সম্প্রতি ভারতে হিন্দুদের বাড়াবাড়ি ও গাযওয়ায়ে হিন্দের পূর্বাভাস
লিখেছেন লিখেছেন মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:৫৩:১৭ সকাল
সম্প্রতি ভারতে জোরপূর্বক মুসলমানদেরকে হিন্দুধর্মে ধমান্তরিত করা হচ্ছে। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করার এক জোরদার তৎপরতা শুরু করেছে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং আরএসএসরা। কয়েকদিন আগে তাজমহলের নগরী আগ্রায় ৫০টি মুসলমান পরিবারের ২০০ জনকে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তর করা হয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন মিডিয়ার সংবাদে বলা হচ্ছে, অতিশয় দরিদ্র এই ব্যক্তিদের রেশন কার্ড, বাসস্থান এবং তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পূজা অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পূজা আয়োজকরা বলছেন, এই ব্যক্তিরা আগে হিন্দু ছিল। ৩০ বছর আগে তাদের মুসলমান করা হয়। তারা স্বেচ্ছায় পূজায় অংশ নিয়েছে এবং পূজা শেষে স্বেচ্ছায় হিন্দুত্ব বরণ করে নিয়েছে। তারা তাদের পুরনো ধর্মে ফিরে এসেছে। এটা ধর্মান্তর নয়, স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন, ঘর ওয়াপাস্।
যদিও এই কথিত ঘর ওয়াপাসিতে অংশ নেয়া কয়েকজনকে টেলিভিশনে পরস্পরবিরোধী কথা বলতে শোনা গেছে। একজন বলেছেন, তাদের বলা হয়েছিল পূজায় অংশ নিলে খেতে দেয়া হবে এবং তারা অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবেন, তাদের হিন্দু বানানো হবে তা বলা হয়নি আরেকজন তো চিৎকার করে বলেছেন, আমরা তো মুসলমান, হিন্দু হব কেন? মরে গেলেও হব না।
গত ২৫ ডিসেম্বর সেখানে ১০০০ মুসলমান পরিবারকে একযোগে হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করার অনুষ্ঠান করা হয়। বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিজেপির আরেক শীর্ষ নেতা সুব্রহ্মনিয়াম স্বামী বলেছেন, বিগত নির্বাচনে বিজেপির বিজয়ের মধ্য দিয়ে ভারতের জনগণ হিন্দুত্ববাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। এই বিজয় হিন্দুত্বের বিজয়। কারণ বিজেপির নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোর কেন্দ্রীয় ইস্যু ছিল হিন্দুত্ব। খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ভগবত গীতাকে রাষ্ট্রীয় ধর্মগ্রন্থ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। আরেকজন বিজেপি নেতা মোহনলাল বলেছেন, ভগবত গীতা সংবিধানের ওপরে। আরও এক কাঠি এগিয়ে বিজেপির এক রাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাধ্বী নিরঞ্জনা জ্যোতি বলেছেন, যারা রামকে মানে না তারা জারজ (বাস্টার্ড)!
নির্বাচনে বিপুলভাবে বিজয়ী বিজেপি এবং তার সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের এই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি স্বাভাবিকভাবেই ভারতজুড়ে অহিন্দু সংখ্যালঘু জনগণকে চরম শংকা ও অস্থিরতায় নিক্ষেপ করেছে।
এমনকি ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের মেরুত শাখার আহ্বায়ক বলরাজ দুঙ্গার এ হুমকি দেয় যে, আমাদের প্রথম কথা বাংলাদেশী মুসলমানদের এ দেশ ছাড়তে হবে কারণ তারা আমাদের জনশক্তির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। নতুবা তাদেরকে হিন্দু হয়ে থাকতে হবে। এ বজরং দল হলো বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্বশস্ত্র সংগঠন।
ধর্মজাগরণের উগ্রপন্থী নেতা আর,পি রাজেশ ঘোষণা করেছেন ৩১ শে ডিসেম্বর ২০২১ সালের মধ্যে ভারতের সকল মুসলমান ও খ্রিস্টানদেরকে হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
ভারতের এহেন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষিত সেই গাযওয়াতুল হিন্দ খুব নিকটেই চলে এসেছে। এবং এটাই গাযওয়াতুল হিন্দের পূর্বাভাস।
ঐতিহাসিক গাযওয়ায়ে হিন্দ বা হিন্দুস্তানের জিহাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عصابتان من أمتي أحرزهما الله من النار عصابة تغزوا الهند وعصابة تكون مع عيسى بن مريم عليهما السلام.
[b]অর্থ: “আমার উম্মতের দু’টি দলকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। এক দল হলো তারা, যাঁরা হিন্দুস্তানের জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। আর দ্বিতীয় দল হচ্ছে তারা, যাঁরা হযরত ঈসা ইবনে মারয়াম আ. এর সাথে থাকবে। (তাঁর সাথে থেকে যুদ্ধ করবে)। (সুনানুন নাসায়ী, ১০ম খন্ড, কিতাবুল জিহাদ, গাযওয়াতুল হিন্দের যুদ্ধ পরিচ্ছেদ।)
[/b]
অন্য হাদীসে রয়েছে,
وعدنا رسول الله صلى الله عليه وسلم غزوة الهند فإن أدركتها أنفق فيها نفسي ومالي فإن أقتل كنت من أفضل الشهداء وان أرجع فأنا أبو هريرة المحرر.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বলেন, আমাদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিন্দুস্তানের যুদ্ধের ব্যাপারে ওয়াদা করে গেছেন। তাই আমি (আবূ হুরায়রাহ) যদি ঐ যুদ্ধ পেয়ে যাই তাহলে তাতে নিজের জান ও মাল দিয়ে অংশ নিবো। এতে যদি আমি শহীদ হই, তাহলে আমি সর্বোত্তম শহীদদের কাতারে শামিল হবো। আর যদি ফিরে আসি তাহলে আমি আবূ হুরায়ারা হবো জাহান্নাম থেকে মুক্ত। (নাসায়ী শরীফ)
বি:দ্র: হিন্দুস্তানের যুদ্ধের এই ফজিলত শুধু তারাই পারে যারা আল্লাহর দীনকে বুলন্দ করার জন্য হিন্দুস্তানে জিহাদ করবে। যদি কেউ শুধু নিজ দল বা দেশপ্রেমের কারণে যুদ্ধ করে তাহলে সে এই ফজিলত পাবে না।
সুতরাং হে হিন্দুস্তান ও ভারত উপমহাদেশের মুসলমানগণ! রাহমাতুল্লিল আলামীন যেই জিহাদের এত ফজিলত বর্ণনা করেছেন, তাতে শরীক হওয়া কতটা সৌভাগ্যের কারণ হতে পারে! আল্লাহ আপনাদের এই ফজিলত অর্জন করার সুযোগ দিয়েছেন। এবং যেমনটি আবু হুরায়রা (রাযি.) বলেছেন, শহীদ হলে সর্বোত্তম শহীদ আর ফিরে আসলে জাহান্নাম থেকে মুক্ত গাজী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। আপনাকে দিল্লীর জামে মসজিদের সম্মান, নিজের অতীত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, এই হিন্দুস্তানের হিন্দুদের মন্দিরের ঘন্টার ধ্বনি নয় বরং চারদিকে তাকবীর ধ্বনিই ধ্বনিত হওয়া চাই, জামে মসজিদের সামনে দাড়িয়ে থাকা লাল কিল্লা হিন্দুদের হাতে আপনাদের পরাজয়ের কারণে এবং বিভিন্ন দাঙ্গায় মুসলমানরা গাজর, মুলার মতো ফালি ফালি হওয়ার ঘটনা স্মরণ করে রক্ত কান্না কাঁদছে। যেখানে আজকের মূর্তি পূজারীদের পূর্বপুরুষরা আপনাদের র্পূর্বপুরুষদের কাছে জীবন ভিক্ষার জন্য নতশিরে আসত, আজ সেই লাল কেল্লাটিই আপনাদের যুবকদের টর্চার সেল হিসাবে ব্যবহার করা হচেছ। আপনাদের বিজয়ের নিশান কুতুব মিনারও কি একথা বুঝাতে সক্ষম নয় যে, যেখানে একবার মুসলমানদের কদম পড়ে সেখানে সদা সর্বদাই মসজিদের রাজস্ব হওয়া চাই, কারণ মসজিদ ওয়ালারা আল্লাহতে বিশ্বাসী তাঁর অনুগত অন্যরা আল্লাহর শক্র, সুতরাং আল্লাহ বিরোধীরা আল্লাহ বিশ্বাসীদের ওপর কর্তৃত্ব করতে পারে না; আল্লাহর দুশমনরা আল্লাহর দোস্তদের চেয়ে সম্মানী হতে পারে না আপনাদেরকে রক্তপাত ও নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ভয় কিভাবে দেখানো যেতে পারে? আপনারা তো সেই জাতি যারা একবার নয় বহুবার পানিপথের ময়দান সজ্জিত করেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের বিবেক দান করেছেন, নিজেরাই ফায়সালা করে নিন যে, পানিপথের সেই রক্ত প্রবাহ ভাল ছিল নাকি আহমেদাবাদ, সুরাতের সেই দাঙ্গা ভাল। হিন্দুদের সামনে যারা মাথা নত করেছে তারা জ্ঞানী নাকি যারা শামেলীর ময়দানে গিয়ে তখনকার ফেরআউনী শক্তির বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিল তারা?
হে মুসলিম নওজোয়ানেরা! তোমরা কি বাবরী মসজিদের শাহাদাতের দিন ভুলতে পারবে? তার পরের দাঙ্গাগুলো...? প্রত্যেক এলাকায় তোমাদের লাশের কথা...? ভুলতে পারবে হিন্দুদের সে বিজয়ের দিন...? একটু স্মরণ করে দেখ! হিন্দুরা কত উল্লাস করেছিল সে সময়। মনে হয়েছে, তারা হাজার বছরের দাসত্বের বদলা নিয়েছে। না কখনো না; সেদিনকে তোমরা ইচ্ছা করলেও ভুলতে পারবে না। নিজেকে ধোঁকা দিও না। সেই উত্তেজনাকর মূহুর্তগুলো স্মরণ কর, যখন তোমরা ভারতীয় পুলিশের গুলির সামনে বুকটান করে অগ্রসর হচ্ছিলে! সেই স্পৃহা, সেই উত্তেজনা, সেই আগুন, সেই স্রোত যা তোমাদের অন্তরকে আলোড়িত করেছিল তা আবারও উজ্জীবিত করার সময় এসে গেছে, তাতে জিহাদের শুধু একটি স্ফুলিঙ্গের প্রয়োজন। হ্যাঁ, আজ সারা বিশ্বের মুসলমানরা কুফুরী জীবন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। আফগানিস্তানকে দেখ! তালেবানরা একমাত্র আল্লাহর সাহায্য নিয়ে জগতের খোদা দাবীদার সেই আমেরিকা ও তা টেকনোলজীর শ্বাস বের করে ছেড়েছে। বিশ্বের মুসলিমরা ঐ পবিত্র ভূমিতে জিহাদ শিখেছে, আর নিজ নিজ দেশে গিয়ে আল্লাহর আইনকে বুলন্দ করার জন্য জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এখন জিহাদের ময়দান হিন্দুস্তানের মুজাহিদের অপেক্ষায়! হিন্দুস্তানের নওজোয়ানদের অপেক্ষায়! আওরঙ্গজেব ও টিপু সুলতানের উত্তরসূরীদের অপেক্ষায়! ঐ কাপুরুষদের কথায় কান দিবে না যারা তোমাদের ইন্ডিয়ান শক্তির ভয় দেখায় যদি জিহাদের শক্তি আমেরিকার নাক মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে, তাহলে হিন্দু কাপুরুষরা তোমাদের মোকাবেলায় কতদিন আর টিকতে পারবে? অথচ তোমাদের এ বাহু বহুবারের পরীক্ষীত। তারা তো শুধু নিরস্ত্র, দূর্বল, শিশু-নারী ও বৃদ্ধ মুসলমানদেরকেই মারতে পারে। তালেবান ও মুজাহিদীনে ইসলামের মুকাবেলা করার হিম্মত তাদের মায়েরা তাদের শেখায় নি। হিন্দুরা একটা ধোঁকাবাজ শক্র যারা তোমাদের প্রতারণার শ্লোগান শুনিয়ে গোলাম বানিয়ে রেখেছে। এরা ময়দানে তোমাদের মোকাবেলা করতে পারবেনা, তাই জাগো! জাগো! আল্লাহর জন্য জাগো! হিন্দুদের দাসত্ব থেকে বের হওয়ার জন্য সম্মানের রাস্তা ধর। দিল্লী হিন্দুদের নয়; তোমাদের! তার ওপর ব্রাক্ষণদের ছাতি নয়; বরং মুহাম্মদ সা: এর ঝান্ডা উড়ানো হবে। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যদ্বানী বাস্তবায়ন হওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। ‘তোমরা হিন্দুস্ত্যনের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। হিন্দু নেতাদের শিকলে বেঁধে নিয়ে আসবে। তোমাদের বুযুর্গ নেয়ামতুল্লাহ (রহsmile ও ভবিষ্যদ্বানী করেছেন সীমান্ত প্রদেশ ও কাবায়েলী লোকেরা বাঘের ন্যায় গর্জে উঠবে এবং দিল্লী, দক্ষিণাত্য, পাঞ্জাব ও পুরো ভারত বিজয় করবে। এখনতো সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকায় মুজাহিদ বাহিনী তৈরী হচ্ছে। যারা এতদাঞ্চলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীয়ত বাস্তবায়ন করবে ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন