কওমী মাদরাসা নিয়ে মুন্নী সাহার অপসাংবাদিকতা: বন্ধ করা সময়ের দাবী
লিখেছেন লিখেছেন মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৫:৫৮:৪৩ বিকাল
গোসলের ফরজ কয়টি?
চেয়ারম্যান সাহেব ৬টি, মেম্বার সাহেব ১২টি। প্রধান শিক্ষক ৯টি, বিসিএস ক্যাডার ৫টি। জজ সাহেব ৪টি। এই হল আমাদের জেনারেল শিক্ষিতদের ধর্মজ্ঞান বা ধর্ম চর্চা। এটা কিন্তু বানানো গল্প বলছি না, অপবিত্র জীবন থেকে পবিত্র
জীবনে ফিরিয়ে আনতে বছরের পর বছর নির্মোহ দরদের সাথে তাবলীগে নিয়ে গিয়ে মোজাকারাতে বসে এসব চিত্র দেখছি।
এসএসসি পরিক্ষা বা এইস এসসি অথবা অর্নাস মাস্টার্স করা ছেলে গুলো তাবলীগে যাবার পর দেখে যায় এরা নবীর নাম বলে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি কিংবা শাহজালাল রাযিআল্লাহু আনহু। গত ঈদুল আযহাতে এক মন্ত্রী বললেন, আগামী কাল জানাজার নামাজ এতোটার সময়। কয়জন নেতা বলতে পারবেন ঈদের নামাজ ও জানাজার নামাজের পার্থক্য।
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিভাগীয় চেয়ারম্যান প্রফেসর কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, দায়মি বা সার্বক্ষনিক মুসলমানদের ফরজ আমল কয়টি, তিনি বললেন, ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়া। হজ্জে যাচ্ছেন এক বড় নেতা, তাকে বললাম ভাইজান হজ্বের তালকিন কি? তিনি বললেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
আমার এক সাংবাদিক বন্ধু ধর্ম নিয়ে কেবল বকবক বিশ্লেষণ করেন, একদিন বললাম ভাই ফজরের নামাজ কয় রাকাত, তিনি বললেন, ৬ রাকাত। তাদের নিয়ে আমরা কখনো তামাশা করি না; বরং সংশোধনের চেষ্টা করি। কারণ স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদেরকে পর্যাপ্ত ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয় না, তাই এসব নিয়ে
প্রশ্নবানে জর্জরিত করে তাদেরকে লজ্জা দেয়া কোন সুস্থ বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষের কাজ নয়। তেমনিভাবে মাদরাসায় ছেলেদের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়।
জাগতিক শিক্ষা কিছুটা রয়েছে। আরো সংস্কারেরর জন্য আমরা কাজও করছি।
সেখানে কোমলমতি ছেলেদের, কি শিক্ষা দেয়া হয় বা হয় না, এমন প্রশ্ন করা অবান্তর ও অপ-সাংবাদিকতা। কারণ সাংবাদিকতার জ্ঞান আমাদের শিক্ষা দিতে হবে না। ভালই জানা আছে। কিছুদিন সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণও করিয়েছি। অবুঝ শিশুদের দেশের ইতিহাস নিয়ে এলোপাতাড়ি প্রশ্ন করা কোন শুদ্ধ সাংবাদিকতার
নীতি হতে পারে না। সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতার বিশ বছর পার করছি।
কওমী সিলেবাস নিয়ে কথা বলতে হলে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনদের সাথে আলোচনা করুন। গ্রামের অশিক্ষিত মানুষ আর অবুঝ শিশুদের সাথে নয়; বরং তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য, শিক্ষা বঞ্চিত এক নিভৃত পাড়া গায়ে শিক্ষার আলো জ্বালানোর
চেষ্টা করার জন্য। গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা না করে মাদরাসা কেন করেছেন? এমন প্রশ্ন শিক্ষার আলোহীন এইগ্রামে করা অবান্তর। মাদরাসা হবার আগে তাদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার নিয়ে আপনার ক্যামেরা কোথায় ছিল?
খামাকা শিশুদের সাথে প্যাচাল করে পানি ঘোলাটে করে মাছ শিকারের চেষ্টা করবেন না। অনেকদিন এভাবে পানি ঘোলাট করে বলেছিলেন, "কওমী মাদরাসা জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র" সম্প্রতি কিছু জঙ্গি হামলার পর আপনাদের সে মিশন ব্যর্থ
প্রমাণ হয়েছে যে, জঙ্গি কোন মাদরাসয় তৈরি হয় না। আর সারা দেশের আলেমরা যখন দেশপ্রেমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন তখন আপনারা মাদরাসা নিয়ে নতুন এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন।
এখন মুন্নী সাহা যা শুরু করেছে সাংবাদিকতার নীতিমালা ভঙ্গ করে কোমলমতি গ্রামের মাদরাসার শিশুদের প্রশ্নবানে জর্জরিতত করে বলেছেন, হুজুররা তাদের ব্রেইন ওয়াশ করে দিয়েছে। আসলে ওয়াশ নয় ব্রেন ডিমেজ মুন্নীদেরই। চিকিৎসা
প্রয়োজন। এরা এক্সিডেন্টে মারাত্মক আহত মৃত্যুপথযাত্রীকে টিভির মাইক্রোফোন মুখে ধরে প্রশ্ন করে বসে 'আপনার এখন অনুভূতি কেমন? এর আগেও মুন্নী সাহা
অনেক বির্তকিত নিউজ তৈরি করেছেন। এসব বন্ধ করা সময়ের দাবী।
কিছুদিন পূর্বে এসএসসিতে জিপিও ৫ প্রাপ্ত অসংখ্য ছেলেদের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শোক দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির নাম জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল একটি টিভি চ্যানেলের সামনে, তাদের কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারেন নি। এই হল বাংলাদেশের মেট্রিক পাশ মেধাবীদের ইতিহাসের জ্ঞানের দৌড়। তাহলে মুন্নী সাহা, গ্রামের মাদরাসার ক্লাস টুতে পড়া ছোট্ট
শিশুটিকে প্রধানমন্ত্রীর নাম জিজ্ঞাসা করে না পারায় এটাকে হাইলাইট করার কী আছে? নিজেদের চরকায় তেল দিন। কওমী মাদরাসাতে যথেষ্ট তেল আছে। লাগলে নিতেও পারবেন।
স্কুলের মেট্টিক পরিক্ষা দিয়ে ছেলেরা তাবলীগে গিয়ে বাংলা ফাজায়েলে আমল কিতাব রিডিং পড়তে পারেনা । যা কওমী মাদরাসার ৫মশ্রেনীর ছাত্রটি তাদের চেয়ে অনেক ভাল পড়তে পারে। তাদের হাতের লেখা আমাদের নুরানীর শিশুদের চেয়ে খারাপ। আপনারা যদি এভাবে অপ সাংবাদিকতা করেন কওমীর সহজ সরল
গ্রামের ছোট ছোট ছেলেদের নিয়ে। আর তা মিডিয়াতে রং লাগিয়ে হাইলাইট করেন। তা যদি বন্ধ না করা হয়। তাহলে সেদিন বেশি দুরে নয় আমরা নিউজ সাজাব এভাবে... "৫০বছর ধরে নাপাক অবস্থায় জীবন পার করছেন
(এতো...জন) বিশিষ্টজনরা..." কেবল ফরজ গোসল নিয়ে প্রশ্ন করলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। দেখা যাবে আদমশুমারির মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের ধর্মের দৌড়। আমরা মুন্নীদের মতো হলুদ সাংবাদিকতা করতে চাই না। কিন্তু বাধ্য করলে, আমরাও একদিন, মুন্নী সাহার মতো এরকম নষ্ট নিউজ তৈরি করতে বাধ্য হব!
সম্প্রতি এটিএন বাংলা তেতুলিয়ার প্রত্যান্ত গ্রামের নতুন ছোট একটি কওমী মাদরাসা নিয়ে যে নিউজ নাটক তৈরি করেছে। পরে তা টিভিতে প্রচার করে এবং মাদরাসার সাথে সংশ্লিষ্ট খেটে খাওয়া গ্রামের মানুষ ও অবুঝ শিশুদের মাদরাসা শিক্ষা, তাদের স্বপ্ন ভবিষৎ পরিকল্পনা নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত
করে বির্তক তৈরির চেষ্টা করেছে।
বিষয়: বিবিধ
১২২২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রদের বেমক্কা প্রশ্ন করে বাটে ফেলাটাকে মাছরাঙ্গা চ্যানেলের উপর প্রতিশোধ নেওয়া মনে হয়েছে ।
এতদিন মাদ্রাসার পোলাপানদের জঙ্গি ট্যাগ দিতে অভ্যস্তরা দেখেছে গুলশানের ঘটনায় তাদের মত সুশীলদের পোলাপানেরাই জড়িত । এতে মাথা আউলিয়ে গেছে তাদের। আবারও মাদ্রাসার পোলাপানদেরকেই ট্যাগ ধরিয়ে দিতে কিছু একটা বানিয়ে দেখানোর ধান্ধায় দেশজুড়ে সফর করছে । একেবারে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে গিয়েই ঝাল ঝাড়তেছে।
আর মুসলমানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন হিন্দু যে কোন ভাল উদ্দেশ্যে নিয়ে যাবে না এটা বলাই বাহুল্য ।
গত কিছুদিন ধরে দেখছি ঢাকার কিছু স্কুলেও ATN বাংলা ঝাপি দিতে চাচ্ছে । বেশীর ভাগই ঢুকতে দিতে চাচ্ছে না । এই ঢুকতে না দেওয়া নিয়ে কত বকাবাজি । ভাবটা এমন যে সাংবাদিক মাত্রই সব কিছু বলতে + দেখাতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে।
"গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা না করে মাদরাসা কেন করেছেন? এমন প্রশ্ন শিক্ষার আলোহীন এইগ্রামে করা অবান্তর। মাদরাসা হবার আগে তাদের শিক্ষার মৌলিক অধিকার নিয়ে আপনার ক্যামেরা কোথায় ছিল?"
আপনার সাথে আমি ১০০% একমত
মন্তব্য করতে লগইন করুন