অপরের দাম্পত্য সুখের গল্প যখন নিজের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়
লিখেছেন লিখেছেন মিনার রশীদ ২২ মার্চ, ২০১৪, ০১:০৬:৫০ দুপুর
গোলাম মাওলা রনি একজন ভালো লেখক এবং কথক। তাঁর লেখা এবং বলা দুটি স্টাইলই সুন্দর এবং চিত্তাকর্ষক। নিজের দলের আবুলদের সম্পর্কে কিছু সত্য কথা প্রকাশ করে তিনি সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। তিনি আবুল-লীগের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে যান নি , এখনও নন।
তারপরেও লাল দালানের ভাত খাওয়া সহ অনেক ঝামেলা তাকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে পোহাতে হয়েছে। রওশনের জাতীয় পার্টি হলো গৃহপািলত বিরোধীদল। অন্যদিকে রনিরা গৃহের মধ্যেই বিশেষ ডাস্টবিনে রক্ষিত বিরোধী দল। খেয়াল রাখতে হবে এই বিশেষ ডাস্টবিনটি আওয়ামীলীগ কখনই খালি করে না।
তার সর্বশেষ লেখা ' যে কারনে পারেনি বিএনপি -হয়তো পারবেও না! পড়ে কিছুটা চিন্তায় পড়ে যাই।
রনির পাঠকদের মধ্যে এখন কমপক্ষে সত্তর ভাগ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক। এদের অনেকেই রনিকে হৃদয়ের ড্রইং রুমে না বসিয়ে সোজা বেডরুমে জায়গা করে দিয়েছেন। বিএনপি -জামায়াত ঘরানার মিডিয়া (যে কয়টি এখনও অবশিষ্ট আছে) এই রনির প্রতি একই আগ্রহ ও সহানুভূতি দেখিয়েছে। কাজেই সময়ই বলতে পারবে যে তারা এই রনিকে ব্যবহার করছেন, না রনি তাদেরকে ব্যবহার করেছেন। কাদের সিদ্দিকীর বেলায় তার কিছুটা আলামত ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়েছে।
তবে সাবধানের মার নেই, এই ভাবনাটি নিয়েই এই লেখাটি লিখছি। সমস্যা হলো, রনির লেখাটি যতজনের কাছে পৌছেছে আমার এই লেখাটি ততজনের কাছে পৌছবে না। এই পৌছানোর দায়িত্ব যাদের ছিল, তারা এখনও নাকে তেল দিয়ে ঘুমুচ্ছেন।
আওয়ামী নেতাদের ঐশ্বর্য তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপি নেতাদের দৈন্যতা অত্যন্ত শৈল্পিক ভঙ্গিমায় ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর এই লেখাটিতে। লেখাটিতে কোন কোন সত্যের ভগ্নাংশ স্থান পেলেও পুরো সত্য অনুপস্থিত। আমরা সবাই জানি যে অর্ধ সত্য অনেক সময় মিথ্যার চেয়েও ভয়ংকর হয়ে পড়ে । বিএনপি জামায়তের হৃদয়ের ড্রয়িং রুমে জায়গা করে নিয়ে এখন স্মার্ট রনি এই কাজটি করছেন অত্যন্ত সফলভাবে। নিজের নেত্রীকে এমন কায়দায় উপরে তুলেছেন যে প্রতিপক্ষের নাম আর কাম(বেশি বেলা পর্যন্ত ঘুম- একটি অর্ধ সত্য) টি উল্লেখ না করলেও তা দৃশ্যমান হয়ে পড়ে।
পুরো বিষয় তুলে ধরতে গেলে লেখার কলেবর অনেক বড় হয়ে পড়বে। এখানে শুধু একটি বিষয় আলোচনায় টানছি। রনি লিখেছেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অন্ততঃ একশ জন নেতা রযেছেন যারা সারা দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ের অন্তত একজন নেতাকে চেনেন এবং তাদের নাম ধরে ডাকতে পারবেন। এই ধরনের নেতা বিএনপিতে দুতিন জনের বেশি নেই।
এবার আসুন একটা হিসাব করি।
বাংলাদেশের তিন শটি আসনে কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজারটি ইউনিয়ন বা সম পর্যায়ের ইউনিট রয়েছে। রনির দাবিমত কমপক্ষে একজন করে নেতার নাম মনে রাখতে হলে কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার নাম ও চেহারা মনে রাখতে হবে। প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী এই নেতাদেরকে সরকার ও বিরোধী দলের আরো কয়েকশ নাম অবশ্যই মনে রাখতে হয় । তাছাড়া আত্মীয় স্বজন , স্কুল,কলেজ ভার্সিটির সহচর ও বন্ধু বান্ধব, নায়ক-নায়িকা, খেলোয়াড়,কবি-সাহিত্যক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা রয়েছেন। রনির কথামত সব মিলিয়ে রনিদের এই সুপারম্যানদের কমছে কম পাঁচহাজার নাম ও চেহারা রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনে মনে রাখতে হয়।
ইতিহাসের ছাত্র রনির কাছ থেকে এবার আসুন বিজ্ঞান বা পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের কাছে। প্রথমে নিজে গুণতে চেষ্টা করুন কতজনের নাম ও চেহারা মনে করতে পারেন। এখানে বিজ্ঞান বলছে, গড়পরতা একটি মানুষের মগজ দেড়শ (সর্বোচ্চ ২শ) এর মতো মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। দেড় শ থেকে তা না হয় ৫ শ হলো। কাজেই রনির এই তথ্যের চেয়ে অধিক বিশ্বাসযোগ্য হলো যে মধ্যপ্রাচ্যের রাজা বাদশাদের অনেকেই নিজেদের সকল সন্তান সন্ততি(গড়পরতা ৪০/৫০জন) কে চিনতে পারেন না বা নাম মনে রাখতে পারেন না।
কাজেই রনির এই লেখা পড়ে দুই সখীর কথা মনে পড়ে যায়। দুজন হরিহর আত্মা। পারস্পরিক ঈর্ষাও আছে। এই সখীদের মধ্যে একজন বেশি সুন্দরী, অন্যজন বেশি চাপাবাজ। দুজনেরই বিয়ে হয়েছে। মুখরা সখী তার স্বামীর ভালোবাসা ও সোহাগ এমনভাবে বর্ণনা করেন যে তা শুনে অপর সখীর কাছে নিজের জীবনটাকে অত্যন্ত পানসে পানসে মনে হয় ।
ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক জীবনের এই সুহৃদ মুখরাগণ অনেক স্পঞ্জকে স্টিল বানিয়ে অন্য সখা বা সখীদের মনে কৃত্রিম অভাববোধ সৃষ্টি করে।
তা বুঝতে অনেক সময় লেগে যায়। আর এই ফাকে জীবন ও যৌবনের অনেক কিছু হাত ছাড়া হয়ে যায়।
বিষয়: বিবিধ
১২৫২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য






































পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন