বিশ্বকাপ নামক বিশ্বপাপের জোয়ারে ভাসছে দেশ!
লিখেছেন লিখেছেন মুফতি যুবায়ের খান রাহমানী। ১৫ জুন, ২০১৪, ০৫:৩৩:০৫ বিকাল
আজ ফুটবল ও বিশ্বকাপ নামক বিশ্বপাপের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে পুরো দেশ! কি ধনী কি গরীব, কি যুবক কি বৃদ্ধ, কি রিকশাওয়ালা কি গাড়ীওয়ালা, কি এমপি কি মন্ত্রী সবাই আজ এই হুজুগের পিছনে ছুটছে। হুজুগে বাঙ্গালী! বলে কথা। সকলের মুখে একই গল্প ফুটবল ও বিশ্বকাপ। এই ফুটবল ও বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে চলছে পতাকা আর জার্সি কিনার মহা উৎসব। কে কার থেকে বড় পতাকা লাগাতে পারে সে নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিযোগীতা। সেজন্য তারা হাজার হাজার টাকা খরচ করতেও কোন দ্বিধাবোধ করছে না।
হায়রে হুজুগে বাঙ্গালী! যে দেশের অধিকাংশ মানুষ আজ দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করছে, যে দেশের পথশিশুরা খাবার না পেয়ে ডাষ্টবিনের উচ্ছিষ্ট ভোগ করছে, খাবার নিয়ে মানুষে কুকুরে টানাটানি করছে, অভাবের তাড়নায় ছোট ছোট বাচ্চারাও ঘ্রাম ঝড়ানো শ্রমের কাজ করছে সে দেশে বসে তারা হাজার হাজার টাকা খেলাধুলার মত অহেতুক ও অনর্থক কাজে খরচ করছে। তারা এই পতাকা আর জার্সি কেনার পিছনে এই পরিমাণ টাকা অপচয় করছে, যদি এ সমস্ত টাকা একত্র করে বাংলাদেশের সমস্ত গরীবদেরকে ভাগ করে দেয়া হয় তাহলে তা তাদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।
বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী তারা বিভিন্ন ধরনের পণ্য বের করেছে। যেগুলোর বাজার এখন রমরমা। গেঞ্জি, টি শার্টসহ না না ধরনের পোশাক। যেগুলো শোভা পাচ্ছে অনেকের গায়ে। ছোট বাচ্চা যার বিশ্বকাপ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই তাকেও তার পিতা-মাতা কিনে দিচ্ছে মেসি বা বিভিন্ন খেলোয়ারের নাম সম্বলিত গেঞ্জি। গতকাল সাতমসজিদ চত্ত্বরে মেসির নাম ও আর্জেন্টিনার পতাকা অঙ্কিত গেঞ্জি গায়ে দেয়া এক ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কোন দলের সাপোর্ট করো। জবাবে সে আমাকে বলল, আপনি দেখেন না আমার গায়ে আর্জেন্টিনার গেঞ্জি। আমি আর কোন দলের সাপোর্ট করবো!।
ঢাকা শহরের কিছু উম্মাদ যুবক হাজার হাজার টাকা খরচ করে পাঁচ/সাত তালা উপর থেকে নিচ পর্যন্ত বিশাল পতাকা বানিয়ে ঝুলিয়ে দিচ্ছে। কেউ বা পুরো রাস্তা জুড়ে উড়িয়ে দিচ্ছে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার পতাকা। হায়রে বাঙ্গালী!
আমার মত কিছু মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র রয়েছে যারা খেলাধুলা পছন্দ করে, তাদেরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গেছে বিশ্বকাপ। কে হাত দ্বারা গোল দিয়েছে না পা দ্বারা গোল দিয়েছে সে আলোচনাই এখন তাদের মুখে মুখে। কারা কয়বার করে বিশ্বকাপ নিয়েছে সে নিয়ে চলছে তর্কবিতর্ক। আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হলে ব্রাজিলের সাপোর্টারদের ঘায়েল করছে। আর ব্রাজিলের সমর্থক হলে ঘায়েল করছে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের। অথচ দল কিন্তু এই দুইটিই নয়। বিশ্বকাপ খেলছে প্রায় বত্রিশটি দল।
বিশ্বকাপ খেলা হবে, আর কারো মনে রং লাগবে না এটা যেন হতেই পারেনা। তাই তো গতকাল জোহরের সময় নামায পড়তে বেরিয়েছি। সামনেই পড়ল একটি ভ্যান। ভ্যানের হ্যান্ডেলেই দেখি লাগানো আছে আর্জেন্টিনার পতাকা। নিশ্চয়ই সে আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। খেলা যখন শুরু হবে, তখন হয়তো সে গাড়ি চালানো বন্ধ করে খেলা দেখতে শুরু করবে। অথচ সে যদি এক বেলা ভ্যান না চালায় হয়তো তার পুরো পরিবারকে উপোাষ থাকতে হবে।
গতকাল কোন একটি প্রয়োজনে নিউমার্কেট গিয়েছিলাম। যাওয়ার পর দেখি দাড়ি টুপি বিশিষ্ট এক বৃদ্ধ লোক একটি ব্রাজিলের পতাকা নিয়ে আসছে। একবার ভাবলাম গিয়ে তাকে কিছু বলি। কিন্তু সে তাড়াহুড়া করে চলে যাচ্ছে বিধায় তাকে আর কিছু বলার সুযোগ হলোনা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হল, সে ব্রাজিলের সমর্থক। এ বৃদ্ধ বয়সেও সে খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত। অথচ তার এ সময়ে খেলাধুলার প্রতি ব্যস্ত না হয়ে আল্লাহর প্রতি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করা খুবই প্রয়োজন ছিল।
এটাই হলো হুজুগে বাঙ্গালীদের কিছু নিদর্শন। আজ বাংলার প্রতিটি অলিতে গলিতে ভিনদেশিদের পতাকা শোভা পাচ্ছে। অন্যকোন দেশে হয়তো এভাবে প্রকাশ্যে ভিনদেশি পতাকা উড়ানোর সাহস পায়না। আমাদের দেশে পতাকা উড়ানোর বিধান থাকলেও বিশ্বকাপ ফুটবলের বেলায় যেন তা অকার্যকর। তাই তো মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী পর্যন্ত কোন না কোন দলের সাপোর্টার এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন, ছেলে মেয়ে নাতি নাতনিরা ভিন দেশের পতাকা উড়িয়ে তাদের জার্সি গায়ে দিয়ে সে দেশের প্রতি সমর্থনের জানান দিচ্ছে। অথচ দেশের প্রতি মন্ত্রী, এমপি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীদের কতটা ভালবাসা রয়েছে তা আজ সকলের ভেবে দেখা দরকার। তাই আসুন! আমরা সকলে দেশকে ভালবাসি, ভিনদেশি পতাকা উড়ানো বন্ধ করি। এ ধরনের খেলাধুলায় মাতামাতি করে সময় নষ্ট না করি। কেননা, সময় খুবই মূল্যবান, যা একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না। তাই জনৈক কবির সুরে সুর মিলিয়ে বলতে চাই -
‘‘খেলায় মজিয়া ভাই কাটাইও না বেলা।
সময়ের প্রতি কভু করিও না হেলা।
আজিকে সময় গত হইল তোমার,
আসিবে পুন: তাহা আসিবে না আর!।”
বিষয়: বিবিধ
১৬৯১ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা যারা বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বিভিন্ন দলকে ভালবাসার অতিশার্যে সবত্র ভালবাসার বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন হাদিসটা নিয়ে আমাদের ২/১ মিনিট চিন্তা করা দরকার।
কার জন্য কিসের জন্য আমাদের এত ভালবাসা।
চলতি বিশ্বকাপে আজ পযর্ন্ত কোন খেলা আমি দেখিনি।
আজব ।
তুমি যদি পায়খানায় পড়ে যাও আর এটা যদি ব্রাজিল বুঝতে পারে যে তুমি পায়খানায় পড়ে গেছ তাহলে আরও দু অন্জলি পায়খানা নিয়ে তোমার মাথায় চাপিয়ে দেবে।
ওরা ইহূদী,ওরা খৃষ্টান। ওরা তোমার জানি শত্রু
মন্তব্য করতে লগইন করুন