এই মানুষটিকে একটু বেশীই আগ্রহী দেখা গেছে। মালেক শিকদারও ভিতরের খবর জেনে নিদারুন অস্থিরতায় দিন কাটাচ্ছে। সেদিন রাতের বেলা হাবিব মুন্সীর বাড়িতে মালেক শিকদার এবং কোব্বাতের ভিতর আলাপ হচ্ছিল। প্রসঙ্গ আসন্ন কাউন্সিল। একটা ব্যাপার বেশ প্রশংসনীয় এই দুষ্ট চক্রের। তা হল এরা নিজেদের স্বার্থের ক্ষেত্রে দল-মত নির্বিশেষে একসাথে থাকে। এই উপজেলার রাজনীতি মূলত ত্রিধা-বিভক্ত হলেও কার্যক্ষেত্রে দুই দলের হাতেই থাকে মূলত নিয়ন্ত্রনের কার্ড। স্বাধীনতার পক্ষের প্রাচীন দলটি এবং স্বাধীনতা বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল পক্ষটি। হাবিব মুন্সী প্রকৃতিগত ভাবেই প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতিনিধিত্ব করছে। আর মালেক শিকদার স্বাধীনতার পক্ষের। কোব্বাত মিয়া এবং অন্যরা জাতীয়তাবাদী একটি দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত। কিন্তু এরা ব্যক্তি স্বার্থের দিক চিন্তা করে নিজেদের উন্নতির জন্য এক হয়ে একটি গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। এদের নেতা হাবিব মুন্সী। এমন কোনো ছল-চাতুরী নেই যা তার অজানা। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও যদি দেশের উন্নতির প্রশ্নে এই দুষ্ট চক্রের সদস্যদের মতো এক হতে পারতো!!
কথাবার্তার এক পর্যায়ে মালেক শিকদার উপজেলা সভাপতি পদে তার নড়বড়ে অবস্থার কথা হাবিব মুন্সীকে জানায়। মোতাহারকে কীভাবে প্রতিহত করা যায় জানতে চায়। অনেকক্ষণ চুপ থেকে হাবিব মুন্সী মালেক শিকদারের কাছে জানতে চায়, 'তোমার নিজের কি কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে? কি করতে চাও তুমি?' মালেক শিকদার ইতস্তত করে। সে যা চায়, সেটা নিজের মনের ভিতরে থাকলেও হাবিব মুন্সী ও কোব্বাতের সামনে প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করে। হাবিব মুন্সীর জিজ্ঞাসু নেত্রের প্রখরতায় শেষ পর্যন্ত নিজের দৃষ্টি নামিয়ে নিতে বাধ্য হয়। একটা গভীর শ্বাস নিয়ে বলে, ' মোতাহার না থাকলে কি হয়?'
প্রথমটায় মনে হল যেন হাবিব মুন্সী শুনতেই পায়নি। তবে কোব্বাতের মত ধুরন্ধর লোকও চমকে উঠে মালেক শিকদারের কথার অর্থ বুঝতে পেরে। হাবিব মুন্সী মালেক শিকদারের চোখে চোখে চেয়ে থাকে। দীর্ঘক্ষণ। সাপের দৃষ্টি অনুভব করে মালেক শিকদার ভিতরে ভিতরে শিউড়ে উঠে। ভাবে, মনের কথাটা বলে কি ফ্যাসাদেই পড়ল নাকি? হাজার হোক একই বংশের মানুষ ওরা। একই রক্ত বইছে ওদের শরীরে। মোতাহারের আপন চাচা হাবিব মুন্সী।
অনেক অনেক পর সর্প-মানবের চোখের পলক পড়ে। অত্যন্ত গম্ভীর স্বরে সে জানায়, 'তোমরা এখন যাও। আমি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছি।'
... ... ...
পারুলকে খুব উত্তেজিত মনে হয়। ক্লাব ঘরের জানালা দিয়ে মুজিবর দেখতে পায় সে আসছে। তবে ওর দ্রুত পদে হাঁটার ছন্দে মুজিবর বোঝে কিছু একটা হয়েছে। কালভার্টের উপরে আসতেই ওর নাক এবং গালের লালিমা দেখেই মুজিবর বোঝে মেয়েটি সাংঘাতিক উত্তেজিত হয়ে আছে। এখন শোনার ব্যাপার কি নিয়ে সে এতো এক্সাইটেড।
ক্লাব ঘরের দরোজা দিয়ে ঢোকার সময়ে উপরের চৌকাঠে পারুলের মাথা বাড়ি খায়। তবে ব্যাথা পেলেও ওর ভিতরে কোনো অনুভূতির উদ্রেক করেনা। মুজিবরকে দেখেই এক সাথে অনেক কিছু বলতে যেয়ে কিছুই বলতে পারেনা। পারুলের হাত ধরে মুজিবর ঘরের একমাত্র চেয়ারটায় ওকে বসায়। কপালের কাছটা আঘাত পেয়ে লাল হয়ে গেছে। একটু ফুলেও উঠেছে। সেদিকে একবার মুজিবরের চোখ যায়। তবে সে কিছু বলে না। জিজ্ঞেস করে, ' এবার বল, কি হয়েছে? কেন এতো উত্তেজিত তুমি?' পারুল আনন্দের সাথে জানায়, ' আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য মহিলা ডাক্তার আসছে!' মুজিবরও এবার উচ্ছাসে ফেটে পড়ে। ওর ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে, 'তাই নাকি!'
ওরা দুজন আনন্দে হাসতে থাকে। পারুলের চোখ দিয়ে খুশীতে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। মুজিবরের চোখও চিক চিক করে ওঠে। দুজন নারী-পুরুষ যারা একে অপরকে ভালোবাসে, তাঁদের নিজেদের ভালোবাসাকে ছাপিয়ে সাধারণের মঙ্গলার্থে যে ভালোবাসাকে নিজেরা ধারন করে আছে, আজ সেখানে যেন ভালোলাগার জলোচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে! মুজিবর নিজের অজান্তে পারুলের চিবুক তুলে ধরে... পারুল বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। মুজিবর এক হাত দিয়ে পারুলের চোখের পানি মুছে দেয়। পারুল আবেগে শিহরিত হয়ে উঠে! একজন নারীর হৃদয় প্রকট হয়... প্রচন্ড ভাবাবেগে সে আপ্লুত হয়। মুজিবরের মনের একটা গোপন দরোজা খুলে যায়। জানালা দিয়ে বাইরের বাতাসে পারুলের চুল এলোমেলো... খোলা দরোজা দিয়ে পূবের রৌদ্রোজ্জ্বল আভায় মুজিবরের চুল চিকচিক করে উঠে... কামনার বহ্নি শিখায় দুজনের চোখেই আগুন জ্বলে উঠে। পারুলের ঠোঁট স্ফীত হয়ে কাঁপতে থাকে। একপর্যায়ে মুজিবরের আগ্রাসী পুরুষালী ঠোঁটের প্রেষনে সে দুটো স্থিরতা লাভ করে। সময় বয়ে যায়...ভালোবাসা যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসে অখ্যাত গ্রামের বহমান এক খালের পারের কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়ায় আবৃত এক ছোট্ট ক্লাব ঘরে!
... ...
... ...
প্রায় দশহাজার ডাক্তার এবং নার্স নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এরা দেশের গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিয়োগ পেয়েছে। শ্রীরামকাঠী গ্রাম নাজিরপুর উপজেলার ভিতরে। এখানের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য একজন মহিলা ডাক্তারের খুব প্রয়োজন ছিল। পারুল, মোতাহার এবং মুজিবর কায়মনোবাক্যে চাইছিল এটাই যেন হয়। আর সেটাই হয়েছে। আসলে সদিচ্ছার একটা অন্যরকম শক্তি রয়েছে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা একটা গ্রাম্য কুসংস্কার ধর্মীয় বিধি-নিষেধের আড়ালে প্রতিক্রিয়াশীলদের স্বেচ্ছাচারিতায় এমন এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল, সেখান থেকে উত্তরণ অতোটা সহজ ছিল না। পারুল প্রসুতি মায়েদের জন্য চিন্তায় দিনরাত এক করে ফেলেছিল উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। কিন্তু পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। একজন মহিলা ডাক্তার নিয়োগ পেয়ে সেই সমস্যাকে একেবারে মূল থেকেই উপড়ে ফেলতে যাচ্ছে। আসলেই কি তাই?
কথা হচ্ছিল মোতাহারের ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে বসে। ওরা তিনজনই রয়েছে। মোতাহার পারুলকে স্কুলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। সবকিছু ঠিকমতো চলছে জেনে খুশী হয়। বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রও এগিয়ে যাচ্ছে। এরপর মেয়েদের হাতের কাজের প্রোজেক্ট কতদূর এগিয়েছে জানতে চায়। পারুল সন্তোষজনক উত্তর দেয়। আউয়াল খাঁর দোকান থেকে তিনকাপ চা নিয়ে আসে আউয়াল খাঁর ছোট ছেলে। সাথে এক প্যাকেট বিস্কিট। পারুল প্যাকেট খুলে সার্ভ করে। মুজিবর মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে। আজকাল পারুল যা করে সবকিছুতেই মুজিবর কেন জানি মুগ্ধ হয়। মোতাহার মুজিবরের এই মুগ্ধতা লক্ষ্য করে। তবে এখন আর ওর ভিতরে কোনো ঈর্ষা কাজ করেনা। এই মেয়েটিকে সেও জীবনসঙ্গিনী হিসেবে চেয়েছিল। কিন্তু পারুল খুব সোজা ভাষায় মোতাহারকে ওর মনের কথা জানিয়ে দিয়েছে। সেই থেকে সে এবং পারুল বেশ ভালো বন্ধু। তবে হৃদয়ের গোপন কোনো এক কোণে মোতাহারের পারুলের জন্য কিছুটা হাহাকার রয়েই যায়। কিন্তু তার জন্য কখনো ঈর্ষা বোধ করেনা সে। মুজিবরও মোতাহারের খালাতো ভাই। সেই শিশুকাল থেকেই দুজনে এক সাথে বড় হয়েছে। যে কোনো কিছু নিয়েই দুজনের ভিতর এক অলিখিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেই ছেলেবেলা থেকেই চলে আসছে। কিন্তু আজ এই বয়সে এসে পারুল নামের এক নারীকে কেন্দ্র করে দুজনের ভালোলাগা এক কেন্দ্রিক হলেও, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোতাহার নিজেকে জড়াতে চাইলো না। এবারই মনে হয় প্রথম এধরণের কিছু হল। তবে পারুল কিংবা মোতাহার দুজনের কেউই মুজিবরকে এ কথা জানায় নি যে মোতাহারও পারুলকে ভালোবাসে। জানলে মুজিবর ভাই এর জন্য নিজেকে সরিয়ে নিতো। এটা জানে বলেই মোতাহার পারুলকে সেদিন বলেছিল, ' এসব কথা মুজিবরকে জানিও না।'
চা-বিস্কিট শেষ করে মুজিবর মোতাহারকে নতুন একটা সমস্যার কথা জানায়। গ্রামে ফড়িয়াদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বৃদ্ধিতে ওদের স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইচ্ছেমতো ফসলের দাম নির্ধারণ করাতে কৃষক পথে বসতে বসেছে। এ থেকে বাঁচার একটা পথ বের না করলেই নয়। মুজিবরের কথা শুনে ওরা দুজনেই চিন্তায় পড়ে যায়। মোতাহার বলে, ' অনেক আগে থেকেই এই ব্যাপারটা নিয়ে আমিও ভেবেছি, কিন্তু কোনো পথ খুঁজে পাই নাই। গ্রামের হাটে ফসল নিয়ে গেলেও ফড়িয়াদের জন্য বাইরের ব্যবসায়ীরা কিনতে পারেনা। আমি বেশ কয়েকবার বাইরের কয়েকজনকে এনে দেখেছি। আর দূরের হাটগুলোতে নিয়ে গেলেও লাভ নেই। এই ফড়িয়াদের নেটওয়ার্ক অনেক দূর পর্যন্ত ছড়ানো। যখনই দেখবে কেউ অন্যত্র ফসল নিয়ে যাচ্ছে, সাথে সাথে সেখানের লোকদেরকে জানিয়ে দেবে। ফলাফল শুন্য। যাওয়া-আসার পরিবহন খরচটাই গচ্চা যাবে।'
পারুল জানতে চায়, তবে কি কৃষকেরা এভাবেই উদয়াস্ত পরিশ্রম করে করে সর্বশান্ত হবে? এর কি কোনোই সমাধান নেই? মোতাহার বলে তার জানা নেই। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে। মুজিবর খুক করে গলা খাকারি দিয়ে বলে, ' আমি কিছু বলতে চাই।' বাকি দুজন ওর দিকে তাকায়। গভীর মনযোগে শুনতে চায় তার কথা। মুজিবর বলে যেতে থাকে, ' সমস্যাটার মূলে হল আমাদের কৃষকেরা নিজেদের ফসল সংরক্ষণ করে রাখতে পারছেনা। এজন্য ফসল যখন তখন ফড়িয়াদের কাছে ওদের দামে বিক্রী করে দিতে বাধ্য হয়। আর সরকার নির্ধারিত দামেও ফড়িয়ারা কিনে না। দূরের হাটে যাবার বিড়ম্বনার কথা তুমি নিজেই তো জানালে আমাদের।'
কথার মাঝে পারুল জিজ্ঞেস করে,' সরকার যখন দাম নির্ধারণ করেই দেয়, সেই দামে কৃষক কেন বিক্রী করতে পারেনা ফসল?' মুজিবর উত্তর দেয় ওর কথার। বলে, ' ভালো প্রশ্ন করেছ। সরকার দাম নির্ধারণ করলেও প্রতিটি বাজার থেকেই কিন্তু সরকার ফসল কিনে না। কৃষক বুঝবে কীভাবে যে সরকার কোন মার্কেট থেকে ধান বা পাট কিনবে? এজন্যই সংরক্ষণের অপ্রতুল যায়গার অভাবে ফড়িয়াদের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে হয় কৃষককে।'
মোতাহার আরো একটি বিষয় তুলে ধরে, ' সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত পার্চেজ অফিসারদের সাথেও কিন্তু এই ফড়িয়াদের লিংক রয়েছে। আসলে প্রতিটি সেক্টরেই দুর্ণীতি এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে যে নিয়মমত কিছুই হবার উপায় নেই। যখনি তুমি ফড়িয়াদের ডিঙিয়ে সরকারি গুদামে চাল বা অন্য কিছু বিক্রী করতে যাবে, সেখানে 'বখশিস' নামের অতিরিক্ত কিছু টাকা খরচ করে ওদেরই নির্ধারিত দামে দিয়ে আসতে হবে। সেই দামও ফড়িয়াদের থেকে আহামরি তেমন বেশী নয়।'
মুজিবর কথা কেড়ে নিয়ে বলে, 'হ্যা, এইজন্যই সর্বপ্রথম আমাদেরকে 'গোলাঘর প্রজেক্ট' হাতে নিতে হবে।' 'গোলাঘর প্রজেক্ট?'- পারুল এবং মোতাহার দুজনেই এক সাথে জিজ্ঞেস করে।
'হ্যা, গোলাঘর প্রজেক্ট।' হেসে মুজিবর উত্তর দেয়। ' কৃষকের হাতে সময় খুব কম থাকে। ফসল নষ্ট হবার এবং দাম পড়ে যাবার ভয়ে দ্রুত সে ফসল বিক্রী করে নিশ্চিন্ত হতে চায়। আর যেখানে দাম বেশী সেরকম মার্কেট কিংবা পার্টি খুঁজে বের করতেও তো সময়ের প্রয়োজন। তবে সব যায়গায়ই যে ফড়িয়াদের নিয়ন্ত্রণে তাও তো নয়। আর হলোই বা। আমরা যদি আমাদের গ্রামের সকল ধান একটি বিশাল গোলাঘরে সংরক্ষণ করতে পারি, তবে নষ্ট হবার ভয়টা থাকছে না। এরপর সরাসরি সরকারি এজেন্টের কাছে গিয়ে দরদাম করার সুযোগ থাকছে। এক সাথে হিউজ পরিমান ফসল পেলে এজেন্টরাও কিনতে আগ্রহী হবে। আর যে বখশিসের কথা বললে, সেটা দিয়েও কৃষক তার ন্যায্য মূল্য পেতে পারে। মোটকথা, দালাল ফড়িয়াদের কাছে জবেহ হবার থেকে অনেক ভালো হবে সেটা।'
মোতাহার আর একটা পয়েন্ট তুলে ধরে, ' ফড়িয়ারা যে প্রথমেই কৃষককে ফসলের অগ্রীম দাম দিয়ে যায়। এটাও একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এতো সহজে কি কৃষকের এতো দিনের অভ্যাস পরিবর্তন করা যাবে?'
'কেন যাবে না?' পারুল উত্তর দেয়। 'আমরা ওদেরকে মোটিভেট করবো। অন্যান্য প্রজেক্টেও তো এই সহজ সরল মানুষদেরকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি। ইনশা আল্লাহ এখানেও পারবো। আর কোথাও না কোথাও থেকে শুরু তো করতেই হবে। আমাদের গ্রাম থেকেই নয় কেন?'
মুজিবর মোতাহারের শেষ সমস্যার সমাধানের জন্য জানায়, ' কৃষি ব্যাংক থেকে প্রয়োজনে কৃষক লোন নিবে। তাতে করে ফড়িয়াদের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা না নিয়ে খরচের কাজ চালাতে পারবে।'
মোতাহার ওদের দুজনকে কাজে নেমে পড়তে বলে। এক একজন কৃষকের কাছে গিয়ে বোঝানোর কথা বলে। তাতে করে জিনিসটা সহজে ফড়িয়াদের কানে যাবে না। কারণ ওরা ওদের এতো দিনের এই সহজ ও নিশ্চিন্ত দালালির ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য যে মরণ কামড় দিবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা মোতাহার বেশ ভালোভাবেই জানে।
তবে ফড়িয়াদেরকে ওরা তিনজন কেবলি 'সামান্য দালাল' মনে করেছে। এই দালালদের পিছনে যে কত শক্তিধর কূটিল মাথা কাজ করছে, সেটা জানলে মোতাহার এতো সহজে আরো চিন্তা-ভাবনা না করে ওদেরকে সহ মাঠে নামতে চাইতো না। কিন্তু ভালো কাজের জন্য এই তিনজনের হৃদয়ে সুপ্ত এক ঝড় সবসময়েই বিরাজ করে। সেই ঝড়ের টানেই 'গোলাঘর প্রজেক্ট' নিয়ে একজন পারুলের সাথে দুজন পুরুষ মাঠে নেমে পড়ে।
(ক্রমশঃ)
বিষয়: সাহিত্য
৯৮৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার নিজস্ব অভিমত হচ্ছে, ৪৩ বছর আগের সব কিছু ভুলে গিয়ে কে স্বাধীনতা বিরোধী আর কে স্বাধীনতার পক্ষে- এ নিয়ে বিতর্ক না করে সবাই বাংলাদেশী জাতীয়তাবোধে অনুপ্রাণিত হয়ে একই প্ল্যাটফর্মে এসে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগ করুক। কিন্তু সবাই-ই আসলে সার্থবাদী; নচেৎ এক হতে পারছে না কেন???
শুভেচ্ছা আপনার জন্য।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন